SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - অঞ্জলি ১ | NCTB BOOK

আজকে তোমাদের শিক্ষক মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষার ওপর বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবেন। শিক্ষক যখন ব্যাখ্যা করবেন তখন কোনো কঠিন বিষয় থাকলে প্রশ্ন করে জেনে নিও।

মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষাসমূহ উপস্থাপন

পবিত্র বাইবেল খ্ৰীষ্টিয় মতবাদের প্রাথমিক ও একমাত্র উৎস। পবিত্র বাইবেল নিজেই একমাত্র চূড়ান্ত কৰ্তৃপক্ষ কিন্তু ঐতিহ্যগুলো বিশ্বাসের অনুশীলনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যে সমস্ত নিয়মাবলি মাণ্ডলীক কার্যক্রমে যুগ যুগ ধরে চর্চা হয়ে আসছে তাকে মাণ্ডলীক ঐতিহ্য বলা হয়। যাকে খ্রীষ্টধর্ম বিশ্বাসের স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিও বলা হয়। ঐতিহ্যসমূহ মাণ্ডলীক অনুশীলন ও বিশ্বাসের অংশ। যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যসমূহ মণ্ডলীর কার্যক্রমের মান বজায় রেখে মণ্ডলীকে সুশৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করতে সহায়তা করছে। ঐতিহ্যগুলো পবিত্র বাইবেল নির্দেশিত। যীশুর সময় লোকেরা মানব সৃষ্ট কিছু কিছু নিয়ম পালন করছিল। যীশু তাদের সতর্ক করে বলেছেন, “আপনারা তো ঈশ্বরের দেওয়া আদেশগুলো বাদ দিয়ে মানুষের দেওয়া চলতি নিয়ম পালন করছেন।” যীশু তাদের আরও বললেন, “ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে নিজেদের চলতি নিয়ম পালন করবার জন্য বেশ ভাল উপায়ই আপনাদের জানা আছে” (মার্ক ৭ : ৮-৯)। ঐতিহ্যগুলো প্রধানত মণ্ডলী কর্তৃপক্ষের ঐতিহাসিক শিক্ষা যেমন চার্চ কাউন্সিল, পোপ, কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়ার্ক, ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ, চার্চের আধ্যাত্মিক পিতাগণ, চার্চ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ধর্মমত, শৃঙ্খলা, উপাসনা এবং ভক্তিতে ধর্মীয় ঐতিহ্যের বিকাশ ঘটেছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের খ্রীষ্ট মণ্ডলী রয়েছে। মণ্ডলীর কিছু কিছু বিশ্বাসও আলাদা। রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীসহ কিছু কিছু মণ্ডলী ধর্মানুষ্ঠানগুলোকে সাতটি শ্রেণিতে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। এগুলো হলো দীক্ষার ধর্মানুষ্ঠান বা সংস্কার : বাপ্তিস্ম (এই অনুষ্ঠানের একটি ছবি আগের পাতায় দেওয়া আছে), প্রভুর ভোজ ও হস্তার্পণ। নিরাময়ের সংস্কার : পাপ স্বীকার ও অন্তিমলেপন। সেবার সংস্কার : যাজকবরণ ও বিবাহ। এই ৭টি সংস্কার ১৪৩৯ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অব ফ্লোরেন্স কর্তৃক নির্ধারিত হয়। পরে ১৫৪৫-১৫৬৩ সালের মধ্যে কাউন্সিল অব ট্রেন্ট থেকে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়। রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর বিশ্বাসীগণ নাইসীয় ক্রীড (বিশ্বাসমন্ত্র/বিশ্বাসসূত্রে) বিশ্বাস করেন।

রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী ছাড়াও অন্যান্য মণ্ডলী বাংলাদেশ রয়েছে তাদেরকে প্রোটেস্ট্যান্ট বলা হয়। তাদের মধ্যে এ্যাডভেন্টিস্ট, এ্যাংলিকান, ব্যাপ্টিস্ট, লুথারান, মেথোডিস্ট, পেন্টিকস্টাল, এ্যাসেম্বলিজ অব গড়, ন্যাজ্যারিন, প্রেসব্রিটারিয়ান ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। প্রোটেস্টান্ট মণ্ডলীগুলোর মধ্যে কোনো কোনো মণ্ডলীতে সংস্কারের পরিবর্তে অধ্যাদেশ কথাটি ব্যবহার করা হয়। যেমন— ব্যাপ্টিষ্ট মণ্ডলীতে দুটি অধ্যাদেশ আছে। পবিত্র প্রভুর ভোজ ও অবগাহন।

বাইবেল পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাইবেল ঈশ্বর নিশ্বসিত বাক্য। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। বাক্য পাঠ, প্রার্থনা, উপবাস, দান করার মতো বিষয়গুলোও কোনো কোনো মণ্ডলীর ঐতিহ্য। যাজকীয় বস্ত্র, উপাসনা পরিচালনার রীতি-নীতি ও উপাসনা পরিচালনার ধারাবাহিকতাও কোনো কোনো মণ্ডলীর ঐতিহ্য। খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীর ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা পর্ব পালন করা হয়। যেমন— আগমনকাল (Advent), বড়দিন (Christmas), উপবাসকাল (Lent), খর্জুরপত্র রবিবার (Palm Sunday), পুণ্য সপ্তাহ (Holy Week), যীশুর মৃত্যু (Good Friday), যীশুর পুনরুত্থান (Easter), যীশুর স্বর্গারোহণ (Ascension), পবিত্র আত্মার অবতরণ (Pentecost), ইত্যাদি।

মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষাগুলোর উপকারিতা

- ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রশংসা করা : বিশ্বাসী হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে ঈশ্বর সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর প্রশংসা করা ন্যয়সংগত। তিনি সমস্ত প্রশংসা পাবার যোগ্য। ঐতিহ্যগুলো ঈশ্বরকে প্রশংসা করার নির্দেশনা প্রদান করে।

- বাইবেলের শিক্ষাগুলো প্রয়োগ করা : পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী মণ্ডলীর সদস্যপদ লাভ, বাপ্তিস্ম, উপাসনা, বিবাহসহ পবিত্র কার্যক্রমগুলো মণ্ডলীতে প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে একটি শৃঙ্খলা ও অনুশীলন প্রতিষ্ঠিত হয়।

- ধর্মীয় বিশ্বাসকে সমুন্নত রাখা : ঐতিহ্যগুলো চর্চা করার মধ্য দিয়ে ভ্রান্ত শিক্ষা প্রতিরোধ করা হয়। পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা, বিশ্বাস ও অনুশীলন স্বীকার করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস দৃঢ় হতে সহায়তা করে।

- ইতিহাস সমর্থন করা : ইতিহাসের আরও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে মণ্ডলীর ঐতিহ্যগুলো সত্যিকারের ইতিহাস থেকে এসেছে। এগুলো কোনো বিজ্ঞাপন বা মনস্তাত্ত্বিক কারসাজির দ্বারা সৃষ্ট নয় বরং ঈশ্বরের বাক্যের নিয়মিত ও শক্তিশালী ব্যাখ্যামূলক প্রচারের মাধ্যমে এসেছে। ঐতিহ্যগুলো ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা সমর্থিত।

শিক্ষক তোমাদের উপরোক্ত বিষয়গুলো সহজ করে বুঝিয়ে বলবেন। মনে রেখো তোমাকে আগ্রহের সাথে মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষাগুলো শিখতে ও ধারণ করতে হবে। বিষয়গুলো একটু কঠিন হলেও কখনো বিরক্ত হবে না।

Content added By
Promotion