এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামঃ কোষের সাইটোপ্লাজমে বিস্তৃত ও একক ঝিল্লিবেষ্টিত জালিকাকার অঙ্গাণু যা একাধারে প্লাজমামেমব্রেন ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে এবং সাইটোপ্লাজমকে অনিয়ত প্রোকষ্ঠে বিভক্ত করে অবস্থান করে তাকে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে।আলবার্ট ক্লড ও কেইথ পোর্টার ১৯৪৫ সালে মুরগীর ভ্রূণের সাইটোপ্লাজম থেকে এটি আবিষ্কার করেন।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর বিস্তৃতিঃ
সকল ইউক্যারিওটিক কোষেই এই জালিকা বিস্তৃত। যেসব কোষে প্রোটিন সংশ্লেষণ বেশি হয় সেখানে এদের বেশি পাওয়া যায়। যেমনঃ-অগ্নাশয়,যকৃত। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোহিত কণিকা এবং শুক্রাণুতে এরা অনুপস্থিত।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গঠনঃ
ক.ভৌত গঠনঃ গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic Reticulum) তিন প্রকার; যথা :
•সিস্টার্নি (Cisternae) : এরা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা, শাখাবিহীন ও লম্বা চৌবাচ্চার মতো এবং সাইটোপ্লাজমে পরস্পর সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে।
•ভেসিকল (Vesicles) : এগুলো বর্তুলাকার ফোস্কার মতো।
• টিউবিউল (Tubules) : এগুলো নালিকার মতো, শাখান্বিত বা অশাখ। এদের গায়ে সাধারণত রাইবোসোম যুক্ত থাকে না।
খ.রাসায়নিক গঠনঃ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের (Endoplasmic Reticulum) প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো- প্রোটিন (৬০-৭০ ভাগ) ও লিপিড (৩০-৪০ ভাগ)। এতে প্রায় ১৫ ধরনের এনজাইম পাওয়া যায়; যেমন-গ্লুকোজ ৬-ফসফেটেজ, সক্রিয় ATPase, NADH ডায়াফোরেজ ইত্যাদি। অমসৃণ জালিতে RNA এবং গ্লাইঅক্সিসোম নামক ক্ষুদ্রাকার কণা থাকতে পারে।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর কাজঃ
*এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
*অমসৃণ রেটিকুলামে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
মসৃণ রেটিকুলামে (বিশেষত প্রাণী কোষে) লিপিড, মতান্তরে বিভিন্ন হরমোন, গ্লাইকোজেন, ভিটামিন, স্টেরয়েড প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয়।
*অনেকের মতে এতে কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে।
*এটি লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
*রাইবোসোম, গ্লাইঅক্সিসোমের ধারক হিসেবে কাজ করে।
*এরা কোষে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থকে নিষ্ক্রিয় করে।
*লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
*রাইবোসোমে উৎপন্ন প্রোটিন পরিবহনে এটি প্রধান ভূমিকা রাখে।