অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক কাজের জন্য তৈরি হয়। কাজের প্রকৃতি অনুসারে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। তাই ব্যবহারকারী যে সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান বা ডেটা প্রক্রিয়াকরণের কাজ করতে পারে তাকে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বলে। যেমন-
১. Word Processing Package Program :
Word Star, Word Perfect, Ms-Word
২. Spreadsheet Package Program
: Lotus 1-2-3, Ms-Excel, Quattro Pro
৩। Database Package Program
: Access, SQL, Oracle ইত্যাদি।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। সাধারণ ব্যবহারিক প্রোগ্রাম (General Application Program)
২। অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা কাস্টমাইজ প্রোগ্রাম (Application Customized Program)
■ সাধারণ ব্যবহারিক প্রোগ্রাম (General Application Program) : ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরি যে সমস্ত বাণিজ্যিক সফটওয়্যার পাওয়া যায় তাকে সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বলে। সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সাহায্যে ব্যবহারকারী প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান করতে পারে। যেমন- ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, গ্রাফিক্স এবং ডেস্কটপ পাবলিশিং ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। উল্লেখযোগ্য সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে-
১. সফটওয়্যার স্যুইট-এম এস অফিস, লোটাস স্মার্ট স্যুইট, কোরল ড্র ইত্যাদি।
২. ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, নেটস্কেপ নেভিগেটর, নেটস্কেপ কমিউনিকেটর ইত্যাদি।
৩. ইলেকট্রনিক মেইল বা ই-মেইল, ইন্টারনেট মেইল, ইউডোরা প্রো, ইন্টারনেট এক্সপ্লেয়ার ইত্যাদি।
৪. ডেস্কটপ পাবলিশিং-পেজ মেকার, পাবলিশার, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর প্রভৃতি ।
▪️ অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম : কোনো বিশেষ বা সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করার জন্য যে সমস্ত প্রোগ্রাম রচনা করা হয় তাকে অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বলে। সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে ব্যবহারকারী অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। এ ধরনের প্রোগ্রাম সাধারণত উচ্চস্তরের ভাষায় লিখা হয় অথবা কোন সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনানুসারে প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ-ব্যাংকিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক সফটওয়্যার, একাউন্টিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের একাউন্টিং সফটওয়্যার, সেলস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক কমার্স, ইনভেন্টারি কন্ট্রোল সফটওয়্যার, পেরোল সিস্টেম, টিকেট রিজার্ভেশন সিস্টেম সফটওয়্যার ইত্যাদি হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম।
প্যাকেজ প্রোগ্রাম : কম্পিউটার ব্যবহারকারী তাঁর প্রয়োজন মত নিজেই প্রোগ্রাম রচনা করতে পারেন। এজন্য অবশ্যই তাঁকে অভিজ্ঞ প্রোগ্রামার হতে হয়। তবে সকল ব্যবহারকারী অভিজ্ঞ প্রোগ্রাম ডেভেলপার নয় ফলে সকল ব্যবহারকারীর পক্ষে প্রোগ্রাম তৈরি করা সম্ভব হয় না। ব্যবহাকারীদের চাহিদা অনুধাবন করে কম্পিউটার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক বাণিজ্যিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান কিছু সাধারণ প্রোগ্রাম তৈরি করে বাজারজাত করে থাকেন। এসব প্রোগ্রামকে সফটওয়্যার প্যাকেজ অথবা প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলা হয় । লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত এমএস ওয়ার্ড (MS Word) এবং ওয়ার্ড পারফেক্ট (Word Perfect ) বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। সংগঠনের বিচারে বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামসমূহকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। ভাগ দুইটি হলো-
১. একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ও
২. একীভূত (ইনটিগ্রেটেড) প্যাকেজ
▪️একক প্রক্রিয়া প্যাকেজ: শুধু এক ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ব্যবহার করা হয়। প্রোগ্রাম রচনার পরিবর্তে এসব প্যাকেজ ব্যবহার করে সহজে সমস্যা সমাধান করা যায়। লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত ওয়ার্ডস্টার, ভকসরাইটার, ওয়ার্ড, ওয়ার্ড-পারফেক্ট এবং গ্রাফ বা চার্ট, পাই-চার্ট তৈরির জন্য ব্যবহৃত গ্রাফ, হাভার্ড গ্রাফিক্স, একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ দিয়ে পৃথকভাবে এসব কাজ করতে হলে প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম ও ডেটা ফাইলকে কম্পিউটারে পড়ে নিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। এতে বিপত্তিও ঘটতে পারে; অনেক সময় একটি প্রোগ্রাম দিয়ে তৈরি ডেটা বা ফাইল অন্য প্রোগ্রামের জন্য গ্রহণযোগ্য হয় না।
■ একীভুত প্যাকেজ : একাধিক প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম বাণিজ্যিক প্যাকেজ পাওয়া যায়। এ ধরনের প্যাকেজ প্রোগ্রামকে একীভূত প্যাকেজ বলা হয়। একীভূত প্যাকেজে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম প্রোগ্রামের সমন্বয় করা হয়। একই ফাইলের ডেটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হলে একীভূত প্যাকেজ সহায়ক। একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রামের সহায়তায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কর্মদক্ষতা বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব। তবে একীভূত প্যাকেজের জন্য বৃহৎ মেমরি দরকার হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হলে একীভূত প্যাকেজের জন্য গতিসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা উৎসর্গ করতে হতে পারে। এ হিসাবে শুধু বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ব্যবহার করা সুবিধাজনক হতে পারে।
ফ্রিওয়্যার ও অপেন সোর্স : ফ্রিওয়্যার হলো বিনামূল্যে প্রাপ্ত সফটওয়্যার। যে সমস্ত সফটওয়্যার সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে হলে সফটওয়্যার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমোদন কিংবা রয়্যালটি (Royalty) দিতে হয় না তাকে ফ্রিওয়্যার বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অনেক প্রোগ্রামার বা প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার সর্বসাধারণের ব্যবহারের সুযোগ দেয়। এসব সফটওয়্যারকে ফ্রিওয়্যার বলে। যে কেউ ফ্রিওয়্যারের সোর্স কোড পেতে পারেন এবং তা উন্নয়ন করে নিজে ব্যবহার কিংবা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারেন।
ফ্রিওয়্যার সবার জন্য উন্মুক্ত। কাজেই যে কেহ চাইলেই ফ্রিওয়্যার কপি করে ব্যবহার করতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিওয়্যার সংগ্রহ করা যেতে পারে।
শেয়ারওয়্যার : শেয়ারওয়্যার হলো এমন কিছু সফটওয়্যার যেগুলো বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে সংগ্রহ ও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে তাদের শেয়ারওয়্যার বলে। শেয়ারওয়্যার অনেকটা ফ্রিওয়্যারের মতোই তবে সামান্য রেজিষ্ট্রেশন ফিস এর বিনিময়ে শেয়ারওয়্যার ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক রকম শেয়ারওয়্যার সংগ্রহ করা যায়।
আরও দেখুন...