নিউক্লিয়াসের গঠন

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | | NCTB BOOK
51
51

     রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিক্ষেপণ পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, পরমাণুর প্রায় সমস্ত ভর (99.97%) এর কেন্দ্রে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত থাকে এবং এখানেই থাকে পরমাণুর সকল ধনাত্মক আধান। রাদারফোর্ড পরমাণুর এই কেন্দ্রবিন্দুর নামকরণ করেন নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে ধনাত্মক আধান যুক্ত প্রোটন এবং আধান নিরপেক্ষ নিউট্রন। সবচেয়ে সরল পরমাণু হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে কোনো নিউট্রন থাকে না-শুধুমাত্র একটি প্রোটন থাকে। আধান নিরপেক্ষ পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন সংখ্যার সমসংখ্যক ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে আবর্তনশীল থেকে পুরো পরমাণুর আধান নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।

     নিউক্লিয়াসের গঠন অতি জটিল। আলফা কণা ও গামা রশ্মি বর্ণালি থেকে জানা যায় যে, নিউক্লিয়াস থেকে আলফা কণা ও গামা রশ্মি নির্গত হয়। গামা রশ্মির বর্ণালি থেকে জানা যায় যে, নিউক্লিয়াসে আরো একটি কণার অস্তিত্ব রয়েছে। এই কণাকে নিউট্রিনো বলা হয়। এর কোনো ভর নেই। মহাজাগতিক বা কসমিক রশ্মির গবেষণা থেকে জানা যায় যে, নিউক্লিয়াসের ভিতরে আরো এক ধরনের কণার অস্তিত্ব আছে। এদেরকে বলা হয় মেসন।

     নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটনের সংখ্যাকে বলা হয় পারমাণবিক সংখ্যা। একে Z দ্বারা নির্দেশ করা হয় । নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ভরসংখ্যা বলে। একে A দ্বারা প্রকাশ করা হয় । A থেকে Z বাদ দিলে নিউট্রন সংখ্যা N পাওয়া যায়। সাধারণত কোনো মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াসকে  রূপে লেখা হয়। এখানে X হচ্ছে মৌলিক পদার্থের রাসায়নিক সংকেত, Z হলো পারমাণবিক সংখ্যা এবং A হলো ভর সংখ্যা।

     নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ R কে প্রকাশ করা হয় R = roA1/3 সম্পর্ক দ্বারা। এখানে ro একটি ধ্রুবক যার মান   ro = 1.414 ×10-15 m এবং A হচ্ছে নিউক্লিয়াসের প্রোটন ও নিউট্রনের মিলিত সংখ্যা তথা ভর সংখ্যা। নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ প্রায় 10-15m। একে ফেমটোমিটার বা ফার্মিও বলা হয় ।

  নিউক্লিয়াস সংক্রান্ত কতিপয় রাশি

  নিউক্লিয়ন (Nucleon) : নিউক্লিয়াসে সে সকল কণা থাকে তাদেরকে নিউক্লিয়ন বলে। 

  নিউক্লিয়াসকে আলফা কণা দ্বারা আঘাত করে দেখা গেছে যে, তা থেকে সাধারণত প্রোটন এবং নিউট্রন বেরিয়ে আসে। সুতরাং এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, নিউক্লিয়াস হলো প্রোটন এবং নিউট্রনের সমষ্টি। অন্যান্য পরীক্ষা থেকে জানা গেছে নিউক্লিয়াসের ভিতর অন্যান্য কণা রয়েছে যেমন, নিউট্রিনো।

   প্রোটন (Proton) : এটি একটি স্থায়ী প্রাথমিক কণা। প্রোটনের আধান ইলেকট্রনের সমান কিন্তু বিপরীত অর্থাৎ এটি ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট।

 সুতরাং এর আধান 1.6 x 10-19 C। এর ভর প্রায় 1.00727663 a.mu ৰা, 1.6724 × 10-27 kg এবং নিশ্চল শক্তি প্রায় 938.256 MeV

    নিউট্রন (Neutron) : স্বাভাবিক হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস ব্যতীত সকল নিউক্লিয়াস এই প্রাথমিক কণা দিয়ে তৈরি। 

   এর ভর প্রায় 1.0086654 am u বা 1.6747 x 10-27 kg এবং নিশ্চল শক্তি প্রায় 938.550 Mev

নিউক্লিয়াসের বাইরে 10.6 মিনিট অর্ধায়ুসহ এটা অবক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে তৈরি করে একটি প্রোটন, একটি ইলেকট্রন এবং একটি প্রতিনিউট্রিনো। এটি অত্যধিক ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন।

নিউক্লাইড (Nuclide ) : দুটি নিউক্লিয়াসের যদি প্রোটন সংখ্যা Z এবং নিউট্রন সংখ্যা N অভিন্ন হয়, তাহলে তারা একই নিউক্লীয় প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হয়। 

    একটি নিউক্লীয় প্রজাতিকে বলা হয় নিউক্লাইড। একটি নিউক্লাইডকে তার রাসায়নিক সংকেত এবং রাসায়নিক সংকেত এর শির সংখ্যা (A = Z + N) দ্বারা শনাক্ত করা হয়।

আইসোটোপ (Isotope): যে সব নিউক্লাইডের প্রোটন সংখ্যা (Z) সমান, কিন্তু ভর সংখ্যা (A) ভিন্ন তাদেরকে বলা হয় আইসোটোপ।

 যেমন-  এবং  এদের প্রোটন সংখ্যা সমান, কিন্তু ভর সংখ্যা অসমান। কিছু কিছু আইসোটোপ তেজস্ক্রিয় কণা এবং রশ্মি ছুঁড়ে দেয়। এদেরকে বলা হয় তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বা রেডিও আইসোটোপ। 32P ও 14Cতেজস্ক্রিয় আইসোটোপ-এর উদাহরণ।

আইসোটোন (Isotone): যে সব নিউক্লাইডের নিউট্রন সংখ্যা (N) সমান তাদের বলা হয় আইসোটোন । 

আইসোবার (Isobar) : যে সব নিউক্লাইডের ভর সংখ্যা (A) সমান তাদের বলা হয় আইসোবার ; যেমন- এবং  অথবা  এবং 

আইসোমার (Isomer) : একই প্রজাতির দুটি নিউক্লিয়াস যদি দুটি ভিন্ন শক্তি অবস্থায় থাকে এবং কমপক্ষে তাদের একটি যদি ক্ষণস্থায়ী হয়, তাহলে তাদেরকে বলা হয় আইসোমার ।

 

 একীভূত পারমাণবিক ভর একক (Unified atomic mass unit) : পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে ভরের জন্য আজকাল যে একক ব্যবহৃত হয় সেটি হচ্ছে একীভূত পারমাণবিক ভর একক (unified atomic mass unit)। 

   যার সংকেত হচ্ছে, u. এই একককে ডেলটন (dalton) ও বলা হয়ে থাকে (Da)। এক একীভূত ভর একক হচ্ছে একটি নিউক্লিয়নের (একটি প্রোটন বা নিউট্রনের) ভরের প্রায় সমান যা ১ গ্রাম/মোল এর সমতুল্য। একটি বন্ধনহীন নিরপেক্ষ কার্বন-১২ পরমাণুর নিউক্লিয় ও ইলেকট্রনিক ভূমি অবস্থার ভরের বারো ভাগের এক ভাগকে একীভূত পারমাণবিক ভর একক বলে।

1u = 112m(12C) = 1.660538921 x 10-27kg

১৯৬১ সালের আগ পর্যন্ত যখন অক্সিজেন-১৬ এর সাথে তুলনা করে আণবিক ও পারমাণবিক স্কেলে ভর প্রকাশ করা হতো, তখন তাকে কেবল পারমাণবিক ভর একক (atomic mass unit) বলা হতো এবং amu দিয়ে প্রকাশ করা হতো। এখনো অনেকে একীভূত পারমাণবিক ভর একককে অর্থাৎ u কে পারমাণবিক ভর একক তথা amu দিয়ে প্রকাশ করে থাকেন ।

 lu (বা 1 amu) এর সমতুল্য শক্তি :

E = mc2 = (1.66054 x 10-27kg) (2.9979 x 108 )2 = 14.924 × 10-11J

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

Promotion