জীবের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন নির্ভর করে কোষ বিভাজনের ওপর।
প্রতিটি জীবদেহ কোষ (Cell) দিয়ে তৈরি।যে প্রক্রিয়ায় জীবের বৃদ্ধি ও প্রজননের উদ্দেশ্যে কোষ বিভাজনের (cell division) মাধ্যমে কোষের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে তাকে কোষ বিভাজন বলে।
কোষ বিভাজনের প্রকারভেদঃ
•অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজনঃযে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষ নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম এর বিভাজন ছাড়াই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।ইস্ট,ব্যাকটেরিয়া,নীলাভ সবুজ শৈবাল,অ্যামিবা ইত্যাদি এককোষী জীবে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন ঘটে।
জীবদেহের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া হচ্ছ
মাইটোসিস (Mitosis) এবং মিয়োসিস (Meiosis)।
মাইটোসিস বা সমীকরণমূলক বিভাজন: যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস উভয়ই একবার করে বিভাজন হয় তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে। সাধারণত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকোষে এ ধরনের বিভাজন সংঘটিত হয়।
মিয়োসিস বা হ্রাসমূলক বিভাজন: যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সাইটোপ্লাজম একবার ও নিউক্লিয়াস দুইবার বিভাজিত হয় তাকে miyosis কোষ বিভাজন বলে। সাধারণত উদ্ভিদ ও প্রাণীর জননকোষে এ বিভাজন হয়ে থাকে।
কোষচক্রঃ একটি বর্ধিষ্ণু কোষের জীবন শুরু হয় মাতৃকোষের বিভাজনের মাধ্যমে এবং শেষও হয় বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। কোষের এ বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায় চক্রাকারে সম্পন্ন হয়। কোষ সৃষ্টি, এর বৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে বিভাজন- এ তিনটি কাজ যে চক্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তাকে কোষচক্র বলে। হাওয়ার্ড ও পেজ (Howard & Pele, 1953) কোষচক্রের প্রস্তাব করেন। চক্রটিকে তাই হাওয়ার্ড-পেক্ষ কোষচক্রও বলা হয়। মানবদেহে কোষচক্রের সময়কাল প্রায় ২৪ ঘণ্টা, ঈস্টকোষে এই সময়কাল ১০ মিনিট। বিভাজনের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংকেত (signal)-এর প্রয়োজন হয়। সব কোষই বিভাজনক্ষম এমন নয়। যেমন-পেশিকোষ, স্নায়ুকোষ, লোহিত রক্ত কণিকা, উদ্ভিদের স্থায়ী কোষসমূহ ইত্যাদি বিভাজিত হতে পারে না। আবার কিছু কোষ দ্রুত বিভাজনে সক্ষম, যেমন- ভ্রূণকোষ, মূল ও কান্ডের মেরিস্টেম কোষ এই কোষচক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কোষচক্রের প্রধান দুটি ধাপ রয়েছে
(ক) ইন্টারফেজ এবং (খ) মাইটোটিক ফেজ
নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো ।
ইন্টারফেজঃ মাইটোসিস কোষ বিভাজন শুরু করার প্রভৃতি পর্বকে ইন্টারফেজ বলে। এটি একটি কোষের পরপর দুই বিভাজনের মধ্যবর্তী সময়। এ অধ্যায়টি কোষচক্রের ৯০-৯৫ ভাগ সময় জুড়ে চলে থাকে। পরবর্তী মাইটোটিক ফেজ-এর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তনের এক ব্যাপক বিপাকীয় কর্মকান্ড ইন্টারফেজে ঘটে। ইন্টারফেজ দশার স্থায়িত্বকাল অন্যান্য দশার চেয়ে বেশি। যেমন-মানুষের কোষ বিভাজনের মোট সময়কাল ২৪ ঘণ্টা, সেক্ষেত্রে ইন্টারফেজে ব্যয় হয় ২৩ ঘন্টা। ইন্টারফেজ দশার বিভিন্ন পরিবর্তনকে মোট তিনটি উপধাপ বা উপপর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
• G (Gap-1) ফেজঃ এটি ইন্টারফেজ পর্বের প্রথম উপপর্যায়। একটি কোষ পরবর্তীতে বিভাজন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে কিনা, তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় G, উপপর্যায়ে কোষটি মাইটোটিক কোষ বিভাজনের জন্য উপযুক্ত হলে সেখানে সাইক্লিন নামক এক বিশেষ প্রোটিন তৈরি হয় যা Cdk (Cyclin dependent Kinase)-এর সাথে যুক্ত হয়ে সমগ্র প্রক্রিয়ার গতি ত্বরান্বিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। Cdk ফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রোটিন, RNA এবং DNA প্রতিলিপনের (রেপ্লিকেশন) সব উপাদান তৈরি হয়। কোষটি আকৃতিতে বড় হয় এবং নিউক্লিয়াসের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। মোট কোষচক্রের ৩০-৪০% সময় এই উপপর্যায়ে ব্যয় হয়।
• S-ফেজঃ S=Synthesis অর্থাৎ সংশ্লেষণ S-ফেজকে DNA সংশ্লেষণ পর্যায় বলা হয়। এ পর্যায়ে DNA অণুর প্রতিলিপন ঘটে । একটি দ্বিতন্ত্রী DNA অণু দৈর্ঘ্য বরাবর দুটি দ্বিতস্ত্রী অণুতে পরিণত হয়। প্রতিটি ডিপ্লয়েড কোষে DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। এসময় হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষ হয়।
• G (Gap-2) ফেজঃ পর্যায়ের পর মাইটোটিক ফেজ শুরু হওয়া পর্যন্ত সময়কে G, ফেজ বলে। এসময় নিউক্লিয়াসের আয়তন বেড়ে যায় এবং স্পিন্ডল তন্তু তৈরির জন্য মাইক্রোটিউবিউল গঠনকারী পদার্থের সংশ্লেষণ ঘটে। প্রাণিকোষে সেন্ট্রোজোমটি বিভাজিত হয়ে দুটি সেন্ট্রোজোমে পরিণত হয়। সেন্ট্রোজোম মাইক্রোটিউবিউলস তৈরির সূচনা করে। কোষ এ সময় প্রচুর ATP ও প্রয়োজনীয়, প্রোটিন অণুতে পূর্ণ থাকে। মোট সময়ের ১০-২০% এ উপপর্যায়ে বায় হয়। G থেকে মাইটোসিসে প্রবেশ করতে হলে ম্যাচুরেশন প্রোমোটিং ফ্যাক্টর (MPF) নামক প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে।
খ. M-ফেজ (M-phase) বা মাইটোটিক ফেজঃ এ অধ্যায়ে মাইটোসিসের মূল ভৌত বিষয়টি সম্পন্ন হয়। জটিল এ প্রক্রিয়াটি নিউক্লিয়াসের বিভাজন ও পুনঃগঠন, নতুন দুটি কোষে সাইটোপ্লাজমের গমন, কোষঝিল্লি ও কোষপ্রাচীর (উদ্ভিদকোষে) গঠনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটায়। কোষচক্রের মোট সময়ের মাত্র ৫-১০ ভাগ সময় এ পর্যায়ে ব্যয় হয়। এভাবেই ইন্টারফেজ → M-ফেজ → ইন্টারফেজ চক্রাকারে চলতে থাকে ।
ইন্টারফেজ-এর গুরুত্বঃ পূর্বে ইন্টারফেজ ধাপকে বিশ্রাম অবস্থা হিসেবে ধারণা করা হলেও ১৯৫০ এর দিকে জানা যায় এটি একটি সক্রিয় ধাপ। নিচে জীবের জীবনে ইন্টারফেজের গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো।
* কোষ বিভাজনের পূর্বশর্ত হচ্ছে ইন্টারফেজ। এ পর্বটি সম্পন্ন না হলে কোষবিভাজন ঘটবেনা । কোষ বিভাজন না ঘটলে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি হবে না ফলে জীবদেহ পূর্ণাঙ্গতা লাভ করবে না অর্থাৎ নতুন জীব সৃষ্টি হবে না ।
* কোষের স্বাভাবিক কর্মকান্ড সম্পাদনসহ কোষের বৃদ্ধি এবং বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিড উপাদান ইন্টারফেজ ধাপেই সংশ্লেষ হয়।
* এ ধাপেই DNA প্রতিলিপন (রেপ্লিকেশন) ঘটে ।
* কোষ বিভাজনের প্রয়োজনীয় শক্তি (ATP) তৈরি হয়।
* কোষ বিভাজনের প্রয়োজনীয় স্পিন্ডল তন্তু তৈরির জন্য মাইক্রোটিউবিউলস সৃষ্টি হয়।
* কোষটি পরবর্তী কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা ইন্টারফেজ-এর প্রথম দিকেই নির্ধারিত হয়।
মাইটোসিস (Mitosis) কোষ বিভাজনঃ
এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রকৃত বা সুকেন্দ্রিক কোষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। মাইটোসিস কোষ বিভাজনে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম একবার করে বিভাজিত হয়। তাই মাইটোসিস বিভাজনে কোষের মাতৃকোষ এবং অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা, সমান থাকে। একে সমীকরণিক বিভাজনও বলে।
এই বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবের দেহকোষে (somatic cell) হয়ে থাকে এবং বিভাজনের ফলে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণী এবং উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। প্রাণীর দেহকোষে এবং উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের ভাজক টিস্যু, যেমন: কাণ্ড, মূলের অগ্রভাগ, ভূণমুকুল এবং ভ্রূণমূল, বর্ধনশীল পাতা, মুকুল ইত্যাদিতে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজন হয়। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অযৌন জননের সময়ও এ ধরনের বিভাজন হয়।
মাইটোসিসের পর্যায়সমূহ (Stages of Mitosis):
এই বিভাজনে প্রথমে ক্যারিওকাইনেসিস অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে এবং পরবর্তীকালে সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে। বিভাজন শুরুর আগে কোষের নিউক্লিয়াসে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ হয়। এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ পর্যায় বলে। মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন প্রক্রিয়াকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে।পর্যায়গুলো হচ্ছেঃ
•প্রোফেজ (Prophase):
*এটি মাইটোসিসের প্রথম পর্যায়।
*এ পর্যায়ে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় এবং ক্রোমোজোম থেকে পানি হ্রাস পেতে থাকে।
এর ফলে ক্রোমোজোমগুলো আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে মোটা এবং খাটো হতে শুরু করে।
*এ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত লম্বালম্বি দুভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড উৎপন্ন করে।
*ক্রোমোজোমগুলো কুণ্ডলিত অবস্থায় থাকায় এদের সংখ্যা গণনা করা যায় না।
•প্রো-মেটাফেজ (Pro-metaphase):
*এ পর্যায়ের একেবারে প্রথম দিকে উদ্ভিদকোষে কতগুলো তন্তুময় প্রোটিনের সমন্বয়ে দুই মেরু বিশিষ্ট পিন্ডল যন্ত্রের (spindle apparatus) সৃষ্টি হয়।
স্পিন্ডল যন্ত্রের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানকে ইকুয়েটর বা বিষুবীয় অঞ্চল বলা হয়।
*কোষকঙ্কালের মাইক্রোটিবিউল দিয়ে তৈরি স্পিন্ডলযন্ত্রের তন্তুগুলো এক মেরু থেকে অপর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত, এদেরকে স্পিন্ডল তন্তু (spindle fibre) বলা হয়।
*এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডলযন্ত্রের কিছু নির্দিষ্ট তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়। এই তন্তুগুলোকে আকর্ষণ তন্তু (traction fibre) বলা হয়। ক্রোমোজোমের সাথে এই তন্তুগুলি সংযুক্ত বলে এদের ক্রোমোসোমাল তন্তুও বলা হয়।
ক্রোমোজোমগুলো এ সময়ে বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যস্ত হতে থাকে।
*কোষের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে।
*প্রাণিকোষে স্পিন্ডল যত্র সৃষ্টি ছাড়াও পূর্বে বিভক্ত সেন্ট্রিওল দুটি দুই মেরুতে অবস্থান করে এবং সেন্ট্রিওল দুটির চারদিক থেকে রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়। একে অ্যাস্টার-রে বলে।
•মেটাফেজ (Metaphase):
*এ পর্যায়ের প্রথমেই সব ক্রোমোজোম স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে (দুই মেরুর মধ্যখানে) অবস্থান করে।
*প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে অবস্থান করে।
*এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো সর্বাধিক মোটা এবং খাটো হয়।
*প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটির আকর্ষণ কমে যায় এবং বিকর্ষণ শুরু হয়।
*এ পর্যায়ের শেষ দিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয়।
*নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাসের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।
•অ্যানাফেজ (Anaphase):
*প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, ফলে ক্রোমোটিড দুটি আলাদা হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমোটিডকে অপত্য ক্রোমোজোম বলে এবং এতে একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে।
*অপত্য ক্রোমোজোমগুলো বিষুবীয় অঞ্চল থেকে পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে থাকে। অর্থাৎ ক্রোমোজোমগুলোর অর্ধেক এক মেরুর দিকে এবং বাকি অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
*অপত্য ক্রোমোজোমের মেরু অভিমুখী চলনে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী থাকে এবং বাহুদ্বয় অনুগামী হয়।
*সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোমগুলো V, L, J বা I-এর মতো আকার ধারণ করে। এদেরকে যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক সাবমেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ও টেলোসেন্ট্রিক বলে।
*অ্যানাফেজ পর্যায়ের শেষের দিকে অপত্য ক্রোমোজোমগুলো স্পিন্ডলযন্ত্রের মেরুপ্রান্তে অবস্থান নেয় এবং ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।
•টেলোফেজ (Telophase):
*এটি মাইটোসিসের শেষ পর্যায়। এখানে প্রোফেজের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে বিপরীতভাবে ঘটে।
*ক্রোমোজোমগুলোতে পানি যোজন ঘটতে থাকে এবং সরু ও লম্বা আকার ধারণ করে। অবশেষে এরা জড়িয়ে গিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন করে।
নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
*নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে ঘিরে পুনরায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের সৃষ্টি হয়, ফলে দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
*পিন্ডলযন্ত্রের কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং তন্তুগুলো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়।
*টেলোফেজ পর্যায়ের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র অংশগুলো জমা হয় এবং পরে এরা মিলিত হয়ে কোষপ্লেট গঠন করে।
সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুসমূহের সমবণ্টন ঘটে। ফলে দুটি অপত্য কোষ (daughter cell) সৃষ্টি হয়।
*প্রাণীর ক্ষেত্রে স্পিন্ডলযন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চল বরাবর কোষঝিল্লিটি গর্তের মতো ভিতরের দিকে ঢুকে যায় এ গর্ত সবদিক থেকে ক্রমান্বয়ে গভীরতর হয়ে একত্রে মিলিত হয়, ফলে কোষটি দুভাগে ভাগ হয়ে পড়ে।
ofofofoo
মাইটোসিসের গুরুত্ব (Importance of Mitosis):
*মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের কারণে প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের মধ্যকার আয়তন ও পরিমাণগত ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এর ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।
সব বহুকোষী জীবই জাইগোট নামক একটি কোষ থেকে জীবন শুরু করে। এই একটি কোষই বারবার মাইটোসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণ জীবে পরিণত হয়।
*মাইটোসিসে তৈরি অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম থাকায় জীবের দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারে।
*মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে, মাইটোসিসের ফলে অঙ্গজ প্রজনন সাধিত হয় এবং জননকোষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে মাইটোসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
*ক্ষতস্থানে নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবদেহের ক্ষতস্থান পূরণ করতে মাইটোসিস অপরিহার্য।
*মাইটোসিসের ফলে একই ধরনের কোষের উৎপত্তি হওয়ায় জীবজগতের গুণগত বৈশিষ্ট্যের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন (Uncontrolled Cell Division):
টিউমার, ক্যান্সার এ শব্দগুলোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এগুলো অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফল। মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত থাকে। কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এর ফলে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং প্রাণঘাতী টিউমারকে ক্যান্সার বলে।
ক্যান্সার কোষ এই নিয়ন্ত্রণহীন অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনেরই ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু, কেমিক্যাল কিংবা তেজস্ক্রিয়তা ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। সহস্রাধিক জিনকে ক্যান্সার কোষ তৈরিতে সহায়ক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের E6 এবং E7 নামের দুটি জিন এমন কিছু প্রোটিন সৃষ্টি করে, যা কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রক প্রোটিন অণুসমূহকে স্থানচ্যুত করে। এর ফলে কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় জরায়ুমুখের টিউমার। অনেক সময় এ দুটি জিন পোষক কোষের জিনের সাথে একীভূত হয়ে যায় এবং কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিন অণুগুলোর কাজ বন্ধ করে দেয়। সৃষ্টি হয় ক্যান্সার কোষ, কিংবা ক্যান্সার। অনেক ধরনের ক্যান্সার রয়েছে এবং সেগুলো সবই কমবেশি মারাত্মক রোগ। লিভার, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, স্তন, ত্বক, কোলন এবং জরায়ু, অর্থাৎ দেহের প্রায় সকল অঙ্গেই ক্যান্সার হতে পারে।