শক্তির উৎস ও ব্যবহার (Source of energy & its uses)

প্রকৃতি থেকে আমরা যা কিছু পাই, তাই প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদকে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য এই দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

 

(ক) নবায়নযোগ্য শক্তি (Renewable energy)

যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত শক্তি নিজেই পুনরায় শক্তির উৎস। অর্থাৎ যে শক্তির উৎসকে বারবার ব্যবহার করা যায়, তাকে নবায়নযোগ্য শক্তি বলে। যেমন-সৌরশক্তি সূর্যরশ্মি থেকে আহৃত শক্তি, পানি, সমুদ্রস্রোত, পানির জোয়ার ভাটা, হাইড্রোজেন শক্তি, পরমাণুশক্তি প্রভৃতি। নবায়নযোগ্য শক্তির ক্রয়মূল্য শূন্য।

 

সৌরশক্তি (Solar energy): সূর্য সকল শক্তির উৎস। সৌরশক্তি সূর্যরশ্মি থেকে আহৃত শক্তি। আংশিক পরিবাহী উপকরণ (সাধারণত সিলিকন) নির্মিত সৌর কোষসমূহের (ফটোভোল্টিক বা পিভি কোষ) প্যানেল ব্যবহার করে সৌরশক্তি ধরে রাখা হয়। এটিকে সূর্যালোক দ্বারা আলোকিত করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। সৌরকোষের বিদ্যুৎ রাতেও ব্যবহার করা সম্ভব যদি এর সঙ্গে থাকে স্টোরেজ ব্যাটারি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৌরশক্তি কেন্দ্র (Solar power plant) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। সৌরশক্তি চালিত বিশ্বের প্রথম রেলওয়ে সুড়ঙ্গ (Tunnel) বেলজিয়ামে অবস্থিত।

 

বায়োগ্যাস (Biogas): বায়োগ্যাস জীবাশ্ম জ্বালানি নয়। গরু, মহিষ প্রভৃতি গবাদি পশুর গোবর কাজে লাগিয়ে তা থেকে যে গ্যাস তৈরি করে ব্যবহৃত হচ্ছে, এই গ্যাসকে বলা হয় বায়োগ্যাস। বায়োগ্যাসের প্লান্টের প্রধান কাঁচামাল গোবর ও পানি। এদের পরিমাণের অনুপাত ১ : ২। প্রাণীর মলমূত্র থেকে ব্যাকটেরিয়ার ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই মিথেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৬০-৭০%। বায়োগ্যাস তৈরির পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

পরমাণুশক্তি (Nuclear Energy): মানবকল্যাণে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। ঐ সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম নিউক্লিয় তড়িৎ কেন্দ্রে তড়িৎ উৎপাদন শুরু করে।

 

 

(খ) অনবায়নযোগ্য জ্বালানি (Unrenewable Energy)

যে শক্তি বারবার ব্যবহার করা যায় না এবং ব্যবহারে এক সময় শেষ হয়ে যায় তাকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ বলে। যেমন: গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি। জীবাশ্ম (Fossil) বলতে প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরণের বস্তুকে বোঝায়। যে বিজ্ঞান জীবাশ্ম সম্বন্ধে আলোচনা করে তাকে জীবাশ্মবিদ্যা (Paleontology) বলে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ তথা মৃতদেহের চিহ্ন পাওয়া যায় ভূগর্ভ বা ভূ-পৃষ্ঠের কঠিনস্তরে সংরক্ষিত পাললিক শিলা বা যৌগিক পদার্থে মিশ্রিত ও রূপান্তরিত অবস্থায়। জীবদেহ (প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ই) মাটির নীচে চাপা পড়ে লক্ষ লক্ষ বছর পর তা রূপান্তরিত হয় কয়লা, তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসে। এজন্য কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil fuel) বলা হয়।

যে সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে অথচ তাদের সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে, সেই সকল জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। সিলাকান্থ নামক মাছ, রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদ প্রাণী, প্লাটিপাস নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ইকুউজিটাম, নিটাম এবং গিঙ্কগো বাইলোবা নামের উদ্ভিদ জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।

 

কয়লা (Coal): কার্বন মৌলের অবিশুদ্ধ রূপ হলো কয়লা। ভূ-গর্ভে খনিতে পাওয়া যায় পাথরের মতো এক ধরণের শিলা-এর নাম খনিজ কয়লা। অস্থিজ কয়লাকে আইভরি ব্ল্যাক বলে। অপর্যাপ্ত বাতাসে কাঠ পোড়ালে কয়লা হয়। এর নাম কাঠকয়লা।

প্রাচীনকালের বৃক্ষ দীর্ঘদিন মাটির তলায় চাপা পড়ে ধীরে ধীরে কয়লায় পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে কয়লায় কার্বনের অনুপাত বাড়তে থাকে এবং কয়লার মানও বৃদ্ধি পায়। সালফারের উপস্থিতি কয়লার মান নষ্ট করে। তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ও কার্বনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খনিজ কয়লা চার প্রকার। যথা-

 

(১) পীট কয়লা: উদ্ভিদজাত জৈবিক পদার্থ থেকে কয়লা সৃষ্টি হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে যে কয়লা পাওয়া যায়, তাকেই মূলত পীট কয়লা বলে। পীট কয়লা ভিজা ও নরম।

 

(২) লিগনাইট: পীট থেকে কয়লা তৈরি হওয়ার মধ্যবর্তী ধাপ হচ্ছে লিগনাইট। এটি অতি প্রাচীন কালের (১০ থেকে ১৫ কোটি বছর) গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যের পরিবর্তিত রূপ। এটি পীটের চেয়ে শক্ত ও ভারী। একে খয়েরি কয়লাও বলা হয়। এতে কার্বনের পরিমাণ ৬৭-৬৮%। রান্না-বান্না, ইট পোড়ানো, বাষ্পীয় ইঞ্জিন ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।

 

(৩) বিটুমিনাস: এটি লিগনাইট কয়লার পরিবর্তিত রূপ। মৃত গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্য হতে বিটুমিনাস কয়লা সৃষ্টি হতে ১৫ থেকে ২০ কোটি বছর সময় লাগে। এটি কালো রংয়ের কয়লা। এতে ৬০-৮০% কার্বন থাকে। পোড়া কয়লা বা কোক, গ্যাস কার্বন ও কোল গ্যাস উৎপাদনে বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহৃত হয়।

 

(৪) অ্যানথ্রাসাইট: সর্বপেক্ষা কঠিন ও শক্ত এবং উজ্জ্বল কালো রংয়ের হয়। এত কার্বনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (৯২-৯৮%)।

 

প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural Gas): প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভ থেকে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন (৮০-৯০%) তাছাড়া অন্যান্য উপাদান উথেন (প্রায় ১৩%), প্রোপেন (প্রায় ৩%), বিউটেন, ইথিলিন, নাইট্রোজেন এবং নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন বাষ্প। আমাদের দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৯৫-৯৯%।

CNG (Compressed Natural Gas) হল সাধারণ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে তা গ্যাস-ট্যাংকে জমা করা হয়। এটি সীসা ও বেনজিন মুক্ত।

Liquefied Petroleam Gas বা Liquid Petroleum Gas (LPG বা LP গ্যাস) অর্থাৎ চাপে শীতলকৃত জ্বালানি গ্যাস, এ সমস্ত নামে প্রোপেন বা বিউটেনকে বা এদের মিশ্রণকেও নির্দেশ করা হয়। জ্বালানি হিসেবে রন্ধন কার্যে, গাড়িতে ও ভবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে (HVAC) এটি ব্যবহৃত হয়। এটির ব্যবহার প্রপ্যাল্যান্ট গ্যাস হিসেবে এবং শীতলকারকযন্ত্রের রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বিভিন্ন কার্যে সিএফসির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি জ্বলে শেষ হলে কোন অবশেষ থাকে না এবং সালফার নির্গত হয় না।

 

খনিজ তেল (Petrolium): অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) বা পেট্রোলিয়াম (তরল সোনা) মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ। অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদানের স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন হয়। স্ফিুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথকীকৃত বিভিন্ন অংশে মধ্যে পেট্রোল (গ্যাসোলিন), প্যারাফিন, ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পেট্রোলকে বলা হয় সবুজ জ্বালানি (green fuel)। পেট্রোল পানির চেয়ে হালকা। তাই এদের আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায় না। রাস্তা বা ছাদের আবরণ হিসাবে যে পিচ ব্যবহৃত হয় তা পেট্রোলিয়ামের অবশেষ।

 

আপেক্ষিকতাবাদ (Theory of Relativity)

জার্মান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, “Imagination is more important than Knowledge (কল্পনা শক্তি জ্ঞান অপেক্ষা অধিক গুরুত্বর্পর্ণ)”। ১৯০৫ সালে তিনি দেখান যে, পদার্থ এবং শক্তি প্রকৃতপক্ষে অভিন্ন। পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। m ভর বিশিষ্ট কোনো পদার্থকে সম্পূর্ণরূপে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ হবে E = mc2, এখানে c হলো আলোর বেগ। একে আইনস্টাইনের পদার্থ ও শক্তির অভিন্নতা বিষয়ক সূত্র বলা হয়। ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’র প্রণেতা আলবার্ট আইনস্টাইন। নিউটনীয় বলবিদ্যায় দৈর্ঘ্য, ভর ও সময় ধ্রুব – গতি নির্ভর নয়। কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে দৈর্ঘ্য, বর ও সময় আপেক্ষিক, যা বস্তু বা প্রসঙ্গ কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। একে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা বলে। আপেক্ষিকতা অর্থ কোনো কিছুর সাপেক্ষে। যেমন-আপেক্ষিক ভর বলতে কোন প্রসঙ্গ কাঠামো থেকে কোন স্থির পর্যবেক্ষক কোন বস্তুর যে ভর পরিমাপ করেন তা বোঝায়।

 

হিগস-বোসন (Higgs Boson)

মহাবিশ্বে দুই ধরণের মৌলিক কণিকা আছে। যথা- বোসন ও ফার্মিয়ন। মহাবিশ্বে চার ধরনের বল রয়েছে। যথা- মহাকর্ষ, তাড়িৎচৌম্বকীয়, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল। এ বল বা মিথষ্ক্রিয়াগুলো কার্যকর হয় বলবাহক কণাগুলোর আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে। বলবাহক এ কণাগুলো হচ্ছে গ্রাভিট্রন, ফোটন, ডব্লিউজেড ও গ্লুয়ন। কণাগুলোর সাধারণ নাম বোসন কণা। বোসনের একটি সাধারণ ধর্ম হচ্ছে স্পিন বা ঘূর্ণনবেগ পূর্ণ সংখ্যার। এই বোসন কণাগুলো বোস-আইনাস্টাইন পরিসংখ্যান মেনে চলে। ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Prof. M.N Bosh) আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদান করেন। অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু বৃহত্তর বাংলার তিন ‍শিক্ষায়তন ঢাকা, কলকাতা এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যৗালয়ের সাথে সম্পৃত্ত ছিলেন। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে এবং এর ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এই কণাটি হল হিগের কণা। হিগস কণাকে বিজ্ঞানে হিগস বোসন বলেই উল্লেখ করা হয়। কারণ হিগস কণা একটি বোসন কণা। এ কণিকাকে অনেকে মজা করে ঈশ্বরের কণিকাও বলে খ থাকেন। হিগস বোসন কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি বিষয়। মহাবিশ্বে আরেক ধরণের কণা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এগুলোকে বলা হয় ফার্মিয়ন। ফার্মিয়নের স্পিন ভগ্নাংশ সংখ্যার। এ কণাগুলো ফার্মি-ডিরাক-ডিরাক পরিসংখ্যান মেনে চলে।

 

নিউক্লিয় শক্তি (Nuclear Energy)

নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে বা বিভাজন করে অথবা দুটি হাল্কা নিউক্লিয়াসকে একত্রিত করে যে শক্তি পাওয়া যায়, এই শক্তিকে বলা হয় নিউক্লিয় শক্তি (Nuclear Energy)। একে পারমাণবিক শক্তি (Atomic Energy) নামেও অভিহিত করা হয়। পরমাণু হতে দুটি পদ্ধতিতে নিউক্লিয় শক্তি উৎপন্ন করা যায়-

 

(ক) নিউক্লিয় ফিউশন (Nuclear Fusion): যে নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় দুটি ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস েএকত্রিত হয়ে অপেক্ষাকৃত বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ভিন্ন মৌল তৈরি করে তাকে নিউক্লিয় ফিউশন বা নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া বলে। সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রে শক্তির উৎস হচ্ছে নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়া। নিউক্লিয় ফিউশন নীতির উপর ভিত্তি করে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ-ডিউটেরিয়াম, ট্রিটিয়াম ব্যবহার করে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা হয়।

 

(খ) নিউক্লিয় ফিশন (Nuclear Fission): কোনো মৌলের অতি বৃহৎ নিউক্লিয়াসকে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করার ফলে দুটি কাছাকাছি ভরবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয়ে দুটি ভিন্ন মৌল উৎপন্ন করলে তাকে নিউক্লিয় ফিশন বা নিউক্লিয় বিভাজন বিক্রিয়া বলে। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর একটি পরমাণুকে একটি নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে পরমাণুটি প্রায় সমান দুই টুকরোয় বিভক্ত হয় এবং নির্গত হয় তিনটি নিউট্রন এবং কিছু পরিমাণ শক্তি। নির্গত তিনটি নিউট্রন অন্য তিনটি ইউরেনিয়াম পরমাণুকে আঘাত করলে তারা ভেঙ্গে দুটুকরো হয় এবং নিউট্রন নির্গত হয় এবং তিনগুণ শক্তি নির্গত হয়। এভাবে পরমাণুর ভাঙ্গন চলতে থাকে এবং নির্গত শক্তির পরিমাণ এবং নিউট্রন সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একে বলা হয় চেইন বিক্রিয়া (Chain Reaction) বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলে। এই বিক্রিয়া একবার শুরু হলে আপনা আপনি চলতে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে। নিউক্লিয় চেইন বিক্রিয়াকে যে যন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তার নাম নিউক্লিয় রিয়াক্টর (Nuclear Reactor) বা নিউক্লিয় বিক্রিয়ক। একে পারমাণবিক চুল্লী নামেও অভিহিত করা হয়। পারমাণবিক চুল্লীর মূল বস্তু বা মজ্জা (Core) গ্রাফাইটের ইটের তৈরি। চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম-২৩৫ ব্যবহৃত হয়। চুল্লিতে ক্যাডমিযাম বা বোরন এর দন্ড থাকে। এ সব দন্ড নিউট্রনকে শোষণ করে নিউক্লিয় বিক্রিয়ার গতিকে মন্থর করে দেয়। পারমাণবিক চুল্লিতে তাপ পরিবাহক হিসাবে সোডিয়াম ব্যবহৃত হয়।

 

পারমাণবিক বোমা

১৯৩৮ সালে বার্লিনে জার্মান বিজ্ঞানী লিজে মাইটনার, অটো হ্যান এবং ফ্রিৎজ স্ট্রসম্যান সর্বপ্রথম নিউক্লিয় ফিশন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে অনন্য সাধারণ শক্তির অস্ত্র নির্মান সম্বব – বিজ্ঞাণীরা তা বুঝতে পারেন। ২ আগষ্ট. ১৯৩৯ আইনস্টাইন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে এ ধরণের নতুন একটি বোমার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেন। পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৪২ সালে মার্কিনীরা ‘ম্যানহাটন প্রকল্প’ হাতে নেয়। এ প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। ম্যানটহাটন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনী ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্ডোর নামক স্থানে বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমা ‘ট্রিনিট্রি’ এর সফল বিস্ফোরণ ঘটায়।

 

 

Content added By
Promotion