এনজাইমের কাজ হলো কোনো বিক্রিয়কে বা সাবস্ট্রেটকে ভেঙে এক বা একাধিক বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থ বা প্রোডাক্টে পরিণত করা। সাবস্ট্রেটটি প্রোডাক্টে পরিণত হওয়ার সময় তাকে শক্তির বাধা (energy barrier) অতিক্রম করতে হয়। এই বাধা অতিক্রম করতে যে শক্তি ব্যয় করতে হয় তাকে কার্যকরী শক্তি বা সক্রিয়করণের শক্তি (energy of activation) বলে । অধিকাংশ এনজাইম বিক্রিয়ায় কার্যকরী শক্তির মান মাত্র 2000-8000 cal/mole। সাবস্ট্রেটের সঙ্গে এনজাইমযুক্ত হলে কার্যকরী শক্তির
চাহিদা হ্রাস পায়, এর ফলে বিক্রিয়ায় গতি ত্বরান্বিত হয়। এনজাইমের এক বা একাধিক বিশেষ সাইট বা স্থান থাকে। যেমন—
সক্রিয় স্থান বা অ্যাকটিভ সাইট (Active site): এনজাইমের এক বা একাধিক সক্রিয় স্থান বা অ্যাকটিভ সাইট থাকে। এ স্থানেই সাবস্ট্রেট যুক্ত হয়।
অ্যালোস্টেরিক সাইট (Allosteric site): এ স্থানে কিছু এনজাইমের বিশেষ অণু বা ইফেক্টর যুক্ত হয়, যা ঐ এনজাইমে বিশেষ অণু বা ইফেক্টর যুক্ত হয়, যা ঐ এনজাইমের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ইফেক্টর অ্যাকটিভেটর বা ইনহিবিটর (Lock and Key Hypothesis): হিসেবে কাজ করে। যেসব পদার্থ এনজাইমের কাজে বিঘ্ন ঘটায়। তারাই ইনহিবিটর। ইনহিবিটর আগেই এনজাইমের সাথে যুক্ত হয়ে গেলে অ্যাকটিভ সাইটে সাবস্ট্রেট আর যুক্ত হতে পারে না। ইনহিবিটর অ্যাকটিভ সাইট নষ্ট করে দিতে পারে।
১. তালা-চাবি মতবাদ (Lock and Key Hypothesis) : জার্মান বিজ্ঞানী এমিল ফিশার ( Emil Fischer, 1874) এই মতবাদটি প্রবর্তন করেন। তাঁর মতবাদ অনুযায়ী এনজাইমের আণবিক গঠন বা আকৃতি অনমনীয় (rigid)। সাবস্ট্রেট এনজাইমের সক্রিয় স্থানে অনমনীয় (rigid)। সাবস্ট্রেট এনজাইমের সক্রিয় স্থানে (active site) যুক্ত হয়। যেমন- একটি নির্দিষ্ট চাবি (Key) কোনো একটি নির্দিষ্ট তালাতে (Lock) প্রবেশ করতে ও যুক্ত হতে পারে। ফিশারের (Lock & key) মডেল অনুসারে, এনজাইমের সক্রিয় স্থানটি (active site) অনমনীয় ও তার আকৃতি পূর্বনির্ধারিত ।
২. এনজাইম-সাবস্ট্রেট যৌগ মতবাদ (Enzyme substrate compound theory) : মাইকেলিস (Michaelish) এবং মেনটেন (Menten) 1912 সালে লক্ষ করেন যে, সাবস্ট্রেটের অণু আর্দ্রবিশ্লিষ্ট হওয়ার পূর্বে এনজাইমের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং পরে বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থ হিসেবে এনজাইমের উপরিতল থেকে নির্গত হয়। এর উপর ভিত্তি করে তাঁরা এনজাইম-সাবস্ট্রেট যৌগ গঠনের মতবাদ প্রচার করেন। তাঁদের মতবাদ অনুসারে, এনজাইম বিক্রিয়া দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায়ে এনজাইম (E) সাবস্ট্রেটের (S) সঙ্গে যুক্ত হয়ে এনজাইম-সাবস্ট্রেট (ES) যৌগ গঠন করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই অন্তর্বর্তী যৌগ বিশ্লিষ্ট হলে বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থ (P) নির্গত হয় এবং এনজাইম মুক্ত হয়। যথা—
(i) E+S→ES
(ii) ES →E+P
তাঁদের এই মতবাদটি তালা-চাবি মতবাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।
৩. আবেশিত উপযুক্ততা মতবাদ (Induced Fit Hypothesis) : বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কোশল্যান্ড (Daniel Koshland, 1958) এই মতবাদের প্রবর্তক। তাঁর এনজাইমের সক্রিয় স্থানগুলো (active site) যথেষ্ট নমনীয়। সক্রিয় স্থানটি নমনীয় হওয়ার জন্য সাবস্ট্রেট এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে এনজাইসের আণবিক আকৃতির পরিবর্তন ঘটে, যা এনজাইমের সক্রিয় স্থানকে আরও দৃঢ় করে । এর ফলে সাবস্ট্রেট দৃঢ়ভাবে এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত বা ফিট হতে পারে এবং সাবস্ট্রেটের বিভিন্ন বস্তুকে দুর্বল করে বিক্রয়ালব্ধ পদার্থ (product) পরিণত হতে সাহায্য করে। এই মতবাদটি বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। এই মতবাদকে তালা-চাবি (lock and key) মতবাদের সংশোধিত সংস্করণ বলা যেতে পারে। [কোশল্যান্ডের মত অনুসারে, এনজাইমের সক্রিয় স্থানে দুটি অংশ থাকে- বাট্রেসিং গ্রুপ (buttressing group) এবং ক্যাটালিটিক গ্রুপ (catalytic group)! বাট্রেসিং গ্রুপ সাবস্ট্রেটকে ধরে রাখে এবং ক্যাটালিটিক গ্রুপ সাবস্ট্রেটের বিভিন্ন বস্তুকে দুর্বল করে বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থে (product) পরিণত হতে সাহায্য করে।