প্রতিটি পরিবারেরই কিছু না কিছু সম্পদ থাকে। এই সম্পদ দ্বারাই পরিবার সুষ্ঠু, সুন্দর এবং স্বাভাবিক জীবন প্রবাহের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। একটি পরিবারের সর্বাপেক্ষা বড় সম্পদ হচ্ছে মানুষ এবং এই মানব সম্পদ অপরাপর বস্তুগত সম্পদ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। অনেকের অর্থ, জমিজমা, চ-ঘর নাও থাকতে পারে কিন্তু একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা, কর্মদক্ষতা, সময় ও শক্তি ইত্যাদি দ্বারা বাড়ি- অর্থ সংগ্রহের পথ সুপ্রশস্ত হয় এবং অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করে পরিবারের বস্তুগত সম্পদ বৃদ্ধি করা যায় ।
প্রতিটি পরিবারে দেখা যায় গৃহকর্তা তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, সময়, শক্তি, ধৈর্য, কর্মক্ষমতা ইত্যাদির দ্বারা পরিবারের অর্থ উপার্জন করে থাকেন। আর গৃহকর্ত্রী যদি অর্থ উপার্জন নাও করেন তবুও তিনি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, সময়, শক্তি, ধৈর্য, কর্মতৎপরতা দ্বারা অর্থকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন এবং অন্যান্য সম্পদও বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করেন ৷
‘সম্পদ' গৃহ ব্যবস্থাপনার মৌলিক উপকরণ। সম্পদ ছাড়া লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অর্থনীতিতে যেসব বস্তু বা সেবা সামগ্রী মানুষের অভাব মোচনে সহায়ক এবং যার বিনিময়মূল্য আছে তাই সম্পদ। কিন্তু গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে যা দ্বারা পরিবার সকল চাহিদা পূরণ করে এবং অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করে তাই সম্পদ। যেমন: অর্থ, জমি, বাড়ি, গাড়ি, গৃহের যাবতীয় দ্রব্যসামগ্রী এবং শক্তি, সময়, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যা ব্যবহার করে আমরা তৃপ্ত হই, আমাদের চাহিদা মেটাতে পারে, অভাব দূর করতে পারে এবং লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে তাই সম্পদ।
সম্পদের বৈশিষ্ট্য— সম্পদ আমাদের যাবতীয় চাহিদা পূরণের হাতিয়ার। সম্পদ ব্যবহার করে আমরা উপকৃত হই। সম্পদের বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে : ১. উপযোগ (Utility) ২. আয়ত্তাধীন (Accessibility) ৩. সীমাবদ্ধতা (Limitation) ৪. পরস্পর পরিবর্তনশীলতা (Inter-changeability) ৫. পরিচালনা যোগ্যতা (Manageability)
১। উপযোগ (Utility)— মানুষের অভাব মোচনে পণ্যের ক্ষমতাই হলো উপযোগ। যেসব দ্রব্যসামগ্রীর উপযোগ আছে সেসব দ্রব্যসামগ্রী মানুষ পেতে চায়। কারণ উপযোগ বিশিষ্ট দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ তার অভাব মেটাতে সক্ষম হয়। তাই পণ্য বা সম্পদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো উপযোগ।
শিক্ষা, বুদ্ধি, স্থান, সময়, আকার, স্বত্ব ও সৃজনশীলতার উপর উপযোগ নির্ভর করে। যেমন-শিক্ষার ক্ষেত্রে বইয়ের উপযোগ বেশি। স্বল্প মূল্যে পুষ্টিকর খাদ্য তৈরিতে পুষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান ও বুদ্ধির উপযোগ বেশি। গ্রীষ্মের সময় পানির ও পাখার উপযোগ বেশি। আবার যখন ক্ষুধা পায় তখন খাদ্যের উপযোগ বৃদ্ধি পায়। পিপাসা পেলে পানির উপযোগ বৃদ্ধি পায়। আবার একটা দ্রব্যের উপযোগিতা সবার কাছে এক রকম নয় । যেমন : যে পান খায় তার কাছে পানের উপযোগ বেশি কিন্তু যে পান খায় না তার কাছে এর কোনো উপযোগ নাই ।
চারটি উপায়ে উপযোগ বৃদ্ধি করা যায় –
ক. আকৃতির পরিবর্তন করে - যেমন : চাউলকে সিদ্ধ করে ভাত রান্না করা হয়, যখন গুঁড়া করে পিঠা তৈরি করা হয় তখন এর উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়
খ. সময়োপযোগী ব্যবহার করে - আমরা ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় করি, যদি জমি বা বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই অর্থ ব্যবহার করতে পারি তবেই অর্থের উপযোগিতা বৃদ্ধি পায় । গ. স্থানান্তরকরণ দ্বারা সম্পদের উপযোগ স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাড়ানো যায়। যেমন- রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর আম উৎপন্ন হয়। এই আম অন্যান্য অঞ্চলে স্থানান্তর করে আমের উপযোগবাড়ানো হয় । ঘ. চাহিদা মেটানোর দ্বারা – একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো জিনিসের চাহিদা অনেক প্রকট থাকে। যেমন: পিপাসা পেলে পানির চাহিদা প্রকট। পরীক্ষার সময় কাগজ ও কলমের চাহিদা প্রকট ।
২। আয়ত্তাধীন (Accessibility)- সম্পদ আয়ত্তাধীন হতে হবে। সম্পদ ব্যবহার করতে হলে আয়ত্তাধীন বা মালিকানাধীন হতে হবে। অন্যের অর্থ নিজের খুব কমই কাজে লাগে। সম্পদ নিজের আয়ত্তাধীন না হলে তার উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। অন্যের সম্পদ যদি ধার নেওয়া যায় বা কেউ দান করে তখনই অন্যের সম্পদ কাজে আসে। সম্পদের আয়ত্তাধীন মালিকানা সম্পদের গুণগত বৈশিষ্ট্য। এই গুণগত দিক নির্ভর করে সম্পদের ব্যবহারের উপর। যেমন— জমির উর্বরতা যত বাড়ানো যাবে মালিক তত লাভবান হবে। ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থ প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে না পারলে পরে সে অর্থ ততটা কাজে আসে না ।
কিছু কিছু সম্পদ আছে যা আয়ত্ত বা অর্জন করার জন্য অনুশীলন প্রয়োজন। যেমন : দক্ষতা, সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি।
৩। সীমাবদ্ধতা (Limitation) সীমাবদ্ধতা সম্পদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সম্পদ গুণগত ও পরিমাণগত দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ। যেমন : শক্তি গুণগত দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ এবং সময় পরিমাণগত দিক থেকে সীমাবদ্ধ।
তবে কোনো সম্পদের সীমাবদ্ধতা স্থিতিস্থাপক। যেমন : শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেন, তখন জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে একই শ্রেণিকক্ষের সকলে ব্যক্তিগত বুদ্ধি ও আকাঙ্ক্ষার সীমাবদ্ধতার জন্য সমান জ্ঞান লাভ করতে পারে না। সময়ের সীমাবদ্ধতা সর্বজনীন। আবার শক্তির সীমাবদ্ধতা ব্যক্তি বিশেষে তারতম্য ঘটে। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দ্বারা সময় ও শক্তির সীমাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৪। পরস্পর পরিবর্তনশীলতা (Inter-changeability)
সম্পদ পরস্পর পরিবর্তনশীল। পরস্পর পরিবর্তন আমরা কয়েকটি ভাবে করতে পারি ।
৫। পরিচালনা যোগ্যতা (Manage ability)
সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারকেই পরিচালনা বলা হয়। মানুষ সচেতন বা অবচেতনভাবেই হোক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। যেমন— বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সময়, জ্ঞান, দক্ষতা, অর্থ ইত্যাদি সম্পদের ব্যবহার করা হয়। এসব সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন— পরিকল্পনা, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বাবধায়ন ও মূল্যায়নের প্রয়োজন হয় ৷
সম্পদের পরিচালনা যোগ্যতা বৈশিষ্ট্যের কারণেই আমরা উপকৃত হই। যেমন—
কাজ – ‘সম্পদ পরস্পর পরিবর্তনশীল' এই বৈশিষ্ট্যটি দুর্যোগকালে কীভাবে প্রয়োগ করা যায় উদাহরণসহ লেখ।
আরও দেখুন...