লক্ষ্য কী?
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গৃহ ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি। লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই আমাদের সকল কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়। যেখানে লক্ষ্য অর্জনের প্রশ্ন রয়েছে সেখানেই ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন দেখা দেয়। সাধারণভাবে বলা যায় ব্যক্তি বা পরিবার কী চায় বা কী করতে চায় তাই হচ্ছে লক্ষ্য। লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সব সময় মানুষের চেতন মনে অবস্থান করে, খুবই স্পষ্টভাবে বোঝা যায় এবং সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। সকল মানুষের মনে সর্বদাই কোনো না কোনো লক্ষ্য বিরাজ করে। একটি লক্ষ্য অর্জন হলেই আমরা নতুন কোনো লক্ষ্য স্থির করে ফেলি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আমাদের কাজের ধারা নির্ধারণ করে দেয়, ফলে আমরা সে অনুযায়ী এগিয়ে যাই।
প্রতিটি পরিবার ছোট-বড় নানারকম লক্ষ্য পোষণ করে। সাধারণত মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে আমাদের লক্ষ্য স্থির হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো পরিবার অর্থ উপার্জনকে বেশি প্রাধান্য দেয়, আবার কেউ সম্পত্তি বৃদ্ধি করতে চায়, কেউ বা তার সদস্যদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়।
লক্ষ্য হচ্ছে একটি কাম্য উদ্দেশ্য, যার সুনির্দিষ্ট পরিধি আছে এবং যা ব্যক্তির কার্যাবলিকে নির্দেশ দান করে। লক্ষ্যের নির্দিষ্ট পরিধি থাকতে হবে এ জন্য যে, কাম্য লক্ষ্যটি ব্যবস্থাপকের কাছে সুস্পষ্ট না হলে, তা অর্জন করা সম্ভব নয়। লক্ষ্য নির্দিষ্ট হলেই তা অর্জনের কার্যাবলিও সঠিকভাবে সম্পাদিত হবে। অর্থাৎ লক্ষ্য ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করে এবং তাকে সাফল্যের সাথে কার্যকর করতে সাহায্য করে। পরিবারের প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু লক্ষ্য থাকে। তবে যখন সম্মিলিতভাবে কোনো কাজ স্থির করা হয়, তখন দ্বন্দ্ব কম হবে এবং লক্ষ্য অর্জনও সহজতর হবে।
লক্ষ্যের প্রকারভেদ
নিকেল ও ডরসি লক্ষ্যকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথা—
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকে স্থায়ী লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ লক্ষ্য সময় সাপেক্ষ এবং এটা সর্বদা মনের মধ্যে বিরাজমান। এ লক্ষ্য মধ্যবর্তী লক্ষ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে এর গুরুত্ব অনেক বেশি ।
মধ্যবর্তীকালীন লক্ষ্য
পরিবার তার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রায়ই মধ্যবর্তীকালীন বা স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকে। এ লক্ষ্যগুলো দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের তুলনায় অধিক স্পষ্ট। সেজন্য এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক বেশি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় ।
তাৎক্ষণিক লক্ষ্য
এ লক্ষ্য হলো ছোট ছোট লক্ষ্য, যার মধ্যে খুব বেশি একটা কাজের প্রয়োজন হয় না। অল্প কাজ করলেই অনেক সময় লক্ষ্যটি অর্জন করা যায়। অর্থাৎ লক্ষ্য নির্ধারণের সাথে সাথেই তা অর্জন করা যায়।
উদাহরণের সাহায্যে এ তিন প্রকার লক্ষ্যকে ব্যাখ্যা করা যায়। সোমা নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চায়। এটা তার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য। সে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সে নিজেকে প্রস্তুত করছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাই সে এখনই যোগ্য টিউটরের সন্ধান করছে— এগুলো হলো সোমার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মধ্যবর্তীকালীন লক্ষ্য।
উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সোমার নিয়মিত স্কুল-কলেজে যাওয়া, মনোযোগসহকারে পড়াশোনা করা, শ্রেণির কাজ ঠিকমতো সম্পন্ন করা এবং ভালো রেজাল্ট করা এ সবই তাৎক্ষণিক লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত।
কাজ - তোমার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির কর। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে তোমার করণীয় কাজগুলোর একটি তালিকা করে দেখাও । |
আরও দেখুন...