পানির পুনরাবর্তন
এর আগে তোমরা দেখেছ যে ভূপৃষ্ঠের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগই পানি দ্বারা আবৃত; কিন্তু বেশির ভাগ পানিই (শতকরা ৯৭ ভাগ) লবণাক্ত, তাই সেই পানি সরাসরি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায় না। আমাদের যে শতকরা ১ ভাগ মিঠা পানি (Fresh water) সঞ্চিত আছে, তার একটি অংশবিশেষ করে নদ-নদী, খাল-বিল ও হ্রদের পানি নানাভাবে প্রতিনিয়ত দূষিত হয়ে চলেছে। এমনকি ভূগর্ভের যে পানি আমরা কূপ বা নলকূপ থেকে পাই এবং খাওয়া থেকে শুরু করে নানা কাজে ব্যবহার করি, সেটিও নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ (যেমন: আর্সেনিক) দিয়ে দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। যদিও আমাদের পানিসম্পদ প্রচুর, কিন্তু ব্যবহার করার উপযোগী পানির পরিমাণ খুবই অল্প আর সীমিত। তাই পানি ব্যবহারে আমাদের অত্যন্ত সাশ্রয়ী হতে হবে এবং একই পানি কীভাবে বারবার ব্যবহার করা যায়, সেটিও চিন্তা করতে হবে।প্রকৃতিতে পানির কি পুনরাবর্তন ঘটছে? হ্যাঁ, ঘটছে। সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা পানিচক্রে দেখেছ যে দিনের বেলা সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, নদ-নদী, খাল-বিলের পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে বাষ্প ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘ পরে বৃষ্টির আকারে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। এই বৃষ্টির পানির বড় একটি অংশ নদ-নদী, খাল-বিল ও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং আবার বাষ্পীভূত হয় ও আবার বৃষ্টির আকারে ফিরে আসে। পানির এই পুনরাবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পুনরাবর্তন না হলে কী ধরনের সমস্যা হতো বলতে পারবে? এই পুনরাবর্তন না হলে বৃষ্টি হতো না, যার ফলে পুরো পৃথিবী মরুভূমি হয়ে যেত। প্রচণ্ড খরা হতো, ফসল উৎপাদন কমে যেত। বৃষ্টি হলো প্রাকৃতিকভাবে পানির পুনরাবর্তন।আমরা যদি ব্যবহারের পর বর্জ্য পানি সংগ্রহ করে সেটি পরিশোধন করে আবার ব্যবহার করি তাহলে সেটিও কিন্তু হবে এক ধরনের পুনরাবর্তন।
পরিবেশ সংরক্ষণে পানির ভূমিকা
যেহেতু পরিবেশের প্রায় প্রতিটি উপাদান ও প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পানির উপর নির্ভর করে, তাই পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে পানির ভূমিকা অপরিহার্য। পানি না থাকলে গাছপালা জন্মাবে না, ফসল উৎপাদন হবে না। এক কথায় পানি না থাকলে পুরো পরিবেশের সাথে সাথে আমাদের অস্তিত্বও ধ্বংস হয়ে যাবে।
মানসম্মত পানির প্রয়োজনীয়তা: সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই আমরা কী করি? হাত-মুখ ধুই। এ কাজ পানি ছাড়া কি সম্ভব? না, সম্ভব নয়। হাত-মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে গোসল, রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া এবং সর্বোপরি খাওয়ার জন্য পানি অপরিহার্য। এই পানি যদি মানসম্মত না হয় তাহলে প্রত্যেকটা কাজেই সমস্যা হবে। উদাহরণ দেয়ার জন্য বলা যায় খাওয়ার পানিতে যদি গন্ধ থাকে বা সেটি যদি লোনা হয়, তাহলে কি আমরা সেটা খেতে পারব? না, পারব না। এর বাস্তব প্রমাণ হলো আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় নদী আর ভূগর্ভের পানি লোনা হওয়ায় তারা ঐ পানি খেতে তো পারছেই না, এমনকি দৈনন্দিন জীবনের বেশির ভাগ কাজে ব্যবহারও করতে পারছে না।
তারা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে পরিশোধন করে তারপর সেটি পান করছে আর অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছে। আবার খাওয়ার পানি যদি মানসম্মত না হয়, বিশেষ করে এতে যদি রোগ-জীবাণু থাকে, তাহলে সেটা থেকে মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। সমুদ্রের লোনা পানি কি কৃষিকাজে বা শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা যায়? না, সেটাও যায় না। তার কারণ সমুদ্রের পানিতে প্রচুর লবণ থাকে, যেটা শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির (যেমন-বয়লার) ক্ষয়সাধন করে নষ্ট করে ফেলে। একইভাবে আমাদের বেশিরভাগ ফসলও লবণাক্ত পানিতে জন্মাতে পারে না। অর্থাৎ লবণাক্ত পানি কৃষিকাজের জন্যও উপযোগী নয়। এক কথায় বলা যায়, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে কৃষিকাজ আর দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটা কাজেই মানসম্মত পানির দরকার হয়। তা না হলে একদিকে যেমন মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও দেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হতে পারে।
আরও দেখুন...