Skill
ব্লকচেইন (Blockchain)

ডিজিটাল স্বাক্ষর এবং তার ব্যবহার

Latest Technologies - ব্লকচেইন (Blockchain) - Cryptography এবং Blockchain | NCTB BOOK

ডিজিটাল স্বাক্ষর কী?

ডিজিটাল স্বাক্ষর হলো একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতি যা অনলাইন লেনদেন, নথি, বা তথ্যের সঠিকতা এবং প্রেরকের পরিচয় যাচাই করতে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর, যা একটি অনন্য ক্রিপ্টোগ্রাফিক কোড ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এবং এটি নিশ্চিত করে যে তথ্যটি কোনো তৃতীয় পক্ষ দ্বারা পরিবর্তন বা মিথ্যাচার করা হয়নি। ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং লেনদেনের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়।

ডিজিটাল স্বাক্ষর কীভাবে কাজ করে?

ডিজিটাল স্বাক্ষর তৈরি করতে সাধারণত দুটি কী ব্যবহার করা হয়: পাবলিক কী এবং প্রাইভেট কী

  • প্রাইভেট কী: এটি একটি গোপন কী যা শুধুমাত্র প্রেরকের কাছে থাকে। প্রাইভেট কী ব্যবহার করে প্রেরক তথ্য স্বাক্ষর করে।
  • পাবলিক কী: এটি একটি উন্মুক্ত কী যা প্রাপকদের সাথে শেয়ার করা হয়। পাবলিক কী ব্যবহার করে প্রাপক তথ্য যাচাই করতে পারে এবং নিশ্চিত করতে পারে যে তথ্যটি প্রাইভেট কী দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ডিজিটাল স্বাক্ষর তৈরির ধাপ:

  1. প্রথমে, প্রেরক প্রাইভেট কী ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট তথ্য বা মেসেজে ডিজিটাল স্বাক্ষর তৈরি করে।
  2. স্বাক্ষরটি তথ্যের সাথে যুক্ত করে প্রাপকের কাছে পাঠানো হয়।
  3. প্রাপক প্রেরকের পাবলিক কী ব্যবহার করে সেই স্বাক্ষর যাচাই করে। যদি স্বাক্ষরটি সঠিক হয়, তবে প্রাপক নিশ্চিত হতে পারে যে তথ্যটি প্রেরকেরই এবং তা পরিবর্তিত হয়নি।

ডিজিটাল স্বাক্ষরের ব্যবহার

ডিজিটাল স্বাক্ষর বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন খাতে নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান ব্যবহারক্ষেত্রের উদাহরণ দেওয়া হলো:

১. ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন:

  • ব্লকচেইনে প্রতিটি লেনদেন ডিজিটাল স্বাক্ষর দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। প্রেরক তার প্রাইভেট কী ব্যবহার করে লেনদেনের তথ্য স্বাক্ষর করে এবং নেটওয়ার্কের নোডগুলো পাবলিক কী দিয়ে তা যাচাই করে।
  • এই পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের সঠিকতা নিশ্চিত করা হয় এবং প্রতারণা বা আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।

২. ইলেকট্রনিক নথি স্বাক্ষর:

  • ব্যবসায়িক বা আইনগত নথিপত্র ডিজিটাল স্বাক্ষর দ্বারা স্বাক্ষর করা যায়, যা নিশ্চিত করে যে নথিগুলো পরিবর্তিত হয়নি এবং স্বাক্ষরকারীই প্রকৃত প্রেরক।
  • ইলেকট্রনিক নথি ব্যবস্থাপনায়, ডিজিটাল স্বাক্ষর বিশ্বস্ততা এবং বৈধতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩. ই-মেইল নিরাপত্তা:

  • ই-মেইল প্রেরণ করার সময় ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করা যায়, যা নিশ্চিত করে যে মেসেজটি প্রেরকেরই এবং তা পাঠানোর পর পরিবর্তিত হয়নি।
  • ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে ই-মেইল প্রেরকের পরিচয় যাচাই করা যায় এবং স্প্যাম বা ফিশিং আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।

৪. সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন যাচাইকরণ:

  • সফটওয়্যার ডেভেলপাররা তাদের সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন রিলিজ করার সময় ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিশ্চিত হতে পারে যে সফটওয়্যারটি কোনো তৃতীয় পক্ষ দ্বারা পরিবর্তিত হয়নি।
  • সফটওয়্যারের ডিজিটাল স্বাক্ষর যাচাই করার মাধ্যমে, ব্যবহারকারীরা ট্রাস্টেড এবং নিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে।

৫. অনলাইন ব্যাংকিং এবং আর্থিক সেবা:

  • ব্যাংকিং সিস্টেমে ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে নিরাপদ এবং যাচাইকৃত লেনদেন নিশ্চিত করা যায়। এটি ব্যাংকিং আক্রমণ ও প্রতারণা প্রতিরোধে সহায়ক।
  • আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করে এবং নিরাপদ লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

ডিজিটাল স্বাক্ষরের সুবিধা

  • নিরাপত্তা: ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে তথ্য সুরক্ষিত থাকে এবং প্রেরকের পরিচয় যাচাই করা যায়।
  • ইমিউটেবিলিটি: ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে তথ্যটি পরিবর্তিত হয়নি বা মুছা হয়নি।
  • বিশ্বস্ততা: ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে প্রেরক এবং প্রাপক উভয়ের মধ্যেই একটি বিশ্বাসযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়।
  • স্বয়ংক্রিয় যাচাই প্রক্রিয়া: ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত এবং নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করা যায়।
Content added By
Promotion