মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ

- সাধারণ বিজ্ঞান - ভৌতবিজ্ঞান | NCTB BOOK

মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ।

Gravitation & Gravity

মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ (Gravitation & Gravity)

এই মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তু কণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। মহাবিশ্বের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে মহাকর্ষ বলে। দুটি বস্তুর একটি যদি পৃথিবী হয় তবে তাকে অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলে অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণকে অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলে। অভিকর্ষও এক ধরনের মহাকর্ষ। অভিকর্ষ বল একটি কেন্দ্রমুখী বল। মাধ্যাকর্ষণ বল বা অভিকর্ষের জন্য পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে আমরা ছিটকিয়ে পড়ি না। পৃথিবীর কেন্দ্রীয় আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর সঙ্গে আবর্তিত হচ্ছে।

 

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton's Law of Gravitation)

বিজ্ঞানী নিউটন মহাকর্ষ সম্পর্কে একটি সূত্র প্রদান করেছেন। সূত্রটি হল “মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল সংযোগ সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে”। মহাকর্ষ বল শুধুমাত্র দুরত্ব এবং ভরের উপর নির্ভরশীল। G কে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে । এর একটি নির্দিষ্ট মান আছে। এই মান হল 6.673 ´ 10-11 Nm2Kg-2।

Content added By
ভূ-পৃষ্ঠে
ভূ-কেন্দ্রে
ভূ-পৃষ্ট থেকে ৬০০ মিটার উপরে
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার নিচে
কুমেরু বিন্দুতে
সুমেরু বিন্দুতে
অক্ষরেখায়
কোনটিই নয়

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton's Law of Gravitation)

বিজ্ঞানী নিউটন মহাকর্ষ সম্পর্কে একটি সূত্র প্রদান করেছেন। সূত্রটি হল “মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল সংযোগ সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে”। মহাকর্ষ বল শুধুমাত্র দুরত্ব এবং ভরের উপর নির্ভরশীল। G কে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে । এর একটি নির্দিষ্ট মান আছে। এই মান হল 6.673 ´ 10-11 Nm2Kg-2

Content added By

মধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ বা অভিকর্ষ তরন (Acceleration due to Gravity)

অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। একে g দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে g এর মান বিভিন্ন। ভূ-পৃষ্ঠে মধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ এর মান সর্বোচ্চ। 45⁰ অক্ষাংশের সমুদ্রের g সমতলে এর মান আদর্শ ধরা হয়। এর আদর্শ মান হচ্ছে 9.8 মিটার/সে২ বা (m/s2) বা (ms-2)। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠলে বা ভিতরে গেলে মাধ্যাকর্ষণ বল কমে যায়, অর্থাৎ এর g মান কমতে থাকে। পৃথিবীর কেন্দ্রে g এর মান শূন্য।

Content added By

পড়ন্ত বস্তুর সূত্র

পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (Laws of falling bodies)

পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র প্রদান করেন। এগুলোকে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলে। সূত্রগুলো একমাত্র অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

১) স্থির অবস্থান থেকে এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত সকল বস্তু সমান সমান সমান পথ অতিক্রম করে।

২) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত ব্যক্তি সময়ের সমানুপাতিক।

৩) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা ওই সময়ের বর্গের সমানুপাতিক। স্থির অবস্থান এবং একই উচ্চতা হতে একটি পালক ও একটি হাতুড়ি একই সাথে ফেলে দিলে তা একই সাথে মাটিতে পড়বে কিন্তু বাতাসের বাধার কারণে এমনটি হয় না। তবে বাতাসের বাধা না থাকলে পালকো হাতুড়ি একই সাথে মাটিতে পড়বে।

 

Content added By

পড়ন্ত বস্তুর সূত্র

পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (Laws of falling bodies)

পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র প্রদান করেন। এগুলোকে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলে। সূত্রগুলো একমাত্র অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

১) স্থির অবস্থান থেকে এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত সকল বস্তু সমান সমান সমান পথ অতিক্রম করে।

২) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত ব্যক্তি সময়ের সমানুপাতিক।

৩) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা ওই সময়ের বর্গের সমানুপাতিক। স্থির অবস্থান এবং একই উচ্চতা হতে একটি পালক ও একটি হাতুড়ি একই সাথে ফেলে দিলে তা একই সাথে মাটিতে পড়বে কিন্তু বাতাসের বাধার কারণে এমনটি হয় না। তবে বাতাসের বাধা না থাকলে পালকো হাতুড়ি একই সাথে মাটিতে পড়বে।

 

Content added By

ওজন ও ভর (Weight and mass)

কোন বস্তুর মধ্যে পদার্থের মোট পরিমাণ কে ঐ বস্তুর ভর বলে। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভরের একক কিলোগ্রাম (kg)। পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন বস্তুর ভর ৪৯ কেজি হলে চন্দ্রপৃষ্ঠে ঐ বস্তুর ভর হবে ৪৯ কেজি। পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন বস্তুর ভর ৫০ কেজি হলে ভূ-কেন্দ্র ওই বস্তুর ভর হবে ৫০ কেজি। কোন বস্তুকে পৃথিবী যে পরিমাণ বল দ্বারা তাকে দিকে আকর্ষণ করে তাকে ঐ বস্তুর ওজন বলে। ওজন এক ধরনের বল।তাই ওজনের একক নিউটন। বস্তুর ওজন (W) = বস্তুর ভর (m) ⤫ ঐ স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে বস্তুর ভরের কোন পরিবর্তন হয় না। এজন্য বস্তুর ওজন অভিকর্ষ ত্বরন উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বিভিন্ন হওয়ায় স্থানভেদে বস্তুর ওজন পরিবর্তিত হয় এজন্য কোন বস্তুকে পৃথিবী থেকে চাঁদ বা অন্য কোন স্থানে নিলে বস্তুর ভর একই থাকে কিন্তু ওজন পরিবর্তিত হয়। এজন্য কোন বস্তুকে পৃথিবী থেকে চাঁদ বা অন্য কোন স্থানে নিলে বস্তুর ভর একই থাকে কিন্তু ওজন পরিবর্তিত হয়। যেমন; চাঁদের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের ৬ ভাগের ১ ভাগ। এজন্য চাঁদের কোন বস্তুর ওজন পৃথিবীর ওই বস্তুর ওজনের ৬ ভাগের ১ ভাগ হবে।

 

বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান (মধ্যাকর্ষণ বল) ও ওজনের পরিবর্তন

বস্তুর অবস্থান

অভিকর্ষ ত্বরণের মান (মহাকর্ষণ) বল ও বস্তুর ওজন

মেরু অঞ্চল -  সর্বোচ্চ

নিরক্ষীয় অঞ্চল - সর্বনিম্ন

চন্দ্রপৃষ্ঠ     পৃথিবীর ৬ ভাগের ১ ভাগ

ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে -  হ্রাস পায়

ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে -  হ্রাস পায়

পৃথিবীর কেন্দ্র - শূন্য

Content added By

নয় ভাগের এক ভাগ

ছয় ভাগের এক ভাগ

দশ ভাগের এক ভাগ

চার ভাগের এক ভাগ

দশ ভাগের একভাগ
ছয় ভাগের একভাগ
তিন ভাগের একভাগ
চার ভাগের একভাগ

লিফটে ও মহাশূন্যে ওজনের তারতম্য

লিফটে ও মহাশূন্যের ওজনের তারতম্য : ওজনহীনতা

Variation of weight in Lift and Space : Weightlessness

ব্যক্তির ভর m এবং ঐ স্থানে অভিকর্ষজ g ত্বরণ হলে, ব্যক্তির ওজন হবে, W = mg। এক ব্যক্তি লিফটে সমবেগে ওপরে উঠলেবা নিচে নামলে তার ওজন কোন পরিবর্তন হবে না। কিন্তু লিফটে a ত্বরণের উপর উঠলে ব্যক্তির ওজন অনুভব করবে, W = m (g+a) অর্থাৎ বেশি ওজন অনুভব করবে। আবার a ত্বরণে নিচে নামলে ব্যক্তির ওজন অনুভব করবে, W = m (g-a) অর্থাৎ কম ওজন অনুভব করবে। এক ব্যক্তি দালানের দশ তলা একটি লিফটে দাঁড়িয়ে আছে। তার কোন স্প্রিং নিস্কি থেকে ঝুলানো একটি বস্তু 10 নিউটনের ওজন নির্দেশ করেছে। হঠাৎ লিফটের তার ছিঁড়ে লিফটের মুক্তভাবে নিচে পড়তে থাকলে স্প্রিং নিস্কিতে ওজন 0 নিউটন নির্দেশ করবে। কারণ মুক্তভাবে পড়ন্ত লিফটের ত্বরণ হবে g এবং সে ক্ষেত্রে বস্তুর ত্বরণ হবে (g- g) = 0 নিউটন। সুতরাং বস্তর ওজন হবে W = m ⤫ 0 = 0 নিউটন। মহাশূন্যচারীর মহাশূন্যযানে পৃথিবীর প্রদক্ষিণরত থাকার সময় নিজেকে ওজনহীন মনে করেন কারণ মহাশূন্যচারীর মহাশূন্যযানের করে পৃথিবী কে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় বৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে থাকে। এই বৃত্তাকার গতির জন্য মহাশূন্যযানের পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ঐ উচ্চতায় g এর মানের সমান মানের একটি ত্বরণ হয়। এই অবস্থায় মহাশূন্যযানের দেয়ালের সাপেক্ষে মহাশূন্যচারীর ত্বরণ (g - g) = 0 হয় এবং মহাশূন্যচারী মহাশূন্যযানের দেওয়াল বা মেঝেতে কোন বল প্রয়োগ করে না। ফলে তিনি তার ওজনের বিপরীত কোন প্রতিক্রিয়া বলও অনুভব করে না। তাই তিনি ওজনহীনতা অনুভব করেন।

 

Content added || updated By

সরল দোলক (Simple Pendulum)

একটি ভারী আয়তো হীন বস্তু কণাকে ওজনহীন, নমনীয় ও অপ্রসারণশীল সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দিলে এটি যদি ঘর্ষণ এড়িয়ে স্বাধীনভাবে দুলতে পারে, তবে তাকে সরল দোলক বলে। দোলকের দোলনকাল তার কার্যকরী দৈর্ঘ্য এবং ওই স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর নির্ভর করে।

ক) নির্দিষ্ট স্থানে কোন সরল দোলকের দোলনকাল (T) এর কার্যকারী দৈর্ঘ্যের (L) বর্গমূলের সমানুপাতিক পরিবর্তন হয়। T ∝ √L যখন g ধ্রুব।

সরল দোলকের সুতার দৈর্ঘ কমলে, দোলনকাল কমে। শীতকালে দোলক ঘড়ি কার্যকরী দৈর্ঘ্য কমে যায় বলে দোলনকাল হ্রাস পায়। ফলে ঘড়িটির দ্রুত চলে।গ্রী ষ্মকালে অধিক তাপমাত্রা কারণে দোলক ঘড়ির কার্যকরী দৈর্ঘ্য বাড়ে। হলে দোলনকাল বাড়ে এবং ঘড়িটি ধীরে চলে।

খ) সরল দোলকের কার্যকরী দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকলে দোলনকা অভিকর্ষজ (T) ত্বরণের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক পরিবর্তিত হয়। T ∝√(1/g) যখন L ধ্রুব। অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বাড়লে সরল দোলকের দোলনকাল কমে। বিষুবরেখা অপেক্ষায় মেরুতে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বেশি হয়। এজন্য একটি পেন্ডুলাম ঘড়ি বিষুবরেখা থেকে মেরুতে নিলে এর দোলনকাল হ্রাস পায়। ফলে ঘড়িটি দ্রুত চলে।

গ) দোলনকাল ববের ভরের উপর নির্ভরশীল নয়। যেমন- একজন বালিকা দোলনায় দোল খাচ্ছে। সে উঠে দাঁড়ালে দোলনকালের কোন পরিবর্তন হবে না।

সরল দোলকের দোলন কাল T, কার্যকরি দৈর্ঘ্য L এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ g হলে- T=2π√(L/g)

 

Content added By
বাড়বে
কমবে
কোনো পরিবর্তন হবে না
দোলক স্থির হয়ে যাবে
Promotion