জান তোমরা? যেদিন অযোধ্যার লোকেরা সীতাকে বিসর্জন দিবার দাবি করিয়াছিল তাহার মধ্যে আমিও যে ছিলাম। আর সেই বিসর্জনের গৌরবের কথা যুগে যুগে যাহারা গান করিয়া আসিয়াছে আমিও যে তাদের মধ্যে একজন। আর, আমিও তো সেদিন লোকরঞ্জনের জন্য স্ত্রী পরিত্যাগের গুণ বর্ণনা করিয়া মাসিকপত্রে প্রবন্ধ লিখিয়াছি। বুকের রক্ত দিয়া আমাকে যে একদিন দ্বিতীয় সীতা বিসর্জনের কাহিনি লিখিতে হইবে সে কথা কে জানিত।
আজকাল সমাজের দিকে তাকালে পরনির্ভরশীলতার বিভিন্ন চিত্র চোখে পড়ে। নিজেকে জানা প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম, দর্শন থেকে শুরু করে প্রতিটি জ্ঞানের শাখায় নিজেকে জানার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে "মান আরাফা নাফসাহু, ফা-কাদ আরাফা রাব্বাহু" অর্থাৎ যে নিজেকে জেনেছে, সে তার রবকে জেনেছে। সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে 'আত্মানং বিদ্ধি' অর্থাৎ আত্মজ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। দার্শনিক সক্রেটিসও বলেছেন 'নিজেকে জানো'। আত্মনির্ভরশীল মানুষ ছাড়া সমাজ বা জাতির উন্নতি অসম্ভব। একে অপরের প্রতি নির্ভরতার কারণে মানসিক দাসত্ব হয় এবং তা ক্রমান্বয়ে সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২২ খ্রি. তৎকালীন বৃটিশ সরকারের অধীন থেকে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেন এবং তা 'ধূমকেতু' পত্রিকায় প্রকাশ করেন। ১৯২৩ খ্রি. জানুয়ারিতে তার একবছর কারাদণ্ড হয়। সে সময় হুগলি জেলখানায় থাকাকালীন ১৯২৩ খ্রি. মে মাসে তিনি অনশন ধর্মঘট করেন। অনশন ভঙ্গের জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে টেলিগ্রাম করেন। কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর অনুরোধে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ঢাকা শহরে শতশত মানুষ আসে। কখনো ট্রেনের ছাদে চড়ে, কখনো বাসে ঝুলতে ঝুলতে, কখনো লঞ্চে আসতে গিয়ে লঞ্চ ডুবে যায়, এভাবেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জীবনধারার মানুষ আসে। উত্তর বঙ্গে মঙ্গার সময় মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, দক্ষিণ বঙ্গে বন্যা, নদীভাঙ্গন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পিপড়ার সারির মত মানুষ আসে। সকলেরই উদ্দেশ্য একটু খেয়ে-পরে বাঁচবার। দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী এসব মানুষের চোখে-মুখে দুর্ভিক্ষের ভয়াল ছাপ। সবারই ধারণা রাজধানী ঢাকাতে যেতে পারলে অন্তত না খেয়ে মরবো না। সে জন্যই তারা ঢাকায় আসে।
কাজল সাহেব সন্তান লাভের আশায় দ্বিতীয় বিয়ে করে। অবশ্য সন্তান লাভের আশায় এই বিয়েতে তার প্রথম স্ত্রীর সম্মতি ছিল। বিয়ের পর তার সে আশা পূরণ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান না হওয়ার কারণে পিরের পানি পড়া খাওয়াতে গেলে বিপত্তি বাধে। দ্বিতীয় স্ত্রী কাজলকে হুমকি দেয়। এই হুমকিতে তার মধ্যে দোদুল্যমানতার সৃষ্টি হয়।
মানিক যখন দুধের শিশু, তখন তার বাপ-মা মারা যায়। নরেশ সেই দুধের শিশু মানিককে সন্তান স্নেহে প্রতিপালন করে। নরেশের স্ত্রী নিজের সন্তানের মত করেই মানিককে লালন পালন করেছে। একদিন গ্রামের মাতব্বরের প্ররোচনায় মানিক টাকার লোভে নরেশ দম্পতির একমাত্র পুত্র রতনকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করে। পরে জানা গেছে মাতব্বরের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার ভয়ে রতনকে খুন করায় মানিককে দিয়ে। তার বিনিময়ে মানিককে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয় মাতব্বর। রতনকে খুন করার সময় মানিকের বাল্যস্মৃতি অর্থের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন টিপু সুলতান। তিনি তাঁর শৌর্যবীর্যের কারণে 'শের-ই-মহীশূর' নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মতে, "ভেড়া বা শেয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দুদিন বেঁচে থাকাও ভালো।" এই মহান শাসক নিজের দেশের স্বাধীনতার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিহত হন ১৭৯৯ সালে। কিন্তু তাঁর এই পরাজয়ের মূল কারণ ছিলো তাঁরই সেনাপতি মির সাদিক। মির সাদিক লোভে পড়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।