কোনো কম্পিউটারকে অন্য কোনো কম্পিউটারের সাথে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে হলে নিচের কোনটি প্রয়োজন?

Created: 6 years ago | Updated: 9 months ago
Updated: 9 months ago

যে হার্ডওয়্যার ডিভাইসগুলো কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, তাকে নেটওয়ার্ক ডিভাইস বলে।

অর্থাৎ কম্পিউটারে নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য যেসকল যন্ত্রাংশ একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে, সেসকল যন্ত্রাংশকে নেটওয়ার্ক ডিভাইস বলে।

নেটওয়ার্ক ডিভাইসের প্রকার

  • রিপিটার (Repeater)
  • ল্যান কার্ড
     

নেটওয়ার্ক ডিভাইস (Network Devices) হলো এমন ডিভাইস যা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ডেটা ট্রান্সমিশন, রিসিভিং, এবং নেটওয়ার্ক সংযোগ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এই ডিভাইসগুলো নেটওয়ার্ক স্থাপন, পরিচালনা, এবং ডেটা সংযোগ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলো বিভিন্ন ধরনের, এবং তাদের কাজ ও কার্যকারিতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত করা যায়।

নেটওয়ার্ক ডিভাইসের প্রকারভেদ:

১. হাব (Hub):

  • হাব হলো একটি সাধারণ নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা নেটওয়ার্কে একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি কেন্দ্রীয় পয়েন্টে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক কেবল সংযুক্ত করে এবং ডেটা প্যাকেটগুলো সমস্ত সংযুক্ত ডিভাইসে পাঠায়।
  • সুবিধা: সহজ এবং সাশ্রয়ী।
  • সীমাবদ্ধতা: হাব ডেটা প্যাকেট সব ডিভাইসে পাঠায়, যা নেটওয়ার্কে ট্রাফিক এবং সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে।

২. সুইচ (Switch):

  • সুইচ হাবের চেয়ে উন্নত একটি ডিভাইস, যা নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোকে আরও কার্যকরভাবে সংযোগ দেয়। এটি ডেটা প্যাকেট সঠিক ডিভাইস বা ডেস্টিনেশনে পাঠায়, যা নেটওয়ার্ক কার্যকারিতা বাড়ায়।
  • সুবিধা: নির্দিষ্ট ডিভাইসে ডেটা পাঠায়, যা নেটওয়ার্কের ট্রাফিক কমায়।
  • সীমাবদ্ধতা: হাবের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল।

৩. রাউটার (Router):

  • রাউটার হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা দুটি বা তার বেশি নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এটি নেটওয়ার্ক প্যাকেট রাউটিং এবং নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টে ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন এবং পরিচালনায় রাউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • সুবিধা: ইন্টারনেট সংযোগ পরিচালনা এবং নিরাপত্তা ফিচার যেমন ফায়ারওয়াল সাপোর্ট।
  • সীমাবদ্ধতা: কনফিগারেশন এবং সেটআপ কিছু ক্ষেত্রে জটিল হতে পারে।

৪. গেটওয়ে (Gateway):

  • গেটওয়ে হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা দুটি ভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রোটোকল কনভার্টার হিসেবে কাজ করে, যা ডেটা ট্রান্সলেট এবং কম্প্যাটিবিলিটি নিশ্চিত করে।
  • সুবিধা: ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করে।
  • সীমাবদ্ধতা: উন্নত কনফিগারেশন প্রয়োজন হতে পারে।

৫. মডেম (Modem):

  • মডেম হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগ সিগন্যাল এবং অ্যানালগ সিগন্যালকে ডিজিটালে রূপান্তর করে, যাতে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা যায়।
  • সুবিধা: ইন্টারনেট সংযোগে ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত সহজেই কনফিগার করা যায়।
  • সীমাবদ্ধতা: একটি নির্দিষ্ট প্রকারের সংযোগের জন্য উপযুক্ত।

৬. অ্যাক্সেস পয়েন্ট (Access Point):

  • ওয়াইফাই বা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সংযোগের জন্য অ্যাক্সেস পয়েন্ট ব্যবহৃত হয়। এটি ওয়াইফাই সিগন্যাল প্রেরণ করে এবং মোবাইল ডিভাইস, ল্যাপটপ, বা অন্যান্য ডিভাইস সংযুক্ত করে।
  • সুবিধা: ওয়্যারলেস সংযোগ তৈরি করে এবং নেটওয়ার্ক পরিসর বাড়ায়।
  • সীমাবদ্ধতা: ওয়াইফাই সিগন্যাল বাধার কারণে দুর্বল হতে পারে।

৭. ব্রিজ (Bridge):

  • ব্রিজ হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা দুটি বা ততোধিক নেটওয়ার্ক সেগমেন্ট সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ডেটা ফিল্টার করে এবং সঠিক সেগমেন্টে পাঠায়।
  • সুবিধা: নেটওয়ার্ক বিভাজন দূর করে এবং ডেটা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে।
  • সীমাবদ্ধতা: বড় নেটওয়ার্কে কার্যকারিতা কিছুটা সীমিত হতে পারে।

৮. ফায়ারওয়াল (Firewall):

  • ফায়ারওয়াল হলো একটি নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ডিভাইস, যা নেটওয়ার্কে প্রবেশ এবং বাহির হওয়া ট্রাফিককে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি অননুমোদিত প্রবেশ এবং সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
  • সুবিধা: সিকিউরিটি ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ।
  • সীমাবদ্ধতা: কনফিগারেশন জটিল এবং সঠিকভাবে না করা হলে সিস্টেম ব্লক হতে পারে।

৯. রিপিটার (Repeater):

  • রিপিটার হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা সংকেত পুনরুজ্জীবিত বা শক্তিশালী করে, যাতে তা দীর্ঘ দূরত্বে যেতে পারে। এটি মূলত সংকেতের দুর্বলতা দূর করে এবং নেটওয়ার্কের রেঞ্জ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।
  • সুবিধা: দীর্ঘ দূরত্বে সিগন্যাল পৌঁছানোর ক্ষমতা।
  • সীমাবদ্ধতা: এটি কোনো ডেটা ফিল্টারিং বা সিকিউরিটি ফিচার সরবরাহ করে না, কেবল সংকেত পুনরুজ্জীবিত করে।

১০. অ্যাক্সেস কন্ট্রোলার (Access Controller):

  • অ্যাক্সেস কন্ট্রোলার হলো একটি ডিভাইস, যা নেটওয়ার্কে অ্যাক্সেস পয়েন্টগুলোর মাধ্যমে সংযোগের নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা করে। এটি ব্যবহারকারীদের অ্যাক্সেস ম্যানেজ করে এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি নিশ্চিত করে।
  • সুবিধা: নেটওয়ার্কে নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত সংযোগ নিশ্চিত করা।
  • সীমাবদ্ধতা: বড় নেটওয়ার্কের জন্য অ্যাক্সেস কন্ট্রোলারের কনফিগারেশন জটিল হতে পারে।

১১. মিডিয়া কনভার্টার (Media Converter):

  • মিডিয়া কনভার্টার একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা এক ধরনের মিডিয়া বা ক্যাবল থেকে অন্য প্রকারের মিডিয়ায় ডেটা ট্রান্সমিশন কনভার্ট করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি অপটিক্যাল ফাইবার থেকে কপার কেবল বা এর বিপরীতে ডেটা কনভার্ট করতে পারে।
  • সুবিধা: ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়া বা ক্যাবলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা।
  • সীমাবদ্ধতা: বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয় না।

১২. লোড ব্যালেন্সার (Load Balancer):

  • লোড ব্যালেন্সার একটি ডিভাইস বা সফটওয়্যার, যা নেটওয়ার্ক ট্রাফিককে বিভিন্ন সার্ভারে বিতরণ করে, যাতে প্রতিটি সার্ভারের ওপর চাপ কম থাকে এবং সিস্টেম কার্যক্ষমতা উন্নত হয়। এটি ওয়েব সার্ভার, ডেটাবেস সার্ভার, এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
  • সুবিধা: সার্ভারের ওপর লোড বিতরণ করে কর্মক্ষমতা উন্নত করে।
  • সীমাবদ্ধতা: জটিল কনফিগারেশন এবং ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

১৩. ডিএনএস সার্ভার (DNS Server):

  • ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) সার্ভার একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা ডোমেইন নামকে আইপি ঠিকানায় রূপান্তর করে। এটি ব্যবহারকারীদের ওয়েবসাইটে সহজেই প্রবেশ করতে সহায়ক করে, যেমন 'www.example.com' কে তার আইপি ঠিকানায় রূপান্তর করে।
  • সুবিধা: ডোমেইন নাম এবং আইপি ঠিকানা ম্যানেজ করে সহজ নেভিগেশন নিশ্চিত করা।
  • সীমাবদ্ধতা: সঠিকভাবে কনফিগার না করা হলে নেটওয়ার্ক ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

১৪. প্রক্সি সার্ভার (Proxy Server):

  • প্রক্সি সার্ভার একটি মিডিয়েটর ডিভাইস, যা ক্লায়েন্ট এবং ইন্টারনেট সার্ভারের মধ্যে কাজ করে। এটি ক্লায়েন্টের জন্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ম্যানেজ করে এবং সিকিউরিটি, কনটেন্ট ফিল্টারিং, এবং ক্যাশিং সুবিধা সরবরাহ করে।
  • সুবিধা: সিকিউরিটি এবং নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্স উন্নত করা।
  • সীমাবদ্ধতা: নির্দিষ্ট কনফিগারেশন এবং ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন।

১৫. ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (International Gateway):

  • এটি একটি বিশেষ ধরনের ডিভাইস, যা স্থানীয় নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এটি সাধারণত টেলিকমিউনিকেশন এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) ব্যবহৃত হয়।
  • সুবিধা: আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং ডেটা ট্রান্সফার সহজ করা।
  • সীমাবদ্ধতা: বড় এবং জটিল নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহৃত হয়।

১৬. ইন্টারফেস কনভার্টার (Interface Converter):

  • ইন্টারফেস কনভার্টার ডিভাইসগুলি বিভিন্ন ধরনের কমিউনিকেশন প্রোটোকল বা ইন্টারফেসের মধ্যে কনভার্সন করে, যেমন সিরিয়াল থেকে ইথারনেট বা USB থেকে ফাইবার অপটিক।
  • সুবিধা: বিভিন্ন ডিভাইস এবং প্রোটোকল কনভার্ট করে সংযোগ স্থাপন করা।
  • সীমাবদ্ধতা: নির্দিষ্ট সংযোগ এবং কনফিগারেশন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

১৭. নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ (NAS):

  • NAS হলো একটি ডিভাইস, যা নেটওয়ার্কে স্টোরেজ সুবিধা প্রদান করে। এটি ব্যবহারকারীদের এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে সহজে ডেটা সংরক্ষণ এবং অ্যাক্সেস করতে সহায়ক করে।
  • সুবিধা: ডেটা সেন্ট্রালাইজড স্টোরেজ সুবিধা এবং সহজ অ্যাক্সেস।
  • সীমাবদ্ধতা: বড় ডেটা সেন্টার বা সার্ভারের জন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

১৮. ভিপিএন গেটওয়ে (VPN Gateway):

  • ভিপিএন গেটওয়ে একটি ডিভাইস, যা নিরাপদ ভিপিএন কানেকশন তৈরি করে এবং ক্লায়েন্টের ডেটা এনক্রিপ্ট করে, যাতে তা সুরক্ষিত থাকে। এটি দূরবর্তী ব্যবহারকারীদের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে সহায়ক করে।
  • সুবিধা: সিকিউর এবং এনক্রিপ্টেড কানেকশন সরবরাহ করা।
  • সীমাবদ্ধতা: কনফিগারেশন জটিল এবং নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যার প্রয়োজন হতে পারে।

 

নেটওয়ার্ক ডিভাইসের প্রয়োজনীয়তা এবং সুবিধা:

১. সংযোগ স্থাপন:

  • নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলো নেটওয়ার্কে ডিভাইস সংযোগ স্থাপন করে এবং ডেটা যোগাযোগের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে।

২. ডেটা ট্রান্সমিশন এবং রিসিভিং:

  • এই ডিভাইসগুলো ডেটা প্যাকেট ট্রান্সমিট এবং রিসিভ করতে সাহায্য করে, যা নেটওয়ার্ক কার্যকারিতা বজায় রাখে।

৩. নিরাপত্তা:

  • ফায়ারওয়াল এবং রাউটার যেমন ডিভাইস সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ করে।

নেটওয়ার্ক ডিভাইসের সীমাবদ্ধতা:

১. কনফিগারেশন জটিলতা:

  • কিছু নেটওয়ার্ক ডিভাইস কনফিগার করা জটিল হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকলে সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।

২. সিগন্যাল এবং ডেটা লস:

  • কিছু ডিভাইসে সিগন্যাল বা ডেটা লস হতে পারে, বিশেষত হাবের মতো ডিভাইসে যেখানে ডেটা সব ডিভাইসে একসঙ্গে পাঠানো হয়।

৩. খরচবহুল:

  • কিছু উন্নত নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যেমন রাউটার বা গেটওয়ে, ব্যয়বহুল হতে পারে এবং এগুলোর মেইনটেন্যান্সও ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে।

সারসংক্ষেপ:

নেটওয়ার্ক ডিভাইস হলো এমন ডিভাইস যা নেটওয়ার্ক সংযোগ এবং ডেটা ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে। এগুলো নেটওয়ার্ক কার্যকারিতা, সংযোগ স্থাপন, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। যদিও নেটওয়ার্ক ডিভাইসের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগুলো নেটওয়ার্ক কার্যকারিতাকে উন্নত করতে সহায়ক।

Content added By
Content updated By
Promotion