মুনাফা বৃদ্ধি কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। জনসেবা ও জনকল্যাণই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠিত হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একচেটিয়া কৰ্তৃত্ব ভোগ করে থাকে।এর ফলে কিছু অসুবিধা দেখা দেয় নিম্নে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের অসুবিধা সমূহ আরোচনা করা হলো:
১. স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বিকাশে বাধা (Hindrance towards normal economic development): সরাসরি মালিকানায় ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করা হলে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ নিরুৎসাহিত হয়। এতে দেশের কার্যকরী কারবারি পরিবেশ বিপন্ন হয় ও স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় ।
২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা (Problem of taking quick decision): যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নের উপর ব্যবসায় সাফল্য নির্ভর করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার কারণে সকল বিষয়ে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়। যা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বিলম্বিত ও অকার্যকর করে।
৩. লালফিতার দৌরাত্ম্য (Suffering of red tapisim): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীদের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা বিদ্যমান থাকায় ধরাবাঁধা নিয়ম-কানুনের নিগড়ে সব কাজ গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে লালফিতার দৌরাত্ম্যের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ সকল কাজের গতি অত্যন্ত ধীর ও মন্থর হয়ে থাকে ।
8. অলাভজনক সংস্থা (Unprofitable organisation): এরূপ ব্যবসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং সরকারি সাহায্যে টিকে থাকে। অনবরত লোকসানের ফলে এরুপ ব্যবসায় সম্পর্কে জনমনে খারাপ ধারণা জন্মে এবং জাতির জন্য তা বোঝা হয়ে দাঁড়ায় ।
৫. নমনীয়তার অভাব (Lack of flexibility): এরূপ ব্যবসায় সরকারি নিয়ম-নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ থাকে বিধায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল কারবারি অবস্থার সাথে সঙ্গতি বিধানে ব্যর্থ হয়। ফলে তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না ।
৬. দুর্নীতি ও স্বনজনপ্রীতি (Corruption and nepotism): সাধারণভাবে এ ব্যবসায়ে কর্তাব্যক্তিদের আলাদা কোন স্বার্থ না থাকায় তাদের মধ্যে অন্যায় পথে স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে এর অভ্যন্তরে দুর্নীতি বাসা বাঁধে। এ ছাড়া এরূপ ব্যবসায় সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আত্মীয় পোষণের ক্ষেত্রে পরিণত হয় ।
৭. নীতির ঘন ঘন পরিবর্তন (Frequent change of policies): সরকারি প্রশাসনের ন্যায় এর পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকেও ঘন ঘন বদলি করা হয়। ফলে নির্বাহী বদলের সাথে নীতিরও পরিবর্তন ঘটে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের সাথেও এর নীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়। আর এরূপ নীতির পরিবর্তন ব্যবসায়ের অগ্রগতি ব্যাহত করে।
৮. গোপনীয়তা প্রকাশ (Expressing secrecy): আইনসভার বিশেষ আইনবলে এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিধায় সংসদে এর কার্যক্রম নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি বিভাগীয় সংগঠনের কাজ নিয়েও সরাসরি আলোচনার সুযোগ থাকে। ফলে ব্যবসায় গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
৯. বিলোপের অসুবিধা (Problem in dissolution): সরকারি প্রতিষ্ঠান বিধায় এর বিলোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংসদে ও জনসাধারণ্যে নানান কথা উঠে। শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আন্দোলনের সৃষ্টি হয় । এতে সরকার জনসমর্থনের বিষয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না । ফলে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও এর বিলোপ করা যায় না।
আরও দেখুন...