বাবল মেমরি

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

বাবল মেমরি (Bubble Memory) হলো একটি পুরোনো ধরনের নন-ভোলাটাইল কম্পিউটার মেমোরি প্রযুক্তি, যা ১৯৭০-এর দশকে ব্যবহৃত হতো। এটি ম্যাগনেটিক ডোমেন ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ করত, যা বুদবুদের (বাবল) মতো ছোট, গোলাকার আকৃতির ফর্মেশন তৈরি করত। এই ম্যাগনেটিক বাবলগুলি তথ্য ধারণ করত এবং সেগুলি একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে চলত বা সরত। বাবল মেমরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেটা দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করা যেত, এমনকি যখন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকত তখনও।

বাবল মেমরির কাজের প্রক্রিয়া:

১. ম্যাগনেটিক ডোমেন:

  • বাবল মেমরি একটি পাতলা ম্যাগনেটিক ফিল্মের ওপর তৈরি করা হতো। এই ফিল্মে ছোট ছোট চৌম্বকীয় বুদবুদ বা বাবল তৈরি করা যেত, যা ডেটার প্রতিনিধিত্ব করত (০ বা ১)।
  • বাবলগুলি একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে চলাচল করতে পারত এবং এগুলি সঞ্চালিত হতো একটি নিয়ন্ত্রিত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে।

বাবল ট্র্যাক:

  • বাবল মেমরি একটি ট্র্যাক বা পথের ওপর ডেটা স্থানান্তরিত করত, যেখানে বাবলগুলি একটি নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় চলত।
  • এই ট্র্যাকগুলোর মাধ্যমে বাবলগুলো মেমরির এক অংশ থেকে অন্য অংশে যেতে পারত এবং ডেটা পড়া বা লেখা সম্ভব হতো।

বাবল নিয়ন্ত্রণ:

  • বাবল মেমরির মধ্যে একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করা হতো, যা বাবলগুলোর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করত। একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে এবং সময়ে বাবলগুলো সঞ্চালিত হতো, যা ডেটা অ্যাক্সেসে সহায়ক ছিল।
  • একটি ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হতো বাবলগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করতে এবং ডেটা পড়া ও লেখার সময় সেই অবস্থান ব্যবহার করা হতো।

বাবল মেমরির বৈশিষ্ট্য:

১. নন-ভোলাটাইল:

  • বাবল মেমরি নন-ভোলাটাইল হওয়ায় এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলেও ডেটা ধরে রাখতে পারত।

২. বিরোধী চৌম্বকীয় প্রভাব:

  • বাবল মেমরি প্রযুক্তি খুব স্থিতিশীল ছিল এবং এটি চৌম্বকীয় হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে সক্ষম ছিল, যা ডেটার নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়েছিল।

৩. ধীর গতি:

  • বাবল মেমরি প্রযুক্তি কম্পিউটারের বর্তমান RAM-এর তুলনায় ধীর ছিল, কারণ বাবলগুলোর মেমরির একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে চলাচল করতে সময় লাগত।

বাবল মেমরির ব্যবহার:

  • বাবল মেমরি সাধারণত এমবেডেড সিস্টেম এবং কিছু বিশেষায়িত যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হতো, যেখানে বড় আকারের নন-ভোলাটাইল মেমরির প্রয়োজন ছিল।
  • এটি কম্পিউটার স্টোরেজ ডিভাইস এবং কিছু প্রাথমিক ডেটা লগিং ডিভাইসে ব্যবহৃত হতো।

বাবল মেমরির সুবিধা:

১. দীর্ঘমেয়াদী ডেটা সংরক্ষণ:

  • বাবল মেমরি বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে ডেটা সংরক্ষণ করতে সক্ষম ছিল।

২. নির্ভরযোগ্যতা:

  • বাবল মেমরি চৌম্বকীয় ক্ষতি এবং হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত ছিল, যা এটি নির্ভরযোগ্য করে তুলেছিল।

বাবল মেমরির সীমাবদ্ধতা:

১. ধীরগতি:

  • বাবল মেমরি বর্তমান RAM এবং অন্যান্য আধুনিক মেমরির তুলনায় অনেক ধীর ছিল, যা কম্পিউটারের পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলত।

২. কম ক্ষমতা:

  • বাবল মেমরি প্রযুক্তি সাধারণত ছোট আকারের ডেটা সংরক্ষণে সক্ষম ছিল, যা বড় আকারের ডেটা সংরক্ষণ করতে পারত না।

৩. প্রযুক্তিগত জটিলতা:

  • বাবল মেমরি তৈরির জন্য জটিল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন হতো, যা এটি ব্যয়বহুল করে তুলত।

বাবল মেমরি প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা:

  • বাবল মেমরি বর্তমানে আধুনিক ডেটা স্টোরেজ প্রযুক্তি যেমন SSD, ফ্ল্যাশ মেমরি এবং RAM-এর তুলনায় কার্যকারিতা এবং গতি হারিয়েছে, তাই এটি আর ব্যবহৃত হয় না।
  • উন্নত এবং দ্রুততর স্টোরেজ প্রযুক্তি আসার পর বাবল মেমরি প্রযুক্তি প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সারসংক্ষেপ:

বাবল মেমরি হলো একটি পুরোনো নন-ভোলাটাইল মেমোরি প্রযুক্তি, যা ম্যাগনেটিক বাবল ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ করত। এটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর ছিল, তবে ধীরগতি এবং সীমিত ক্ষমতার কারণে আধুনিক স্টোরেজ প্রযুক্তির আবির্ভাবের পর এটি কম্পিউটার সিস্টেম থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।

Content added By
Promotion