Job

"পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন” বিষয়ে একটি রচনা লিখুন ।

Created: 2 years ago | Updated: 5 months ago
Updated: 5 months ago
Ans :

পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের প্রায় ৪৭% লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির ওপর নির্ভরশীল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উপ-খাত হল বন। বৃক্ষ মানুষের জীবনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। জাতীয় অর্থনীতি এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

শত শত বছর ধরে বনের মাটিতে আপনা থেকেই জন্মায় বৃক্ষ, পুষ্টিকর নানান ধরনের শাক সবজি ও ফলমূল। জীব জন্তুৰ অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র বন। বাংলাদেশে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট বন ভূমির পরিমাণ প্রায় আঠারো শতাংশ। দেশের - দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বনভূমি, ময়মনসিংহ, গাজীপুর টাঙ্গাইল জেলা এবং রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অঞ্চল। সুন্দর বন বাদ দিলে বন বলতে যা অবশিষ্ট থাকে তা সামান্যই। ওয়াল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের মতে, এর পরিমাণ মাত্র পাঁচ শতাংশ ।

জনসংখ্যার চাপে বনভূমির পরিমাণ ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বনজ সম্পদ। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ নেমে আসায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে আবহাওয়ায়। বাতাস দূষিত হচ্ছে মাটি খাদ্য, ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল, শক্তি ও পরিবেশ সেবার যে অংশ আসে বন থেকে বৃক্ষ নিধনের ফলে সংকটের মুখোমুখি। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিলীন হয়ে যাচ্ছে অতুলনীয় সবুজ সৌন্দর্য। 

জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে দেশের বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও বনজ সম্পদের উন্নয় অত্যন্ত জরুরি। আর বাংলাদেশে রয়েছে বনায়নের বিপুল সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্যে যা করণীয় তা হলোঃ

০১. দেশীয় অর্থকরী বৃক্ষ রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে 
০২. বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে বীজ ও চারা ।
০৩. নদীর কিনারা ও সড়কের দুপাশে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
০৪. বনভূমির গাছকাটা রোধ করতে হবে।
০৫. অপরিণত গাছকাটা বন্ধ করতে হবে।
০৬. প্রয়োজনে গাছ কাটা হলে সে অঞ্চলে নতুন চারাগাছ লাগাতে হবে।
০৭. বনভূমি থেকে কাঠের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে।
০৮. গ্রামবাসীকে খাদ্য ফল জ্বালানি ইত্যাদি আহরণ উপযোগী বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপন করতে হবে। 
০৯. সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় অংশগ্রহণকারীদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।
১০. সামাজিক বনায়ন সম্পর্কিত সকল বিষয় তদারকি করার জন্যে ওয়ার্ড মেম্বারের নেতৃত্বে শিক্ষক, সমাজকর্মী, মসজিদের ইমাম প্রমুখের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বনায়নের জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন মেয়াদে জনগণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে চারা। তবে বাংলাদেশের সরকারি বনভূমিতে যে বনায়ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর। যেমনঃ দেশীয় প্রজাতির গাছ নিশ্চিহ্ন করে সেখানে রাবার, সেগুন, আকাশিয়া প্রভৃতির শিল্প বন তৈরি করা হচ্ছে। বিদেশি প্রজাতির গাছের সংগে ক্ষতিকর অনেক কীটপতঙ্গ আসে। এধরনের গাছ মাটি থেকে পানি শোষণ করে নেয় বলে আশে পাশের জমিতে পানির পরিমাণও কমে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম, মধুপুর প্রভৃতি পার্বত্য এলাকায় রাবার চাষ এবং বাণিজ্যিক ও শিল্প বনায়নের কারণে অধিক মাত্রায় মাটিক্ষয় ও পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসীরা বনাঞ্চল থেকে তাদের প্রয়োজনীয় শাক-সবজি; ফলমূল ও নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারছে না। অনেকক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রাণীর অস্তিত্ব ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। গাছ প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে আবহাওয়া বিশুদ্ধ রাখে। মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির ক্ষয়রোধ করে ।

অর্থাৎ মানুষের বসবাস উপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী বৃক্ষেরই অবদান। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে বাঁচানো ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বনায়নের জন্যে প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। পরিকল্পিত ও সঠিক বনায়নের মাধ্যমেই নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

 

2 years ago

বাংলা

**'Provide valuable content and get rewarded! 🏆✨**
Contribute high-quality content, help learners grow, and earn for your efforts! 💡💰'
Content

Related Question

View More

পৃথিবীর দুর্যোগ প্রবণ দেশ সমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ দেশে দুর্যোগ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৭০, ১৯৯১ এর ঘূর্ণিষড়, ২০০৭ এর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ এর ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ এর মহাসেন এবং ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ এবং ২০০৭ সালের ভয়াবহ বন্যা। দেশের জনগণের ঝুঁকি হ্রাস এবং দুর্যোগ উত্তর পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের অন্যতম ‘ভিশন' হচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সার্বিক সক্ষমতা শক্তিশালী করণের মাধ্যমে জনগণ বিশেষ করে দারিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি হ্রাস এবং বড় মাত্রার দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম একটি জরুরি সাড়া প্রদান পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি একটি দুর্যোগ সহনশীল দেশ গড়ে তোলা ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গৃহীত পদক্ষেপ/ব্যবস্থাঃ

ক. প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ/ব্যবস্থাঃ

  • প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন নির্ভর পদ্ধতির পরিবর্তে একটি যুগোপযোগী ও সমন্বিত সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় ঝুঁকি হ্রাস ও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা 
  • আইসিটি নির্ভর মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ ভূমিকম্পের ঝুঁকি মুক্ত নগরায়নের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভূমিকম্পজনিত বিপদাপন্নতা এবং ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশের বড় তিনটি শহর যথাঃ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট এর মাইক্রোজোনেশনম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ আরো ৬টি শহর যথাঃ ময়মনসিংহ, টাংগাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী এবং রংপুরের মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সকল বিল্ডিং এর ওপর জরিপ করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে।

খ. আইন, নীতি, বিধি ও চুক্তি সংক্রান্ত পদক্ষেপ/ব্যবস্থাঃ

  • দুর্যোগের কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত এবং দুর্যোগের ঝুঁকি প্রশমনের লক্ষ্যে এর ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, জাতীয় ও স্থানীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ ও মৌলিক অধিকার রক্ষার চাহিদা পূরণকল্পে যথাযথ আইনি কাঠামো দেয়ার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্তাপনা আইন ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে।
  • ‘উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ (২য় পর্যায়)' প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় দুর্যোগকালে দরিদ্র ও সহায় সম্বলহীন জনগোষ্ঠিকে নিরাপদ আশ্রয়দান; গবাদি পশু এবং গৃহস্থলির মূল্যবান সম্পদ ও অন্যান্য দ্রব্য-সামগ্রী দুর্যোগের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষাকরা এবং দুর্যোগকলীন সময় ব্যতীত অন্যান্য সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম ও অন্যান্য জনহিতকরণ কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্ত ১৬টি জেলার ৮৬টি উপজেলায় সর্বমোট ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্র ৫৩৩.১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি জুলাই, ২০১৬ হতে শুরু হয়েছে এবং জুন ২০১৯ পর্যন্ত চলবে।
  • বন্যা প্রবণ ও নদী ভাঙ্গন এলাকার দরিদ্র ও সহায় সম্বলহীন জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের নিমিত্ত 'বন্যা প্রবণ ও নদী ভাঙ্গন এলাকায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)' আওতায় এর ৪৩টি জেলার ১৫৪টি উপজেলায় সর্বমোট আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ঠ ৭২টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের কাজ গড়ে ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। জুন, ২০১৭ এর মধ্যে এগুলো সম্পন্ন হবে।

দুর্যোগ পূর্ববর্তী সতর্ককরণ সংকেত এবং জরুরি সাড়া প্রদান কার্যক্রমসমূহ

  • বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিপ্রবণ দেশ। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা অন্যতম ৷ আগাম সর্তকবার্তা দুর্যোগের ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে অত্যন্ত সহায়ক। দুর্যোগের আগাম বার্তা প্রদানে ক্রমন্বয়ে অগ্রগতির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অতীতের চেয়ে বর্তমান জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে অনেক হ্রাস পেয়েছে। এ লক্ষ্যে নিম্নেবর্ণিত তিনটি পদ্ধতিতে দুর্যোগ বার্তা প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
  • দুর্যোগের আগাম বার্তা ওয়েবসাইট, ই-মেইল এর মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের সাথে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডেও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটের লিংক স্থাপন করা হয়েছে ৷
  • ইন্টারেকটিভ ভয়েস রেসপন্স (IVR) আবহাওয়া ও দুর্যোগ সংক্রান্ত তথ্য ও আগাম সতর্কতা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সর্ব সাধারণের মধ্যে পৌছে দেয়ার জন্য দেশের সকল মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে Interactive Voice Response (IVR) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে যেকোন মোবাইল ফেন থেকে ১০৯৪১ কোড ডায়াল করে তারপর ১ ডায়াল করলে সমুদ্রগামী জেলেদের জন্য আবহাওয়া বার্তা; ২ ডায়াল করলে নদীবন্দর সমূহের জন্য সতর্ক বার্তা; ৩ ডায়াল করলে দৈনন্দিন আবাহওয়া বার্তা; ৪. ডায়াল করলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত এবং ৫ ডায়াল করলে নদ/নদীর পানি হ্রাস ও বৃদ্ধি অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য অবহিত হওয়া যাবে ।
  • মোবাইল ক্ষুদ্র বার্তা বা Short Message Service (SMS) মোবাইল ক্ষুদ্র বার্তা মন্ত্রণালয়ের (১) দুর্যোগের সকল কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত, (২) অভ্যন্তরীণ সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত, (৩) গণসচেতনতা ও প্রচার মাধ্যমের সাথে জড়িত কর্মকর্তাগণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সহায়ক করে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে যেকোন ক্ষুদ্র বার্তা কোন মোবাইল ব্যবহারকারীকে খুব অল্প সময়ে পাঠানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর হতে জেলা/উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্য-সচিবদের নিকট প্রয়োজনানুযায়ী দুর্যোগকালীন/ পরবর্তী সময়ে সচেতনতামূলক বার্তা (SMS) প্রেরণ করা হয় ।

৬৪টি জেলা এবং ৪৮৫টি উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে অত্যাধুনিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র (ডিএমআইসি) স্থাপন করা হয়েছে। এখানে ওয়েববেজড এপলিকেশনের মাধ্যমে দুর্যোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত তথ্য সেবা পাওয়া যাবে। যেমনঃ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের তথ্য, দুর্যোগের ঝুঁকি মানচিত্র, ঘূর্ণিঝড়ের ও জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাব্য প্লাবিত এলাকার মানচিত্র, সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের ডাটাবেজ ও লাইব্রেরি ইত্যাদি তথ্য সেবা অনলাইনে
পাওয়ার ব্যবস্থা আছে ।

আইনের শাসন বলতে বিধিবদ্ধ আইন অনুসারে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করা বুঝায়। বিশ্বব্যাংক ১৯৯৪ সালে প্রথম সুশাসন (Good Governance) শব্দটি সকলের সামনে নিয়ে আসে। আইনের শাসন বা Rule of Law বলতে আইনের চোখে সবাই সমান এবং সবকিছুর উপরে আইনের প্রাধান্যকে বুঝায়। আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে এটা আইনের শাসনের বিধান। আইনের শাসন ব্যক্তির সাম্য ও স্বাধীনতার রক্ষা করা।

আইনের শাসন ও বাংলাদেশঃ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু পিছিয়ে আছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের (ডব্লিউজেপি) প্রতিবছর আইনের শাসনের উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আইনের শাসনের উপস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের ১০২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩তম।

সুশাসনের বৈশিষ্ট্যঃ

০১. অংশগ্রহণ
০২. আইনের শাসন
০৩. স্বচ্ছতা
০৪. সংবেদনশীলতা
০৫. ঐক্যমত
০৬. জবাবদিহিতা

বাংলাদেশে সুশানে প্রতিষ্ঠায় সমস্যাঃ

০১. দুর্নীতি
০২. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা
০৩. আইনের শাসনে দুর্বলতা
০৪. স্বজন প্রীতি
০৫. দুর্বল আইনি প্রক্রিয়া
০৬. সরকারের সদিচ্ছার অভাব
০৭. সমন্বয়হীন প্রশাসন ব্যবস্থা
০৮. জবাবদিহিতার অভাব ইত্যাদি ।

সুশাসনের প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয়ঃ
০১. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
০২. সকলের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা
০৩. আইনের শাসন নিশ্চিত করা
০৪. মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
০৫. স্বচ্ছতা
০৬. তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা
০৭. দুর্নীতি দূর করা
০৮. প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা
০৯. প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা 
১০. প্রচলিত আইনের আধুনিকায়ন ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা
১১. প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ
১২. সকলের ক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা ১৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত জরুরি। সুশাসন প্রত্যেক নাগরিকেরই কামনা। এর মাধ্যমে নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং নিয়মিত কর প্রদান করে সরকারি সেবা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে সুশাসন নিশ্চিত করা যেতে পারে।

করোনা ভাইরাস বলতে মূলত একটি ভাইরাস পরিবারকে বোঝায় যেখানে অসংখ্য ভাইরাস একসাথে থাকে। এই পরিবারের সর্বশেষ আবিষ্কৃত ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নভেল করোনা ভাইরাস’ বা ‘এনসিওভি-১৯'। এই ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগকে বলা হয় ‘কোভিড-১৯’। ‘করোনা' শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ 'Corona' থেকে যার অর্থ 'মুকুট'। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে এই ভাইরাসের বাইরের অংশ দেখতে মুকুটের মতো মনে হয়, তাই এই নামকরণ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে সর্বপ্রথম এই ভাইরাস ধরা পড়ে। করোনা ভাইরাস মারাত্মক ছোঁয়াচে। ধারণা করা হয়, বাদুড় বা সাপজাতীয় প্রাণী থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি। করোনা ভাইরাস মূলত ভাইরাস সংক্রমিত প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে। এরপর তা হাঁচি ও সর্দি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত ঘটায়। এই ভাইরাস মূলত মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। এর প্রভাবে জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ ছাড়াও এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষক দল নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই অনেক দেশ এতে সফলতাও পেয়েছে। সেখানে মানবশরীরে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে আশা করা যায়, সচেতনতা, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হবে এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় ।

রোগের লক্ষণ কীঃ রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। মানুষের মধ্যে যখন ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেবে তখন বেশি মানুষকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে তাদের। তবে এমন ধারণাও করা হচ্ছে যে নিজেরা অসুস্থ না থাকার সময়ও সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে মানুষ ।

করোনা ভাইরাসে করণীয়ঃ জনসমাগম পরিহার করা; হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানি/ স্যানিটাইজার ব্যবহার করা; হাঁচিকাশি শিষ্টাচার পালন; ব্যবহৃত টিস্যু আবদ্ধ পাত্রে ফেলা; কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা; পাবলিক যানবাহন ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা।

করোনা ভাইরাসে বর্জনীয়ঃ যেখানে সেখানে থুতু, কফ ফেলা যাবে না; হাত দিয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা যাবে না; হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলে নিজ কক্ষের বাইরে যাওয়া যাবে না; আক্রান্ত সন্দেহভাজনের ব্যবহৃত কিছু অন্যের স্পর্শ করা যাবে না; বিদেশ ভ্রমণ এবং দুরপাল্লার ভ্রমণ না করা ।

ঢাকা মেট্রো-রেল 

মেট্রোপলিটন রেল-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো মেট্রোরেল । মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো স্পর্শ করে গণপরিবহনের জন্য প্রতিষ্ঠিত রেলব্যবস্থাই মেট্রোরেল । এটি একটি বিদ্যুৎচালিত পরিবহন । ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থার প্রকল্পটির নাম 'ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিড' । এটি একটি দ্রুতগামী, স্বাচ্ছ্যন্দময়, সুবিধাজনক ও নিরাপদ নগরকেন্দ্রিক রেলব্যবস্থা।

রাজধানীর যানজট নিরসন এবং স্বস্তিদায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্প বাস্তবায়নের lil কাজ দ্রুত বেগে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে স্বল্প সময়ে মতিঝিলে পৌঁছা যাবে। উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর রুট হবে মতিঝিল পর্যন্ত। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে স্টেশন থাকবে ১৬টি। প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার। ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পটির নয়টি টেস্ট পাইলের কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে। শুরু করা হয়েছে মূল পাইলের কাজ। একই সঙ্গে কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট এলাকায় সার্ভিস লাইন সরানোর কাজও চলমান। একই প্রকল্পের মিরপুর-শেওড়াপাড়া-আগারগাঁও অংশে ডিভাইডার দিয়ে মূল লাইন স্থাপনের জন্য জায়গা সংরক্ষণ করা হয়েছে। রাস্তার আইল্যান্ড বরাবর এবং এর দুই পাশ থেকে জায়গা সংরক্ষণ করে মূল পাইলের কাজ শুরু হয়েছে এ অংশে। মেট্রোরেলের যাত্রী পারাপারের জন্য রেলকোচ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে জাপানে শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর পুরো কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ ও নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পরে এই উড়ালপথের ওপরই ট্রেনের জন্য লাইন বসানো হবে। এ প্যাকেজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেট্রোরেল চালু হলে প্রতিদিন কয়েক লাখ যাত্রী স্বস্তিদায়ক অবস্থায় চলাচল করতে পারবে। এর ফলে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। মেট্রোরেলে বিভিন্ন রুটে সাশ্রয়ী খরচে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হলে প্রাইভেটকার এবং অন্যান্য যানবাহনে করে চলাচল করার প্রবণতা হ্রাস পাবে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করাকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ায় আশা করা হচ্ছে তা একটি ভালো নজির বলে বিবেচিত হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।

                                                                                                                                ফাইভ-জি যুগে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। তবে, শুধু টেলিটক নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এ সেবা দিবে। টুজি'র (দ্বিতীয় প্রজন্ম), থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্ম), ফোরজিকে ব্যক্তি গ্রাহক পর্যায়ের ডিজিটাল বিপ্লব হিসেবে বিবেচনা করা হলেও ফাইভজিকে বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। বিশ্বের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক ও প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৫-জি তথা মোবাইল ব্রডব্যান্ড, আইওটিসহ নানামুখী সেবার বাণিজ্যিক বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে। এজন্য উন্নয়নশীল ও উন্নত বহুদেশ ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক ও পরীক্ষামূলকভাবে ৫-জি চালু করেছে। বাংলাদেশেও টুজি, থ্রিজির পর ফোরজিতে বদলে যায় প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রেই লেগেছে এর ছোয়া। তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত। তথ্য-প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে এবার বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ৫-জি। মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে বলা হয় ফাইভজি বা ৫-জি। ৪-জির তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট থেকে তথ্য ডাউনলোড আপলোড করা যায় এই ৫-জি সেবায়। হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়ে থাকে ৫-জি মোবাইল নেটওয়ার্কে। এর মাধ্যমে একই সঙ্গে একই সময়ে অনেক মোবাইল ফোনে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হবে জিরো ডিসটেন্স কানেক্টিভিটি। এতে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি সহজ হয়ে যাবে প্রযুক্তিনির্ভর অনেক কাজ। বলা হচ্ছে, ৫-জি প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা বদলে দেবে। ৫-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরও শক্তিশালী হবে। স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ সহজ হবে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকা রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রযুক্তির ব্যবহার। সেন্সরগুলোর ডাটা স্থাপিত হবে ট্রাফিক লাইটে, ঘরে, অফিসে, থানায়, পাবলিক পার্কে। ফলে নগর ব্যবস্থাপনা হবে আরো সহজ। এছাড়া বিগডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ৫-জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ৫-জি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। ৫-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার উন্নয়নের ফলে গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও রোগী শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। চাইলে বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎসকের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারবেন। দূর শিক্ষণ বা অনলাইন ক্লাসরুমের ফলে দূরগ্রাম বা প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে। ৫-জি ডিজিটাল ডিভাইস বা প্রযুক্তিগত বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ৫-জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু হলে দেশের চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে উন্নয়ন ঘটবে, বদলে যাবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যবসা, মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা। পাওয়া যাবে উন্নত টেলিমেডিসিন সেবা। এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও সহজেই উন্নত চিকিৎসা সেবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে। এমনকি দেশের চিকিৎসকের পাশাপাশি বিদেশের অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গেও পরামর্শ করা যাবে। ৫-জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরাও। অর্থাৎ হাতের মুঠোয় চলে আসবে বিশ্বের নামিদামী সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস। এর মাধ্যমে দূর হবে প্রযুক্তিগত বৈষম্য। ৫-জি নেটওয়ার্কে গেমিংয়ে কোনো প্রকার ল্যাগ ছাড়াই খেলা যাবে। বাফারিং ছাড়াই অনলাইনে হাই রেজ্যুলেউশন বা ৪০০ ভিডিও দেখা যাবে। একই সঙ্গে ডিস্টার্ব ছাড়াই আরো উন্নত ও স্বচ্ছভাবে ভিডিও কল করা যাবে। এ ছাড়া চালকবিহীন গাড়ি, লাইভ ম্যাপ এবং ট্রাফিক তথ্য জানার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এই ৫-জি নেটওয়ার্ক সেবা। উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে টেলিটকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করা হচ্ছে। পরবর্তীতে অন্য মুঠোফোন অপারেটরদের জন্য ৫- জি তরঙ্গ নিলাম করা হবে। ফলে আগামী বছর অন্যান্য অপারেটরও ৫-জি চালু করতে পারবে। অবশ্য খুব দ্রুতই সারা দেশে ৫-জি ছড়িয়ে দেওয়া হবে, বিষয়টি তেমন নয়। ৫-জি সেবা বেশি কাজে লাগবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানায়। সেদিকেই নজর বেশি থাকবে। পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল শিল্পকারখানায় ৫-জি সেবা দেওয়ার জন্য বিটিসিএলকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, ফাইভ-জি ডিভাইসের সংকটের কথা বলা হচ্ছে। ফাইভ-জি পুরোপুরি চালুর আগেই দেশে ডিভাইস সংকট থাকবে না। এখনই বাংলাদেশে ফাইভ-জি স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে। চাহিদার ৯০ শতাংশ ৪জি স্মার্টফোন এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নঃ সমস্যা ও প্রতিবিধান

বৈশ্বিক উষ্ণায়নঃ

  • বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলতে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বুঝানো হয়।
  • এর মূল কারণ আকাশে Carbon dioxide (CO2), methane, Nitrus Oxide (N2O) and CFCs গ্যাসসমূহের নির্গমন ও সঞ্চায়ন। 

 

 বৈশ্বিক উষ্ণায়ন/জলবায়ু পরিবর্তনের চিহ্ন / প্রভাবঃ

  • ১৯০০ সাল হতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ০.৬ সেঃ বেড়েছে।
  • প্রতি দশকে ১ সেঃমিঃ করে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে।
  • বিগত ৪০ বছরে আর্কটিক অঞ্চলের বরফের ঘনত্ব ৪০% কমেছে।
  • সারা বিশ্বের বড় বড় বরফ খণ্ডসমূহ গলছে।
  •  শরৎ ও বসন্ত দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং শীত ছোট হচ্ছে।
  • খরা সংঘটনের মাত্রা ও তীব্রতা বেড়েছে।
  • মৌসুমবিহীন বৃষ্টি বেড়েছে।
  • সাইক্লোন, এল নিনো সংঘটনের মাত্রা ও তীব্রতা বেড়েছে। দুর্যোগের দ্বারা খাদ্য শস্য হানি বেড়েছে।

 

বৈশ্বিক উষ্ণতার সমস্যাসমূহঃ

তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ 

  • পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে চলছে (১৯৭০ সাল হতে ২০০০ সালের তথ্য) 
  •  ফলে শরৎ দেখিতে শুরু হয়েছ এবং বসন্ত আগেই চলে আসছে।
  • বাংলাদেশে শীতকালের স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে যা খাদ্য উৎপাদনকে প্রভাবিত করছে।

 

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ অনেক গবেষনায় এটা প্রমাণিত যে, 

  • Arctic Himalayan, Silverrin অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা গত দু'দশকে বেড়ে চলেছে ।
  •  সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের ৭০% লোক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (UNDP এর মতে)

 

বৃষ্টিপাতে বৈচিত্র্যতায়ঃ

  •  বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২,৩০০ মিঃমিঃ।
  • কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অঞ্চল ও মৌসুম ভেদে বৃষ্টিপাতে ভিন্নতা হচ্ছে
  •  উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৩০০ মিঃমিঃ এবং
  • পূর্ব উত্তর অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৫০০০ মিঃমিঃ ।
  • বৃষ্টিপাতে এরূপ চরম অবস্থা কৃষি ও জীবিকাকে প্রভাবিত করে। 

 

প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ

  • জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনঃ সাইক্লোন, ঝড়, জলোচ্ছাস, ধন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গন সংঘটনের মাত্রা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে
  • ২০০৮ সালে ৫৭টি দেশ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিজ্ঞার হয়েছে (UNWIP মতে)
  •  বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান একে দুর্যোগের কাছে নাজুক করেছে।

 

কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তাঃ

  • জলবায়ু পরিবর্তন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও পানি সরবরাহ পরিবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকাতে কৃষি উৎপাদন ও খানা নিরাপত্তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
  •  একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, জলবায়ু পরিবর্তন আউশ ফসলে ২৭%, গম উৎপাদনে ৬১% এবং সেচ ভিত্তিক ফসলে ৫৫% ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।

 

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র

  •  প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও চরম আবহাওয়া পরিবেশ ও জীববৈচিত্রকে বিলুপ্ত করছে। 
  •  ২০০৭ সালে সংগঠিত সিডর ব্যাপকভাবে সুন্দর বনের প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র প্রভাবিত করেছে।

 

মানব স্বাস্থ্য 

  • জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চরম আবহাওয়া ও খাদ্য সমস্যা বৃদ্ধি করে। 
  •  জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়া, পুষ্টিহীনতা প্রভৃতি বৃদ্ধি করে।
  • বন্যার ফলে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। 

 

বৈশ্বিক উচ্চতার প্রতিবিধানঃ

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন একটি সার্বজনীন সমস্যা। এই সমস্যার আশু সমাধান না হলে বিশ্ববাসীকেই এর খেসারত দিতে হবে। কাজেই এর দ্রুত ও দক্ষ একটি সমাধান প্রয়োজন যা সম্মিলিতভাবে নিতে হবে। এই উষ্ণায়ন রোধে একটি দেশ নিচের পদক্ষেপগুলো করতে পারেঃ

  • উষ্ণায়ন রোধে বনায়ন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উষ্ণায়নের মরণছোবল থেকে রক্ষা পাবার জন্য বনায়ন সৃষ্টি প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের কর্তব্য।
  • ১৯৮০'র দশক থেকে গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিবছর গড়ে ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে। বাড়ছে। কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর জন্য COP সম্মেলন হতে যে মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেই দেশগুলো চলছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
  • বিশ্ব জলবায়ু চুক্তির ব্রোডম্যাপ তৈরী করে “Highest Carbon Emission" দেশগুলো হতে একটি বিশাল অঙ্কের Fund নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে ও উষ্ণায়নের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো যেমনঃ বাংলাদেশ, মাল্লীপ, ভূটান, শ্রীলংকাকে আর্থিক সাহায্য করতে হবে। 
  • IPCC ও জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বব্যপী green product ব্যবহারের নির্দেশ দিতে হবে। 
  •  বিশ্বব্যাপী যে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলি রয়েছে সেগুলোকে সোচ্চার হতে হবে । 
  • Monteal protocol, COP সম্মেলনে যে সিদ্ধান্তগুলি নেয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। 
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...