SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

পঞ্চম অধ্যায়

পবিত্র বাইবেল

আগে আমরা জেনেছি যে পবিত্র বাইবেল হলো ঈশ্বরের বাণী। বাইবেল আমাদের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। আমরা আরও জেনেছি যে পবিত্র বাইবেল ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে পাঠ করা উচিত। শুধু তাই নয়, পবিত্র বাইবেলের বাণী আমাদের মেনে চলতে হবে। এবার আমরা বাইবেল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানব।

গ্রিক শব্দ ‘বিবলিয়া’ থেকে এসেছে ‘বাইবেল’। বাইবেলের যথার্থ অর্থ হচ্ছে বই-পুস্তক । কারণ পবিত্র বাইবেলে রয়েছে মোট ৭৩টি পুস্তক (প্রটেস্টান্ট বাইবেলে ৬৬টি পুস্তক )। একটি লাইব্রেরিতে যেমন অনেকগুলো পুস্তক থাকে তেমনি ৭৩টি পুস্তক নিয়ে হলো আমাদের পবিত্র বাইবেল। এসব পুস্তকের কোনো কোনোটি আকারে বড় আবার কোনো কোনোটি আকারে ছোট।

পবিত্র বাইবেল লেখা শুরু হয়েছিল যীশু খ্রিষ্টের জন্মের ৯৫০ বছর আগে, রাজা দায়ূদ ও সলোমনের রাজত্বকালে। ঈশ্বর নিজেই বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সেই অনুপ্রেরণা দ্বারা বাইবেল লেখা হয়েছে। বাইবেল হলো ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে ভালোবাসার দীর্ঘ ইতিহাস। পবিত্র বাইবেলের পুস্তকগুলোর একটির সাথে অন্যটির একটা যোগাযোগ সম্পর্ক ও যথেষ্ট মিল রয়েছে।

পবিত্র বাইবেলের ভাগসমূহ

পবিত্র বাইবেল প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত-যথা : পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম। এখানে ‘নিয়ম’ অর্থ হলো সন্ধি। এ কারণে কখনো কখনো প্রধান ভাগ দুটোকে বলা হয় প্রাক্তন সন্ধি ও নবসন্ধি ।

 

পুরাতন নিয়ম বা প্রাক্তন সন্ধি

পুরাতন নিয়মের মধ্যে বলা হয়েছে যীশু খ্রিষ্টের জন্মের আগের কথা। ঈশ্বর তাঁর ভক্ত আব্রাহামকে ভালোবেসে একান্ত আপন করে নিয়েছিলেন। আব্রাহামের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে ঈশ্বর একটি মহাসন্ধি স্থাপন করেছিলেন। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে আব্রাহামের বংশ আকাশের তারকারাজির মতো ও সমুদ্রতীরের বালুকণার মতো অগণিত হবে। আব্রাহামের বংশেই জন্ম নেবেন মানবজাতির ত্রাণকর্তা। ঈশ্বর চেয়েছিলেন, তিনি যেমন আব্রাহাম ও তাঁর বংশধরদের আপন করে নিয়েছিলেন, তেমনি তাঁরাও যেন ঈশ্বরকে আপন করে নেন। তিনি তাঁদের রক্ষা ও আশীর্বাদ করবেন। তাঁরাও যেন ঈশ্বরের সেবা করেন ও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। এভাবে ঈশ্বর ও ইস্রায়েল জাতির মধ্যে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পুরাতন নিয়মে সেই সম্পর্কটিই প্রাধান্য লাভ করেছে। ঈশ্বর তাঁর এই জাতির জন্য রাজা ও প্রবক্তাদের পাঠিয়েছেন। তাঁরা ঈশ্বরের নামে ও ঈশ্বরের হয়ে জনগণকে পরিচালনা করেছেন। পুরাতন নিয়মে তারই ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।

পুরাতন নিয়মে পুস্তকের সংখ্যা হলো মোট ৪৬টি। এগুলো আবার চার ভাগে বিভক্ত। যথা: (১) পঞ্চপুস্তক : পুস্তকের সংখ্যা ৫টি; (২) ঐতিহাসিক পুস্তকসমূহ: পুস্তকের সংখ্যা ১৬টি; (৩) জ্ঞানধর্মী গ্রন্থাবলি: পুস্তকের সংখ্যা ৭টি; এবং (৪) প্রাবক্তিক গ্রন্থাবলি: পুস্তকের সংখ্যা ১৮টি।

নতুন নিয়মে পুস্তকের সংখ্যা হলো ২৭টি। এগুলো আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত। এই গ্রন্থগুলোর ভাগ ও তাদের নামের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো ।

(ক) মঙ্গলসমাচার

পুস্তকের সংখ্যা ৪টি। যথা:

১। মথি ২। মার্ক ৩। লূক ও 

৪। যোহন রচিত মঙ্গলসমাচার।

 

 

(ঙ) প্রাবক্তিক গ্রন্থ: সংখ্যা একটি ১। প্রত্যাদেশ বা প্রকাশিত বাক্য

পবিত্র বাইবেল পাঠের গুরুত্ব

খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

আমাদের দেহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তেমনি আমাদের আত্মাকে সুস্থ ও সজীব রাখার জন্য প্রতিদিন আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রয়োজন হয়। ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করাই আমাদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য। বিভিন্নভাবে আমরা তাঁর সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ প্রশংসা, অনুনয়, ক্ষমা ও ধ্যানমূলক প্রার্থনার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করি। পবিত্র বাইবেল পাঠ হলো এমন একটি উপায়, যার দ্বারা ঈশ্বর আমাদের কাছে কথা বলেন। তাঁর কথার মধ্যে আমরা খুঁজে পাই আমাদের খ্রিষ্টীয় জীবন যাপনের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা। কাজেই প্রতিদিনই আমাদের বাইবেল পাঠ করা প্রয়োজন। ঈশ্বরের কথা অর্থাৎ পবিত্র বাইবেলের শিক্ষানুসারে জীবন গঠন করতে পারলে জীবন সুন্দর, সৎ ও খাঁটি হয়। পবিত্র বাইবেল আমাদের ধর্মবিশ্বাসকে দৃঢ় রাখতে সহায়তা করে। এর দ্বারা আমরা ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে পারি। বাইবেল পাঠ করে আমরা অন্তরে শক্তি লাভ করি এবং ঈশ্বর ও প্রতিবেশীকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারি।

যথাযথভাবে বাইবেল পাঠ করার কয়েকটি উপায়

ঈশ্বরের কথা শোনা ও বোঝার জন্য আমাদের মনের দ্বার খুলে দিতে হবে। এ জন্য আমাদের কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করা দরকার। নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে ঈশ্বরের বাণী আমাদের হৃদয় স্পর্শ করবে। এগুলো আমাদের জীবন স্পর্শ করবে এবং জীবন সুন্দর, সৎ ও খাঁটি হতে সহায়তা করবে। উপায়গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১। পবিত্র বাইবেলকে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখতে হবে;

২। বাইবেল পাঠ করার পূর্বে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে; ৩। বাইবেল পাঠের পূর্বে মনকে ধীর ও শান্ত করে মনের নিরবতা আনতে হবে;

৪। পাঠের পূর্বে ও পরে বাইবেলকে নত মস্তকে প্রণাম করতে হবে; ৫। ধীরে ধীরে বাইবেল পাঠ করতে হবে যেন প্রত্যেকটি পদের অর্থ বোঝা যায়;

প্রয়োজনে পদগুলো কয়েকবার করে পাঠ করতে হবে; ৬। পাঠের সময় মনে রাখতে হবে যে, ঈশ্বর এখন আমার সাথে কথা বলবেন আর আমি তাঁর কথা শুনব;

৭। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় বাইবেলের কিছু অংশ পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে; ৮। হাতে একটি পেনসিল বা কলম রাখতে হবে। যে পদ বা অংশ ভালো লেগেছে তার মধ্যে

একটু চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে;

৯। বাইবেলের বাণীগুলো মনে গেঁথে রাখতে হবে ও সে অনুসারে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।

কী শিখলাম

পবিত্র বাইবেল হলো ঈশ্বরের বাণী। বাইবেল অর্থ বই পুস্তক । মোট ৭৩টি (৬৬টি) পুস্তক নিয়ে পবিত্র বাইবেল। বাইবেল প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত : পুরাতন ও নতুন নিয়ম। নতুন নিয়মে পুস্তকের সংখ্যা ২৭টি।

পরিকল্পিত কাজ

১। নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করে বাইবেল লাইব্রেরি অঙ্কন কর।

২। নিজের ঘরে বাইবেল রাখার স্থান নির্বাচন করে কীভাবে সাজাবে তা দলে আলোচনা কর।

৩। পবিত্র বাইবেলে উল্লিখিত তোমার সবচেয়ে প্রিয় পদটি লেখ।

অনুশীলনী

 

১। শূন্যস্থান পূরণ কর

(ক) বাইবেলের যথার্থ অর্থ হচ্ছে-------------------

(খ) পবিত্র বাইবেলে মোট----------------টি পুস্তক আছে।

(গ) পবিত্র আত্মার----------------------বাইবেল লেখা হয়েছে। 

(ঘ) বাইবেল হলো ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে-----------------ইতিহাস ।

(ঙ) পবিত্র বাইবেল--------------------বিভক্ত।

 

৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক(✓)  চিহ্ন দাও

৩.১ নতুন নিয়মে মঙ্গলসমাচার হলো— (ক) ১টি (খ) ২টি (গ) ৩টি (ঘ) ৪টি

৩.২ পুরাতন নিয়মে পুস্তকের সংখ্যা কয়টি? (ক) ৪৮টি (খ) ৪৭টি (গ) ৪৬টি (ঘ) ৪৫টি

৩.৩ খ্রিষ্টমণ্ডলীর ইতিহাস পুস্তকটি হলো— (ক) মথি (খ) তীত (গ) হিব্রু (ঘ) শিষ্যচরিত

৩.৪ কতদিন বাইবেল পাঠ করা উচিত? 

(ক) প্রতিদিন (খ) সপ্তাহে এক দিন (গ) মাসে এক দিন (ঘ) বছরে এক দিন

৩.৫ জ্ঞানধর্মী পুস্তকের সংখ্যা হলো- (ক) ৯টি (খ) ৭টি (গ) ৫টি (ঘ) ৩টি

৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) সাধু পলের নামে পরিচিত ধর্মপত্র কয়টি? 

(খ) কার রাজত্বকালে বাইবেল লেখা শুরু হয়েছিল? 

(গ) বাইবেল কথাটি কোন শব্দ থেকে এসেছে?

৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) পবিত্র বাইবেল পাঠের উপায়সমূহ লেখ।

(খ) বাইবেল পাঠের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।

Content added By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.