নাতাশা, সাইরা, আরিবা ও কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা একসাথে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোর ৬.৩০ মিনিটে শহীদ মিনারে যাবে। সেখানে উপস্থিত হয়ে সবাই মিলে পুষ্প অর্পন করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬.৩০ মিনিট পার হয়ে গেল। নাতাশার ঘুম ভাঙ্গলো না। ঘুম থেকে জেগে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার আর শহীদ মিনারে যাওয়া হলো না। এক্ষেত্রে তার উচিত ছিল ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখা অথবা বাবা-মাকে বলে রাখা যাতে তারা তাকে জাগিয়ে দেন। বুদ্ধি, পরিকল্পনা ও সময়টাকে সে ভালোমতো কাজে লাগায় নি। কাজেই বোঝা যাচ্ছে এখানে ওর মধ্যে কিছুর অভাব ছিল। বলতে পারো সেটা কি? সেটা হলো ব্যবস্থাপনা।
মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন ধারার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। গৃহে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানাবিধ কার্যকলাপে ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। পরিবারে বসবাস করে প্রতিটি মানুষ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যসমূহ অর্জন করার জন্য বিভিন্ন রকম কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সে কাজের পরিকল্পনা বা কর্মসূচি প্রণয়ন করে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, পরামর্শ করে কাজগুলো সংঘটিত করে, কাজের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং অবশেষে কাজের ভালোমন্দ মূল্যায়ন বা যাচাই করে। তার এসব ধারাবাহিক কার্যকলাপের মধ্যেই গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন ঘটে।
যে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যেমন ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য তেমনি গৃহকে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনার একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। একটি পরিবারকে তার সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিবার কতগুলো কাজ সম্পাদন করে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জন করতে চেষ্টা করে। যেখানে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি কোনো একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়, সেখানেই ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়। সুতরাং প্রতিষ্ঠান হিসেবে গৃহ তথা পরিবারের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন আছে । নিকেল ও ডরসি গৃহ ব্যবস্থাপনাকে পারিবারিক জীবনযাপনের প্রশাসনিক দিক বলে অভিহিত করেন। তাঁরা বলেন যে, পারিবারিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য মানবীয় ও বস্তুবাচক সম্পদসমূহের ব্যবহারে পরিকল্পনা, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন করাই হচ্ছে গৃহ ব্যবস্থাপনা ।
গৃহ ব্যবস্থাপনা হলো একটি ধারাবাহিক গতিশীল প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং যা কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে সম্পন্ন করা হয়। গৃহ ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞাকে বিশ্লেষণ করলে তিনটি বিষয় লক্ষ করা যায়। যেমন :
সম্পদ ব্যবহারে ধারাবাহিক কর্মপন্থা-পরিকল্পনা, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন । লক্ষ্য স্থির হওয়ার পর সব রকম সম্পদের ধারণা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হয়। যেমন- কোনো কাজ করতে গেলে প্রথমে কাজের একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। এরপর পরিকল্পিত কাজগুলোকে সংগঠিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শেষ ধাপে কাজের ফলাফল যাচাই করে দেখতে হবে যে, কাজটি কতোটা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। এভাবে ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম শেষ হলে, আরও নতুন উদ্দেশ্য স্থির হয় এবং তা অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয় ।
আরও দেখুন...