ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর গঠিত-
পেঁপের রিং স্পট রোগ (Ring Spot Disease of Papaya ):
রিং স্পট রোগ পেঁপের একটি অন্যতম লংসাত্মক রোগ এবং শুধুমাত্র আফ্রিকা ছাড়া পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে পেঁপে জন্যে সে সব অঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় । তবে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও চায়নার বিভিন্ন অংশে এ রোগের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি) উদ্ভিদ রোগত বিদ জেনসন (Jensen, 1949) প্রথম এ রোগটির নাম দেন। Ring Spot
রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু : Papaya Ringspot Virus Type P (PRSV-P) নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ রোগ হয়ে থাকে। এটি Ponywns গণের এবং Polyviridae গোত্রের সদস্য। এটি নমনীয় সভাকার কণিকা যা প্রায় ৭৬০- room লম্বা। ভিরিয়নস সূত্রাকার ও অনাবৃত। RNA একসূত্রক এবং লম্বা প্রোটিন আবরণীতে আবৃত।
রোগের লক্ষণঃ
গাছে যে কোন বয়সের গাছে এ রোগ হতে পারে। আক্রমণের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। তখন কান্তে গাঢ় সবুজ বর্ণের আঁকাবাঁকা দাগ দেখা যায়। অল্প বয়স্ক গাছ এ রোগে আক্রান্ত হলে এর বৃদ্ধি রহিত হয়। এবং এই কোন ফল ধরে না। রোগের চরম পর্যায়ে গাছে ফাটল দেখা দেয় এবং গাছ মরে যায়।
পাতায় : বিকৃতিসহ গোল দাগ (distortion ring spot), ক্লোরোপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে পাতায় তীব্র সবুজ-হলুদে নক্সা, পাতা বিভিন্ন মাত্রায় হলদে রং এবং পাতা কুকড়ে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ সৃষ্টি করে । পত্রবৃত্তের গোড়ায় পানিতে ভেজা গোল দাগ দেখা যায় যা কান্ডের উপরের দিকে ক্রমশ বিস্তৃত হয়। আক্রান্ত গাছের পাতা ছোট হয়ে জন্মায় ফলে কান্ড ছোট হয়ে যায় এবং গাছ খর্বাকায় হয়ে পড়ে। গাছের ফল ধারণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। শীত মৌসুমে লক্ষণ প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
ফল-এ : ফলে গাঢ় সবুজ রংয়ের রিং-এর মতো দাগ দেখা দেয়। ফলের সংখ্যা ও আকারে ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। ফল পরিপক্ক বা হলুদ হওয়ার সাথে সাথে দাগ অস্পষ্ট হতে থাকে। বিশেষ করে আক্রান্ত গাছে ফল ধরলে ফলে অনিয়মিত ফোলা ফোলা অংশ দেখা দেয়। অনেক সময় পুষ্ট হওয়ার আগেই ফল ঝরে যায়। গুণগতমান ও পরিমাণে পেঁপের পেপেইন ও মিষ্টতা বহুলাংশে হ্রাস পায় ।
রোগের বিস্তার : এফিড (Aphid) জাতীয় পতঙ্গ (Aplus gossypi, Mymus persicae) পেঁপের রিং স্পট'- ভাইরাস রোগ ছড়ায়। এ ভাইরাস পতঙ্গদেহে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে না এবং পতঙ্গদেহে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে পারে না। মাক্রান্ত গাছের রসের সাথে পতঙ্গের ঠোঁটে যে ভাইরাস আসে তাই সে সুস্থ পেঁপে গাছে সংক্রমিত করে মাত্র। পতঙ্গ হয় যান্ত্রিকভাবে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে বীজের মাধ্যমে PRSV ছড়ানোর কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
প্রতিকারের উপায় : নিচে বর্ণিত উপায়ে এই রোগের প্রতিকার করা যায়।
১. এ জমিতে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাথে সাথেই রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২.জাল (net) দিয়ে পুরো জমি (পেঁপের গাছসহ) ঢেকে দিতে হবে যেন এফিড দ্বারা নতুন গাছ আক্রান্ত না হতে পারে।
৩. এফিড নিধনের জন্য পেস্টিসাইড স্প্রে করা যেতে পারে।
৪. চারা লাগানোর প্রথম থেকেই নিয়মিত পেস্টিসাইড স্প্রে করলে এফিড দ্বারা রোগ ছড়ায় না। * রোগাক্রান্ত জমিতে পেঁপে গাছের প্রুনিং (পাতা কাটা, ছাঁটা ইত্যাদি) বন্ধ রাখতে হবে, কারণ কাটা-ছেড়া স্থান দিয়ে রোগাক্রমণ ঘটে থাকে।
প্রতিরোধের উপায় : নিম্নলিখিত উপায়ে রোগটি প্রতিরোধ করা।
১. রোগ প্রতিরোধক্ষম জাতের চাষ করতে হবে। যায়।
২. নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আক্রান্ত গাছ শনাক্ত করে অপসারণ করতে হবে।
৩. আক্রান্ত বাগান থেকে যথাসম্ভব দূরে নতুন বাগান তৈরি করে নতুন আবাদী জমির পরিবর্তন করতে হবে।
৪. যে সমস্ত উদ্ভিদ এ রোগে আক্রান্ত হয় না তার সাথে মিশ্র চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করতে হবে। মাধ্যমে
৫. এ পর্যন্ত PRSV রোগ প্রতিরোধী রোগের কোন ভ্যারাইটি উদ্ভাবন করা হয়নি তবে জীব প্রযুক্তির হাওয়াই-এ পেঁপের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেটি PRSV প্রতিরোধী।
৬. ট্রান্সজেনিক জাত ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ। জিনগান পদ্ধতি ব্যবহার করে PRSV'S Coat Protein জিনকে ভ্রূণ টিস্যুতে সংযুক্ত করে নতুন ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে (১৯৯৮ সালে)। এই ট্রান্সজেনিক জাত (GMO) PRSV দ্বারা আক্রান্ত হয় না।