সংকেত হলো কোনো চিহ্ন বা কার্য বা শব্দ যেটি নির্দিষ্ট তথ্য বহন করে। তথ্য বহন করার জন্য নানা ধরনের মাধ্যমে নানা ধরনের সংকেত ব্যবহার করা সম্ভব। এই অধ্যায়ে আমরা শুধু বৈদ্যুতিক বা তড়িত সংকেতের মাঝে আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।সংকেত প্রেরণের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে ইলেক্ট্রিক্যাল সংকেতকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: এনালগ ও ডিজিটাল।
এনালগ সংকেত
আমাদের চারপাশে প্রতিমুহূর্তে যা ঘটেছে, যেমন শব্দ, আলো চাপ তাপমাত্রা বা অন্য কিছু সেগুলোকে আমরা কোনো এক ধরনের তথ্য বা উপাত্ত হিসেবে প্রকাশ করি। তাদের মান নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। আমাদের নানা কাজে সেই মানের প্রয়োজন হতে পারে, তাই সেই মান আমরা সংরক্ষণ করি, বিশ্লেষণ করি কিংবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রেরণ করি। উপাত্ত প্রক্রিয়া করার জন্য আমরা ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করতে পারি। নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে থাকা এই তথ্য বা উপাত্তকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিবর্তন করা সম্ভব এবং এই ধরনের সংকেত বা সিগন্যালকে আমরা বলি এনালগ সংকেত বা এনালগ সিগন্যাল। এই এনালগ সিগন্যালকে যদি সরাসরি কোনো এক ধরনের ইলেকট্রনিক্স দিয়ে আমরা প্রক্রিয়া করি, তাহলে সেটাকে বলা হয় এনালগ ইলেকট্রনিক্স।
ডিজিটাল সংকেত
নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে থাকা তথ্য বা উপাত্তের এই সিগন্যালকে সম্পূর্ণ অন্যভাবে প্রক্রিয়া করা সম্ভব। সেটি করার জন্য একটু পর পর তার মানটি কত বের করে কোনো এক ধরনের সংখ্যার প্রকাশ করে নিতে হয়। তারপর ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যাটির মানকে সংরক্ষণ করতে হয়। যখন সংকেতের মানকে সংখ্যায় বা ডিজিটে পরিবর্তন করে নেয়া হয়, তখন তাকে আমরা বলি ডিজিটাল সংকেত। আমরা তখন ডিজিটাল সংকেতের এই সংখ্যাগুলো আমাদের প্রয়োজনমতো ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করে প্রক্রিয়া করতে পারব। যখন আবার সেটিকে তার মূল এনালগ সিগন্যালে পরিবর্তন করতে হয়, তখন ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষিত মানের সমান বৈদ্যুতিক সিগন্যাল তৈরি করে নিতে হয়। আমরা দৈনন্দিন জীবনে দশ ভিত্তিক দশমিক (Decimal) সংখ্যা ব্যবহার করি। কিন্তু ইলেকট্রনিক্সে সংখ্যা প্রকাশ করা হয় বাইনারি সংখ্যা দিয়ে, কারণ তাহলে খুব সহজেই কোনো একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজকে ১ এবং শূন্য ভোল্টেজকে ০ ধরে প্রক্রিয়া করা যায়। এই ধরনের ইলেকট্রনিক্সকে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স (চিত্র ১৩.০৫ ) বলা হয়। ইলেকট্রনিক্সের সবচেয়ে বড় অবদান কম্পিউটার এবং কম্পিউটারে সকল তথ্যের আদান-প্রদান বা তথ্য প্রক্রিয়া হয় ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স দিয়ে। ইন্টারনেট বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করে তথ্য আদান প্রদান করা হয়। শব্দ ছবি বা ভিডিও ইত্যাদি সিগন্যালগুলো শুরু হয় এনালগ সিগন্যাল হিসেবে এবং ব্যবহারও হয় এনালগ সিগন্যাল হিসেবে কিন্তু সেগুলো ডিজিটাল সিগন্যাল হিসেবে সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকরণ বা প্রেরণ করা হয়। এনালগ সিগন্যালে খুব সহজেই নয়েজ (Nolse) প্রবেশ করে সিগন্যালের গুণগত মান নষ্ট করতে পারে। একবার সেটি ডিজিটাল সিগন্যালে পরিবর্তিত করে নিলে সেখানে Noise এতো সহজে অনুপ্রবেশ করতে পারে না। কাজেই সিগন্যালের গুণগত মান অবিকৃত থাকে।
ডিজিটাল সিগন্যাল প্রক্রিয়া করার জন্য বিশেষ ধরণের আইসি তৈরি করা হয়। এই আইসিগুলো ধীরে ধীরে অনেক ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে। অর্থাৎ অনেক কম সময়ে নির্ভুলভাবে অনেক বেশি পরিমাণ ডিজিটাল সিগন্যালে প্রক্রিয়া করতে পারে। কাজেই যতই দিন যাচ্ছে, ডিজিটাল প্রক্রিয়া করার বিষয়টি ততই সহজ হয়ে যাচ্ছে এবং এটি বলা বাহুল্য নয় যে আমাদের চারপাশের জগৎটি একটি ডিজিটাল জগতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
আরও দেখুন...