SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - জীবনের জন্য পানি | NCTB BOOK

পানি অত্যন্ত মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আগের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে নদ-নদীর পানি আমাদের পরিবেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, এটি জলজ উদ্ভিদ আর প্রাণীর আশ্রয়স্থল (Habitat)। শুধু তা-ই নয়, এই পানি কৃষিকাজে সেচের জন্য ব্যবহার করা হয়। একইভাবে জাহাজের নাবিকেরা, লঞ্চ, নৌযান বা ট্রলার দিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করে, তারা সবাই নদ-নদী বা সমুদ্রের পানিই প্রক্রিয়া করে পান করে, তাদের অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করে থাকে। তাই পানির নির্দিষ্ট মান যদি বজায় না থাকে তাহলে এটি জীববৈচিত্র্য বা পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর হবে, তেমনি অন্যান্য কাজেও এর ব্যবহার ব্যাহত হবে। এবার তাহলে পানির মানদণ্ড সম্পর্কে একটা ধারণা নেওয়া যাক :
পানির মানদণ্ড নির্ভর করে সেটি কোন কাজে ব্যবহার করব তার ওপর। প্রথমে নদ-নদী, খাল-বিল কিংবা সমুদ্রের পানির মানদণ্ড কেমন হওয়া উচিত সেটা জেনে নিই ।
বর্ণ ও স্বাদ: তোমরা জান যে বিশুদ্ধ পানি বর্ণহীন আর স্বাদহীন হয়, তাই পানিতে বসবাসকারী প্রাণী আর উদ্ভিদের জন্য নদ-নদী, খাল-বিল ইত্যাদির পানি বর্ণহীন আর স্বাদহীন হওয়াই উত্তম।
 

ঘোলার পরিমাণ
পানি ঘোলাটে হলে সেটি পানিতে বসবাসকারী প্রাণী আর উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তার কারণ, পানি ঘোলা হলে সূর্যের আলো পানির নিচে থাকা উদ্ভিদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে একদিকে পানিতে থাকা উদ্ভিদের খাবার তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে, যেটা তাদের বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়, অন্যদিকে সালোকসংশ্লেষণের ফলে যে অক্সিজেন তৈরি হতো, সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। পানি ঘোলা হলে মাছ বা অন্য প্রাণী ঠিকমতো খাবার সংগ্রহ করতে পারে না।পানি ঘোলা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ, অর্থাৎ নদীভাঙন, পলি মাটি ইত্যাদি। আবার মানব সৃষ্ট কারণেও পানি ঘোলা হয়, যেমন তেল, গ্রিজ ও অন্যান্য অদ্রবণীয় পদার্থের উপস্থিতি। পানিতে এসব পদার্থ, বিশেষ করে মাটি আর বালি বেড়ে গেলে তা এক পর্যায়ে নদ-নদীর তলায় জমা হতে থাকে। ফলে নাব্যতা হ্রাস পায় এবং নৌযান চলাচলে অসুবিধা ঘটে। তোমরা সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে নিশ্চয়ই লঞ্চ, স্টিমার ডুবো চরে আটকে পড়ার খবর দেখে থাকবে। কেন এগুলো আটকে পড়ে? নাব্যতা কমে যাওয়াই এর প্রধান কারণ।
 

তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি
নদ-নদীর পানিতে কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকলে সেটা জলজ উদ্ভিদ আর প্রাণীর দেহে ক্যান্সারের মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই নদ-নদীর পানি পুরোপুরি তেজস্ক্রিয়তামুক্ত হতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নদ-নদীসহ সকল প্রাকৃতিক পানি অবশ্যই ময়লা-আবর্জনামুক্ত হতে হবে। কারণ ময়লা-আবর্জনা থেকে জীবন ধ্বংসকারী সব ধরনের জীবাণু তৈরি হয়।
 

দ্রবীভূত অক্সিজেন
আমাদের নিঃশ্বাসের জন্য যে রকম অক্সিজেনের দরকার হয়, ঠিক সেরকম পানিতে বসবাসকারী প্রাণীদেরও শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেনের দরকার হয়। এই অক্সিজেন তারা কোথা থেকে পায়? তারা এই অক্সিজেন পায় পানিতে দ্রবীভূত হয়ে থাকা অক্সিজেন থেকে। কোনো কারণে যদি এই অক্সিজেন নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কমে যায়, তাহলে জলজ প্রাণীগুলোর সমস্যা হতে থাকে। যদি পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন না থাকে, তাহলে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী বাঁচতেই পারে না। জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য ১ লিটার পানিতে কমপক্ষে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা দরকার।
তাপমাত্রা
তাপমাত্রা পানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে, একদিকে যেমন দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যায়, অন্যদিকে জলজ প্রাণীর প্রজনন থেকে শুরু করে সব ধরনের শারীরবৃত্তীয় কাজেরও সমস্যা সৃষ্টি হয়।

PH
pH হলো এমন একটি রাশি, যেটি দ্বারা বোঝা যায় পানি বা অন্য কোনো জলীয় দ্রবণ এসিডিক, ক্ষারীয় না নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ হলে pH হয় ৭, এসিডিক হলে ৭-এর কম, আর ক্ষারীয় হলে ৭-এর বেশি। এসিডের পরিমাণ যত বাড়বে, pH-এর মান তত কমে, অন্যদিকে ক্ষারের পরিমাণ যত বাড়ে, pH-এর মানও তত বাড়ে। নদ-নদী, খাল-বিল ইত্যাদির জন্য pH-এর মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত নদ-নদীর পানি ক্ষারীয় হয়। গবেষণা করে দেখা গেছে নদ-নদীর পানির pH যদি ৬-৮ এর মধ্যে থাকে, তাহলে সেটা জলজ উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য কোনো অসুবিধার সৃষ্টি করে না। তবে pH-এর মান যদি এর চাইতে কমে যায় বা বেড়ে যায়, তাহলে ঐ পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী আর উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। মাছের ডিম, পোনা মাছ পানির pH খুব কম বা বেশি হলে বাঁচতে পারে না। পানিতে এসিডের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে, অর্থাৎ pH এর মান খুব কমে গেলে জলজ প্রাণীদের দেহ থেকে ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ বাইরে চলে আসে, যার ফলে মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হতে শুরু করে।
 

লবণাক্ততা
তোমরা কি জান আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় মিঠা পানিতে আসে কেন? ইলিশ সামুদ্রিক মাছ অর্থাৎ লবণাক্ত পানির মাছ হলেও প্রজননের সময় অর্থাৎ ডিম ছাড়ার সময় মিঠা পানিতে আসে কারণ সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে, যা ডিম নষ্ট করে ফেলে, ফলে ঐ ডিম থেকে আর পোনা মাছ তৈরি হতে পারে না। তাই প্রকৃতির নিয়মেই ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সময় হলে মিঠা পানিতে আসে। তবে সব মাছের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়। কিছু মাছ এবং জলজ প্রাণী লবণাক্ত পানিতেই প্রজনন করতে পারে।
 

Content added || updated By
Promotion