Blockchain কী এবং এর কাজের ধরণ

 

Blockchain কী?

Blockchain হলো একটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার প্রযুক্তি, যা ডেটা বা ট্রানজেকশনগুলোকে ব্লকের মাধ্যমে রেকর্ড করে এবং ক্রমান্বয়ে একে অপরের সাথে যুক্ত করে একটি চেইন তৈরি করে। এটি একটি সুরক্ষিত, স্বচ্ছ, এবং বিকেন্দ্রীকৃত সিস্টেম, যেখানে কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। প্রতিটি ব্লক একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া ডেটা বা ট্রানজেকশনের রেকর্ড ধারণ করে এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যা সিস্টেমের নিরাপত্তা এবং অখণ্ডতা নিশ্চিত করে।

Blockchain-এর মূল উপাদান

ব্লক:

  • প্রতিটি ব্লক ডেটা বা ট্রানজেকশনের একটি সেট ধারণ করে। ব্লকে সাধারণত ট্রানজেকশনের তথ্য, সময় (timestamp), এবং পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ থাকে।

চেইন:

  • প্রতিটি ব্লক পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এইভাবে ব্লকগুলো একত্রে একটি চেইন তৈরি করে, যা ব্লকচেইন নামে পরিচিত। ব্লকচেইন একটি ক্রমান্বয়ী এবং নিরাপদ ডেটা সংরক্ষণ পদ্ধতি।

ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার:

  • Blockchain একটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার, যা বিভিন্ন নোডে (কম্পিউটার) রেকর্ড রাখা হয়। প্রতিটি নোড ব্লকচেইনের একই কপি ধারণ করে এবং প্রতিটি ট্রানজেকশন যাচাই করে। এটি ব্লকচেইনকে ডিসেন্ট্রালাইজড এবং নিরাপদ রাখে।

ক্রিপ্টোগ্রাফি:

  • ব্লকচেইনে ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে প্রতিটি ট্রানজেকশন সুরক্ষিত করা হয় এবং প্রতিটি ব্লক ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ব্যবহার করে পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে যুক্ত থাকে। এটি ব্লকচেইনের পরিবর্তন প্রতিরোধ করে এবং সিস্টেমকে অখণ্ড রাখে।

কনসেনসাস মেকানিজম:

  • ব্লকচেইনে একটি কনসেনসাস মেকানিজম থাকে, যা নেটওয়ার্কের নোডগুলোকে একটি একক ব্লক যাচাই করতে সহায়ক হয়। Bitcoin-এর ক্ষেত্রে এটি Proof of Work (PoW) এবং Ethereum 2.0-এর ক্ষেত্রে Proof of Stake (PoS) মেকানিজম।

Blockchain-এর কাজের ধরণ

Blockchain-এর কাজের ধরণ সহজভাবে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়: ব্লক তৈরি, ব্লক ভেরিফিকেশন এবং ব্লক সংযোগ। নিচে Blockchain-এর কাজের ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:

1. ট্রানজেকশন ইনিশিয়েট করা এবং ব্লক তৈরি করা

  • যখন একটি ট্রানজেকশন শুরু হয়, তখন তা Blockchain নেটওয়ার্কে একটি মেসেজ হিসেবে পাঠানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি Alice Bob-কে কিছু Bitcoin পাঠাতে চান, তাহলে Alice-এর ওয়ালেট একটি ট্রানজেকশন তৈরি করে এবং তা নেটওয়ার্কে ব্রডকাস্ট করে।
  • প্রতিটি ট্রানজেকশন ব্লকে সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্লকে অন্যান্য ডেটা যেমন ট্রানজেকশনের সময় এবং পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ রেকর্ড করা হয়। এই তথ্যগুলো একত্রে একটি নতুন ব্লক তৈরি করে।

2. ট্রানজেকশন ভেরিফিকেশন এবং কনসেনসাস মেকানিজম

  • Blockchain নেটওয়ার্কের নোডগুলো প্রতিটি ট্রানজেকশন যাচাই করে। এটি নিশ্চিত করতে হয় যে ট্রানজেকশনটি সঠিক এবং ব্যবহারকারীর পর্যাপ্ত ব্যালেন্স আছে কিনা।
  • নেটওয়ার্কের প্রতিটি নোড একই ব্লক যাচাই করতে চেষ্টা করে, তবে এক ব্লককে বৈধ ঘোষণা করতে নেটওয়ার্ক একটি নির্দিষ্ট কনসেনসাস মেকানিজম ব্যবহার করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, Proof of Work (PoW) মেকানিজমে মাইনাররা একটি জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে ব্লক ভেরিফাই করে। যারা প্রথমে সমাধান করে, তারা ব্লকচেইনে ব্লক সংযুক্ত করে এবং তাদের জন্য পুরস্কার পান। অন্যদিকে, Proof of Stake (PoS) মেকানিজমে, নেটওয়ার্কের অংশগ্রহণকারীরা তাদের টোকেন বা মুদ্রা স্টেক করে ব্লক ভেরিফাই করতে সক্ষম হন।

3. ব্লক সংযোগ এবং ব্লকচেইনে আপডেট করা

  • যখন একটি ব্লক নেটওয়ার্কের কনসেনসাস মেকানিজম দ্বারা যাচাই হয়, তখন সেই ব্লকটি ব্লকচেইনে সংযুক্ত করা হয়।
  • প্রতিটি ব্লক পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ সংরক্ষণ করে এবং একসঙ্গে যুক্ত থাকে, যা ব্লকগুলোর মধ্যে একটি ক্রমান্বয়ী এবং সুরক্ষিত সংযোগ তৈরি করে।
  • প্রতিটি নোড ব্লকচেইনের আপডেটেড কপি পায় এবং নতুন ব্লক চেইনের অংশ হিসেবে রেকর্ড করে।

Blockchain-এর মূল বৈশিষ্ট্য

ডিসেন্ট্রালাইজেশন:

  • Blockchain হলো একটি সম্পূর্ণ ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম, যেখানে সমস্ত তথ্য বিভিন্ন নোডে সংরক্ষিত থাকে। এটি সেন্ট্রালাইজড সিস্টেমের মতো একক পয়েন্টে ফেইলিওর বা হ্যাকিং থেকে সুরক্ষিত।

স্বচ্ছতা এবং পরিবর্তন প্রতিরোধ:

  • ব্লকচেইনের প্রতিটি ট্রানজেকশন এবং তথ্য স্বচ্ছভাবে নোডে রেকর্ড করা হয়, যা ব্যবহারকারীরা দেখতে এবং যাচাই করতে পারে। একবার কোনো ব্লক ব্লকচেইনে সংযুক্ত হলে তা পরিবর্তন করা যায় না, যা ব্লকচেইনকে পরিবর্তন প্রতিরোধ করে।

নিরাপত্তা এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি:

  • প্রতিটি ব্লক ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ব্যবহার করে সংযুক্ত থাকে, যা ব্লকচেইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। হ্যাশ পরিবর্তন করলে ব্লকচেইনের প্রতিটি ব্লক পরিবর্তিত হতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব এবং হ্যাকিং থেকে সুরক্ষিত রাখে।

কনসেনসাস মেকানিজম:

  • Blockchain-এর কনসেনসাস মেকানিজম নিশ্চিত করে যে সমস্ত নোড একই ব্লক এবং তথ্যের সঙ্গে একমত। এটি সিস্টেমের অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখে।

Blockchain-এর ব্যবহার এবং ব্যবহার ক্ষেত্র

Blockchain প্রযুক্তির বিভিন্ন ব্যবহার এবং প্রয়োগ রয়েছে, যা ফাইনান্স থেকে শুরু করে সাপ্লাই চেইন, ভোটিং সিস্টেম, এবং স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার করা যায়।

  1. ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল পেমেন্ট:
    • Bitcoin এবং Ethereum-এর মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি Blockchain-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এটি পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন সম্পন্ন করতে এবং মুদ্রা সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
  2. ডিসেন্ট্রালাইজড ফাইনান্স (DeFi):
    • Blockchain DeFi প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহার করা হয়, যেখানে লোন, ইল্ড ফার্মিং, ট্রেডিং, এবং অন্যান্য ফাইনান্সিয়াল সেবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সম্পন্ন হয়।
  3. সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট:
    • Blockchain-এর মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ চেইন স্বচ্ছভাবে এবং সুরক্ষিতভাবে ট্র্যাক করা যায়। প্রতিটি ধাপে তথ্য রেকর্ড করা হয়, যা ব্যবস্থাপনা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে।
  4. ভোটিং সিস্টেম:
    • Blockchain নিরাপদ এবং স্বচ্ছ ভোটিং সিস্টেম তৈরি করতে সহায়ক। এর মাধ্যমে ভোট রেকর্ড করা এবং ভোটারদের পরিচয় যাচাই করা সহজ এবং নিরাপদ।
  5. স্বাস্থ্যসেবা:
    • Blockchain স্বাস্থ্যসেবায় রোগীদের তথ্য সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ এবং শেয়ার করতে ব্যবহার করা যায়। এটি রোগীর ডেটার নিরাপত্তা এবং অখণ্ডতা নিশ্চিত করে।
Content added By

আরও দেখুন...

Promotion