রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কারবারের প্রচলন বেশি। ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় উদ্দেশ্যগত দিক থেকে অন্যান্য ব্যবসায়ের চেয়ে ভিন্ন । অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয়। বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হয়।

  • জনকল্যাণ (Public Welfare): জনকল্যাণকে প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হয়। ব্যবসায়িক কার্যকলাপের মাধ্যমে মুনাফা অর্জিত হলেও সে মুনাফা আবার জনগণের কল্যাণেই খরচ করা হয়।
  • নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা (Maintenance of Secrecy & Security): বিশেষ কিছু খাতের গোপনীয়তা রক্ষা করা খুবই জরুরি। যেমন-প্রতিরক্ষা খাত, নোট ইস্যু ইত্যাদি। আর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার নিরিখে ঐ ধরনের খাতগুলো সরকারি মালিকানায় পরিচালিত হয়।
  • একচেটিয়া ব্যবসায় রোধ ( Prevention of monopoly business): একচেটিয়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকগণ যাতে সমাজে অশুভ প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন বা স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ না পান তা রোধের উদ্দেশ্যেও অনেক সময় ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গড়ে তোলা হয়।
  • দ্রুত শিল্পায়ন (Rapid industrialisation): দ্রুত শিল্পায়নের জন্য উদ্যোগ, পুঁজি ও ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা উদ্যোক্তাদের মাঝে থাকতে হয়। অথচ উন্নয়নশীল দেশসমূহের ব্যবসায়ীদের মাঝে এর অভাব থাকায় শিল্পায়ন ব্যাহত হয়। তাই সরকার সরাসরি উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করে ।
    আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ (Control of import and export): দেশের আমদানি ও রপ্তানির উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার উদ্দেশ্যেও কিছু কিছু বাণিজ্যিক সরকারি মালিকানায় গঠন ও পরিচালনা করা হয় । আমাদের দেশে টি.সি.বি. এরূপ প্রতিষ্ঠানের একটি উদাহরণ।
  • জাতীয় আয় বৃদ্ধি (Increasing national income): সরকারি মালিকানায় শিল্প-বাণিজ্য পরিচালনা করা হলে পুঁজিগত সুবিধার কারণে এর দ্রুত উন্নয়ন ঘটে। তদুপরি এরূপ প্রতিষ্ঠানের কর বা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা না থাকায় সহজেই জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ।
  • ভারী ও মৌলিক শিল্প প্রতিষ্ঠা (Establishing basic and heavy industries ): মূলধন সংস্থানের সীমাবদ্ধতা, অধিক ঝুঁকি এবং মূলধন প্রত্যাবর্তনে বা মুনাফা প্রাপ্তিতে বিলম্বের কারণে ব্যক্তিমালিকগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৌলিক ও ভারী শিল্পে বিনিয়োগ করতে চান না। অথচ শিল্পের বুনিয়াদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এরূপ খাতে বিনিয়োগ একান্ত অপরিহার্য। তাই এধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন করা হয়।
  • গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ও ক্ষতিকারক পণ্য নিয়ন্ত্রণ (Control of essential drug, herbal and harmful products): গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ও ক্ষতিকারক পণ্যের উৎপাদন ও বন্টন বেসরকারি খাতে অর্পণ করলে তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন-জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, আফিম, মদ ইত্যাদি। তাই যাতে এসব পণ্যের অন্যায় উৎপাদন ও বণ্টন হতে না পারে তজ্জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এরূপ পণ্যের ব্যবসায় করা যেতে পারে।

উপসংহারে বলা যায়, রাষ্ট্রীয়করণকৃত অথবা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যে সকল শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি আওতাধীনে থাকে তাকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে । মুনাফা অর্জন এ ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য নয়; মূল উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ ।

Content added By
Promotion