“বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিমা খাত-সমস্যা ও সম্ভাবনা” শিরোনামে ৫০০ শব্দের বাংলায় একটি রচনা লিখুন।
অবদানের হারবীমা হচ্ছে একজনের ঝুঁকিকে অনেকের কাঁধে বিস্তৃত করার একটি বৈধ পন্থা। এটি এমন এক ধরনের চুক্তি যেখানে কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম গ্রহণের বিনিময়ে কয়েকটি অদৃষ্টপূর্ব কারণে বীমাকৃত দ্রব্যের ক্ষতি হলে তা বীমাকারী ব্যক্তিকে পূরণ করে দিতে সম্মত থাকে ।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বীমা খাতের গুরুত্ব অনেক। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের ঝুঁকি শেয়ার করতে পারে কিংবা বড় ধরনের ক্ষতি হলে তার লোকসান কমিয়ে আনতে পারে। তবে এদেশের বীমা খাত এখনো বিকাশমান। এদেশে সাধারণ বীমার চেয়ে জীবন বীমার পণ্যের চাহিদাই বেশি। বাংলাদেশে ৪৬টি সাধারণ ও ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশের বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নাম হলো Insurance Development and
Regularatory Authority (IDRA). সংস্থাটি এদেশে তার কার্যক্রম শুরু করে ২০১১ সালে ।
এদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান 'জীবন বীমা কর্পোরেশন' ও 'সাধারণ বীমা কর্পোরেশন' ছাড়াও বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭৬টি; সাধারণ বীমা রয়েছে ৪৫টি এবং জীবন বীমা আছে ৩১টি। বিগত দুই অর্থ বছরে GDP তে বীমা খাতের অবদান তুলে ধরা হলোঃ
প্রবৃদ্ধির হার | অবদানের হার | ||||
২০১৭-১৮ | ২০১৮-১৯ | ২০১৯-২০ | ২০১৭-১৮ | ২০১৮-১৯ | ২০১৯-২০ |
১.৬৩ | ২.৫১ | ৪.০৫ | ০.৩০ | ০.২৭ | ০.২৯ |
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের GDP তে বীমা খাতের তেমন একটা অবদান নেই। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের GDP তে বীমা খাতের অবদান প্রায় ৪ শতাংশের কাছাকাছি। যেখানে আমাদের দেশের GDP তে বীমা খাতের অবদান মাত্র দশমিক ২৭ শতাংশ যা খুবই নগন্য। কিন্তু বীমা খাতের উন্নয়ন হলে GDP তে বীমা খাতের অবদান ৪ থেকে ৫ শতাংশ করা সম্ভব ।
আমাদের দেশে বীমা খাতটি অত্যন্ত অবহেলিত। এদেশের মানুষের বীমা সম্পর্কিত জ্ঞানও খুব সীমিত। এছাড়া বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মূলত কাজ শুরু করেছে ২০১১ সাল থেকে। বীমা শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন করা সম্ভব। আমাদের দেশে বীমার কিছু ইমেজ সংকট রয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে বীমা যেখানে বাধ্যতামূলক, সেখানে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত আমরা বীমার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারি নি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, একশ্রেণির সুবিধাবাদি লোক বীমার নাম করে গরীব মানুষের পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আমাদের দেশে বীমা খাতের প্রসারতা বৃদ্ধি না পাওয়ার মূল কারণ হলো বীমা খাত সম্পর্কিত জ্ঞান। শস্য বীমা, কৃষি বীমা, গবাদী পশু বীমা, স্বাস্থ্য বীমার মত প্রকল্পগুলো চালু হলে এদেশে বীমা খাতের প্রসারণ হবে বাড়বে এউচ তে বীমা খাতের অবদান। যুগোপযোগী শিক্ষার সুযোগ না থাকায় বীমা খাত পিছিয়ে পড়ছে। বীমা খাতের উন্নয়ন করতে হলে বীমা শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। অন্যদিকে বীমা শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো বেতনের চাকরি পায়, সেদিকে বীমা কোম্পানিগুলো নজর দিলে এই খাতের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আগমন ঘটবে যা বীমা খাতের প্রসারকে ত্বরান্বিত করবে।
এছাড়া বীমা খাতের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে এবং বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিজ্ঞাপনের সাহায্য নিতে হবে। সর্বোপরি, বাংলাদেশে প্রচলিত বীমা নীতিকে বাস্তবায়ন করে এবং বীমা সম্পর্কিত ইমেজ সংকট দূর করে বীমা খাতকে একটি সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত করা সম্ভব। এছাড়া দক্ষ জনবল তৈরী করে এবং বীমার ক্ষেত্র বিস্তৃতিকরণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে এই খাতের ভূমিকা আরো জোরালো হবে বলে আশা করি ।