১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে শরিফ কমিশনের শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে ছাত্র আন্দোলন নতুন রূপ লাভ করে । এ প্রতিবেদনের সুপারিশে ছাত্রদের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় । ফলে কঠোর আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলন ‘বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন' নামে পরিচিত। ১৫ই আগস্ট থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ই সেপ্টেম্বর হরতাল পালনকালে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত এবং কয়েকশ' আহত হয়। এ আন্দোলনের ফলে শরিফ কমিশনের সুপারিশ স্থগিত হয় । এই আন্দোলনের ফলে ছাত্ররা আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শক্তিতে পরিণত হয় ।
১৯৬২ সালের ৮ই জুন সামরিক আইন স্থগিত করা হলে দলীয় রাজনীতির অধিকার ফিরে আসে । আইয়ুব খান নিজেই কনভেনশন মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এসময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে আইয়ুববিরোধী মোর্চা গঠনের আহ্বান জানান। ফলে আওয়ামী লীগ, নেজামে ইসলাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কাউন্সিল মুসলিম লীগ ও নূরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ মিলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ গঠিত হয়। এ ফ্রন্টের উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ১৯৫৬ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়া। খুব তাড়াতাড়ি এ ফ্রন্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে ।
১৯৬৩ সালের ৫ই ডিসেম্বরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইন্তেকাল করেন। ১৯৬৪ সালের শুরুতেই আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন যাত্রা শুরু হয়। এর ফলে এনডিএফ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ১৯৬৫ সালের ২রা জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানবিরোধী একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য আবার আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দল মিলে একটি জোট বা COP (Combined Opposition Party) গঠন করে । মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহকে কপ-এর পক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হয় । নির্বাচনে মৌলিক গণতন্ত্রীদের পূর্ব থেকেই আইয়ুব খান নিজের অনুকূলে নিয়ে আসেন । জনগণ ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রকাশ করে কিন্তু নির্বাচনে আইয়ুব খান জয়ী হন । প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয় । সেখানেও আইয়ুব খানের কনভেনশন মুসলিম লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ।
আরও দেখুন...