প্রাণীজগতের প্রধান পর্ব সমূহঃ
উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রাণিজগতকে দুটি গ্রুপ (group)-এ ভাগ করা হয়েছে, যেমন-ননকর্ডাটা (nonchordata) এবং কর্ডাটা (Chordata)। (যেসব প্রাণিদের জীবনে কখনও নটোকর্ড উপস্থিত থাকে না, তাদের ননকর্ডাটা বলে । এদের স্নায়ুরজ্জু (nerve cord) অঙ্কীয়, নিরেট ও গ্রন্থিযুক্ত; গলবিলীয় ফুলকারন্ধ্র ও পায়ুপশ্চাৎ লেজ অনুপস্থিত। অপরদিকে যেসব প্রাণিদের দেহে নটোকর্ড থাকে, স্নায়ুরজ্জু পৃষ্ঠীয় ও ফাঁপা, গলবিলীয় ফুলকারন্ধ্র ও পায়ুপশ্চাৎ লেজ বিদ্যমান তাদের কর্ডাটা বলে ।
৮ টি ননকর্ডাটা আর ১ টি কর্ডাটা পর্ব। নিচে এদের নাম দেওয়া হলোঃ
পর্ব ১: Porifera (পরিফেরা)
পর্ব ২: Cnidaria (নিডেরিয়া)
পর্ব ৩: Platyhelminthes(প্লাটিহেলমিনথেস)
পর্ব ৪ : Nematoda (নেমাটোডা)
পর্ব ৫ : Annelida (অ্যানিলিডা)
পর্ব ৬ : Arthropda (আর্থোপোডা)
পর্ব ৭ : Mollusca (মলাস্কা)
পর্ব ৮:Echinodermata(একাইনোডার্মাটা)
পর্ব ৯:Chordata(কর্ডাটা)
পর্ব ১: Porifera (পরিফেরা)
পরিফেরা পর্বের প্রাণিরা প্রাচীন ও সরল প্রক্রিতির শব্দটি ল্যাটিন শব্দ পোরাস(Porus) যার অর্থ ছিদ্র এবং ফেররে(ferre) যার অর্থ বহন করা থেকে এসেছে। ১৮৩৬ সালে Grant সর্বপ্রথম পর্বটির নামকরণ করেন। এরা দেখতে স্পঞ্জের মত। সাধারণত সামুদ্রে বাস করে তবে Spongilidae গোত্রের প্রাণীরা মিঠাপানিতে বাস করে। এ পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা আট হাজার ছয়শ ঊনপঞ্চাশটি।
পরিফেরা পর্বের প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য:
* দেহপ্রাচীর অস্টিয়া (Ostia) নামক অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত ।
* এরা বহুকোষী হলেও কোষগুলো সুবিন্যস্ত নয়, তাই সুনির্দিষ্ট কলাতন্ত্রও নেই।
* দেহে বিশেষ নালিকাতন্ত্র (Canal system) আছে।
* দেহে কোয়ানোসাইট (Coanocyte) নামে এক বিশেষ ফ্লাজেলাযুক্ত কোষ দিয়ে পরিবেষ্টিত এক বা একাধিক প্রকোষ্ঠ (Chamber) রয়েছে।
* দেহের ভেতরে স্পঞ্জোসিল (Spongocoel) নামে একটি প্রসস্ত গহ্বর আছে যা দেহের বাইরে অসকুলাম (Osculum) নামে একটি বড় প্রান্তিক ছিদ্রপথে উন্মুক্ত।
উদাহরণঃ
Sycon gelatinosum(স্পঞ্জ)Leucosolenia complicata,Euplectella aspergillus
পর্ব ২: Cnidaria (নিডেরিয়া)
নিডারিয়া পর্বে রয়েছে জেলিফিশ, সমুদ্রের কলম, ফাইসেলিয়া, সাগর কুসুম, পরপিটা, অ্যাডামশিয়া। নিডারিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক নাইড(Knide) যার অর্থ রোমকাঁটা, এবং ল্যাটিন আরিয়া (Aria) যার অর্থ সংযুক্ত । ১৮৮৮ সালে Hatschek পর্বটির নামকরণ করেন। এ পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা দশ হাজার দুইশ তিনটি।
নিডেরিয়া পর্বের প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য:
* ভ্রূণ অবস্থায় দুটি কোষস্তর থাকে, বাইরে এক্টোডার্ম (বহিঃত্বক) এবং ভেতরে এন্ডোডার্ম (অন্তঃত্বক); তাই এদের ডিপ্লোব্লাস্টিক বা দ্বিস্তরবিশিষ্ট বা দ্বিত্বকযুক্ত প্রাণী বলে।
* এরা নিম্নশ্রেণির বহুকোষী অরীয় প্রতিসম প্রাণী । এরা বহুকোষী হলেও এদের দেহে কলাতন্ত্র সুগঠিত নয়।
* দেহের ভেতরে সিলেন্টেরন নামে একটি প্রশস্ত গহ্বর থাকে যা একমাত্র মুখছিদ্র পথে বাইরে মুক্ত; কোনো পায়ুপথ নেই। সিলেন্টেরনে খাদ্য পরিপাক ও পরিবহন ঘটে তাই একে গ্যাস্ট্রোভাসকুলার গহ্বর বলে।
* দেহত্বকে বিপুল সংখ্যক নিডোব্লাস্ট (Cnidoblast) নামক দংশক কোষ থাকে। নিডোব্লাস্ট কোষে হিপনোটক্সিন নামক বিষ থাকে।
* এদের খাদ্যবস্তু বহিঃকোষীয় ও অন্তঃকোষীয় উভয়ভাবেই পরিপাক হয়।
উদাহরণ:
Hydra virdis (হাইড্রা),Obelia geniculata (প্রবাল),Aurelia aurita (জেলিফিশ)
পর্ব ৩: Platyhelminthes(প্লাটিহেলমিনথেস)
প্লাটিহেলমিন্থেসকে চ্যাপ্টাকৃমিও বলা হয়। প্লাটিহেলমিন্থেস নামটি এসেছে গ্রিক প্লাটি(Platys) যার অর্থ চ্যাপ্টা এবং হেলমিন্থেস (Helminth) যার অর্থ কৃমি থেকে । ১৮৫৯ সালে Gogenbour এ পর্বের নামকরণ করেন। প্লাটিহেলমিন্থেস পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ঊনত্রিশ হাজার চারশো সাতাশিটি। এদের অধিকাংশই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিদেহে অন্তঃপরজীবী হিসেবে বাস করে। এরা সরলতম প্রথম ত্রিস্তরি প্রাণী। এদের দেহে সর্বপ্রথম টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন দেখা যায়।
প্লাটিহেলমিনথেস পর্বের প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য:
* দেহ নরম, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ও পৃষ্ঠ-অঙ্কীয়ভাবে চাপা।
* দেহত্বক সিলিয়াযুক্ত এপিডার্মিস অথবা কিউটিকল-এ আবৃত।
* ত্রিস্তরী প্রাণী হলেও এরা অ্যাসিলোমেট (সিলোমবিহীন)।
* একমাত্র পরিপাক নালি ছাড়া অন্তঃস্থ আর কোন গহ্বর নেই।
* বিভিন্ন অঙ্গের ফাঁকে ফাঁকে প্যারেনকাইমা (parenchyma) নামক যোজক টিস্যু বা মেসেনকাইমে পূর্ণ থাকে।
* অনেক ক্ষেত্রে বাহ্যিক চোষক অথবা হুক অথবা উভয়ই উপস্থিত।
* রক্ত সংবহন ও শ্বসনতন্ত্র অনুপস্থিত; রেচনতন্ত্র শিখা কোষ (flame cell) নিয়ে গঠিত।
* অধিকাংশ পরজীবী। অনেক সদস্য সরাসরি দেহতলের সাহায্যে পুষ্টি গ্রহণ করে। কিছুসংখ্যক মুক্তজীবী।
* এ পর্বের প্রাণীরা উভলিঙ্গ; নিষেক অভ্যন্তরীণ এবং পরিস্ফুটন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধরনের।
* চ্যাপ্টা কৃমির জীবনচক্রে অনেক ধরনের লার্ভা (larva) দশা থাকে।
উদাহরণঃ
Fasciola hepatica (যকৃত কৃমি),Taenia solium(ফিতাকৃমি)
পর্ব ৪ : Nematoda (নেমাটোডা)
নেমাটোডা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ নেমা (nema) থেকে, যার অর্থ সুতা । আর এডোস (eides) এর অর্থ আকৃতি এবং হেলমিন্থ এর অর্থ কৃমি। এই পর্বের প্রাণিরা অঙ্গ-তন্ত্র গঠন মাত্রার প্রাণী। অপ্রকৃত সিলোমেট প্রাণীর মধ্যে নেমাটোডের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নেমাটোডা পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা পঁচিশ হাজার তেত্রিশ টি। ১৮৫১ সালে সর্বপ্রথম Gegenbaur নেমাটোডা পর্বটির নামকরণ করেন। নেমাটোডা পর্বের প্রাণীগুলো সুতা কৃমি বা গোল কৃমি নামে পরিচিত। এরা স্থলচর বা জলচর এবং মুক্তজীবী বা পরজীবী প্রাণী।
নেমাটোডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট:
* দেহ নলাকার, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ও দু’দিক সুঁচালো।
* এরা আণুবীক্ষণিক থেকে এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
* পৌষ্টিকনালী সোজা ও শাখাহীন এবং মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত।
* মুখচ্ছিদ্র সাধারণত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ওষ্ঠ দিয়ে পরিবেষ্টিত।
* দেহ নমনীয়, ইলাস্টিন-নির্মিত অকোষীয় পুরু কিউটিকলে আবৃত। পোষকের পরিপাকনালীর পাচক রস হতে রক্ষা করে কিউটিকল।
* অপ্রকৃত সিলোম উপস্থিত। এরা সিউডোসিলোমেট নামে পরিচিত।
* এই পর্বের প্রাণীরা অখণ্ডকায়িত।
* স্নায়ুতন্ত্র একটি বৃত্তাকার নার্ভ রিং এবং কয়েকটি স্নায়ু ও লম্বালম্বি স্নায়ুরজ্জু নিয়ে গঠিত।
* অধিকাংশ প্রাণী একলিঙ্গ এবং এসব প্রাণীর যৌন দ্বিরূপতা বা sexual dimorphism দেখা যায়।
উদাহরণ:
Trichuris trichiura (চাবুক কৃ্মি),Ascaris lumbricoides (গোল কৃমি),Loa loa (চোখকৃমি)
পর্ব ৫ : Annelida (অ্যানিলিডা)
অ্যানিলিডা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ এ্যানিউলাস (annulus) থেকে যার অর্থ ছোট আংটি এবং আইড (ida) যার অর্থ রূপ থেকে। ১৮০৯ সালে Lamarck পর্বটির নামকরণ করেন। এ পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ১৭,৩৮৮টি। অ্যানিলিডা প্রাণী দৈহিক গড়নের দিক থেকে একদম ভিন্ন এবং এরা অঙ্গ-তন্ত্র মাত্রার গঠন সম্পন্ন প্রাণী। এদের অধিকাংশই সামুদ্রিক, সমুদ্রের তলদেশে বা পৃষ্ঠে বিচরন করে। কেঁচো ও জোঁক জাতীয় অ্যানিলিডা পর্বের প্রাণীরা স্বাদুপানিতে বা স্থলে বাস করে। অনেকে স্বাধীনজীবী হলেও কিছু সংখ্যক পরজীবীও বটে।
অ্যানিলিডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ লম্বাটে ও নলাকার।
* দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম
* দেহ এপিথেলিয়াম নিঃসৃত পাতলা কিউটিকল-এ আবৃত।
* প্রকৃত খন্ডায়ন উপস্থিত (অথাৎ দেহ অনেকগুলো আংটির মতো খন্ডকে বিভক্ত যা দেহের ভেতরে ও বাইরে সুচিহ্নিত)। প্রতিটি খন্ডকে বলে সোমাইট বা খণ্ডক।
* প্রকৃত সিলোম উপস্থিত (অর্থাৎ দেহগহ্বর পেরিটোনিয়ামে পরিবেষ্টিত)।
* চলন অঙ্গ কাইটিনজাত সিটি (setae) বা জোড় পার্শ্বীয় প্যারাপোডিয়া (Parapodia)।
* নেফ্রিডিয়া (Nephridia) প্রধান রেচন অঙ্গ যা প্রায় প্রতিটি খন্ডকেই অবস্থিত।
* রক্ত সংবহনতন্ত্র বদ্ধ প্রকৃতির এবং রক্তের বর্ণ হয় লাল। এদের রক্তরসে হিমোগ্লোবিন, হিমোএরিথ্রিন অথবা ক্লোরোক্রুয়োরিন দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
* পৌষ্টিক নালি নলাকার ও সম্পূর্ণ এবং সেইসাথে এসব প্রাণীর মুখ ও পায়ুছিদ্র রয়েছে ।
উদাহরণ:
Metaphire posthuma (কেঁচো), Arenicola sp. (লাং ওয়ার্ম),Amphitrite sp. (দর্শনীয় কীট), Pontopdella muricata (সামুদ্রিকচোষক),Hirudinaria manillensis (জোঁক)
পর্ব ৬ : Arthropda (আর্থোপোডা)
প্রাণী জগতের সবচেয়ে বড় পর্ব আর্থ্রোপোডা এবং পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ প্রাণী আর্থ্রোপোডা পর্বের অন্তর্গত। আর্থ্রোপোডা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ আর্থ্রোস (arthro) থেকে যার অর্থ সন্ধি এবং পডোস (poddos) যার অর্থ পা । ১৮৪৫ সালে Siebold এ পর্বের নামকরণ করেন। আর্থ্রোপোডা পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ১,২৫৭,০৪০টি । এদের দেহ গঠনে বিভিন্ন রঙের সমাহার রয়েছে। এ পর্বের প্রাণীদের নদী-নালা খাল-বিল, পাহাড়- পর্বত, সমুদ্র- মোহনা, বরফ- মরুজ অর্থাৎ পৃথিবীর সব জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায়। আর্থ্রোপোডার সামাজিক জীবন প্রাণিজগতে অনন্য ও বিস্ময়কর নজির স্থাপন করেছে। সেইসাথে এদের পঞ্চইন্দ্রিয় অত্যন্ত কার্যক্ষম বলে আর্থ্রোপোডা সদস্যরা পরিবেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে। এরা স্ত্রী -পুরুষ পৃথক হয়। সাধারণত এদের অন্তঃনিষেক সম্পন্ন হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই রূপান্তর ঘটে।আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীরা স্থলচর এবং জলচর উভয়ই হয়ে থাকে। এ পর্বের কিছু প্রাণী স্বাধীন বা মুক্তজীবী হয় আবার কিছু প্রাণী অন্যের উপর নির্ভর করে অর্থাৎ পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং সেইসাথে এরা নিশ্চল ও সহবাসী হতে পারে।
আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ কাইটিন নির্মিত বহিঃকঙ্কাল দিয়ে আবৃত, নির্দিষ্ট সময় পর পর এ কঙ্কাল পরিত্যক্ত হয় ।
* দেহ খণ্ডায়িত,টাগমাটাইজেসন দেখা যায়। দেহখন্ডক পার্শ্বীয় সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ (Jointed appendages) বিশিষ্ট।
* এদের দেহকে দুটি সমান অংশে ভাগ করা যায় তাই এরা দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম হয়।
* পর্বের প্রাণীদের পৌষ্টিকতন্ত্র সম্পূর্ণ এবং এদের উপাঙ্গ পরিবর্তিত হয়ে মুখোপাঙ্গ গঠিত হয়।
* দেহের প্রাণীর সিলোম সংক্ষিপ্ত, অধিকাংশ দেহগহ্বরে রক্তে পূর্ণ যা হিমোসিল (Haemocoel) নামে পরিচিত।
* মাথার দু’পাশে দুটি পুঞ্জাক্ষি (Compound eye) দেখা যায় ।
* মালপিজিয়ান নালিকা প্রধান রেচন অঙ্গ। এছাড়া সবুজগ্রন্থি,কক্সাল গ্রন্থি, খোলস,ফুলকা রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
* প্রধান শ্বসন অঙ্গ মালপিজিয়ান নালিকা ও ফুলকা। কিছু সদস্য পুস্তক ফুসফুস দিয়েও শ্বসন সম্পন্ন করতে পারে।
* রক্ত সংবহনতন্ত্র উন্মুক্ত। সেইসাথে এটি পৃষ্ঠীয় সংকোচনশীল হৃৎযন্ত্র, ধমনি এবং হিমোসিল নিয়ে গঠিত হয়।
Arthropoda পর্বে এত বৈচিত্র্যময় প্রাণিগোষ্ঠীর সমাবেশ ঘটেছে যে, এ পর্বের সর্বসম্মত শ্রেণীবিন্যাস এখনও পর্যন্ত মতানৈক্য সৃষ্টি করে আসছে
উদাহরণ:
Limulus polyphenus (রাজ কাঁকড়া),Scolopendra gigantea(বাগান শতপদী),Apis indica (মৌমাছি),Periplaneta americana (তেলাপোকা)
পর্ব ৭ : Mollusca (মলাস্কা)
মলাস্কা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ মোলাস্কাস (molluscus) থেকে যার অর্থ নরম। Aristotle এ পর্বের নামকরণ করেন। এ পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ৮৪,৯৭৭টি। প্রাণীদের বর্তমান সংখ্যাগত দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্ব হলো মলাস্কা। এদের খোলক রয়েছে এবং এরা ননকর্ডেট প্রাণী। এ পর্বের অধিকাংশ প্রাণী সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে বাস করে। তবে এদের কিছু সদস্য আবার স্বাদু পানিতে,স্থলে এবং গর্তের ভেতরে বাস করে।
মলাস্কা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ খণ্ডায়নবিহীন, কোমল ও মাংসল।
* গ্যাস্ট্রোপোডা ব্যতীত অধিকাংশ দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম।
* ম্যান্টল (Mantle) নামক পেশীময় পাতলা আবরণে দেহ আবৃত। এ আবরণ থেকে নিঃসৃত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ক্ষরণের মাধ্যমে খোলক (Shell) তৈরি করে।
* দেহের অঙ্কীয়দেশে মাংসল পা থাকে (পা সাঁতার কাটতে ও গর্ত খননে ব্যবহৃত হয়)।
* দেহগহ্বর খুব সংক্ষিপ্ত ও হিমোসিল এ পরিণত হয়েছে
* দেহে সুস্পষ্ট মস্তক, কর্ষিকা ও সংবেদী অঙ্গ রয়েছে।
* পৌষ্টিক নালী প্যাচানো অথবা “U” আকৃতির; অধিকাংশ প্রাণীর মুখ গহ্বর র্যাডুলা (Radula) নামক একটি কাঁটাযুক্ত অংশ সমন্বিত।
* রক্তে হিমোসায়ানিন ও অ্যামিবোসাইট কণিকা থাকে।
* ফুলকা বা ফুসফুস অথবা উভয় অংশ কিংবা ম্যান্টল দিয়ে এরা শ্বসন সম্পন্ন করে।
* পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত হৃৎযন্ত্র, রক্তনালি ও হিমোসিল উভয়ই উপস্থিত অর্থাৎ এদের অর্ধমুক্ত সংবহনতন্ত্র দেখা যায়।
* ভিন্ন লিঙ্গবিশিষ্ট হয় এবং এসব প্রাণী ডিম পাড়ে।
উদাহরণ:
Lamellidens marginalis (স্বাদু পানির ঝিনুক),Pinctada vulgaris (মুক্তা ঝিনুক), Pila globosa (আপেল শামুক),Octopus macropus (অক্টোপাস), Uroteuthis duvaucelli (সমুদ্রের তীর)
পর্ব ৮:Echinodermata(একাইনোডার্মাটা)
একাইনোডার্মাটা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ একাইনো (Echinos) থেকে, যার অর্থ কাঁটা এবং র্ডামা (derma) যার অর্থ ত্বক। ১৭৩৪ সালে Jackar Kline একাইনোডার্মাটা পর্বটির নামকরণ করেন। এ পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ৭,৫৫০টি। একাইনোডার্মাটা পর্বের প্রাণীরা ত্রিস্তরী, প্রকৃত-সিলোমেট ও অঙ্গ-তন্ত্র মাত্রার গঠন সম্বলিত প্রজাতি। সকল একাইনোডার্ম সদস্য কাঁটাময় ত্বকবিশিষ্ট হয়। এদের ত্বকের নিচে শায়িত চুনময় অন্তঃকঙ্কালিক প্লেট থেকে এসব কাঁটার সৃষ্টি হয়। মূলত এই কাঁটাগুলো হলো বহিঃকঙ্কাল এবং প্লেটগুলো হলো অন্তঃকঙ্কাল।
একাইনোডার্মাটা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ অখন্ডকায়িত; পূর্ণাঙ্গ প্রাণী পঞ্চঅরীয় প্রতিসম ও এদের দেহ অখণ্ডকায়িত,তারকাকার গোলাকার, চাকতির মতো।
* প্রাণীরা অনেক সময় লম্বাকৃতির হয়। কিন্তু লার্ভা দশায় এ পর্বের প্রাণী দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম হয়ে থাকে।
* এদের দেহ কাঁটাযুক্ত এবং স্পাইন (Spine) ও পেডিসিলারি (Pedicellariae) নামক বহিঃকঙ্কালযুক্ত।
* দেহ মৌখিক এবং মুখ থেকে দূরবর্তী প্রান্ত অর্থাৎ বিমৌখিক তলে বিন্যস্ত।
* এদের দেহের বহির্ভাগের মৌখিক তলে পাঁচটি নিচু খাঁজের মতো অ্যাম্বুল্যাকরাল খাদ বা Ambulacral groove থাকে।
* দেহের ভেতরে সিলোম নামে বিশেষ গহ্বর থেকে সৃষ্ট পানি সংবহনতন্ত্র (Water Vascular System)রয়েছে। এর সংশ্লিষ্ট নালিকা পদ (Tube feet) এদের চলন অঙ্গ।
* চলন অঙ্গটি চলন ছাড়াও শ্বসন এবং খাদ্য আহরণেও সাহায্য করে।
* এদের রক্ত সংবহনতন্ত্র অনুপস্থিত তবে হিমাল ও পেরিহিমালতন্ত্র, সংবহনতন্ত্রের কাজ করে।
* এদের রেচনতন্ত্র নেই কিন্তু ত্বর্কীয় ফুলকা, নালিকা পা বা শ্বসনবৃক্ষ ইত্যাদি দিয়ে এরা শ্বসন সম্পন্ন করে।
* এরা একলিঙ্গ প্রাণী।
* এদের নিষেক বাহ্যিক এবং জীবনচক্রে মুক্ত সাঁতারু লার্ভা আছে। অর্থাৎ প্রাণীগুলি শুক্রাণু বা ডিমগুলিকে জলে ছেড়ে দেয় যা কার্যকরী হয়ে মুক্ত সাঁতারের লার্ভা হয়ে যায়।
* এ পর্বের সকল সদস্যই সামুদ্রিক
উদাহরণ:
Antedon bifida (পালক স্টার),Cucumaria planci (সমুদ্র শশা ),Ophiothrix fragilis (কাঁটাযুক্ত ব্রিটল স্টার),Echinus esculentus (সমুদ্র আর্চিন),Astropecten euryacanthus (সাধারণ স্টার ফিশ)
Read more