হিন্দুধর্ম ও নৈতিক মূল্যবোধ (অষ্টম অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - হিন্দুধর্ম শিক্ষা - | NCTB BOOK
37
37

ধর্মপালনের মধ্য দিয়ে নৈতিক শিক্ষা অর্জন করা যায়। এ পুস্তকের পঠিত অধ্যায়সমূহ থেকে আমরা জেনেছি, নৈতিকতা গঠনে ধর্ম খুবই সহায়ক। এ ছাড়া ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দয়ার মতো নৈতিক গুণের দৃষ্টান্তমূলক ধর্মীয় উপাখ্যানের সঙ্গেও পরিচিত হয়েছি। এ অধ্যায়ে আমরা উদারতা, পরোপকার, সেবা, সৎসাহস ও পরমতসহিষ্ণুতা প্রভৃতি নৈতিক মূল্যবোধসমূহ এবং এগুলো অর্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হব। নৈতিকতার পাশাপাশি মাদকাসক্তির মতো একটি অনৈতিক কাজ এবং তা থেকে বিরত থাকার উপায় সম্পর্কে জেনে এ কাজকে আমরা ঘৃণা করব।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব
  • উদারতা, পরোপকার, সেবা, সৎসাহস, পরমতসহিষ্ণুতা এ নৈতিক মূল্যবোধগুলো হিন্দুধর্মের আলোকে ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এ নৈতিক মূল্যবোধগুলো অনুশীলনের গুরুত্ব ও গঠনের উপায় বর্ণনা করতে পারব
  • মাদক ও মাদকাসক্তির ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
  • মাদক সেবন অনৈতিক কাজ- ব্যাখ্যা করতে পারব
  • মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকার উপায় বর্ণনা করতে পারব
  • সামাজিক জীবনে নৈতিক আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ হব।
Content added By

ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক (পাঠ ১)

31
31

সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয় সংযম, বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য ও অক্রোধ ধর্মের দশটি লক্ষণ রয়েছে। এগুলো এক-একটি নৈতিক গুণ। যিনি নৈতিক গুণগুলো অর্জন করেন এবং জীবনে ও সমাজে প্রয়োগ করেন, তিনি ধার্মিক বলে বিবেচিত হন। লোকে তাকে ভালো মানুষ বলে। তিনিই সমাজের জ্ঞানী মানুষ।

জ্ঞান কেবল অর্জন করলেই হয় না, তাকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়। সুতরাং ধর্মশিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি, তাকেও জীবনে ও সমাজে প্রয়োগ করতে হয়। আর যখন ধর্ম থেকে পাওয়া জ্ঞান নিজেদের জীবন ও সমাজে প্রয়োগ করি, তখন তা হয় নৈতিক আচরণ। ধর্ম কেবল আচারে ও আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়। ধর্ম একদিকে 'আত্মমোক্ষায়' অর্থাৎ নিজের চিরমুক্তি ও শান্তির জন্য। অন্যদিক থেকে তা 'জগদ্ধিতায়'- জগতের 'হিত' অর্থাৎ কল্যাণের জন্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জীবের মধ্যে আত্মরূপে ঈশ্বর অবস্থান করেন-এ ধর্মীয় শিক্ষা আমি গ্রহণ করলাম এবং এর মধ্যেই থেমে থাকলাম। তাতে কোনো লাভ নেই। যদি আমি জীবের মধ্যে আত্মারূপে ঈশ্বর আছেন জেনে জীবকে ঈশ্বর জ্ঞানে শ্রদ্ধা করি এবং জীবের সেবা করি, তাহলেই সে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন সার্থক হবে।

এখানে ধর্মশিক্ষা ছিল জীবকে ঈশ্বর বলে বিবেচনা করবে। আর এ থেকে নৈতিক শিক্ষা পাওয়া গেল: জীবের সেবা করা উচিত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ধর্ম হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার একটি উপায়। আর নীতি ছাড়া কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

নৈতিক শিক্ষা ধর্মীয় শুভ চেতনাকে জাগ্রত করে আর ধর্ম নৈতিক শিক্ষার ভিত্তিকে দৃঢ়তর করে তোলে। আমরা এখানে দৃষ্টান্ত স্বরূপ হিন্দুধর্মের আলোকে উদারতা, পরোপকার, সৎসাহস ও পরমতসহিষ্ণুতা এ চারটি-নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোচনা করব এবং ধর্ম ও নৈতিকতার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করব।

একক কাজ: ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার সম্পর্ক চারটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে লেখ।
Content added By

উদারতা (পাঠ ২)

26
26

'উদার' শব্দটির অর্থ হচ্ছে মহান, সজ্জন বা সাধু। উদারতা শব্দটি উদারের ভাব বোঝায়। অর্থাৎ উদারতা হচ্ছে চরিত্রের মহত্ত্ব বা সাধুতা।

যাঁরা সাধু, মহান – তাঁরা সকল মানুষকে সমান মনে করেন। ধনী-নির্ধন, পণ্ডিত-মূর্খ-সবাই তাঁদের কাছে সমান মর্যাদা পায়। সকল ধর্মের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর কাছে সমান। উদার ব্যক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে উদারচরিতানাং তু বসুধৈব কুটুম্বকম্। এ কথার অর্থ হলো, উদারচরিত ব্যক্তিদের কাছে পৃথিবীর সকলেই ইষ্টিকুটুম (আত্মীয়)। কেউ পর নয়। উদারতার পরিচয় পাই কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের 'মানুষ জাতি' কবিতায়, তিনি লিখেছেন:

কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবার সমান রাঙা।

এই যে, মানুষের মধ্যে ভেদাভেদহীন চেতনা একেই বলে উদারতা। সুতরাং উদারতা একটি নৈতিক গুণ এবং ধর্মের অঙ্গ। উদারতা ব্যক্তির চরিত্রকে উন্নত করে। উদার ব্যক্তি কখনও এটা পেলাম না, ওটা পেলাম না বলে হা-হুতাশ করেন না। তিনি নিজেকে কখনও বঞ্চিত বোধ করেন না। পাওয়াতে নয়, দেওয়াতেই তাঁর আনন্দ। উদারতা মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেয়।

অন্যদিকে ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তা আমাদের মনকে সংকীর্ণ করে তোলে। তখন আমরা সমাজের অন্যান্যদের স্বার্থের কথা, সুখের কথা এবং মঙ্গলের কথা ভুলে যাই। তাতে সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। সুতরাং সমাজের ক্ষেত্রেও উদারতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হিন্দুধর্মগ্রন্থসমূহে উদারতার অনেক উপাখ্যান রয়েছে। ঋষি বশিষ্ঠ বারবার বিশ্বামিত্রের প্রতি উদারতা দেখিয়েছেন। দেবতাদের মঙ্গলের জন্য দধীচি মুনির আত্মত্যাগের উদারতা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

আমরাও আমাদের আচরণে উদারতার পরিচয় দেব। অপরের সুখে সুখী হব, অপরের দুঃখে দুঃখী হব। তাহলে আমার ব্যক্তিচরিত্র উন্নত হবে। সমাজেরও মঙ্গল হবে।

একক কাজ: সমাজের দুজন উদার ব্যক্তি চিহ্নিত করে তাঁদের গুণগুলো লেখ।
Content added By

পরোপকার (পাঠ ৩)

18
18

রাতুল আবুলের সহপাঠী। ওরা একই পাড়ায় থাকে। মা, বাবা আর আবুল তিনজনকে নিয়ে ওদের পরিবার। একদিন আবুল স্কুলে এল না। আবুল তো স্কুল কামাই করার মতো ছেলে নয়। রাতুল স্কুল থেকে ফেরার পথে গেল আবুলদের বাড়ি। গিয়ে দেখে আবুলের খুব জ্বর। কিন্তু ওর বাবা বাড়িতে নেই। আবুলের মা আবুলকে ফেলে কোথাও যেতে পারছেন না। তখন রাতুল একদৌড়ে গিয়ে ডাক্তার ডেকে আনল।

এই যে আবুলদের পরিবারের প্রতি রাতুলের আচরণ, একেই বলে পরোপকার।

'উপকার' মানে ভালো করা। পরের ভালো করার নাম পরোপকার। কোনো স্বার্থের প্রত্যাশা না করে পরের মঙ্গলের জন্য যে কাজ করা হয়, তাকেই বলে পরোপকার।

পরোপকারের পরিচয় পাই কবি কামিনী রায়ের একটি কবিতায়। তিনি লিখেছেন:

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলই দাও,

তার মতো সুখ কোথাও কি

আছে আপনার কথা ভুলিয়া যাও।

পরোপকারের মধ্য দিয়েও জীবের সেবা করা হয়। যেহেতু জীবের মধ্যে আত্মারূপে ঈশ্বর অবস্থান করেন, তাই পরোপকারের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়। পরোপকার করলে ব্যক্তি উদার হয়। তার মনে প্রশান্তি আসে। কারণ পরোপকার করার মধ্যে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি আছে। পরোপকারের মধ্য দিয়ে জীবের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। পরোপকারী এবং উপকৃত ব্যক্তির মধ্যে স্থাপিত হয় প্রীতির বন্ধন। তাই ব্যক্তিজীবন ও সমাজের ক্ষেত্রে পরোপকার বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে।

মহাভারতে আছে-একদা একটি রাক্ষস এক গ্রামে এসে খুব অত্যাচার শুরু করল। রাক্ষসটার নাম 'বকরাক্ষস'।

সে প্রতিদিন অনেক মানুষ ও গৃহপালিত পশু আক্রমণ করে মেরে ফেলত। তারপর কিছু খেত, কিছু পড়ে থাকত। গ্রামের মানুষেরা তখন বকরাক্ষসকে অনুরোধ জানাল, 'প্রতিদিন প্রতি বাড়ি থেকে একজন করে মানুষ দেব। এভাবে এত লোক, এত পশু মেরে ফেল না। বকরাক্ষস তাতে রাজি হলো।

একদিন এক পরিবারের পালা এলো। ঐ পরিবার থেকে একজনকে রাক্ষসের খাদ্য হয়ে মরতে হবে।
তখন মা কুন্তীসহ পান্ডবেরা পাঁচভাই- যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব ঐ বাড়িতে ছিলেন। কান্নাকাটি শুনে এগিয়ে গেলেন কুন্তী।

ঐ পরিবার থেকে বকরাক্ষসের খাদ্য হিসেবে যার যাওয়ার কথা ছিল, মা কুন্তীর অনুরোধে পুত্র ভীম তাকে রক্ষা করলেন। বকরাক্ষসকেও মেরে ফেললেন। গ্রামবাসীরাও বিপদ থেকে মুক্ত হলো। ভীমের এ আচরণ পরোপকারের দৃষ্টান্ত।

আমরাও পরোপকারী হবো। তাহলে আমাদের চরিত্র উন্নত হবে। সমাজের অন্যান্য মানুষও উপকৃত হবে।

দলীয় কাজ: পরপোকারের পাঁচটি দৃষ্টান্ত চিহ্নিত করে এর প্রভাব লেখ।
Content added By

সেবা (পাঠ ৪)

26
26

সেবা শব্দটির অর্থ হচ্ছে যত্ন বা শুশ্রুষা। সেবার আর একটি অর্থ পরিচর্যা। পরম মমতায় অপরের পরিচর্যা করাকে সেবা বলে। এটি মানুষের একটি বিশেষ গুণ। সেবা পরম ধর্ম। শাস্ত্রে বলা হয়েছে শিবজ্ঞানে জীব সেবা করবে। কেননা প্রত্যেক জীবের মাঝে ঈশ্বর বিদ্যমান। তাই বৃক্ষ-লতা, পাখ-পাখালি পরিচর্যা করাও সেবার অংশ। এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন 'জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'।

পারিবারিক জীবনে তথা সামাজিক জীবনে সেবার গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য একে অপরকে যথাযথভাবে সেবা করা উচিত। সমাজের প্রত্যেক মহান ব্যক্তিই সেবাপরায়ণ। চিকিৎসক রোগীকে সেবার মাধ্যমে সুস্থ করলে সেখানেই তার সার্থকতা। গরিব-দুঃখী, অনাথকে সেবা করলে মূলত ঈশ্বরকে সেবা করা হয়। মাতৃভূমি আমাদের মা। মায়ের মতো মাতৃভূমিকে আমাদের সেবা করতে হবে।

আমরা পরিবারের সকল সদস্যসহ আত্মীয়-স্বজন, সমাজের সবাইকে সাধ্যমতো সেবা করব। বৃক্ষ-লতাসহ প্রতিটি জীবকে ঈশ্বরজ্ঞানে সেবা করব। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকব।

Content added By

সৎসাহস (পাঠ ৫)

25
25

সাহস শব্দটির মানে হচ্ছে ভয় না পেয়ে কোনো কাজ করতে এগিয়ে যাওয়া। নিজের বিপদ হবে জেনেও কল্যাণকর কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার যে প্রবৃত্তি, তার নাম 'সৎসাহস'। জীবনে চলার পথে সৎসাহস দেখানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সৎসাহস মনোবল বাড়ায়। নির্ভীকতার সঙ্গে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি দাঁড়াতে শেখায়। সবল যখন দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে তখন সৎ-সাহসী দুর্বলের পক্ষে দাঁড়ান। তার জন্য লড়াই করেন।

মহাভারতে আছে, বালক অভিমন্যু সৎসাহস দেখিয়েছিলেন। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থে সৎসাহস দেখানোর বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। দেশকে রক্ষার জন্য সৎসাহস দেখিয়েছিলেন জনা, প্রবীর, বিদুলা প্রমুখ।

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা তৎকালীন পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রবল বেশি ছিল না। কিন্তু তাঁদের বুকে ছিল সৎসাহস। তাই সৎসাহস দেশপ্রেমিকেরও একটি বৈশিষ্ট্য। সৎসাহস ধর্মের অঙ্গ এবং একটি নৈতিক গুণ।

একক কাজ: সৎসাহস প্রদর্শনের চারটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তোমার ভূমিকা কী হওয়া উচিত লেখ।
Content added By

পরমতসহিষ্ণুতা (পাঠ ৬)

27
27

আমরা মানুষ। মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব জ্ঞান আছে, বুদ্ধি আছে, জগৎ-জীবন সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা আছে। নিজস্ব মত আছে।

আমার যেমন নিজস্ব মত আছে, তেমনি অন্যেরও নিজস্ব মত আছে। কিন্তু সাধারণত আমরা আমাদের নিজ নিজ মতকেই বড় করে দেখি। অন্যের মতের গুরুত্ব দিই না। অন্যের মত উপেক্ষা করি। আর এর ফলে আমাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধ হানাহানি পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু আমরা যদি অন্যের মতের সারবত্তা বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তাহলে কোনো বিরোধ ঘটে না। বরং সকলের মঙ্গল হয়।

এই যে অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করা, অন্যের মতের প্রতি সহনশীল হওয়া, একেই বলে পরমতসহিষ্ণুতা।

পৃথিবীতে অনেক মত, অনেক পথ আছে। ধর্মপালনের ক্ষেত্রেও নানা মত ও পথের সৃষ্টি হয়েছে। সকল মত ও পথকে, সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে পরমতসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায়। প্রতিষ্ঠিত হয় সম্প্রীতি।

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব খুব সহজ করে বলেছেন: যত মত, তত পথ। উপাস্যের নাম এবং উপাসনা ও জীবনাচরণের পদ্ধতির মধ্যে বিশিষ্টতা বিভিন্ন ধর্মমতের উদ্ভব ঘটিয়েছে। আসলে উদ্দেশ্য সকলেরই এক। তা হচ্ছে স্রষ্টার কৃপা লাভ এবং জীব ও জগতের কল্যাণ।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন-

যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
মম বানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ॥(৪/১১)

অর্থাৎ যে যেভাবে বা যেরূপে আমাকে উপাসনা করে, আমি তাকে সেভাবেই সন্তুষ্ট করি। হে পার্থ (অর্জুন), মানুষেরা সকল প্রকারে আমার পথেরই অনুসরণ করে।

পরমতসহিষ্ণুতা সমাজের শৃঙ্খলার অন্যতম উপাদান। পরের মতকে স্বীকৃতি না দিলে এক মতের সাথে অন্য মতের বিরোধ অনিবার্য হয়ে উঠবে। কেবল নিজের ধর্মমতকে শ্রেষ্ঠ মনে করলে, অন্য ধর্মমতের অনুসারীদের খাটো করা হবে।

এ রকম মতান্ধতা জন্ম দেয় ধর্মান্ধতার। আর ধর্মান্ধতা পরিণত হয় গোঁড়ামিতে- হিংস্র সাম্প্রদায়িকতায়। সুতরাং ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক গুণ, ধর্মেরও অঙ্গ।

একক কাজ: সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত কর।
Content added By

উদারতা, পরোপকার, সেবা, সৎসাহস ও পরমতসহিষ্ণুতা- এ নৈতিক গুণগুলো অনুশীলনের গুরুত্ব ও উপায় (পাঠ ৭)

23
23

উদারতা মানুষকে মহান করে। পরোপকার করলে সমাজের মঙ্গল হয়। উদার ব্যক্তির একটি গুণও আবার পরোপকার করার মনোভাব। অন্যদিকে পরোপকার করা উদার ব্যক্তির একটি বৈশিষ্ট্য। একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত।

উদারতা ও পরোপকারের মধ্য দিয়ে ধর্ম পালিত হয় এবং নৈতিকতা অর্জন করা যায়। জীবকে সেবা করলে স্বয়ং ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়।

সৎসাহস হচ্ছে ভালো কাজে সাহস দেখানো। দুষ্টের দমন, ন্যায়বিচার, দেশরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সৎসাহসের প্রয়োজন।

পরমতসহিষ্ণুতা সম্প্রীতি ও শান্তি স্থাপনের অন্যতম উপায়। পরমতসহিষ্ণুতা সমাজকে সুশৃঙ্খল রাখে। যখনই পরমতসহিষ্ণুতার অভাব ঘটে, তখনই উদ্ভব ঘটে সাম্প্রদায়িকতা ও সংকীর্ণতার। সুতরাং শান্তি, সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে।

দলীয় কাজ: 'উদারতা, পরোপকার, সৎসাহস ও পরমতসহিষ্ণুতাই ব্যক্তিচরিত্রকে উন্নত করে'-উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
Content added By

মাদক সেবন অনৈতিক কাজ (পাঠ ৮)

20
20

এবার একটি অনৈতিক কাজের কথা বলব, যা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। তা হলো মাদক সেবন।মাদক হচ্ছে এমন কিছু জিনিস, যা নেশার সৃষ্টি করে। যেমন বিড়ি, সিগারেট, তামাক, মদ, গাঁজা, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, ফেনসিডিল ইত্যাদি। এছাড়া ঘুমের ওষুধ নামক চেতনাশিথিলকারী কিছু ওষুধও মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মাদকাসক্তি

মাদকাসক্তি বলতে বোঝায় মাদক দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীলতা এবং মাদক গ্রহণের ঐকান্তিক আগ্রহ।

মাদক সেবন ও অনৈতিক কাজ

মাদক সেবন একটি অনৈতিক কাজ। মাদকসেবন ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি করে এবং পরিবার ও সমাজের অমঙ্গল ডেকে আনে।

দৈহিক ক্ষতি

মাদকসেবন করলে নানা রকমের রোগ হয়। যেমন খাবারে অরুচি, বদহজম বা হজমশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া, অপুষ্টি, শ্বাসনালির ক্ষতি, স্থায়ী কফ ও কাশি, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার প্রভৃতি।

এ ছাড়া হৃদ্রোগও হতে পারে। কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

মানসিক ক্ষতি

মাদক সেবনে নেশা হয়। মাদকাসক্ত অবস্থায় বিবেকবুদ্ধি লোপ পায়। তখন মাদকসেবী না-করতে পারে, এমন কোনো কাজ নেই।

আর্থিক ক্ষতি

মাদকদ্রব্য ক্রয়ের জন্য মাদকসেবীকে প্রতিদিন প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ অর্থ যোগাড় করতে মাদকসেবী মা-বাবা আত্মীয়স্বজনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। কখনও কখনও অসদুপায় অবলম্বন করে মাদকের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। সুতরাং মাদক সেবন এমন একটি অনৈতিক কাজ, যা আরও অনেক অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে।

মাদক সেবনে পরিবার ও সমাজের অমঙ্গল হয়। পরিবারে শান্তি থাকে না। মাদকসেবী কখন কী করে বসে তার জন্য পরিবারের সকল সদস্য উদ্বিগ্ন থাকে। সমাজেও এর প্রভাব পড়ে।

হিন্দুধর্ম অনুসারে মাদক সেবন বা নেশা করা মহাপাপ। মাদকসেবী মহাপাপী। কেবল তা-ই নয়। মাদকসেবীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা বা চলাও মহাপাপ। সুতরাং মাদকাসক্তি থেকে আমরা বিরত থাকবই।

মাদকাসক্তি থেকে বিরত থাকার উপায় হচ্ছে:

১. মাদকসেবন মহাপাপ- ধর্মীয় এ অনুশাসন মেনে চলা।

২. মাদক সেবন অনৈতিক কাজ- সুতরাং নৈতিক দিক থেকেও আমরা মাদক গ্রহণ করব না।

৩. মাদকসেবীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন না-করা বা সম্পর্ক না-রাখা।

8. প্রতিজ্ঞা করা:

মাদককে না বলব,

নীতিধর্ম মেনে চলব।

Content added By

অনুশীলনী

15
15
শূন্যস্থান পূরণ কর

১. অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবে …………………………. করতে হয়।

২. উদারতা মানবচরিত্রকে …………………………. করে।

৩. সৎসাহস …………………………. বাড়ায়।

8. পরমতসহিষ্ণুতা সমাজে …………………………. প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপাদান।

৫. 'মাদক সেবন মহাপাপ'-এ ধর্মীয় অনুশাসন …………………………. চলব।

ডান পাশ থেকে শব্দ বা বাক্যাংশ নিয়ে বাম পাশের সাথে মিল কর:

বাম পাশডান পাশ

১. ধর্ম কেবল আনুষ্ঠানিকতায়

২. উদার চরিত্রের ব্যক্তিদের কাছে

৩. পরোপকার করার মধ্যে এক ধরনের

৪. মাদক সেবন করলে

আত্মতৃপ্তি আছে

নানারকমের রোগ হয়

অন্যতম উৎস

পৃথিবীর সকলেই ইষ্টকুটুম

সীমাবদ্ধ নয়

নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষেপে উত্তর দাও

১. 'নৈতিক শিক্ষা ধর্মীয় শুভ চেতনাকে জাগ্রত করে'- উক্তিটি দৃষ্টান্ত দিয়ে ব্যাখ্যা কর।

২. উদারতার ধারণাটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

৩. কীভাবে পরোপকার করা যায়? দৃষ্টান্ত সহকারে ব্যাখ্যা কর।

8. ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সৎসাহসের গুরুত্ব দৃষ্টান্তসহ ব্যাখ্যা কর।

৫. মাদক সেবনে দেহের কী ক্ষতি হতে পারে?

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

১. ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

২. সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে উদারতা অনুশীলনের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

৩. সমাজজীবনে পরোপকারের উপায় চিহ্নিত করে প্রয়োগ দেখাও।

8. মাদক সেবনের আর্থ-সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. আত্মত্যাগের নৈতিক চেতনাকে কী বলে?
ক. পরোপকার
খ. উদারতা
গ. সত্যবাদিতা
ঘ. কর্তব্যনিষ্ঠা

২. সৎসাহস বলতে বোঝায় -
i. কোনো কাজে ভয় না-পাওয়া
ii. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপদ মোকাবেলা করা
iii. দুর্বলের পক্ষে ন্যায়ের জন্য লড়াই করা।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii

৩. 'যত মত, তত পথ'- এটি কার বাণী?
ক. শ্রী রামচন্দ্র
খ. শ্রী রামকৃষ্ণ
গ. শ্রী বিজয় কৃষ্ণ
ঘ. শ্রী রামপ্রসাদ

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও
সাধন মুখার্জী গত দুর্গোৎসবে বিজয়াদশমীর দিন মধ্যাহ্নভোজে গ্রামের সকল স্তরের মানুষকে নিমন্ত্রণ করেন এবং তাদের সাথে বসে তিনিও আহার করেন। এতে প্রতিবেশি সুখেন চক্রবর্তী মুগ্ধ হয়ে তার আচরণ অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ হন।
8. সাধন মুখার্জীর আচরণে কোন গুণটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. ক্ষমা
খ. সৎসাহস
গ. উদারতা
ঘ. পরোপকার

৫. উক্ত গুণটির অনুশীলনে সুখেনের করণীয়। -
ক. ভুলের জন্যে কাউকে শাস্তি না- দেওয়া
খ. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপদ মোকাবেলা
গ. সকল মানুষকে সমান মর্যাদা প্রদান
ঘ. পরের মঙ্গলে স্বার্থ ত্যাগ।

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে পূরবী দত্তের সুখের সংসার। তার স্বামী প্রবাসে চাকুরি করেন। তিনি অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সংসারের সকল দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পরিবারের বিভিন্ন কাজ যেমন- সন্তানের শিক্ষা, সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এতে পরিবারের সবাই তাকে পছন্দ ও শ্রদ্ধা করে।
ক. ধর্মের কয়টি লক্ষণ রয়েছে?
খ. 'ধর্ম হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার একটি উপায়'- ব্যাখ্যা কর।
গ. পূরবী দত্তের চরিত্রে যে নৈতিক গুণটি ফুটে উঠেছে- তা নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পরিবার ও সমাজে শৃঙ্খলা আনয়নে উক্ত গুণটির ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion