সংখ্যাকে প্রকাশ করার এবং গণনা করার পদ্ধতিকে সংখ্যা পদ্ধতি বলে। সংখ্যাকে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এই প্রতীকগুলোকে দুটো ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়।
সংখ্যা পদ্ধতিকে নন-পজিশনাল এবং পজিশনাল এই দুটি মূল পদ্ধতিতে ভাগ করা যায় :
নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে প্রতীক বা চিহ্নগুলো যেখানেই ব্যবহার করা হোক, তার মান একই থাকবে। রোমান সংখ্যা হচ্ছে নন-পজিশনাল (Non positional) সংখ্যার উদাহরণ। যেমন- রোমান সংখ্যায় 5 বোঝানোর জন্য V ব্যবহার করা হয়। V, VI কিংবা VII এই তিনটি উদাহরণে V তিনটি ভিন্ন জায়গায় বসেছে, কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই V চিহ্নটি 5 বুঝিয়েছে। তথা পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির ন্যায় v যতই ডান হতে বাম দিকে সরতে (স্থান পরিবর্তন) থাকুক না কেন তার স্থানীয় মানের (একক, দশক, শতক ইত্যাদির ন্যায়) কোন পরিবর্তন হয় না। এর কারণ হলো নন-পজিশনাল (অস্থানিক) সংখ্যা পদ্ধতিতে স্থানিক মানের অনুপস্থিতি। প্রাচীনকালে যখন সংখ্যাতত্ত্ব সেভাবে গড়ে উঠেনি তখন নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন ছিল।
পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে চিহ্ন বা প্রতীকটিকে কোন অবস্থানে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর মানটি নির্ভর করে। আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ব গড়ে উঠার পর পজিশনাল (Positional) সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়েছে। আমাদের প্রচলিত দশমিক পদ্ধতি হচ্ছে পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির উদাহরণ। কারণ 555 সংখ্যাকে ডান দিকের প্রথম অঙ্কটি 5 সংখ্যাকে বোঝালেও তার বামেরটি 50 এবং এর বামেরটি 500 সংখ্যাকে বোঝাচ্ছে। এটি 10 ভিত্তিক সংখ্যা এবং প্রত্যেকটি অবস্থানের একটি মান রয়েছে। ডান দিকের প্রথম অঙ্কটির মান 1, বামেরটি 10, এর বামেরটি 100 এভাবে আগের অবস্থান থেকে আগের অবস্থান সবসময়েই 10 গুণ বেশি। যদি এটি ৪ ভিত্তিক সংখ্যা হতো তাহলে পরের অবস্থান আগের অবস্থান থেকে ৪ গুণ বেশি হতো। 16 ভিত্তিক সংখ্যা হলে প্রতিটি অবস্থান আগের অবস্থান থেকে 16 গুণ বেশি হতো।
নিচে কয়েকটি পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির উদাহরণ দেওয়া হলো।
বাইনারি সংখ্যা
আমরা সবাই দশভিত্তিক দশমিক সংখ্যার সাথে পরিচিত কিন্তু ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের জন্য দশভিত্তিক সংখ্যা খুব কার্যকর নয়, দশটি চিহ্নের জন্য দশটি ভিন্ন ভিন্ন ভোল্টেজ ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরি করা বাস্তবসম্মত নয়। দুটি চিহ্নের জন্য দুটি ভোল্টেজ লেভেল তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। সেজন্য ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স আসলে 2 ভিত্তিক বা বাইনারি (Binary) সংখ্যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
দশমিক সংখ্যায় যেরকম 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8 এবং 9- এই দশটি চিহ্ন বা অঙ্ক (Digit) ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে, বাইনারি সংখ্যা ঠিক সেরকম 0 এবং 1 এই দুইটি অঙ্ক ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে। তবে সে
কারণে কোনো সংখ্যাকে প্রকাশ করার জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি অঙ্ক ব্যবহার করা ছাড়া বাইনারি সিস্টেমে আর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। যে কোনো সংখ্যা এই বাইনারি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায় এবং যে কোনো গাণিতিক প্রক্রিয়া এই বাইনারি সংখ্যা দিয়ে করা সম্ভব।
... বাইনারি সংখ্যাতেও প্রত্যেকটি অঙ্কের একটি স্থানীয় মান রয়েছে। দশমিক সংখ্যায় স্থানীয় মান 109, 101, 102 এভাবে বেড়েছে, বাইনারি সংখ্যাতে 20, 21, 22, 23 ... এভাবে বেড়েছে। ভগ্নাংশে প্রকাশ করার জন্য দশমিক বিন্দুর পর অঙ্কগুলো 101 102 103 ... এভাবে কমছে, ঠিক সেরকম বাইনারি সংখ্যায় বাইনারি বিন্দু (বা র্যাডিক্স বিন্দু)'র পর অঙ্কগুলো 21, 22, 2-3 এভাবে কমেছে। তুলনা করার জন্য নিচে দশমিক এবং বাইনারি সংখ্যার একটি উদাহরণ দেওয়া হলো : ...
দশমিক সংখ্যা
10¹ 10°
বাইনারি সংখ্যা
21 20 2-1 2-2
2-1 2-2
2-3
104
103
102
10-1 10-2 10-3
24
23
22
2 ↑
3
5↑
0
1
2
3
7 ↑
1
1
0
0
1
1
1
0
↑
↑
দশমিক বিন্দু
↑
বাইনারি বিন্দু
MSD
LSD
MSB
LSB
এখানে MSD ও LSD বলতে বোঝানো হয় Most ও Least Significant Digit এবং MSB ও LSB বলতে বোঝানো হয় Most ও Least Significant Bit। দশমিক সংখ্যাটির মতো বাইনারি সংখ্যাটির মান বের করার জন্য আসলে বাইনারি সংখ্যার সাথে তার স্থানীয় মান গুণ দিয়ে সব যোগ করে নিতে হবে। 11001.1102 = 1×24 + 1 x 2 3 + 0x22 + 0x21 + 1×2° + 1×2 - 1 + 1×22+0×23
= 16+8+4+0+0+1+0.5 +0.25 +0
= 25.7510
এখানে বাইনারি সংখ্যার জন্য সাবস্ক্রিপ্টে যে 2 এবং দশমিক সংখ্যার জন্য 10 লেখা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে তাদের ভিত্তি বা বেজ (Base)। কোনো সংখ্যাপদ্ধতিতে একটি সংখ্যা বোঝানোর জন্য সর্বমোট যতগুলো অঙ্ক ব্যবহার করতে হয়, সেটি হচ্ছে সংখ্যাটির ভিত্তি বা বেজ। দশমিক পদ্ধতির জন্য বেজ 10, বাইনারির জন্য বেজ 2, ঠিক সেরকম অক্টাল এবং হেক্সাডেসিমেল নামেও সংখ্যা পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়, যাদের বেজ যথাক্রমে 8 এবং 16. সাধারণভাবে একটি সংখ্যা পদ্ধতির জন্য সবসময় তার বেজ লেখার প্রয়োজন হয় না তবে একই সাথে একাধিক সংখ্যা পদ্ধতি থাকলে সংখ্যাটির পাশে তার বেজ লেখা থাকলে বিভ্রান্তির সুযোগ থাকে না ।
এই অধ্যায়ে আমরা একটি ডিজিটাল সিস্টেমের জন্য 1 প্রয়োজনীয় সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে তুলব যেখানে 1 ভগ্নাংশের প্রয়োজন হবে না, কাজেই আমরা 1 0 1 1 1 1 0 আমাদের সকল আলোচনা শুধু পূর্ণ সংখ্যার মাঝে 1 1 1 সীমাবদ্ধ রাখব।
3.1 টেবিলে বাইনারি সংখ্যা এবং দশমিক সংখ্যার পর্যায়ক্রম মানের একটা উদাহরণ দেয়া হলো।
অক্টাল সংখ্যা
অক্টাল সংখ্যার ভিত্তি বা বেজ হচ্ছে ৪ এবং এই সংখ্যার জন্য যে আটটি অঙ্ক ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6 এবং 71 3.2 টেবিলে 0 থেকে 16 পর্যন্ত অক্টাল সংখ্যা লিখে দেখানো হলো :
হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা
হেক্সাডেসিমেলের ভিত্তি হচ্ছে 16। কাজেই এটাকে প্রকাশ করার জন্য 16 টি অঙ্ক প্রয়োজন। ডেসিমেল দশটি সংখ্যা 0 থেকে 9 পর্যন্ত, এর পরের ৬টি অঙ্কের জন্য A, B, C, D, E এবং F এই ইংরেজি বর্ণকে ব্যবহার করা হয়। ৩.৩ টেবিলে দশমিক সংখ্যা এবং তার হেক্সাডেসিমেল রূপটি দেখানো হলো। একই টেবিলে হেক্সাডেসিমেল সংখ্যাগুলোর জন্য তার বাইনারি রূপটিও দেখানো হয়েছে। প্রতিটি হেক্সাডেসিমেল অংকের জন্য চারটি করে বাইনারি বিটের প্রয়োজন হয়। সে কারণে হেক্সাডেসিমেল 10 কে বাইনারি 10000 না লিখে 00010000 হিসেবে লেখা হয়েছে।
বাইনারি থেকে দশমিক
আমরা বাইনারি সংখ্যাকে দশমিক সংখ্যায় এবং দশমিক সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যায় রূপান্তর করতে পারি। নিচে বাইনারি সংখ্যাকে দশমিক সংখ্যয় রূপান্তর করার আরেকটি উদাহরণ দেয়া হলো ।
1011012 = 1×25 + 0 x 24 + 1x23 + 1×22 + 0x21
+ 1x20
=32+0+8+4+0+1 = 4510
দশমিক থেকে বাইনারি
ঠিক একইভাবে একটি দশমিক সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যায় রূপান্তর করতে হলে দশমিক সংখ্যাটিকে প্রথমে 2 -এর পাওয়ারের যোগফল হিসেবে লিখতে হবে। যেরকম :
76= 64+8+4 = 26+23+22
বাইনারি সংখ্যায় যেহেতু স্থানীয় মান রয়েছে তাই প্রত্যেকটি স্থানীয় মানকে দেখাতে হবে। যেগুলো নাই তার জন্য 0 ব্যবহার করতে হবে।
7610=26+0+0+23+22+0+0=10011002
তবে যে কোনো সংখ্যাকে 2-এর পাওয়ারের যোগফল হিসেবে বের করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে ক্রমাগত 2 দিয়ে ভাগ করে যাওয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত ভাগফল শূন্য না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত 2 দিয়ে ভাগ করে যেতে হবে। ভাগশেষগুলো LSB থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে MSB পর্যন্ত বাইনারি সংখ্যাগুলো বের করে দেবে। যেরকম 25 -এর জন্য :
25 কে 2 দিয়ে ভাগ দিতে হবে
ভাগফল 12 কে 2 দিয়ে ভাগ দিতে হবে
ভাগফল 6 কে 2 দিয়ে ভাগ দিতে হবে
ভাগফল 3 কে 2 দিয়ে ভাগ দিতে হবে
ভাগফল 1 কে 2 দিয়ে ভাগ দিতে হবে
পদ্ধতিটা বুঝে গেলে আমরা সেটাকে আরো সংক্ষেপে লিখতে পারি। যেরকম 37 -এর জন্য আমরা লিখব :
এই পদ্ধতিটি আমরা দশমিক থেকে অন্য যে কোনো ভিত্তিক সংখ্যায় রূপান্তর করার জন্যও ব্যবহার করতে পারি। শুধু 2 -এর পরিবর্তে যে ভিত্তিক সংখ্যায় রূপান্তর করতে চাই সেই সংখ্যাটি দিয়ে ভাগ করতে হবে।
ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে দশমিক হতে বাইনারিতে রূপান্তর :
দশমিক ভগ্নাংশকে ২ দ্বারা গুণ করতে হয় এবং গুণফলের পূর্ণ অংশটি সংরক্ষিত রেখে ভগ্নাংশকে পুনরায় ২ দ্বারা গুণ করতে হয়, এরপর পূর্ণ অংক হিসেবে প্রাপ্ত অঙ্কগুলো প্রাপ্তির ক্রমানুসারে পাশাপাশি লিখে দশমিক সংখ্যার সমকক্ষ বাইনারি সংখ্যা পাওয়া যায় ।
উদাহরণ : (0.46), কে বাইনারিতে রুপান্তর কর ৷
সমাধান :
দশমিক থেকে অক্টাল
এখানে আমরা আগে দেখানো ডেসিমেল থেকে বাইনারি সংখ্যায় রূপান্তরের পদ্ধতিটি ব্যবহার করব, তবে অক্টাল সংখ্যার বেজ যেহেতু ৪ তাই 2 দিয়ে ক্রমান্বয়ে ভাগ করার পরিবর্তে ৪ দিয়ে ক্রমান্বয়ে ভাগ করা হবে। যেমন- 710 কে অক্টালে রূপান্তর করার জন্য লিখব :
ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে দশমিক হতে অক্টালে রূপান্তর :
দশমিক ভগ্নাংশকে ৮ দ্বারা গুণ করতে হবে এবং প্রাপ্ত গুণফলের পূর্ণ অংশটি সংরক্ষিত রেখে গুণফলের ভগ্নাংশকে পুনরায় ৮ দ্বারা গুণ করতে হবে এরপর পূর্ণ অংক হিসেবে প্রাপ্ত অংকগুলো প্রাপ্তির ক্রমানুসারে পাশাপাশি লিখে দশমিক সংখ্যাটির সমকক্ষ অক্টাল সংখ্যা পাওয়া যায় ।
উদাহরণ: (123.45) কে অক্টালে রূপান্তর কর ।
সমাধান :
ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে অক্টাল হতে দশমিকে রূপান্তর :
ভগ্নাংশের পর হতে অক্টাল বিন্দুর পর হতে -1, 2, 3 ইত্যাদি দ্বারা অবস্থান চিহ্নিত করে নিতে হয়। এর পর প্রতিটি ডিজিটকে 8" দ্বারা গুণ করে গুণফলকে যোগ করে দশমিক সংখ্যা পাওয়া যায়। সেখানে n হলো - 1,
-2, 3 ইত্যাদি।
উদাহরণ : (123.45)g কে দশমিক সংখ্যায় রূপান্তর কর ।
সমাধান :
নিজে কর: ফাঁকা ঘরগুলোতে দশমিক 71 থেকে 90 পর্যন্ত অক্টাল সংখ্যায় লিখ এবং অক্টাল 41 থেকে 60
পর্যন্ত দশমিক সংখ্যায় লিখ ।
অক্টাল থেকে বাইনারি
অক্টাল সংখ্যার একটি বড় সুবিধা হচ্ছে যে, যেকোনো সংখ্যাকে খুব সহজে বাইনারিতে রূপান্তর করা যায়। অক্টাল সংখ্যার অঙ্কগুলো হচ্ছে 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6 এবং 7 এবং এই প্রত্যেকটি সংখ্যাকে তিন বিট বাইনারি সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
এই রূপান্তরটি ব্যবহার করে যে কোনো অক্টাল সংখ্যাকে তার জন্য প্রযোজ্য তিনটি বাইনারি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করলেই পুরো অক্টাল সংখ্যার বাইনারি রূপ বের হয়ে যাবে। যেমন :
তবে নিচের উদাহরণে সর্ব বামে দুটি 0 রয়েছে এবং সেই দুটো লেখার প্রয়োজন নেই। তাই- 14.538= 1100.1010112
বাইনারি থেকে অক্টাল
একই পদ্ধতির বিপরীত প্রক্রিয়া করে আমরা খুব সহজে যে কোনো বাইনারি সংখ্যাকে অক্টাল সংখ্যায় রূপান্তর করতে পারব। প্রথমে বাইনারি সংখ্যার অঙ্কগুলো তিনটি তিনটি করে ভাগ করে নিতে হবে। সর্ববামে যদি তিনটির কম অঙ্ক থাকে তাহলে এক বা দুইটি শূন্য বসিয়ে তিন অঙ্ক করে নিতে হবে। তারপর প্রতি তিনটি বাইনারি অঙ্কের জন্য নির্ধারিত অক্টাল সংখ্যাগুলো বসিয়ে নিতে হবে। যেমন :
এখানে তিনটি করে মেলানোর জন্য সর্ব বামে একটি বাড়তি শূন্য বসানো হয়েছে।
হেক্সাডেসিমেল থেকে ডেসিমেল
হেক্সাডেসিমেল থেকে ডেসিমেলে রূপান্তর করার জন্য আমরা অঙ্কগুলোকে তাদের নির্দিষ্ট স্থানীয় মান দিয়ে গুণ করে একসাথে যোগ করে নেব। হেক্সাডেসিমেলের বেজ যেহেতু 16 তাই স্থানীয় মান হবে যথাক্রমে 16,
161, 162, 163 এরকম :
35616 = 3×162+5x16¹+6x16°= 768 +80+6= 85410
2AF16= 2×162 + 10x161 + 15x16° = 512 + 160 + 15 = 68710
লক্ষ করতে হবে যে এখানে হেক্সাডেসিমেল A - এর পরিবর্তে 10 এবং F -এর পরিবর্তে 15 বসানো হয়েছে।
ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে হেক্সাডেসিমেল হতে দশমিকে রূপান্তর :
ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে হেক্সাডেসিমেল বিন্দুর পর হতে – 1, 2, 3 ইত্যাদি দ্বারা অবস্থান চিহ্নিত করে নিতে হয়। এরপর প্রতিটি ডিজিটকে 16" দ্বারা গুণ করে গুণফলকে যোগ করলে দশমিক সংখ্যা পাওয়া যায়। যেখানে n হচ্ছে -1, 2, 3 ইত্যাদি।
উদাহরণ: (AB.CD)16 কে দশমিকে রূপান্তর কর ।
সমাধান:
A (10) × 161 + B (11) x 16° + C (12) x 16 + D (13) +162
= 160+11+ 12+13 16 162
=171+2+13
দশমিক থেকে হেক্সাডেসিমেল
এখানেও আমরা বাইনারি কিংবা অক্টাল সংখ্যার জন্য আগে দেখানো পদ্ধতিটি ব্যবহার করব। তবে বেজ যেহেতু 16 তাই 2 কিংবা ৪ দিয়ে ক্রমান্বয়ে ভাগ করার পরিবর্তে 16 দিয়ে ক্রমান্বয়ে ভাগ করা হবে। ভাগশেষ যদি 10 কিংবা তার থেকে বেশি হয় তাহলে পরিচিত ডেসিমেল অংকের পরিবর্তে যথাক্রমে A, B, C, D, E এবং F লিখতে হবে। এই পদ্ধতিতে 7106 কে হেক্সাডেসিমেলে রূপান্তর করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ভাগশেষ হিসেবে 12 সংখ্যার জন্য C এবং 11 সংখ্যার জন্য হেক্সাডেসিমেল প্রতীক B লেখা হয়েছে।
ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে দশমিক হতে হেক্সাডেসিমেলে রূপান্তর :
দশমিক ভগ্নাংশকে ১৬ দ্বারা গুণ করতে হবে এবং প্রাপ্ত গুণফলের পূর্ণ অঙ্কটি সংরক্ষিত রেখে গুণফলের ভগ্নাংশকে পুনরায় ১৬ দ্বারা গুণ করতে হবে তবে প্রাপ্ত ভগ্নাংশগুলো ৯ এর বেশি হলে প্রতিটি সংখ্যার সমকক্ষ হেক্সাডেসিমেল মান লিখতে হবে। এরপর পূর্ণ অঙ্ক হিসেবে প্রাপ্ত অঙ্কগুলো প্রাপ্তির ক্রমানুসারে পাশাপাশি লিখতে উক্ত দশমিক সংখ্যাটির সমকক্ষ হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পাওয়া যায়।
উদাহরণ : (0.71)10 কে হেক্সাডেসিমেলে রূপান্তর কর ।
সমাধান :
হেক্সাডেসিমেল থেকে বাইনারি
অক্টাল সংখ্যার বেলায় আমরা প্রত্যেকটি অক্টাল অঙ্কের জন্য তিন বিট বাইনারি সংখ্যা ব্যবহার করেছিলাম। হেক্সাডেসিমেলের জন্য প্রতিটি হেক্সাডেসিমেল অঙ্কের জন্য চার বিট বাইনারি সংখ্যা ব্যবহার করা হবে।
সর্ববামে ০ থাকলে সেগুলোকে রাখার প্রয়োজন নেই।
বাইনারি থেকে হেক্সাডেসিমেল
এখানেও আগের মতো বাইনারি সংখ্যাগুলোকে চারটির সমন্বয় করে ভাগ করে নিতে হবে। সর্ববামে যদি চারটির কম বাইনারি অঙ্ক থাকে তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক 0 বসিয়ে চারটির গ্রুপ করে নিতে হবে। তারপর প্রতি চারটি বাইনারি সংখ্যার জন্য নির্ধারিত হেক্সাডেসিমেল সংখ্যাটি বসিয়ে দিতে হবে। যেরকম :
হেক্সাডেসিমেলে যেহেতু চারটি বাইনারি অঙ্ক একটি হেক্সাডেসিমেল অঙ্ক দিয়ে প্রতিস্থাপন হয় তাই অনেক বড় বাইনারি সংখ্যা লেখার জন্য হেক্সা অথবা অক্টাল সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।
সমস্যা : হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা 38 থেকে শুরু করে পরবর্তী 25টি সংখ্যা লিখ। হেক্সাডেসিমেল 38-এর দশমিক মান কত?
হেক্সাডেসিমেল থেকে অক্টাল কিংবা অক্টাল থেকে হেক্সাডেসিমেলে রূপান্তর করার সবচেয়ে সহজ নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে বাইনারিতে রূপান্তর করে নেয়া। তারপর হেক্সাডেসিমেলের জন্য চারটি করে এবং অক্টালের জন্য তিনটি করে বাইনারি অঙ্ক নিয়ে তাদের জন্য নির্ধারিত হেক্সাডেসিমেল অথবা অক্টাল সংখ্যাগুলো বেছে নেয়া। যেমন :
এখানে B2F16 কে অক্টালে রূপান্তর করার জন্য প্রথমে সংখ্যাটির তিনটি হেক্সাডেসিমেল অঙ্কের জন্য নির্ধারিত চারটি করে বাইনারি অঙ্ক ব্যবহার করে মোট 12টি বাইনারি অঙ্কে রূপান্তর করা হয়েছে। তারপর এই 12টি বাইনারি অঙ্ককে তিনটি করে মোট 4 টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। এবারে প্রতি গ্রুপের জন্য নির্ধারিত অক্টাল অঙ্কগুলো বসিয়ে 54578 পাওয়া গেছে। এভাবে তিনটি অঙ্কের গ্রুপ করার সময় প্রয়োজন হলে সর্ব বামের গ্রুপটিতে একটি বা দুইটি বাড়তি ০ বসানো যেতে পারে।