কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র; যা মূলত ডেটা গ্রহণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং ফলাফল প্রদান করে। কম্পিউটারের নিজস্ব কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই বা নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। ব্যবহারকারী প্রদত্ত নির্দেশ বা নির্দেশাবলি অনুযায়ী কম্পিউটার কাজ করে থাকে। এ ধরনের নির্দেশাবলির সমষ্টিই হলো সফটওয়্যার, যা কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। আর সফটওয়্যারের প্রদত্ত নির্দেশ কম্পিউটার প্রক্রিয়াকরণ করে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসের সমন্বয়ে, যা হার্ডওয়্যার নামে পরিচিত। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার একে অপরের পরিপূরক।
সমস্যা সমাধান বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের ভাষায় ধারাবাহিক ভাবে সাজানো নির্দেশমালাকে প্রোগ্রাম বলে । প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম সমষ্টি যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়্যারকে কার্যক্ষম করে তাকেই সফটওয়্যার বলে। সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায় এমন সমন্বিত প্রোগ্রাম বিশেষ। কম্পিউটার অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজে কখনো কোন কিছু করতে পারে না। প্রয়োজনীয় কাজটি সম্পন্ন করতে একটি নির্দেশ গ্রহণ করে থাকে। সফটওয়্যার হচ্ছে হার্ডওয়্যারের প্রাণশক্তি বা জীবনী শক্তি অর্থাৎ সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার অর্থহীন।
সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য
বিভিন্ন কম্পিউটারের ব্যবহৃত সফটওয়্যারের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো—
১. আপগ্রেডেবিলিটি (Upgradability) : সফটওয়্যারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো আপগ্রেডেবিলিটি বা উচ্চতর স্তরে উন্নীতকরণ। সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পরপরই আপগ্রেডেড ভার্সনের সফটওয়্যার বাজারে প্রকাশ করে। কাজেই বিদ্যমান সফটওয়্যার ও সফটওয়্যার দ্বারা তৈরি করা ডকুমেন্ট নতুন ভার্সনের সফটওয়্যার দ্বারা আপগ্রেড করার প্রয়োজন হতে পারে।
তবে সফটওয়্যার আপগ্রেডিবিলিটি বৈশিষ্ট্য ব্যহারকারীদের জন্য অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। অনেক সময় আপডেট সফটওয়্যারে নির্মিত ডকুমেন্ট বা ফাইল Downwordly Compatible বা নিম্নমুখী উপযুক্ততা থাকে না। যেমন— ভার্সন — ৭ এ নির্মিত ডকুমেন্ট ভার্সন – ৬ এ পড়া যাবে না।
• নতুন ভার্সনের সফটওয়্যারে সাথে পূর্বের সফটওয়্যারের মধ্যে অনেক ফাংশনের কার্যক্রমের অমিল থাকে। তাই ডকুমেন্ট পূর্বের ভার্সনে সংরক্ষণ করলে ডেটার ফরমেটিং হারিয়ে যায়।
• আপগ্রেডেড সফটওয়্যারের জন্য সাধারণত বেশি মেমোরি, ডিস্ক স্পেস ও দ্রুত গতির প্রসেসরের প্রয়োজন হয়। এমনকি হার্ডওয়্যার আপগ্রেডের প্রয়োজন হয়। ফলে সফটওয়্যার ব্যবহারকারীকে কিছুদিন পর পর সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করার জন্য অর্থ খরচ করতে হয়।
২. বহনযোগ্যতা (Portability): সফটওয়্যারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পোর্টেবিলিটি। কোনো কম্পিউটারের একটি গ্রোগ্রামে তৈরি ডকুমেন্ট বা ফাইল অন্য আরেকটি কম্পিউটারের একই প্রোগ্রামে চালু করে কাজ করার বৈশিষ্ট্যকে বহনযোগ্যতা বা Portability বলে। অর্থাৎ এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ফাইল ট্রান্সফারকেও বোঝায়। বিভিন্ন কারণে কম্পিউটারে এক সফটওয়্যারের ডেটা অন্য আরেকটি সফটওয়্যারে স্থানান্তর করতে হয়। যেমন-
• MS Word এর তৈরি রিপোর্টে MS Excel এর ওয়ার্কশিটে Insert করার প্রয়োজন।
• গবেষণার কাজে ইন্টারনেট হতে আর্টিকেল Download করার প্রয়োজন।
•UNIX মেশিন ব্যবহারকারী ই-মেইলের মাধ্যমে WINDOWS XP ব্যবহারকারীর নিকট কোনো ফাইল প্রেরণের প্রয়োজন।
৩. অবজেক্ট লিংকিং এন্ড এম্বেডিং (Object Linking & Embedding-OLE): সফটওয়্যারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো অবজেক্ট লিংকিং এন্ড এম্বেডিং। কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিজেরদের মধ্যে উপাত্ত ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হয়— অবজেক্ট লিংকিং এন্ড এম্বেডিং। যেমন MS Word এ তৈরি কোনো রিপোর্টে যদি MS Excel এ তৈরি কোনো চার্ট বা গ্রাফ এর প্রয়োজন হয় তবে ওয়ার্ডের ডকুমেন্টটির সাথে স্প্রেডশিটকে লিংক অথবা এম্বেড করা হয়। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে Insert এর মাধ্যমেই এই কাজটি সম্পন্ন করা হয়। ডেটা কোথায় সংরক্ষণ করা হয় এবং গন্তব্য ফাইলে উহা কিভাবে আপডেট করা হয় তার উপর ভিত্তি করে লিংক অবজেক্ট ও এম্বেডেড অবজেক্টের মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করা হয়। যদি মূল ডেটার পরিবর্তনের সাথে সাথে তথ্যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে লিংক অবজেক্ট ব্যবহার করা হয়। যেমন যদি Microsort Excel এর ওয়ার্ক বুকের কিছু Cell লিংকড অবজেক্ট হিসাবে ওয়ার্ড ডকুমেন্টে সংরক্ষণ করা হয়, তবে Work Book-এ কোনো পরিবর্তনের সাথে সাথে ওয়ার্ড ডকুমেন্টে সংরক্ষণ করা হয় তবে Work Book-এ কোনো পরিবর্তনের সাথে সাথে ওয়ার্ড ডকুমেন্ট তথ্যও আপডেট হয়ে যায়।
এম্বেডেড অবজেক্ট ডেস্টিনেশন (গন্তব্য) ফাইলের অংশ হয়ে যায়। যেহেতু এম্বেডেড অবজেক্ট এর মূল ফাইলের সাথে কোনো সম্পর্ক বা লিংক থাকে না তাই মূল ফাইলে পরিবর্তন হলে ডেস্টিনেশন ফাইলে কোনো আপডেট হয় না। তবে একে ডাবল ক্লিকের মাধ্যমে edit করা সম্ভব।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
হার্ডওয়্যার | সফটওয়্যার |
---|---|
১. কম্পিউটারের বাহ্যিক অবকাঠামো বা আকৃতি সম্পন্ন সকল যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা ডিভাইসকে হার্ডওয়্যার বলে। | ১. সফটওয়্যার হলো কতকগুলো প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের সমষ্টি যা হার্ডওয়্যার ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়্যারকে সচল ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। |
২. কম্পিউটারের যন্ত্র সামগ্রীকে বোঝায়। | ২. প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের সমষ্টিকে বোঝায়। |
৩. হার্ডওয়্যার ছাড়া সফটওয়্যার মূল্যহীন। | ৩. সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার পরিচালনা করা যায় না। |
৪. হার্ডওয়্যার তৈরির সময় অবশ্যই সফটওয়্যার সম্বন্ধে ভাল ধারণা থাকতে হয়। | ৪. সফটওয়্যার তৈরির সময় হার্ডওয়্যার সম্বন্ধে ভাল ধারণা না থাকলেও চলে। |
৫. কী-বোর্ড, মাউস, মনিটর, সিপিইউ ইত্যাদি হার্ডওয়্যারের উদাহরণ। | ৫. DOS, Windows, MS-Word, MS- Excel ইত্যাদি সফটওয়্যারের উদাহরণ। |
সফটওয়্যার প্রধানত দু'ধরনের। যথা—
১. অপারেটিং সিস্টেম বা সিস্টেম সফটওয়্যার।
২. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার জন্য এবং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ারগুলোকে কাজ করার উপযোগী করতে যে সফটওয়্যারটি ব্যবহৃত হয় তাকে সিস্টেম সফটওয়্যার বলে। যেমন- মাইক্রোসফট কোম্পানির উইন্ডোজ ৭, ৮ ও ১০, ইউনিক্স, লিন্যাক্স ইত্যাদি হলো সিস্টেম সফটওয়্যার। সিস্টেম সফটওয়্যার হচ্ছে কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটারের বিভিন্ন ইনপুট/আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে কাজের সমন্বয় তৈরি করে এবং সিস্টেম সফটওয়্যার বিভিন্ন রকমের হয়।
সিস্টেম সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার একই বিষয়। সিস্টেম সফটওয়্যারকে অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার বলে। সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার হচ্ছে নিষ্প্রাণ দেহের মতো। এই নিষ্প্রাণ দেহে প্রাণ সঞ্চার করে অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার। এটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের মাঝামাঝি অবস্থান করে। হার্ডওয়্যারকে দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের কাজগুলো করিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অপারেটিং সিস্টেম বা সিস্টেম সফটওয়্যার সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করে। একজন ব্যবহারকারী যখন অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সাহায্যে কাজ করার জন্য কোনো নির্দেশ প্রদান করে তখন অপারেটিং সিস্টেম ঐ নির্দেশ অনুযায়ী কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজটি সম্পন্ন করে।
কম্পিউটারের ক্ষমতা ও সংগঠনের উপর সিস্টেম সফটওয়্যারের ক্ষমতা, ব্যাপ্তি ও দক্ষতা নির্ভর করে।
সিস্টেম সফটওয়্যারকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট বা সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম (System Management or Control Program )
২. সিস্টেম সহায়ক প্রোগ্রাম (System Support Program)
৩. সিস্টেম উন্নয়ন প্রোগ্রাম (System Development Program )
১. সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট বা সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম (System Management or Control Program) : সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট বা নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডেটা, প্রোগ্রাম, বিভিন্ন ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম নিম্নলিখিত প্রোগ্রামের সমন্বয়ে গঠিত হয়। যথা-
• অপারেটিং সিস্টেম প্রোগ্রাম (Operating System Program)
• ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Database Management System Program )
• নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (Network Management Program )
২. সিস্টেম সহায়ক প্রোগ্রাম (System Support Program) : সিস্টেম সহায়ক প্রোগ্রামের সাহায্যে কম্পিউটার ব্যবহারকারী সার্ভিস প্রোগ্রাম, নিরাপত্তা প্রদানের প্রোগ্রাম এবং কাজের হিসাব নিকাশসহ ইত্যাদি কাজ কার্যকর করতে পারে। সিস্টেম সহায়ক প্রোগ্রাম নিম্নলিখিত প্রোগ্রামগুলো নিয়ে গঠিত। যথা-
• সিস্টেম ইউটিলিটি প্রোগ্রাম (System Utility Program )
• সিস্টেম পারফরমেন্স প্রোগ্রাম (System Performance Program)
• সিস্টেম সিকিউরিটি প্রোগ্রাম (System Security Program)
৩. সিস্টেম উন্নয়ন প্রোগ্রাম (System Development Program) : সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম উন্নয়ন করা যায়। এটির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান
করা যায়। সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম নিম্নলিখিত প্রোগ্রামগুলো নিয়ে গঠিত যথা-
• প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ট্রান্সলেটর বা অনুবাদক
• প্রোগ্রামিং এডিটর এবং টুলস
• কম্পিউটার এইডেড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (Computer Aided Software Engineering-CASE) টুলস ।
কোনো বিশেষ ধরনের কাজ সম্পাদন করতে যে বিশেষ কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয় সেটিকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। এসব সফটওয়্যারকে সাধারণত প্যাকেজ প্রোগ্রামও বলা হয়। যেমন— লেখালেখির কাজের জন্য ওয়ার্ড প্রসেসর, হিসাব-নিকাশের জন্য এক্সেল প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারকে দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যথা-
১. সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ও
২. অ্যাপ্লিকেশন স্পেসিফিক বা ব্যবহার সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম।
১. সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম (General Application Program) : বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরি যে সমস্ত বাণিজ্যিক সফটওয়্যার পাওয়া যায় তাকে সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বলে। সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সাহায্যে ব্যবহারকারী প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নানা সমস্যা সমাধান করতে পারে। যেমন- ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, গ্রাফিক্স এবং ডেস্কটপ পাবলিশিং ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। উল্লেখযোগ্য সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে-
• সফটওয়্যার স্যুইট : এম এস অফিস, লোটাস স্মার্ট স্যুইট, কোরল ড্র ইত্যাদি ।
• ওয়েব ব্রাউজার : ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, নেটস্কেপ নেভিগেটর, নেটস্কেপ কমিউনিকেটর ইত্যাদি ।
• ইলেকট্রনিক মেইল বা ই-মেইল, ইন্টারনেট মেইল, ইউডোরা প্রো, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ইত্যাদি।
• ডেস্কটপ পাবলিশিং : পেজ মেকার, পাবলিশার, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর প্রভৃতি।
• ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: ওরাকল, এক্সেস, ডিবেজ ফক্সপ্রো ইত্যাদি ।
২. অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম (Application Customized Program) : কোনো বিশেষ বা সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করার জন্য যে সমস্ত প্রোগ্রাম রচনা করা হয় তাকে কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম বলে। সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে ব্যবহারকারী কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। এ ধরনের প্রোগ্রাম সাধারণত উচ্চস্তরের ভাষায় লেখা হয় অথবা কোনো সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনানুসারে প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ-ব্যাংকিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক সফটওয়্যার, একাউন্টিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের একাউন্টিং সফটওয়্যার, সেলস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক কমার্স, ইনভেন্টারি কন্ট্রোল সফটওয়্যার, পেরোল সিস্টেম, টিকেট রিজার্ভেশন সিস্টেম সফটওয়্যার ইত্যাদি হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম।
অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজ প্রোগ্রাম
কম্পিউটার ব্যবহারকারী তাঁর প্রয়োজন মতো নিজেই প্রোগ্রাম রচনা করতে পারেন। এজন্য অবশ্যই তাঁকে অভিজ্ঞ প্রোগ্রামার হতে হয়। তবে সকল ব্যবহারকারী অভিজ্ঞ প্রোগ্রাম ডেভেলপার নয়। ফলে সকল ব্যবহারকারীর পক্ষে প্রোগ্রাম তৈরি করা সম্ভব হয় না। ব্যবহাকারীদের চাহিদা অনুধাবন করে কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক বাণিজ্যিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কিছু সাধারণ প্রোগ্রাম তৈরি করে বাজারজাত করে থাকেন। এসব প্রোগ্রামকে সফটওয়্যার প্যাকেজ অথবা প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলে। বাংলা ফন্টসহ শহীদ লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত এমএস ওয়ার্ড (MS Word) এবং ওয়ার্ড পারফেক্ট (Word Perfect) বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। সংগঠনের বিচারে বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামসমূহকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। যথা—
১. একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ
২. একীভূত (ইন্টিগ্রেটেড) প্যাকেজ
১. একক প্রক্রিয়া প্যাকেজ
শুধুমাত্র একটি সমস্যা সমাধানের জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়। প্রোগ্রাম রচনার পরিবর্তে এসব প্যাকেজ প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সহজে সমস্যা সমাধান করা যায়। বাংলাফন্টসহ শহীদ লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত ওয়ার্ডস্টার, ডকসরাইটার, ওয়ার্ড, ওয়ার্ড-পারফেক্ট এবং গ্রাফ বা চার্ট, পাই-চার্ট তৈরির জন্য ব্যবহৃত গ্রাফ, হাভার্ড গ্রাফিক্স, গ্রাফ-প্লান একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। একক- প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রাম দিয়ে পৃথকভাবে এসব কাজ করতে হলে প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম ও ডেটা ফাইলকে কম্পিউটারে নিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। এতে বিপত্তিও ঘটতে পারে; অনেক সময় একটি প্রোগ্রাম দিয়ে তৈরি ডেটা বা ফাইল অন্য প্রোগ্রামের জন্য গ্রহণযোগ্য হয় না।
২. একীভূত (ইন্টিগ্রেটেড) প্যাকেজ
একাধিক প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম বাণিজ্যিক প্যাকেজ পাওয়া যায়। এ ধরনের প্যাকেজ প্রোগ্রামকে একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলে। একীভূত প্যাকেজে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম প্রোগ্রামের সমন্বয় করা হয়। একই ফাইলের ডেটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হলে একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রাম সহায়ক কাজ করে। একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রামের সহায়তায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কর্মদক্ষতা বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব। তবে একীভূত প্যাকেজের জন্য বৃহৎ মেমোরি দরকার হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হলে একীভূত প্যাকেজের জন্য গতিসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হতে পারে। এ হিসাবে শুধু বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ব্যবহার করা সুবিধাজনক হতে পারে।
প্যাকেজ সফটওয়্যারের কিছু বৈশিষ্ট্য
• প্যাকেজ সফটওয়্যারগুলো সাধারণত কমন (Common) কোনো কাজের সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করা হয়।
• কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরিতে দক্ষ যে কোনো 'Team' যে কোনো প্যাকেজ সফটওয়্যার তৈরি করতে পারেন। তবে এটি সময় সাপেক্ষে ও ব্যয়বহুল।
• প্যাকেজ সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত তার ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে নতুন ভার্সন বাজারে ছাড়েন। ফলে প্রচলিত প্যাকেজ সফটওয়্যারগুলোর কারিগরি দক্ষতা অনেক বেশি হয় এবং আকারেও এগুলো অনেক বড়।
• সহজে ব্যবহার করতে পারে বলে এসব সফটওয়্যারের জনপ্রিয়তাও বেশি। তুলনামূলকভাবে কম দামে প্যাকেজ সফটওয়্যার যে কেউ বাজার থেকে কিনতে পারে।
প্যাকেজ সফটওয়্যারের কিছু সুবিধা
• সফটওয়্যার তৈরির জটিলতা ও খরচ থেকে মুক্ত। যে কোনো সময় এসব সফটওয়্যার কিনে সাথে সাথেই প্রয়োজন মেটানো যায়।
• এসব সফটওয়্যার তৈরি করার পর বহুবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় বলে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।
• প্যাকেজ সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কারিগরি সেবা পাওয়া যায়।
• প্যাকেজ সফটওয়্যারের কিছু অসুবিধা
• এটি ব্যবহারকারীর সার্বিক চাহিদা পূরণ নাও করতে পারে। কিন্তু ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী বিক্রেতা পরিবর্তন করতে বাধ্য নয়।
• প্যাকেজ সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের গুণাগুণ এবং সেবার উপর ব্যবহারকারীর খুব কম নিয়ন্ত্রণ থাকে ।
• প্যাকেজ সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নতুন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা এবং পুরাতন ক্রেতাকে ধরে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভার্সন বাজারজাত করেন। সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী খুব বেশি মাত্রায় প্যাকেজ সরবরাহকারীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সফটওয়্যারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
১. বাণিজ্যিক সফটওয়্যার
২. ফ্রিওয়্যার বা ওপেন সোর্স
৩. শেয়ারওয়্যার
১. বাণিজ্যিক সফটওয়্যার: মানুষের প্রয়োজনকে উপলব্ধি করে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার তৈরি করে বাজারে তা অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করে। এ সকল সফটওয়্যারকে বাণিজ্যিক সফটওয়্যার বলে । যেমন— মাইক্রোসফট কর্পোরেশন অর্থের বিনিময়ে বাজারে মাইক্রোসফট অফিস বা অন্যান্য সফটওয়্যার বিক্রয় করে থাকে। বাণিজ্যিক সফটওয়্যার কপি করে ব্যবহার করা অনৈতিক কাজ এবং তা আইনত দন্ডনীয়। এ জন্য সকল দেশেই কপিরাইট আইন রয়েছে।
২. ফ্রিওয়্যার বা ওপেন সোর্স : ফ্রিওয়্যার হলো বিনামূল্যে প্রাপ্ত সফটওয়্যার। যে সমস্ত সফটওয়্যার সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে হলে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদন কিংবা রয়্যালটি (Royalty) দিতে হয় না তাকে ফ্রিওয়্যার (freeware) বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অনেক প্রোগ্রামার বা প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার সর্বসাধারণের ব্যবহারের সুযোগ দেয়, এই সকল সফটওয়্যারকে ফ্রিওয়্যার বলে। যে কেউ ফ্রিওয়্যারের সোর্স কোড পেতে পারে এবং তা উন্নয়ন করে নিজে ব্যবহার কিংবা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে। কাজেই যে কেউ চাইলেই ফ্রিওয়্যার কপি করে ব্যবহার করতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিওয়্যার সংগ্রহ করা যেতে পারে।
৩. শেয়ারওয়্যার: শেয়ারওয়্যার হলো এমন কিছু সফটওয়্যার যেগুলো বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে সংগ্রহ ও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে সেগুলোকে শেয়ারওয়্যার বলে। শেয়ারওয়্যার অনেকটা ফ্রিওয়্যারের মতোই, তবে সামান্য রেজিস্ট্রেশন ফি (Fee) এর বিনিময়ে শেয়ারওয়্যার ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক রকম শেয়ারওয়্যার সংগ্রহ করা যায়। এর উদ্দেশ্য থাকে দু'টি। যথা—
• ক্রেতা যেন সেই সফটওয়্যারটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নিতে পারে।
• এরপর ক্রেতা ক্রয় করতে চাইলে কেনার জন্য অর্ডার দিতে পারে।
সিস্টেম সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে বর্ণিত হলো—
সিস্টেম সফটওয়্যার | অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার |
---|---|
১. কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো কার্যকর রাখার জন্য প্রোগ্রামসমূহকে সিস্টেম সফটওয়্যার বলে। | ১. কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রামকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে । |
২. সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটারের অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। | ২. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। |
৩. সিস্টেম সফটওয়্যার ছয় প্রকার। | ৩. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার দু'প্রকার। |
৪. সিস্টেম সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করতে সাহায্য করে। | ৪ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের সাহায্য নিয়ে সিস্টেম সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। |
৫. সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। | ৫. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে থাকেন। |
প্যাকেজ প্রোগ্রাম | কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম |
---|---|
১. বাণিজ্যিকভাবে তৈরিকৃত এ ধরনের সফটওয়্যারে ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় সাধারণ নির্দেশাবলি দেয়া থাকে। | ১ চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহারকারী নিজে অথবা কোনো সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরিকৃত সফটওয়্যার। |
২. পরবর্তীতে চাহিদা মোতাবেক পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে না। | ২. পরবর্তীতে চাহিদা মোতাবেক পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে। |
৩. অপারেশন করার জন্য অনেক অপারেটর পাওয়া যায়। | ৩. অপারেশন করার জন্য পূর্ব থেকে জানা অপারেটর পাওয়া যায় না। |
৪. দৈনন্দিন সাধারণ সব সমস্যার সমাধান করার জন্য এ প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয় । | ৪. দৈনন্দিন সাধারণ কাজের চেয়ে ব্যতিক্রম কাজের জন্য নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে এ প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়। |
৫. তুলনামূলকভাবে মূল্য কম। | ৫. তুলনামূলকভাবে মূল্য বেশি । |
সিস্টেম সফটওয়্যারের মৌলিক কাজ হলো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। সিস্টেম সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করতে সাহায্য করে। সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাধারণত কম্পিউটারে সিস্টেম সফটওয়্যারের ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসেও সিস্টেম সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যেমন-স্মার্ট ফোন, স্মার্ট টিভি, স্মার্ট ঘড়ি ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের মৌলিক কাজ ও ব্যবহারিক ক্ষেত্র আলোচনা করা হলো-
অপারেটিং সিস্টেমের নাম | মৌলিক কাজ | ব্যবহারিক ক্ষেত্র |
---|---|---|
ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম (Batch Operating Systems)। যেমন- CP/M, MS-DOS, PC DOS | এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে প্রোগ্রাম বা উপাত্তগুলো পর্যায়ক্রমে পরিচালনা করে । | Payroll System, Bank Statements ইত্যাদি কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। |
মাল্টিপ্রোগ্রামিং বা মাল্টিটাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম (Multiprogramming or Multitasking Operating System) যেমন- IBM/VM, VM / SP CMS, Mac OS, UNIX, LINUX | একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালাতে পারে বা ডেটা প্রসেসিং করতে পারে। | গৃহস্থলীর যন্ত্রপাতি, স্বয়ংচালিত বিনোদন সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক ফাইল সিস্টেম ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। |
রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real time Operating System)। যেমন- eCos, OS 9, OSE, RSX- 11, RT-11, Windows CE | এই অপারেটিং সিস্টেম প্রোগ্রাম নির্বাহ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। | শিল্প ও সামরিক ক্ষেত্রে এই অপারেটিং সিস্টেম অধিকতর ব্যবহৃত হয়। |
টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time Sharing Operating System)। যেমন- Windows 2000 server, Windows NT server | | এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম প্রসেসিংয়ের | সময়কে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও ব্যবহারকারীর মধ্যে ভাগ করে দেয়। | সার্ভার কম্পিটউটারে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। |
ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System)। যেমন- CHORUS, MACH, AMOEBA, DCE ইত্যাদি। | এটি মাল্টি প্রসেসর কম্পিউটারের মতো কাজ করে। | Client-Server System, Computer Server System, File Server System ইত্যাদিতে এটি ব্যবহৃত হয়। |
মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (Mobile Operating System ) । যেমন- করে। Android OS, Apple and Windows mobile OS I | স্মার্টফোনকে পরিচালনা করা। | বিভিন্ন ধরনের ছোট ডিভাইস যেমন- স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। |
বিভিন্ন কাজের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের নাম | মৌলিক কাজ | ব্যবহারিক ক্ষেত্র |
---|---|---|
ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার | লেখালেখি ও শব্দ প্রক্রিয়াকরণ করা | লেখালেখির বিভিন্ন কাজ করার জন্য ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যেমন— মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, ওয়ার্ড স্টার, ওয়ার্ড পারফেক্ট ইত্যাদি। |
স্প্রেডশিট এ্যানালাইসিস সফটওয়্যার | হিসাব-নিকাশ করা | বাজেট তৈরি, ব্যালেন্সশিট তৈরি ইত্যাদি বিভিন্ন গাণিতিক কাজে স্প্রেডশিট সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যেমন— মাইক্রোসফট এক্সেল, লোটাস ১-২-৩ ইত্যাদি। |
ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার | তথ্য ব্যবস্থাপনা করা | তথ্য ভাণ্ডার যেমন— কোনো স্কুলের সকল ছাত্র- ছাত্রীর ব্যক্তিগত ও পড়াশুনা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ ও ম্যানেজমেন্ট করা । যেমন— মাইক্রোসফট এক্সেস, মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার, ওরাকল, ডিবেজ ইত্যাদি। |
ক্যাড (CAD) | ডিজাইন করা | Computer Aided Design যেমন— অটো ক্যাড, টার্বো ক্যাড, ফাস্ট ক্যাড ইত্যাদি। এ সব সফটওয়্যার দিয়ে বিভিন্ন স্থাপত্য ডিজাইন ও যন্ত্রপাতির ডিজাইন করা হয়। |
সিমুলেশন সফটওয়্যার | ত্রিমাত্রিক পরিবেশ তৈরি করা | এমআইএসটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ল্যাপরোস্কোপিক যা ডাক্তারদের ল্যাপারোস্কপিক অপারেশন শেখানোর একটি সিমুলেশন সফটওয়্যার। |
গ্রাফিক্স সফটওয়্যার | ছবি সম্পাদনা করা | বিভিন্ন ধরনের ছবি ও প্রচ্ছদ তৈরি করতে গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় যেমন- এডোবি ফটোশপ, কোরেল ড্র ইত্যাদি। |
গ্রাফিক্স এনিমেশন সফটওয়্যার | এনিমেশন তৈরি ও সম্পাদনা করা | বিভিন্ন কার্টুন ও থ্রিডি অবজেক্ট তৈরি করে তাতে বিভিন্ন ধরনের মোশন (Motion) ব্যবহার করে তাকে এনিমেটেড (চলন্ত) করার জন্য গ্রাফিক্স এনিমেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যেমন— থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স, মায়া ইত্যাদি |
মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার | মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করা | ডিজিটাল সিনেমায় সাউন্ড, এনিমেশন ইত্যাদি বিভিন্ন ইফেক্ট দেয়ার জন্য মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যেমন উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার, ম্যাক্রোমিডিয়া ডিরেক্টর, ফ্ল্যাশ, জেট অডিও প্লেয়ার ইত্যাদি। |
প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার | প্রেজেন্টেশন ফাইল তৈরি করা | সভা, সেমিনারে স্লাইড শো উপস্থাপন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন— মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট। |
ইন্টারনেট ব্রাউজার | ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা | বিভিন্ন ওয়েব পেজ খোলা ও দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন— ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, নেটস্কেপ নেভিগেটর, অপেরা ইত্যাদি। |
কম্পিউটার ভাইরাস এক ধরনের ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাহ ( Self Executed), সংক্রমণ (Self Extracted) ও নিজস্ব সংখ্যাবৃদ্ধি (Self Replicated) করে। এই প্রোগ্রাম কিছু নির্দেশ বহন করে যা কম্পিউটারের সিপিইউ কর্তৃক গ্রহণ করে কম্পিউটারকে অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও অস্বস্তিদায়ক কাজ করতে বাধ্য করে। কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারের মেমোরিতে গোপনে বিস্তার লাভ করে মূলবান প্রোগ্রাম তথ্য নষ্ট করা ছাড়াও অনেক সময় কম্পিউটারকে অচল করে দেয়। ভাইরাস হলো এমন একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম যা কম্পিউটার বা আইসিটি ডিভাইসের অন্যান্য প্রোগ্রামকে আক্রমণ করে তথ্য ও উপাত্তকে বিনিষ্ট করে এবং পর্যায়ক্রমে নিজের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষমতা রাখে। এ সংক্রামিত প্রোগ্রামগুলো ভাইরাসের হয়ে অন্যান্য অসংক্রমিত প্রোগ্রামগুলোকে সংক্রমণ ঘটায়। যার ফলে প্রথমোক্ত প্রোগ্রামগুলো মূল ভাইরাসের হয়ে অন্যান্য ভালো প্রোগ্রামগুলোকে সংক্রমণ ঘটায়। এটি কখনও প্রোগ্রাম বা ডেটা ফাইল নষ্ট করে ফেলে, কম্পিউটারকে বুট হতে বিরত রাখে, ডিস্কসহ মাদারবোর্ডের বায়োস (BIOS) নষ্ট করে ফেলে।
কম্পিউটার ভাইরাসের নামকরণ
কম্পিউটারের পরিভাষায় ভাইরাস (VIRUS) শব্দটি পূর্ণরূপ পাওয়া যায় “ভাইটাল ইনফরমেশন রিসোর্সেস আন্ডার সিজ (VIRUS - Vital Information Resources Under seize) " অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ দখলে নেওয়া বা ক্ষতি সাধন করা। প্রখ্যাত গবেষক ফ্রেড কোহেন কম্পিউটারের এই ক্ষতিক্ষারক/ধ্বংসকারী প্রোগ্রামের “ভাইরাস" নামকরণ করেন।
ভাইরাসে আক্রান্ত কম্পিউটারের লক্ষণসমূহ-
১. কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা ফাইলসমূহ Open করতে বেশি সময় লাগে;
২. কম্পিউটারের গতি কমে যাওয়া;
৩. কম্পিউটার চলমান থাকা অবস্থায় কিছু অপ্রত্যাশিত বার্তা প্রদর্শিত হওয়া;
৪. কোনো কারণ ছাড়াই কম্পিউটার নিজ থেকে বন্ধ হচ্ছে বা চালু হচ্ছে;
৫. কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে;
৬. চলমান কাজের ফাইলগুলো বেশি জায়গা দখল করছে।
এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ও এর বৈশিষ্ট্য
এন্টিভাইরাস হলো কম্পিউটার ভাইরাসের প্রতিষেধক। কম্পিউটার প্রোগ্রামসমূহকে ভাইরাস মুক্ত করা এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করাই এর কাজ। সুতরাং, আমরা এন্টিভাইরাসের সংজ্ঞা এভাবে দিতে পারি, যে সকল সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ব্যবহার করে কম্পিউটারকে ক্ষতিকর ভাইরাস প্রোগ্রামের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় কিংবা সংক্রমিত কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত করা হয় তাকে এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার বলে । ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য চাই শক্তিশালী এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম। প্রতিদিন সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য নতুন নতুন ভাইরাস সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ভাইরাসের উপর গবেষণা করে এর প্রতিষেধক অর্থাৎ এন্টিভাইরাসও তৈরি হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় কয়েকটি এন্টিভাইরাস হলো-
১. এভিজি (AVG)
২. এভাস্ট (AVAST)
৩. এভিরা (Avira )
৪. ক্যাসপারেস্কি (Kaspersky )
৫. ইসেট নড৩২ (Eset NOD32)
৬. বিটডিফেন্ডার (Bitdefender)
৭. কোবরা (Cobra) (বাংলাদেশি]
৮. কমোডো এন্টিভাইরাস (Comodo
৯. ম্যাকএফির ভাইরাস স্ক্যান (McAffy's Virus Antivirus)
১০. পিসি টুলস এন্টিভাইরাস (PC Tools Scan)
১১. নর্টন এন্টিভাইরাস (Norton Anti Virus -NAV Antivirus)
১২. জোন এলার্ম এন্টিভাইরাস (Zone Alarm)
১৩. আইবিএম এন্টিভাইরাস (IBM AntiVirus) Antivirus)
১৪. পিসি সিলিন (PC Cillin )
এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা
এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ-
• ভাইরাস যুক্ত কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত করা।
• কম্পিউটারকে সুরক্ষার জন্য এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম দরকার।
• কম্পিউটারের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সুন্দরভাবে ব্যবহার করার জন্য এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করা।
• কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযুক্ত থাকলে এন্টিভাইরাস দিয়ে ভাইরাস মুক্ত করা।
আরও দেখুন...