Job

Write an essay in Bangla on জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য।

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

জীবন ও স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য

ভূমিকাঃ মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য। বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য দরকার তেমনি সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভেজালবিহীন খাদ্য বা নিরাপদ খাদ্য অপরিহার্য। 

নিরাপদ খাদ্যঃ আধুনিক জীবনে শিল্পজাত খাদ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এ খাদ্যকে স্বাভাবিক এবং ভেজাল ও অন্যান্য দূষণ থেকে নিরাপদ অবস্থায় বিতরণ এখন একটি বিশ্ব সমস্যা। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়াও নানা কারণে খাদ্য দূষিত হতে পারে। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহণ, খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার যেকোন পর্যায়ে শিল্পায়িত খাদ্য খাদ্যের অনুপযোগী হতে পারে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার দ্বার পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত রাখা একটি বড় সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্ব ।

খাদ্যশিল্পের দায়িত্ব উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানসমূহ এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আধুনিক মান নির্ধারণ ব্যবস্থাপনা করতে আইনগতভাবে বাধ্য। এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি হলোঃ

উত্তম উৎপাদন পদ্ধতিঃ উত্তম উৎপাদন পদ্ধতির আওতায় ঐ সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যার ফলে খাদ্যের সংগতিপূর্ণ মানসহ নিরাপদের বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রমান রয়েছে। প্রক্রিয়াজাতজনিত সংকট নির্ধারণ এবং এর প্রতিটি ধাপের নিয়ন্ত্রণ (Hazard Analysis Critical Control Points বা সংক্ষেপে HACCP). খাদ্যের মান ও এর নিরাপদ হওয়ার বিষয়টি সনাতনী পদ্ধতির দৃষ্টিকোণ প্রক্রিয়াকৃত খাদ্যের মধ্যেই সীমিত ছিল। HACCP সাম্প্রতিক কালে উদ্ভাবিত একটি সক্রিয় কারিগরি পদ্ধতি। এ পদ্ধতি প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে সম্ভাব্য সমস্যা ও তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

মান নিশ্চয়তার বিধানঃ আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ সংস্থা (International Standards Organization ISO 9000) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত মানের (BU 29000) মাধ্যমে খাদ্য শিল্পের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহ এই দুটি সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। এ ধরণের কর্মসূচির কার্যকারিতা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্বারা নিয়মিতভাবে মূল্যায়িত হয়।

নিরাপদ খাদ্য ক্রয়ে ভোক্তা অধিকার ও বাংলাদেশঃ পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার বিশেষ কিছু অধিকার রয়েছে। ক্রেতাদের সকল অধিকার আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তিই একজন ভোক্তা। ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে হল্যান্ডের হেগ নগরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশের ক্রেতা সংগঠনের উদ্যোক্তাদের এক সম্মেলন। এ সম্মেলনেই গঠিত হয় আন্তর্জাতিক ক্রেতা সংগঠন 'ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব কনজুমারস ইউনিয়ন' (আইওসিইড)। আইওসিইউ দ্বারা স্বীকৃত ৭টি ভোক্তা অধিকার হলোঃ

০১. নিরাপত্তার অধিকার।
০২. জানার অধিকার। 
০৩. অভিযোগ ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার।
০৪. ন্যায্যমূল্যে পছন্দসই পণ্য কেনার অধিকার।
০৫. ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার।
০৬. ক্রেতার শিক্ষালাভের অধিকার। 
০৭. স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকার

বাংলাদেশে ক্রেতাদের যে অধিকার রয়েছে এ সম্পর্কেই তাদের কোন ধারণা নেই। তাছাড়া কোনো পণ্য সম্পর্কে অভিযোগ করতে অধিকাংশ সময় কোনো সুফল পাওয়া যায় না। কোনো পণ্য ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ক্রেতা যদি আইনের আশ্রয় নিতে যায় তবে সে তো ক্ষতিপূরণ পায়ই না বরং সে আরো ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতার অধিকারের ব্যাপারে সুফল আসছে, এর জন্য করছে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্বঃ খাদ্য হলো প্রাণশক্তি। খাদ্য ছাড়া কোনো প্রাণিই বাঁচতে পারে না। সেই খাদ্যের গুরুত্ব অনুধাবেনর জন্য প্রতিবছরের ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করা হয়। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ গঠনের পর থেকে ১৯৭৯ সালে এর ২০তম সাধারণ পরিষদের কনফারেন্সে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশেন (FAO) গঠন করা হয়। বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওয়ার্ল্ডফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি-ইফাদ) গঠন করা হয়েছে। পরে ইতালির রোমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে FAO এর সদর দপ্তর।

আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটির ওপরে। এতে বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যাকে অন্ন প্রদানের জন্য যত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে হলো অন্ন। তাই তো কবির কথায় বেজে ওঠে “জোটে যদি একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, জোটে যদি দুটো পয়সা ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী”। কারণ বাঁচতে হলে খেতে হবে। খাওয়া ছাড়া একজন মানুষের সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকার রেকর্ড রয়েছে। তার বেশি নয়। মানুষের খাবারের মধ্যে ছয়টি উপাদান অপরিহার্য। আমিষ, শর্করা, স্নেহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি এই ছয়টি খাদ্যোপাদান সমৃদ্ধ খাবারকে আদর্শ বা সুষম খাবার বলা হয়। তাই জীবনকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে এই সব খাবারের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং বলা যায় যে, জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম ।

বিএসটিআইঃ বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান, মান নিয়ন্ত্রণ এবং ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। শিল্প খাদ্য ও রাসায়নিক পণ্যের মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ বিএসটিআই এর প্রধান কাজ, তাছাড়া দেশব্যাপি সরকার নির্ধারিত ওজনের বিষয়টিও তারা প্রয়োগ করে। ঢাকাস্থ সদর দপ্তর কার্যালয় দ্বারা সকল বিভাগে বিএসটিআই কার্য পরিচালনা করে। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএসটিআই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, অনুমোদন ও ভেজাল রোধে কাজ করে যাচ্ছে।

উপসংহারঃ বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে অবশ্যই খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, কারণ খাদ্য গ্রহণ করা ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। আর জীবনকে সুস্থ রাখতে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই, তাই পরিশেষে বলা যায় যে, জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য অপরিহার্য।

1 year ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content
Promotion