দণ্ড চুম্বকটি কুণ্ডলীর নিকটে স্থির থাকা অবস্থায় গ্যালভানোমিটারের কাঁটার কোন্ বিক্ষেপ হয় না, অর্থাৎ কুণ্ডলীতে কোনো তড়িৎ প্রবাহিত হয় না। কিন্তু যখন চুম্বকটি কুণ্ডলীর সাপেক্ষে গতিশীল তখন গ্যালভানোমিটারের কাঁটা বিক্ষিপ্ত হয়, অর্থাৎ কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহের উপস্থিত নির্দেশ করে। তুমি যদি চুম্বকটিকে স্থির রেখে কুণ্ডলীটিকে চুম্বকের দিকে আনা নেয়া করতে তাহলেও একই ফল পেতে। অর্থাৎ চুম্বক ও কুগুলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির ফলে কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়েছে।
চৌম্বকক্ষেত্রের সাহায্যে বন্ধ বর্তনী বা কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তি বা তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন হয় গতিশীল চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনী । গতিশীল চুম্বক বা তড়িৎবর্তনী দ্বারা কোনো বদ্ধ বর্তনীতে তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হওয়ার ঘটনাকে ভাড়িতচৌম্বকীয় আবেশ বা তড়িচ্চুম্বকীয় আবেশ বলে।
একটি গতিশীল চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনীর সাহায্যে অন্য একটি বন্ধ বর্তনীতে ক্ষণস্থায়ী তড়িচ্চালক শক্তি ও তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতিকে তাড়িতচৌম্বকীয় আবেশ বলে। একে তাড়িতচৌম্বক আবেশও বলা হয়।
চুম্বকের দুই মেরুর মাঝখানে আয়তাকার কুণ্ডলীকে ক্রমাগত ঘুরিয়ে কুণ্ডলীতে নিরবচ্ছিন্ন তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায় যা ৫.১২ অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ডায়নামো, জেনারেটর ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এই নীতির উপর ভিত্তি করেই তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়।
শুধু চুম্বকের সাহায্যেই যে বন্ধ বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ আবিষ্ট হয়, তা নয়। একটি তড়িত্ৰাহী ৰতনীর সাহায্যেও অন্য বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ আবিষ্ট করা যায়।
আমরা জানি, তড়িৎ প্রবাহের জন্য তড়িচ্চালক শক্তির প্রয়োজন। উপরে বর্ণিত পরীক্ষাগুলো থেকে দেখো যায় এই তড়িৎ প্রবাহের জন্য কোনো তড়িচ্চালক শক্তির উৎস নেই। তাহলে তড়িৎ প্রবাহিত হয় কীভাবে? আসলে কোনো চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনী এবং কুণ্ডলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির ফলে কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তির উদ্ভব হয় যা তড়িৎ প্রবাহ চালনা করে। একেই আৰিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়। কোনো চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনী এবং বদ্ধ বর্তনী বা কুণ্ডলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির ফলে বন্ধ বর্তনী বা কুণ্ডলীতে যে তড়িচ্চালক শক্তির উদ্ভব হয় তাকে আৰিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি বলে। এই আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির মান হয় কুণ্ডলীর সাথে সংশ্লিষ্ট চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হারের সমান যা ৫.৬ অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
আমরা জানি, একটি গতিশীল আধান বা স্থায়ী চুম্বক তার চারপাশে চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি করে। চৌম্বকক্ষেত্র বিদ্যমান এমন কোনো স্থানে কোনো তল কল্পনা করলে তার সাথে চৌম্বক ফ্লাক্স সংশ্লিষ্ট থাকে বা ঐ তল দিয়ে চৌম্বক ফ্লাক্স অতিক্রম করে।
কোনো তলের ক্ষেত্রফল A এবং ঐ তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্র হলে [চিত্র ৫.১ (ক)] চৌম্বক ফ্লাক্স
= AB
কিন্তু যদি চৌম্বকক্ষেত্র তলের লম্ব বরাবর ক্রিয়া না করে লম্বের সাথে কোণে ক্রিয়া করে [চিত্র ৫.৪ (খ) তাহলে ঐ তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্রের উপাংশ হবে B । সুতরাং চৌম্বক ফ্লাক্স হবে, = AB ... (5.2)
এখন কে একটি ভেক্টর হিসেবে গণ্য করা হয় যার মান A ঐ তলের ক্ষেত্রফল নির্দেশ করে এবং দিক হয় ঐ তলের লম্ব বরাবর বহির্মুখী। সুতরাং উপরিউক্ত সমীকরণের হলো ক্ষেত্রফল ভেক্টর এবং চৌম্বকক্ষেত্র এর অন্তর্ভুক্ত কোণ এবং এই সমীকরণ দাঁড়ায়,
= . .. (5.3)
সুতরাং ক্ষেত্রফল ভেক্টর ও চৌম্বকক্ষেত্র এর স্কেলার গুণফল দ্বারা চৌম্বক ফ্লাক্স পরিমাপ করা হয়। (5.3) সমীকরণ থেকে দেখা যায়, চৌম্বক ফ্লাক্স একটি স্কেলার রাশি। শিলার গুণফল দ্বারা চৌম্বক ফ্লাক্স একটি স্কেলার রাশি।
(5.2) সমীকরণ থেকে দেখা যায়, চৌম্বক ফ্লাক্সের একক হচ্ছে টেসলা মিটার২ (T m2)। একে ওয়েবার (Wb) ও বলা হয়।
:- 1 Wb = 1 t m2
ওয়েবারের সংজ্ঞা কিন্তু এই সমীকরণ থেকে দেয়া হয় না। এস. আই. তে ওয়েবারের যে সংজ্ঞা দেয়া হয় তা ৫.৬ অনুচ্ছেদে বর্ণনা করা হয়েছে।
কোনো কুণ্ডলীর সাথে সংশ্লিষ্ট চৌম্বক ফ্লাক্স 10 Wb বলতে বোঝায় ঐ কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল 1m2 হলে কুণ্ডলীর তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্রের উপাংশ হচ্ছে 10 T ।