বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে জানতে হলে কোন বা কোন ধরনের পরিমাপের প্রয়োজন হয়। পদার্থের যে সব ভৌত বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা যায় তাদেরকে রাশি (quantity) বলে। যেমন, দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, আয়তন, বেগ, কাজ ইত্যাদি প্রত্যেকে এক একটি রাশি। পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্গত যে কোন রাশিকে ভৌত (physical) রাশি বলে।
কিছু কিছু ভৌত রাশিকে শুধুমাত্র মান দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়। আবার অনেক ভৌত রাশি রয়েছে যাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য মান ও দিক উভয়ই প্রয়োজন হয়। তাই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভৌত রাশিগুলোকে আমরা দুই ভাগে বিভক্ত করতে পারি ; যথা—
(ক) স্কেলার রাশি বা অদিক রাশি (Scalar quantity)।
(খ) ভেক্টর রাশি বা দিক রাশি বা সদিক রাশি (Vector quantity)।
যে সব ভৌত রাশির শুধু মান আছে, কিন্তু দিক নেই, তাদেরকে স্কেলার রাশি বা অদিক রাশি বলে। যেমন দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, জনসংখ্যা, তাপমাত্রা, তাপ, বৈদ্যুতিক বিভব, দ্রুতি, কাজ ইত্যাদি কেলার বা অদিক রাশি।
যে সব ভৌত রাশির মান এবং দিক দুই-ই আছে, তাদেরকে ভেক্টর রাশি বা দিক রাশি বলে। যেমন সরণ, বেগ, ত্বরণ, মন্দন, বল, ওজন ইত্যাদি ভেক্টর বা দিক রাশি।
কোন একটি ভেক্টর রাশিকে দুভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে, যথা- (১) অক্ষর দ্বারা এবং (২) সরলরেখা দ্বারা।
১। অক্ষর দ্বারা কোন একটি ভেক্টর রাশিকে চারভাবে প্রকাশ করা হয়, যথা-
(ক) কোন অক্ষরের উপর তীর চিহ্ন দ্বারা রাশিটির ভেক্টর রূপ এবং এর দুই পাশের দুটি খাড়া রেখা দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়। সাধারণভাবে শুধু অক্ষর দ্বারাও রাশিটির মান নির্দেশ করা হয়।
A অক্ষরের ভেক্টর রূপ Ā এবং মান রূপ | A | বা A
(খ) কোন অক্ষরের উপর রেখা চিহ্ন দ্বারা রাশিটির ভেক্টর রূপ এবং এর দুই পাশের দুটি খাড়া রেখ দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়।
A অক্ষরের ভেক্টর রূপ Ā এবং মান রূপ । A
(গ) কোন অক্ষরের নিচে রেখা চিহ্ন দ্বারা রাশিটির ভেক্টর রূপ এবং এর দুই পাশের দুটি খাড়া রেখ দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়।
A অক্ষরের ভেক্টর রূপ এবং মান রূপ | |
(ঘ) মোটা হরফের অক্ষর দিয়ে ভেক্টর রাশি প্রকাশ করা হয়। যেমন A অক্ষরের ভেক্টর রূপ এবং এর মান A ভেক্টর রাশি নির্দেশের ক্ষেত্রে (ক)-এ ব্যবহৃত চিহ্নই শ্রেয়। তাই এই বই-এ আমরা এই পদ্ধতিই ব্যবহার করব।
২। সরলরেখা দ্বারা ভেক্টর রাশি নির্দেশ করতে হলে রাশিটির দিকে বা সমান্তরালে একটি সরলরেখা অংকন করে সরলরেখাটির শেষ প্রান্তে একটি তীর চিহ্ন দ্বারা রাশিটির দিক এবং কোন স্কেলে উত্ত সরলরেখাটির দৈর্ঘ্য দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়। এ পদ্ধতিকে জ্যামিতিক উপায়ে ভেক্টরের নির্দেশনাও বলে।
মনে করি, একটি ভেক্টর রাশির মান 5 এবং এর দিক পূর্ব দিক। একে সরলরেখা দ্বারা প্রকাশ করতে হবে। এখন AC একটি সরলরেখা পূর্ব- পশ্চিম দিক বরাবর অংকন করে AC সরলরেখা হতে সুবিধামত দৈর্ঘ্যকে একক ধরে এর 5 গুণ দৈর্ঘ্য AB কেটে নিই এবং AB-এর শেষ প্রান্তে পূর্ব দিকে তীর চিহ্ন যুক্ত করি [চিত্র ১:১]। এই তীর চিহ্নিত সরলরেখাই ভেক্টর রাশিটি নির্দেশ করবে। ভেক্টর রাশি নির্দেশী সরলরেখার তীর চিহ্নিত প্রান্ত B-কে শীর্ষবিন্দু বা অন্ত বিন্দু এবং অপর প্রান্ত A-কে আদিবিন্দু বা মূলবিন্দু বা পাদবিন্দু বলে।