অবাক সূর্যোদয়

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | NCTB BOOK

কিশোর তোমার দুই

রক্তভীষণ মুখমণ্ডলে চমকায় বরাভয় ৷

বুকের অধীর ফিনকির ক্ষুরধার

শহিদের খুন লেগে

কিশোর তোমার দুই হাতে

দুই সূর্য উঠেছে জেগে।

মানুষের হাতে অবাক সূর্যোদয়,

যায় পুড়ে যায় মর্তের অমানিশা

শঙ্কার সংশয়।

কিশোর তোমার হাত দুটো উঁচু রাখো

প্রবল অহংকারে সূর্যের সাথে

অভিন্ন দেখ অমিত অযুত লাখ ।

সারা শহরের মুখ

তোমার হাতের দিকে

ভয়হারা কোটি অপলক চোখ একাকার হলো

সূর্যের অনিমিখে।

কিশোর তোমার হাত দুটো উঁচু রাখো

লোলিত পাপের আমূল রসনা ক্রূর অগ্নিতে ঢাক।

রক্তের খরতানে

জাগাও পাবক প্রাণ

কণ্ঠে ফোটাও নিষ্ঠুরতম গান

যাক পুড়ে যাক আপামর পশু

মনুষ্যত্বের ধিক অপমান

কিশোর তোমার হাত দুটো উঁচু রাখো

কুহেলী পোড়ানো মিছিলের হুতাশনে

লাখ অযুতকে ডাক।

কিশোর তোমার দুই

হাতের তালুতে আকুল সূর্যোদয়

রক্তশোভিত মুখমণ্ডলে চমকায় বরাভয়।
 

Content added || updated By

(নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক))

হাসান হাফিজুর রহমান ১৪ই জুন ১৯৩২ সালে জামালপুর জেলার কুলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুর রহমান ছিলেন স্কুলশিক্ষক। হাসান হাফিজুর রহমান ১৯৪৬ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. এবং ১৯৫৫ সালে বাংলায় এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন । তিনি ছিলেন ভাষা- আন্দোলনের একজন অসাধারণ সংগঠক। ১৯৫৩ সালে তাঁর সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারি গ্রন্থটি বিস্ময়কর আলোড়ন সৃষ্টি করে । কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতাসহ অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অকুতোভয় এক সৈনিক। স্বাধীনতা-উত্তর কালে তিনি সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প'-এর তিনি ছিলেন প্রধান। তাঁর সম্পাদনায় ষোলো খণ্ডে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ : দলিলপত্র' প্রকাশিত হয়। তিনি কবি, সমালোচক ও গল্পকার হিসেবে খ্যাতিমান। বিভাগ উত্তর পূর্ববাংলার আধুনিক কাব্য আন্দোলনের তিনি ছিলেন একজন অন্যতম স্থপতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য : বিমুখ প্রান্তর, আর্ত-শব্দাবলি, অন্তিম শরের মতো, উদ্যত সঙ্গীন, শোকার্ত তরবারি, আমার ভেতরের বাঘ ইত্যাদি । প্রবন্ধগ্রন্থ : আধুনিক কবি ও কবিতা, সাহিত্য প্রসঙ্গ, গল্পগ্রন্থ : আরো দুটি মৃত্যু ইত্যাদি। হাসান হাফিজুর রহমান লেখক সংঘ পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। ১৯৮৩ সালের ১লা এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
 

Content added By

(নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক))

আকুল সূর্যোদয় – নতুন দিন আসার ব্যগ্র বাসনা। বরাভয়- আশীর্বাদ বা আশ্বাসসূচক করভঙ্গি বা হাতের মুদ্রাবিশেষ। খুন - রক্ত। মর্ত্যের অমানিশা- পৃথিবীর দুর্দিন বা পৃথিবীর অন্ধকার। অমিত- অপরাজেয়। অযুত- দশ হাজার, অপলক – পলকহীন। অনিমিখে - এক দৃষ্টিতে পলকহীনভাবে। লোলিত - কম্পিত, আন্দোলিত। খরতানে – কর্কশ সুরে। পাবক- আগুন। আপামর – সর্বসাধারণ। কুহেলী – কুয়াশা। রক্তশোভিত – রক্ত দ্বারা রঞ্জিত। -
 

Content added || updated By

(নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক))

 কিশোর বয়সটি হচ্ছে দুর্জয় সাহস আর সৃষ্টিশীলতার সময়। কবিতাটি এই কিশোর বন্দনারই গাথা। চমৎকার কিছু ছবি, ভাবনা আর প্রতীকের মধ্য দিয়ে কবি এখানে কিশোরদের জয়গান করেছেন। কবি মনে করেন, কিশোররাই হচ্ছে সেই ভয়হীন সত্তার অধিকারী, শহিদের খুন যাদের দুই হাতে সূর্যোদয় হয়ে জেগে ওঠে। এই সূর্যের আলোতেই কেটে যায় পৃথিবীর অন্ধকার। কিশোর তার দুই হাতকে সূর্যের মতোই অহংকারে উঁচু করে রাখুক, এটাই কবির কামনা। উত্তোলিত এই হাতই, কবি মনে করেন, মানুষকে বরাভয় হতে শেখাবে। ঢেকে যাবে সমস্ত পাপ। পুড়ে যাবে পশুত্ব। অযুত মানুষকে মিছিলে জানাবে আহ্বান। সূর্য আর উত্তোলিত হাতের প্রতীকে কৈশোরক সাহসিকতা আর বরাভয়কে এভাবেই বর্ণনা করেছেন কবি ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion