বাংলাদেশের বনাঞ্চল

জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র - বাংলাদেশের বনাঞ্চল

বাংলাদেশের বনাঞ্চল ( Forests of Bangladesh)

বাংলাদেশ ২০°৩০ থেকে ২৬°৪৫ উত্তর অক্ষাংশে ও ৮৮° থেকে ৯২°৫৬ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত একটি জনবহুল ছোট্ট দেশ। এর আয়তন ১.৪৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার। একটি দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা উচিত। বাংলাদেশে বর্তমানে বনাঞ্চল কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১০ ভাগের মতো। বনের অনুযায় বাংরাদেশের বনকে নিম্নলিখিত উপায়ে ভাগ করা যেতে পারে।

১। চিরসবুজ ও উপ-চিরসবুজ বনাঞ্চল, ২। পত্রঝরা বনাঞ্চল এবং ৩ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ।

 চিরসবুজ ও উপ-চিরসবুজ বনাঞ্চল (Evergreen and semi-evergreen forest): চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে চিরসবুজ ও উপ-চিরসবুজ বন অবস্থিত।

(i) বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২২৫ সেমি (চট্টগ্রামে) থেকে ৫০০ সেমি (সিলেট), তাই বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।

(ii) মাটিতে হিউমাস অধিক, মাটি অ্যাসিডিক (অম্লীয়)। 

(iii) বন অপেক্ষাকৃত ঘন। 

(iv) ভূমিরূপ : ছোট ছোট পাহাড় ও মাঝে মাঝে খাদ। 

(v) অধিকাংশ উদ্ভিদ চরিসবুজ প্রকৃতির।

সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষের মধ্যে সিভিট (Swintona floribunda), গর্জন (Dipterocarpus turbinatus), চন্দু (Tetrameles undiflora), দ্বিতীয় পর্যায়ের বৃক্ষের মধ্যে নাগেশ্বর (Mesua ferrea), বাটনা (Quercus spp.), পিতরাজ, (Amoora wallichiti) প্রধান। পত্রঝরা বৃক্ষের মধ্যে কড়ই ( Albizia procera), গামার ( Gmelina arborea), ভাদি (Lannea coromandelica), চাপালিশ (Artocarpus chama), উদাল, (Sterculia vilosa) ইত্যাদি প্রধান।পার্বত্য চট্টগ্রামের অনিক দুর্গম ও বিস্তর এলাকা নিয়ে বাঁশবন অবস্থিত। অধিকাংশ বাঁশই মূলী বাঁশ (Melocanna haccifera), জুম চাষের পর দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এলাকায় ছনবন আছে। ছন বনের প্রধান উদ্ভিদ হন Imperata cylindrica) এবং খাগড় (Saccharum spontaneum), সিলেটের উত্তরাংশে জলাবদ্ধ বন (Swamp forest) আছে। এ বনের উদ্ভিদ নল (Phragmitis karka), খাগড় (Saccharum spontaneum) এবং ইকড় (Erianthus ravennae) বৃক্ষের মধ্যে হিজল (Barringtonia acutangula) এবং করচ গাছ (Pongamia pinnata) প্রধান। বাংলাদেশের একমাত্র বন্য গোলাপ (Rosa involucrata) এখানে পাওয়া যায়। 

পত্রঝরা বনাঞ্চল (Deciduous forest) : এ বন ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, কুমিল্লার ময়নামতি এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। ময়নামতির বন শালবন বিহার নামে, শেরপুর জেলার একটি বন রাংটিয়া বন, আরেকটি বন গজনী বন নামে পরিচিত।

i) শীতকালে এ বনের বৃক্ষরাজির পাতা ঝরে যায়।

ii) বার্ষিক বৃষ্টিপাত কম, ১২৫ (বরেন্দ্র অঞ্চলে) থেকে ১৭৫ সেমি (ঢাকা), তাই বাতাসের আর্দ্রতা অপেক্ষাকৃত কম। iii) মাটির বর্ণ লাল, মাটি বেশ অ্যাসিডিক, বর্ষায় কর্দমাক্ত ও শীতে শুকনো।

iv) বন তুলনামূলকভাবে কম ঘন, তবে মধুপুর অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত ঘন।

v) উঁচু 'চালা' এবং ফাঁকে ফাঁকে সমতলভূমি 'বাইদ' অবস্থিত। চালায় বন এবং বাইদে ধান চাষ হয় ।

এ বনের প্রধান বৃক্ষ শাল। শাল বৃক্ষের পরিমাণ কোনো কোনো স্থানে শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ পর্যন্ত। তাই এই বনের অপর নাম শালবন। বর্তমানে অধিকাংশ মূল শালবৃক্ষেই কর্তিত। মূল বৃক্ষের গোড়া থেকে গজানো চারা থেকে সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান বন, তাই এ বনের আরেক নাম গজারী বন।

প্রধান বৃক্ষ শাল (Shorea orbusta) ছাড়াও চালতা (Dillenia pentagyna), কড়ই ( Albizia procera), গাছিগজারী (Miliusa velutina), কু (Careya aborea), বহেড়া (Terminalia bellirica), কুরচি (Holarrheana antidysenterica) ইত্যাদি বৃক্ষ জন্মে থাকে। শতমূলী (Asparagus racemosus), উলট চণ্ডাল (Gloriosa superba), এবং সর্পগন্ধা (Rouvolfia serpentina) তিনিটি বিপদাপন্ন ভেষজ উদ্ভিদ এ বনে দেখা যায়।

ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল (Mangrove forest) : লবণাক্ত ও কর্দমাক্ত ভেজা মাটির বনকে ম্যানগ্রোভ বন বলে। ম্যানগ্রোভ বনের বড় অংশ পটুয়াখালী জেলার দক্ষিণ পশ্চিম অংশ থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমে বৃহত্তর তুলনা পাড় হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কাছে রায়মঙ্গল নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অংশ সুন্দরবন নামে পরিচিত। এছাড়া মাতামুহুরী নদীর মোহনায় চকোরিয়া সুন্দরবন এবং নাশ নদীর তীরে কিছু ম্যানগ্রোভ বন দেখা যায় ।

সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্য :

১. সুন্দরবনকে ম্যানগ্রোভ বন বলে

২. মাটি-কর্দমাক্ত, ভেজা

৩. শ্বাসমূল / নিউমেটাফোর তৈরি হয়

৪. পাতার আয়তন কম থাকেদৈনিক দু'বার জোয়ার ভাটার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে

৫. মাটিতে মুক্ত অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে

৬. জরায়ুজ অংকুরোদগম হয় 

৭. পত্ররন্ধের সংখ্যা কম থাকে।

৮. এদের কোষস্থ প্রোটোপ্লাজম কিছুটা আঠালো হয় এবং এদের অভিস্রবনিক চাপ বেশি থাকে। 

৯. উদ্ভিদ অপেক্ষাকৃত খর্বাকার হয় এবং এদের এপিডার্মিস বহুস্তর বিশিষ্ট হয়।

এ বন চিরসবুজ বন।সুন্দরবনকে তিনটি Ecological Zone এ ভাগ করা যায়।

১। অলবণাক্ত অঞ্চল ২। অনধিক লবণাক্ত অঞ্চল ৩। লবণাক্ত অঞ্চল 

১.লবণাক্ত পরিবেশে জন্মিতে পারে এধরনের উদ্ভিদকে বলা হয় লোনামাটির উদ্ভিদ বা হ্যালোফাইট (halophytes)

২. Mangrove plant এ বিশেষ এক প্রকারের মূল আছে যা, ভূগর্ভস্থ মূল থেকে গম্বুজের মত মাটির উপরে উঠে আসে। এ মূলগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত থাকে। এই ছিদ্রের মধ্য দিয়ে এ জাতীয় উদ্ভিদের ভূ-গর্ভস্থ মূল শ্বাস-প্রশ্বাস চালায়।

৩. এই মূলকে শ্বাসমূল (Breathing root) অথবা Pneumatophore বলে। মূলের অভ্যন্তরে বড় বড় বায়ুকুঠুরী থাকে। ঠেসমূল Mangrove plant এর বৈশিষ্ট্য ।

৪. Viviparous germination এই অঞ্চলের বৃক্ষের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, তবে সুন্দরী ও গেওয়াতে Viviparous germination হয় না, হারগোজাতে হয়।

 সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেক্স সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) : সুন্দরবনের তিনটি বন্যজীব অভয়ারণ্য নিয়ে ওয়ার্ল্ডে হেরিটেজ সাইট গঠিত। এর আয়তন ১৪০০ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৯১০ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি আর ৪৯০ বর্গ কিলোমিটার জলাভূমি। অসাধারণ প্রাকৃতিক মূল্যের কারণে UNESCO-র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি ১৯৯৭ সালে তাদের ২১তম সেশনে বাংলাদেশের সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর তালিকাভুক্ত করে এবং বাংলাদেশ সরকার একে ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে।

Content added By
Promotion