ঘাস ফড়িং-এর গিজার্ডের পর থেকে শুরু করে উদরের মধ্যাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট অংশটিকে বলা হয়-
প্রতীক প্রাণীঃ ঘাসফড়িং (The Grasshopper):
আরশোলার মতো ঘাসফড়িংও একটি অতিপরিচিত পতঙ্গ (insect)। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সবখানে সবুজ শস্যক্ষেত বা সবজির বাগানে বিভিন্ন ধরনের ঘাসফড়িং একা বা দলবদ্ধ হয়ে বিচরণ করে। ঘাসফড়িং-এর কিছু প্রজাতি পঙ্গপাল (locust) নামে পরিচিত। এগুলো বাদামি বর্ণের মাঝারি আকৃতির পতঙ্গ এবং ঝাঁক বেঁধে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। কখনও কখনও এদের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে মুহুর্তের মধ্যে একটি ক্ষেত্রের সমস্ত ফসল খেয়ে সাবাড় করে ফেলতে পারে। পঙ্গপাল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের শস্যক্ষেতের জন্য মারাত্মক হুমকি ।
ঘাসফড়িং যেহেতু একটি করে কাইটিনময় বহিঃকংকাল, একটি তিনখণ্ডবিশিষ্ট দেহ (মস্তক, বক্ষ ও উদর), তিনজোড়া সন্ধিযুক্ত পা, জটিল পুঞ্জাক্ষি এবং একজোড়া অ্যান্টেনা বহন করে সে কারণে এদের Insecta শ্রেণিভুক্ত সদস্য বা পতঙ্গ নামে অভিহিত করা হয়। ঘাস ও লতাপাতার মধ্যে থেকে সেখানেই লাফিয়ে লাফিয়ে চলে দেখে এর নাম হয়েছে “ঘাসফড়িং”।
সাড়া পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় এগারো হাজার প্রজাতির ঘাসফড়িং শনাক্ত করা হয়েছে। সাধারণ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে রয়েছে Schistocerca americana, Romalea microptera,Poekilocerus pictus.
বাসস্থান (Habitat) : ঘাসফড়িং যেহেতু ঘাস, পাতা, শস্য ও শস্যের কচিপাতা আহার করে সে কারণে এমন ধরনের নিচু বসতি এদের পছন্দ। মূলত সব ধরনের বসতিতেই (তৃণভূমি, বারিবন, চারণভূমি, মাঠ, মরুভূমি, জলাভূমি প্রভৃতি) বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসফড়িং দেখা যায়। স্বাদুপানির ও ম্যানগ্রোভ জলাশয়ে যেহেতু পানির উঠানামা বেশি হয় এবং ডিম পাড়ার জায়গা প্লাবিত হয়ে যায় সে কারণে এসব বসতিতে ঘাসফড়িং কম বাস করে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘাসফড়িং বিপুল সংখ্যায় পরিযায়ী (migratory) হয়, দিনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
খাদ্য (Food) : ঘাসফড়িং তৃণভোজী বা শাকাশী (herbivorous) প্রাণী। ডিম থেকে ফোটার পরপরই, নিম্ফ অবস্থায় ঘাসফড়িং চার পাশের যে কোন ছোট ছোট, সহজপাচ্য গাছ, ঘাস বা নতুন কোমল শাখা-প্রশাখা খেতে শুরু করে । দু'একবার খোলস মোচনের পর একটু বড় হলে শক্ত উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে। তরুণ ঘাসফড়িং পূর্ণাঙ্গদের মতোই নির্দিষ্ট উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে। তখন খাদ্য তালিকায় ঘাস, পাতা ও শস্য প্রধান খাবার হিসেবে উঠে আসে। বেশির ভাগ ঘাসফড়িং অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে আহার সংগ্রহ করে, দু'একটি প্রজাতি সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে।