হিন্দুধর্ম একটি সুপ্রাচীন ধর্ম। এ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কোনো একজন মাত্র ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায় না। বহু সাধকের সাধনায় এ ধর্ম বিকশিত হয়ে চলছে। ঈশ্বরের স্বরূপ, তাঁর প্রতি বিশ্বাস, কর্মবাদ, জন্মান্তর, অবতারতত্ত্ব, দেব- দেবীর পূজা, মোক্ষলাভ, নারীর প্রতি মর্যাদাবোধ এগুলো হিন্দুধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এসকল বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়েই হিন্দুধর্মের স্বরূপ উপলব্ধি ও ব্যাখ্যা করা যায়।
আবার হিন্দুধর্মের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমরা হিন্দুধর্মের ভিত্তিস্বরূপ কতিপয় বিশ্বাস ও ধর্মকৃত্যের সঙ্গে পরিচিত হই।
এ অধ্যায়ে দুটি পরিচ্ছেদে যথাক্রমে হিন্দুধর্মের স্বরূপ ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
প্রত্যেক ধর্মেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলো তাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। হিন্দুধর্মেরও বিশেষ তত্ত্ব, কতগুলো ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মকৃত্য রয়েছে, যেগুলো হিন্দুধর্মের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। যেমন- ঈশ্বরতত্ত্ব, ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ভক্তি, কর্মবাদ ও জন্মান্তর, অবতারবাদ, মোক্ষলাভ, জীব ও জগতের কল্যাণভাবনা ইত্যাদি। আর এ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে হিন্দুধর্মের স্বরূপ। এখন হিন্দুধর্মের স্বরূপ প্রকাশক প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংক্ষেপে জানব।
হিন্দুধর্মে ঈশ্বরকে নিরাকার বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়- এ বিষয়ে সুদৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করা হয়েছে। আমরা জানি, নিরাকার ঈশ্বরকে বলা হয় ব্রহ্ম, যখন প্রভুত্ব করেন তখন তিনি ঈশ্বর। জীবকে যখন কৃপা করেন তখন তাকে বলা হয় ভগবান।
হিন্দুধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, নিরাকার ঈশ্বর প্রয়োজনে সাকার রূপ ধারণ করতে পারেন। সাকার রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে নেমে আসতে পারেন। আমরা জানি, ঈশ্বর এভাবে নেমে আসলে তাঁকে অবতার বলে। এ অবতারবাদ হিন্দুধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আবার ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি আকার পেলে তার নাম দেব-দেবী। এ দেববাদও হিন্দুধর্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
আমরা জানি, জীবের মধ্যে আত্মরূপে ঈশ্বর অবস্থান করেন। তাই জীবমাত্রই শ্রদ্ধেয় এবং তার সেবা করতে হয়। কারণ জীবসেবা যে ঈশ্বরের সেবা। আর এখানেই রয়েছে হিন্দুধর্মের নৈতিক শিক্ষার মূলভিত্তি।
জীবকে ঈশ্বরজ্ঞান করলে আর কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত বা হানাহানির প্রশ্নই ওঠে না। জীবকে কষ্ট দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না। কারণ জীবকে কষ্ট দেওয়া মানেই ঈশ্বরকে কষ্ট দেওয়া।
হিন্দুধর্ম অনুসারে ব্রহ্ম বা ঈশ্বর, অবতার, দেব-দেবী এবং জীব- সব মিলিয়ে এক ঈশ্বর। এই হলো হিন্দুধর্মের ঈশ্বরতত্ত্ব।
একক কাজ : তোমার জানা একজন ব্যক্তির জীবসেবামূলক কর্মকান্ড বর্ণনা কর। |
হিন্দুধর্মের অনুসারীরা ঈশ্বরে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। তাঁরই নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে বিশ্বসংসার চলছে। তিনি সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের সর্বময় কর্তা। তিনি পরম দয়ালু-পরম করুণাময়। তাই তাঁকে ভক্তি করা কর্তব্য। দেব-দেবীরাও ঈশ্বরের অংশ। তাই তাঁদেরও ভক্তি করা হয়।
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। সকল কিছুর পরিচালক তিনি। জীবের জীবিকা অর্জনের জন্য কর্মও তিনি সৃষ্টি করেছেন। আমরা যা কিছু করি, সে সবই কর্ম। ঘর-বাড়ি তৈরি করা, ফসল উৎপাদন করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা, লেখাপড়া করা, পূজা-অর্চনা, ধ্যান-ধারণা সবই কর্মের মধ্যে পড়ে। প্রত্যেক কর্মেরই ফল আছে। শুভ কর্মের ফল শুভবা পুণ্য আবার অশুভ কর্মের ফল অশুভ বা পাপ। এই কর্মফল কিন্তু কর্মকর্তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হয়। ভোগ ছাড়া কোনো কর্মফল নষ্ট হয় না। এটাই কর্মবাদ। এই কর্মফল ভোগের জন্য প্রয়োজনে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয়। একে বলা হয় জন্মান্তর। এই কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ হিন্দুধর্মের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
মোক্ষলাভ
হিন্দুধর্মের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মোক্ষলাভ। 'মোক্ষ' কথাটির মানে হচ্ছে চিরমুক্তি লাভ। কোথা থেকে মুক্তি? বারবার জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি। জীবের আত্মা ঈশ্বর বা পরমাত্মার অংশ। চিরমুক্তি লাভ করে জীবাত্মা ঈশ্বর বা পরমাত্মার সঙ্গে মিশে যায়। তখন আর জন্মগ্রহণ করতে হয় না। একেই বলে মোক্ষ।
মোক্ষ লাভের উপায় হচ্ছে সকল কর্ম ঈশ্বরে সমর্পণ করা। অর্থাৎ সকল কাজ ঈশ্বরের কাজ মনে করে সম্পাদন করা, ভোগের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করে ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করা এবং জীব ও জগতের জন্য কল্যাণকর কাজ করে যাওয়া।
একক কাজ: কর্মবাদ ধারণাটি কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে লেখ। |
হিন্দুধর্ম অনুসারে ধর্মাচরণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে: 'আত্মমোক্ষায় জগদ্ধিতায় চ।' অর্থাৎ ধর্মাচরণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজের মোক্ষলাভ ও জগতের কল্যাণ। কেবল নিজের মোক্ষলাভের বিষয়ে চিন্তা করলেই হবে না। তাহলে তা হবে একান্তই আত্মসুখের চিন্তা। হিন্দুধর্ম কেবল নিজের সুখের চিন্তা করার বিষয়টি মোটেই অনুমোদন করে না। আত্মমোক্ষ চিন্তার পাশাপাশি জগতের কল্যাণ করতে হবে। নইলে ধর্মাচরণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আর মোক্ষও লাভ হবে না। সুতরাং জীব ও জগতের কল্যাণ করা মোক্ষলাভের অন্যতম উপায়।
ধর্মের প্রয়োগ তার কৃত্য বা উপাসনায়, ধর্মাচারে ও আচরণীয় সংস্কারে। হিন্দুধর্ম অনুসারে ঈশ্বরের নিরাকার রূপকে উপাসনা করা হয় মন্ত্র জপে ও গানে-কীর্তনে। আবার সাকার উপাসনা করা হয় দেব-দেবীর প্রতিমা নির্মাণ করে তাঁদের সুনির্দিষ্ট পূজাবিধি অনুসরণ করে পূজা করার মাধ্যমে।
হিন্দুধর্ম চর্চার ক্ষেত্রে কিছু ধর্মাচার ও সংস্কার পালন করতে হয়। ধর্মাচারের মধ্যে রয়েছে নিত্যকর্ম ও যোগাসন, রয়েছে তীর্থভ্রমণ, গঙ্গা নদীসহ পবিত্র জলাশয়ে স্নান, অতিথি সেবা, তুলসী সেবা ইত্যাদি। সংস্কার হচ্ছে প্রজন্ম পরম্পরায় চলে আসা দৈনন্দিন জীবনের ক্ষেত্রে করণীয় কিছু কাজ। যেমন- জন্মকৃত্য, বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধ ইত্যাদি।
সুতরাং ঈশ্বরতত্ত্ব, ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ভক্তি, কতিপয় মৌলিক ধারণা ও বিশ্বাস এবং ধর্মকৃত্যের মধ্য দিয়ে হিন্দুধর্মের স্বরূপ প্রকাশ পায়।
একক কাজ: মোক্ষলাভের কয়েকটি উপায়ের ক্ষেত্র উল্লেখ কর |
আমরা জানি যেকোনো ধর্ম কতগুলো ধর্মবিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। ঐ ধর্মবিশ্বাসগুলো তার ভিত্তি। কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ হিন্দুধর্মের দু'টি প্রধান ভিত্তি। প্রত্যেক কর্মেরই শুভ-অশুভ যে ফল উৎপন্ন হয় সেটি কর্মকর্তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হয়। চলতি জন্মে কর্মফলের ভোগ যদি শেষ না হয় তাহলে কৃতকর্মের ফল ভোগের জন্যই মানুষের পুনঃ পুনঃ জন্ম হয়। একেই বলে কর্মবাদ।
আর জন্মের পর মৃত্যু, মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম-একেই জন্মান্তর বলে। জন্মান্তরের পেছনে রয়েছে কর্মবাদ। জন্মান্তরে কর্মফল ভোগের একটি ধর্মীয় উপাখ্যান এখন বর্ণনা করা হলো।
অনেক অনেক কাল আগে বিষ্ণুভক্ত এক রাজা ছিলেন। তার নাম ছিল ভরত। বিশ্বরূপের কন্যা পঞ্চজনাকে তিনি বিয়ে করেন। তাদের সংসারে পাঁচ পুত্রের জন্ম হয়। রাজা ভরত পুত্রদের মধ্যে রাজ্য ভাগ করে দেন। এরপর তিনি তপস্যার জন্য বনে গমন করেন। সাধনার দ্বারা রাজা ভরত হলেন সাধকভরত মুনিভরত।
একদিন তিনি নদীতে স্নান করতে গেলেন। সেখানে দেখতে পেলেন এক হরিণী জল পান করতে এসেছে। হরিণীটির বাচ্চা প্রসবের সময় হয়ে এসেছে। এমন সময় বনের ভেতর থেকে সিংহের গর্জন শোনা গেল। ভয়ে হরিণী নদীর তীরে পড়ে যায় এবং তার গর্ভ থেকে এক বাচ্চা হরিণের জন্ম হয়। হরিণী মৃত্যুবরণ করে। এই দৃশ্য দেখে ভরতমুনি দয়াযুক্ত চিত্তে হরিণশিশুটিকে রক্ষার জন্য নিয়ে আসেন তার আশ্রমে। মাতৃহীন হরিণশিশুর যত্নে, আদরে তার সময় কাটে। এর ফলে মুনির তপস্যা আর রইল না। এই হরিণশিশুর চিন্তা করতে করতে তিনি দেহত্যাগ করেন। শাস্ত্রে বলে মানুষ যেরূপ চিন্তা করতে করতে দেহত্যাগ করেন তিনি সেই রকম জন্মলাভকরেন। তাই ভরতমুনিকেও হরিণরূপে জনন্মগ্রহণ করতে হলো। তবে হরিণ হয়ে জন্মালেও তাঁর পূর্বজন্মের কাহিনী স্মরণে ছিল। তাই হরিণজীবনেও তপস্বীদের আশ্রম প্রান্তে থেকে ধর্মকথা, তপস্যার কথা শুনতে শুনতে দেহত্যাগ করে পুনরায় মনুষ্যজনম প্রাপ্ত হন এবং ঈশ্বর আরাধনা করে তার অনুগ্রহ লাভ করেন।
কর্মফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়। এই ধর্মীয় বিধান বিজ্ঞানসম্মত। প্রত্যেক কাজেরই একটা কারণ বা হেতু থাকে। আর যখনই একটা কারণ এসে পড়ে তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আসে কাজের ফল। এক বালক বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডা জলে স্নান করে আনন্দ পায়। কিন্তু সে জানে না যে বৃষ্টিতে ভিজলে এবং ঠান্ডা জলে দীর্ঘ সময় থাকলে তার অসুখ হতে পারে। সে না জানলেও কাজের ফল হিসেবে তাকে অসুস্থ হতে হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে কর্মের সঙ্গে কর্মের ফল সম্বন্ধযুক্ত। কর্ম করলেই কর্মফল আসে। আর সে কর্মফল অবশ্যই কর্মকর্তাকে ভোগও করতে হয়। এই পরিবর্তনহীন ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা সবাই সচেতন হব এবং শুভ-অশুভ কর্ম বিবেচনা করে জীবনের পথে শুভ কর্মের অনুশীলন করব।
একক কাজ: জন্মান্তরে কর্মফল ভোগের ধর্মীয় উপাখ্যানের শিক্ষা তোমার জীবনে কীভাবে প্রতিফলন করবে? |
জীবনে নারী-পুরুষের নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। পুরুষের কর্মস্থল প্রায়ই থাকে গৃহের বাইরে। অপরদিকে অধিকাংশ নারীর কর্মস্থল তাঁর সংসারকে নিয়ে গড়ে ওঠে। জন্মের পরে কন্যা মা-বাবার স্নেহ-যত্নে বেড়ে ওঠে, শিক্ষা গ্রহণ করে। বিবাহিত জীবনে সে স্বামীর ঘরে যায়, স্বামীর সংসার তাকে দেখতে হয়। বৃদ্ধ বয়সে এই মহিলাকেই পুত্রকন্যাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এইভাবে সমাজের একজন নারীর তিনটি অবস্থা দেখা যায়-কন্যা, বধূ ও মাতা। বধূ হিসেবে স্বামীর সংসার দেখা-শোনা, ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন, শিক্ষার ব্যবস্থা করা তার কাজ হয়ে পড়ে। এ কাজের মধ্য দিয়ে নারী তার সংসারধর্ম পালন করেন। একজন আদর্শ মায়ের হাতে আদর্শ সন্তান গড়ে উঠতে পারে। সন্তানের কাছে মায়ের মতো আর বন্ধু নেই। রোগে, শোকে, আনন্দে, উৎসবে মা-ই হচ্ছেন সন্তানের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, উৎসাহদাতা ও আনন্দের উৎস। এমন মাতৃরূপী নারীর প্রতি সন্তানের কর্তব্য হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, তাঁর সেবা শুশ্রুষা করা। হিন্দুধর্মের অন্যতম ধর্মশাস্ত্র হচ্ছে মনুসংহিতা। সেখানে সংসারজীবনে কেমন করে শান্তি এসে থাকে তার বর্ণনা দেওয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে, যে সংসারে নারীরা আনন্দে-উৎসবে সুখে জীবন যাপন করে সে সংসার ঈশ্বরের কৃপায় শান্তি সমৃদ্ধিতে ভরে উঠে। তাই নারীদের প্রতি সদয় শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ ধর্মের অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করা।
অন্যদিকে হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের প্রকৃতি বা শক্তি হচ্ছে নারী। এই শক্তিকে বলা হয় আদ্যাশক্তি মহামায়া। শক্তি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আর সেই শক্তির দেবী হচ্ছেন নারী। এভাবে নারী শক্তির প্রতি হিন্দুধর্ম মর্যাদা প্রকাশ করেছে।
ধর্মগ্রন্থে আরও বলা হয়েছে, ঈশ্বর সৃষ্টির জন্য নিজেকে দুভাগ করলেন। এক ভাগ পুরুষ এবং এক ভাগ নারী। এ ভাগ কিন্তু সমান সমান, বেশি বা কম নয়।
'অর্ধনারীশ্বর' নামক একটি প্রতিমায় দেখা যায়, অর্ধেক শিব ও অর্ধেক পার্বতী (দুর্গা)। এর তাৎপর্যও পুরুষ ও নারীর সমতা এবং নারীর প্রতি পূর্ণ মর্যাদাবোধের প্রকাশ।
মহাভারতে বলা হয়েছে, যে পরিবারে নারীর প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করা হয়, দেবতারা সে পরিবারে আনন্দে বাস করেন। (অনুশাসন পর্ব, ৪৬/৫)। অন্যদিকে কোনো পরিবারে নারী যদি অশ্রদ্ধা পান, তাহলে সমস্ত শুভকর্ম নিষ্ফল হয়। (অনুশাসন পর্ব, ৪৬/৬)।
নারীর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের উপায় হলো, তাঁকে পরমা প্রকৃতি দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার অংশ মনে করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা এবং ধর্মগ্রন্থের অনুশাসন মেনে সমতাপূর্ণ আচরণ করা। সর্বোপরি নারীর মধ্যেও আত্মরূপে ঈশ্বর অবস্থান করেন, তাই নারীর প্রতি মর্যাদা প্রকাশ তো ঈশ্বরের প্রতি মর্যাদা প্রকাশ।
হিন্দুধর্মগ্রন্থসমূহে নারীর প্রতি মর্যাদাবোধের যে সকল দৃষ্টান্ত রয়েছে, আমরা তা অনুসরণ করব। সর্বক্ষেত্রে সম অধিকার নারীর প্রাপ্য- এ সত্য মনে রেখে আমরা নারীর প্রতি মর্যাদা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ হব।
কর্মবাদ ও জন্মান্তর, নারীর প্রতি মর্যাদাবোধ, ঈশ্বরজ্ঞানে জীবসেবা, পাপ-পুণ্য, স্বর্গ ও নরকের ধারণা ইত্যাদি আরও অনেক বিশ্বাসের ওপর হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠিত। আর এ ধর্মবিশ্বাসগুলোর লক্ষ্য হলো মানুষকে প্রকৃত মনুষ্যত্বসম্পন্ন মানুষরূপে গড়ে তোলা এবং পরিবার ও সমাজকে শৃঙ্খলাপূর্ণ ও শান্তিময় করে গড়ে তোলার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করা।
দলীয় কাজ: নারীকে কীভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভূষিত করা যেতে পারে তার কয়েকটি উপায় লেখ। |
নতুন শব্দ: কর্মযোগ, মাহাত্ম্য, অর্ধনারীশ্বর।
শূন্যস্থান পূরণ কর:
১. ঈশ্বরের সাকার রূপে অবতরণ করাকে …………………………… বলা হয়।
২. জীবসেবা করলে …………………………… সেবা করা হবে।
৩. হিন্দুধর্ম মতে ঈশ্বরের প্রকৃতি বা শক্তিকে বলা হয় …………………………… ।
8. কর্ম অনুসারে …………………………… ভোগ করতে হয়।
৫. ঈশ্বর ভগবান তখনই যখন জীবকে …………………………… করেন।
ডান পাশ থেকে শব্দ বা বাক্যাংশ নিয়ে বাম পাশের সাথে মিল কর:
বাম পাশ | ডান পাশ |
১. জীবের মধ্যে ঈশ্বর ২. চিরমুক্তিলাভ মানেই হচ্ছে ৩. রাজা ভরত ৪. মাতৃরূপী ঈশ্বর | বিষ্ণুভক্ত ছিলেন আমাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন আত্মারূপে অবস্থান করেন মোক্ষলাভ পরিত্রাণ লাভ |
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষেপে উত্তর দাও:
১. তোমার প্রাত্যহিক জীবনের কয়েকটি শুভকর্মের ব্যাখ্যা দাও।
২. জন্মান্তরবাদ বলতে কী বোঝায়?
৩. ভরত মুনিকে হরিণরূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল কেন?
8. কীভাবে নারীর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা যায়?
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
১. 'ব্রহ্ম, অবতার, দেব-দেবী এবং জীব-সব মিলিয়ে এক ঈশ্বর'- ব্যাখ্যা কর।
২. 'কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ পরস্পর সম্পর্কিত'- বুঝিয়ে লেখ।
৩. 'আত্মমোক্ষায় জগদ্ধিতায় চ'- সংস্কৃত বাক্যটি ব্যাখ্যা কর।
8. 'মাতৃরূপই একজন নারীর সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থান'- দৃষ্টান্ত সহকারে ব্যাখ্যা কর।
১. ঈশ্বর জীবের মধ্যে কীরূপে অবস্থান করেন?
ক. আত্মা
খ. প্রাণ
গ. বায়ু
ঘ. সাকার
২. মোক্ষলাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে -
i. জীবের কল্যাণ করা
ii. নিজের মঙ্গলের জন্য কাজ করা
iii. জগতের হিতসাধন করা।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i
খ) ii
গ) i ও iii
ঘ) i, ii ও iii
৩. পারিবারিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্য কর্তব্য কী?
ক. বৃদ্ধবয়সে মা-বাবাকে সেবা করা
খ. পারিবারিক স্বচ্ছলতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া
গ. পরিবারের নারী সদস্যদের যথাযোগ্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা
ঘ. অতিথি ও প্রতিবেশীদের শ্রদ্ধা করা।
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
সৌমিরানি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি সকল কাজ করার পাশাপাশি নিজের সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অত্যন্ত সচেতন। কারণ তিনি জানেন যে, সন্তানকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মায়ের অবদানই শ্রেষ্ঠ।
৪. সন্তানকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সৌমিরানির করণীয় -
i. উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান
ii. নৈতিক চরিত্র গঠনকে গুরুত্ব দেওয়া
iii. স্বাবলম্বী করে তোলা।
কোনটি সঠিক?
ক) i
খ) ii
গ) i ও ii
ঘ) i, ii ও iii
৫. সৌমিরানির পারিবারিক জীবনে আচরণিক যে অবস্থানটি বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে তা হলো-
i. কন্যারূপে
ii. বধূরূপে
iii. মাতৃরূপে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i
খ) ii
গ) ii
ঘ) i ও ii
১. সৃজনশীল প্রশ্ন
অধীরবাবু কর্মকে ধর্ম জ্ঞান করেন। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সকলের জন্য তিনি আর্থিক, পারিবারিক বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। তবে তিনি মা, বোন এবং স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে শ্রদ্ধাশীল। এ কাজের জন্য তিনি তাদের কাছে কিংবা সৃষ্টিকর্তার নিকট কোনো কিছু প্রত্যাশা করেন না। তার ধারণা মানুষের জন্ম একবারই হয়। পাপ-পুণ্য সবই এ পৃথিবীতে ঘটে।
ক. 'মোক্ষ' কথাটির মানে কী?
খ. 'জন্মান্তরের পেছনে রয়েছে কর্মবাদ' কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. অধীরবাবুর আচরণে হিন্দুধর্মের যে বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মা, বোন ও স্ত্রীর প্রতি অধীরবাবুর আচরণ যথার্থ: কথাটি তোমার পঠিত 'নারীর মর্যাদা' বিষয়ের আলোকে মূল্যায়ন কর।
Read more