কোন দ্রব্যের উপস্থিতিতে গাজরের মূল কমলা বর্ণের হয়?

Created: 2 years ago | Updated: 3 months ago
Updated: 3 months ago

প্লাস্টিডঃ উদ্ভিদ কোষস্থ সজীব বস্তু (প্রোটোপ্লাজম) এর ভিতর সাইটোপ্লাজমস্থ কোষীয় যে সর্ব বৃহৎ অঙ্গাণু বা ক্ষুদ্রাঙ্গটি স্ট্রোমা, গ্রানা কণা ও লিপো প্রোটিন ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ থাকে তাকে প্লাস্টিড বলে। প্লাস্টিড হচ্ছে উদ্ভিদ কোষের একটি সবুজ ক্ষুদ্রাঙ্গের নাম। আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা ১৮৮৩ সালে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী শিম্পার সবুজ বর্ণের ধরণের কণা উদ্ভিদ কোষে দেখতে পান। এক কোষীয় কণা বা অঙ্গাণু ছিল প্লাস্টিড।

প্লাস্টিড এর গঠনঃ
প্লাস্টিড এর সংজ্ঞা থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে, প্লাস্টিড এ তিন ধরণের কোষীয় বস্তু থাকা আবশ্যক। এই তিনটি বস্তু হল, স্ট্রোমা, গ্রানা কণা ও লিপো-প্রোটিন ঝিল্লি।  স্ট্রোমা ও গ্রানা কণা সমূহ অভ্যন্তরীণ ঝিল্লী দ্বারা আবিষ্ট থাকে। স্ট্রোমা ও গ্রানা সম্মলিতভাবে থাইলাকয়েড মেমব্রেন তৈরি করে। থাইলাকয়েড মেমব্রেন সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে যা ক্লোরোপ্লাস্ট প্লাস্টিডে দেখা যায়। প্লাস্টিডের বাইরের ঝিল্লী হচ্ছের প্রোটিন দ্বারা নির্মিত। প্লাস্টিডের বাইরের ঝিল্লীর অতিরিক্ত অংশকে লিপো প্রোটিন ঝিল্লী। যত ধরণের প্লাস্টিড আছে সবধরনের প্লাস্টিডেই এই তিনটি বস্তু বিদ্যমান। এছাড়াও প্লাস্টিডে রাইবোসোম ও ডি এন এ থাকে।

প্লাস্টিড এর প্রকারভেদঃ

প্লাস্টিড সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ

•লিউকোপ্লাস্টঃ লিউকোপ্লাস্ট বর্ণহীন হয়ে থাকে, কারন এই ধরণের প্লাস্টিড ভূমির নিচে উদ্ভিদের মূলে বা ভূ-নিম্নস্থ কান্ডে অবস্থান করে।
লিউকোপ্লাস্ট তিন ধরনের হয়ে থাকে 
 ক.অ্যামাইলোপ্লাস্টঃ শর্করা জাতীয় খাদ্য সঞ্চয়  করে।
 খ.অ্যালিউরোপ্লাস্টঃ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সঞ্চয়  করে।
 গ.এলাইওপ্লাস্টঃ তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য সঞ্চয় করে। 
 
•ক্রোমোপ্লাস্টঃ ক্রোমোপ্লাস্ট বর্ণযুক্ত হয়ে থাকে। এই ধরণের প্লাস্টিডকে রঙ্গিন প্লাস্টিডও বলা হয়ে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে, উদ্ভিদের যেসব অঙ্গ রঙিন থাকে, সেই সব অঙ্গের প্লাস্টিডকে ক্রোমোপ্লাস্ট বলা হয়ে থাকে। ফুলের রঙিন পাপড়ি, মূলা,গাজর,মিষ্টি আলুর মূল/শিকরে ক্রোমোপ্লাস্ট থাকে।

•ক্লোরোপ্লাস্টঃ এই ধরনের প্লাস্টিড রঙিন, তবে তা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। যেকোন উদ্ভিদের সবুজ অংশকে ক্লোরোপ্লাস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।উচ্চতর উদ্ভিদে লেন্স আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে।নিন্মশ্রেণীর উদ্ভিদে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিড থাকে। প্লাস্টিডের মধ্যে ক্লোরোপ্লাস্ট এর গুরুত্ব অপরিসীম।

প্লাস্টিডের প্রধান কয়েকটি কাজঃ
*কোষে শ্বেতসার, চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার সংগ্রহ করতে সাহায্য করে।
*পাতা রঙিন ও ফুলকে সৌন্দর্য বর্ধিত করে থাকে।
*কোষে ফটোফসফোরাইলেশন ও ফটোরেসপিরেশনে অংশগ্রহণ করে।
*সূর্যের আলোর উপস্থিতে সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।

ক্লোরোপ্লাস্টঃসালোকসংশ্লেষণে অংশগ্রহণকারী সবুজ রঞ্জকযুক্ত প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলা হয়। 1883 সালে বিজ্ঞানী Andreas Schimper ক্লোরোপ্লাস্ট আবিষ্কার করেন।সর্বপ্রথম স্টকিং ১৯৬০ সালে Spirogyra উদ্ভিদে DNA থাকার প্রমান পান।

ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠনঃ

•ক্লোরপ্লাস্টের আকৃতিঃ  বিভিন্ন উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট বিভিন্ন আকৃতির , যেমন – গোলাকার , ডিম্বাকার , জালকাকার , প্যাঁচানো ফিতার মতো ইত্যাদি হয়।

•আবরণীঃ ক্লোরোপ্লাস্ট দুটি পর্দা দিয়ে গঠিত । দুটি পর্দার মধ্যবর্তী স্থানকে পেরিপ্লাস্টিডিয়াল স্পেস বলে।

•স্ট্রোমাঃ ক্লোরোপ্লাস্টিডের ভিতরের স্বচ্ছ জেলির মতো তরলকে ধাত্র বা স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমার মধ্যে শ্বেতসার , প্রোটিন দানা , রাইবোজোম , DNA , RNA , উৎসেচক , তৈলবিন্দু , ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে।স্ট্রোমার মধ্যে চাকতির মতো অসংখ্য অংশ স্তরে স্তরে সাজানো থাকে । পর্দাবৃত চাকতির স্তরগুলিকে একত্রে গ্রানা বলে।

•থাইলাকয়েডঃ প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট এ ৪০ থেকে ৬০ টি গ্রানা থাকে। গ্রানা গুলো পরস্পর সমান্তরালে সজ্জিত , একক পর্দাবৃত , একাধিক চ্যাপটা থলির মতো বস্তু বা থাইলাকয়েড দ্বারা গঠিত।প্রতিটি গ্রানাম ১০-১০০ টি থাইলাকয়েড নিয়ে গঠিত।এই থাইলাকয়েডের মধ্যে থাকে অসংখ্য কোয়ান্টাজোম দানা থাকে যা সালোকসংশ্লেষ এর একক রূপে পরিচিত।

•ATP- synthases: থাইলাকয়ড ঝিল্লি অসংখ্য গোল বস্তু ধারণ করে এদের ATP-synthases বলে। এতে ATP তৈরির সব এনজাইম থাকে।

•ফটোসিন্থেটিক ইউনিটঃ থাইলাকয়েড ঝিল্লিতে ফটোসিন্থেটিক ইউনিট থাকে। এতে ক্লোরোফিল-a,ক্লোরোফিল-b,ক্যারোটিন,জ্যান্থোফিলের ৩০০-৪০০ টি অণু অবস্থান করে।এছাড়া ফসফোলিপিড,কুইনোন ও বিভিন্ন এনজাইম থাকে।

ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজঃ
*ক্লোরোপ্লাস্ট সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।
*ক্লোরোপ্লাস্টের কোয়ান্টোজোমে ফটোফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়ায় ADP অণুকে ATP অণুতে রূপান্তরিত করে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিরূপে আবদ্ধ করে।
*ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা মধ্যস্থ উৎসেচক গুলো সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ সম্পাদনে ভূমিকা রাখে।
*বংশানুসারে নিজের স্বকীয়তা ধারণ করে রাখে।

Content added || updated By
Promotion