ব্যান্ড তত্ত্ব

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | NCTB BOOK

পরমাণুর গঠন সম্পর্কিত বোরের তত্ত্ব থেকে আমরা জানি যে, পরমাণুর অভ্যন্তরে ইলেকট্রনসমূহ নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে কেবল কয়েকটি অনুমোদিত কক্ষপথে আবর্তন করে। এই কক্ষপথগুলোর ব্যাসার্ধ সুনির্দিষ্ট। 

  কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে এই সকল ব্যাসার্ধের মান পাওয়া যায়। একটি পরমাণুর প্রতিটি ইলেকট্রনেরই একটি নির্দিষ্ট শক্তি থাকে। এই শক্তির পরিমাণ নির্ভর করে ইলেকট্রনটি কোন্ কক্ষপথে নিউক্লিয়াসকে আবর্তন করছে তার উপর। কক্ষপথের ব্যাসার্ধ যত বড় হয় ইলেকট্রনের শক্তিও তত বেশি হয়।

যদি কোনো ইলেকট্রনকে তাপ, আলো ইত্যাদি রূপে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করা হয়, তাহলে ইলেকট্রনটি পরবর্তী উচ্চতর কক্ষপথে উন্নীত হয়। পরমাণুর এই অবস্থাকে উত্তেজিত অবস্থা বলে। এই অবস্থা কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না; কেননা ইলেকট্রনটি পুনরায় তাপ, আলো বা অন্যান্য বিকিরণের মাধ্যমে শক্তি হারিয়ে মূল নিম্নতর কক্ষপথে ফিরে আসে।

চিত্র : ১০.১

শক্তি স্তর : 

পরমাণুতে ইলেকট্রনের বিভিন্ন কক্ষপথের সাথে সংশ্লিষ্ট শক্তিকে সাধারণত একটি রৈখিক চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এই চিত্রে শক্তি বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত থাকে। এই চিত্রকে শক্তি স্তর রৈখিক চিত্র বলে [চিত্র : ১০.১ ]। প্রথম কক্ষপথ প্রথম শক্তিস্তর, দ্বিতীয় কক্ষপথ দ্বিতীয় শক্তিস্তর ইত্যাদি নির্দেশ করে (চিত্র : ১০.১)। সুতরাং দেখা যায়, কক্ষপথটি যত বড় হবে, ইলেকট্রনের শক্তি তত বেশি হবে এবং শক্তিস্তর তত উচ্চ হবে।

চিত্র : ১০.২ (ক)

 

শক্তি ব্যান্ড : 

 একটি বিচ্ছিন্ন পরমাণুর বেলায় কোনো একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট শক্তি থাকবে। কিন্তু পরমাণুটি যদি কোনো কঠিন পদার্থের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে সেই পরমাণুর ইলেকট্রনগুলোর শক্তির সেই সুনির্দিষ্ট মান থাকে না। কঠিন পদার্থের প্রতিটি পরমাণু তার আশেপাশের ঘন সন্নিবিষ্ট অন্যান্য পরমাণু দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে কোনো একটি কক্ষপথের যে কোনো দুটি ইলেকট্রনের চারপাশের আধান পরিবেশ এক রকম থাকে না। ফলে যে কোনো একটি কক্ষপথে আবর্তনরত দুটি ইলেকট্রনের শক্তির মানও হুবহু এক  থাকে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথম কক্ষপথের দুটি ইলেকট্রনের শক্তির সামান্য তারতম্য ঘটবে। যেহেতু কোনো কঠিন পদার্থে কোটি কোটি প্রথম কক্ষপথের ইলেকট্রন বিদ্যমান, সেহেতু এই সকল ভিন্ন ভিন্ন ইলেকট্রন ভিন্ন ভিন্ন শক্তিস্তরের একটি পাল্লা সৃষ্টি করে যাকে শক্তি ব্যান্ড বলা হয় ।

 কোনো পদার্থে বিভিন্ন পরমাণুতে কিন্তু একই কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর শক্তির সামান্য তারতম্য হয়। একই কক্ষপথে অবস্থিত এই সকল ইলেকট্রনের শক্তির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মানের মধ্যবর্তী পাল্লাকে শক্তি ব্যান্ড বলে।

 প্রথম কক্ষপথের ইলেকট্রন দ্বারা সৃষ্ট শক্তি ব্যান্ড হলো প্রথম শক্তি ব্যান্ড । অনুরূপভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় কক্ষপথের ইলেকট্রন দ্বারা সৃষ্ট শক্তি ব্যান্ডকে যথাক্রমে দ্বিতীয় শক্তি ব্যান্ড ও তৃতীয় শক্তি ব্যান্ড বলে [চিত্র : ১০.২ক]। কঠিন পদার্থের অনেকগুলো শক্তি ব্যান্ড থাকে যার মধ্যে তিনটি হচ্ছে প্রধান। এগুলো হচ্ছে যোজন ব্যান্ড, পরিবহন ব্যান্ড এবং নিষিদ্ধ ব্যান্ড [চিত্র : ১০.২খ]।

চিত্র :১০.২ (খ)

যোজন ব্যান্ড : পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথে অবস্থিত ইলেকট্রনকে যোজন ইলেকট্রন বলে। যোজন ইলেকট্রনগুলোর শক্তির পাল্লা বা ব্যান্ডকে যোজন ব্যান্ড বলে। একটি সাধারণ পরমাণুতে দূরতম কক্ষপথের ইলেকট্রনের শক্তি থাকে সর্বোচ্চ। এই ব্যান্ড পূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ থাকতে পারে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ক্ষেত্রে যোজন ব্যান্ড পূর্ণ থাকে। ফলে এ গ্যাসগুলো আর নতুন কোনো ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে না। অন্যান্য পদার্থে যোজন ব‍্যান্ড আংশিক পূর্ণ থাকে। আংশিক পূর্ণ যোজন ব্যান্ড আরো কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে। 

পরিবহন ব্যান্ড : পরমাণুতে অবস্থিত মুক্ত যোজন ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহনে অংশগ্রহণ করে বলে এদেরকে পরিবহন ইলেকট্রন বলে। পরিবহন ইলেকট্রনগুলোর শক্তির পাল্লা বা ব্যান্ডকে পরিবহন ব্যান্ড বলে।

কোনো কোনো পদার্থে বিশেষ করে ধাতব পদার্থে যোজন ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের সাথে শিথিলভাবে যুক্ত থাকে । সাধারণ তাপমাত্রায় এই সকল ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারে। পরিবাহীতে এই সকল মুক্ত ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহন করে থাকে ।

পরিবহন ব্যান্ডের সকল ইলেকট্রনই মুক্ত ইলেকট্রন। যদি কোনো বস্তুতে পরিবহন ব্যান্ড ফাঁকা থাকে তাহলে সেই বস্তুতে তড়িৎ পরিবহন সম্ভব হয় না। এই বস্তুকে অন্তরক বলে। অন্তরকে পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে, আর যোজন ব্যান্ড আংশিক পূর্ণ থাকে।

নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড : শক্তি স্তর রৈখিক চিত্রে পরিবহন ব্যান্ড এবং যোজন ব্যান্ড এর মধ্যবর্তী শক্তির পাল্লাকে নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড বলে।

  এই নিষিদ্ধ শক্তি অঞ্চলে কোনো অনুমোদিত শক্তি অবস্থা বা স্তর না থাকায় এ অঞ্চলে কোনো ইলেকট্রন থাকতে পারে না। কোনো বস্তুতে নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান যত বেশি হবে, যোজন ইলেকট্রনগুলোও পরমাণুতে তত দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকবে। কোনো ইলেকট্রনকে যোজন ব্যান্ড থেকে পরিবহন ব্যান্ডে নিতে হলে অর্থাৎ কোনো যোজন ইলেকট্রনকে মুক্ত করতে হলে নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধানের সমমানের বাহ্যিক শক্তি সরবরাহ করতে হবে।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion