বিভিন্ন দেশের Blockchain নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি

বিভিন্ন দেশের ব্লকচেইন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি

ব্লকচেইন প্রযুক্তি বৈশ্বিকভাবে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা লাভ করছে এবং বিভিন্ন দেশে এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কিছু দেশ ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে উদ্ভাবনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে, আবার কিছু দেশ এটির ব্যবহার ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাখছে। নিচে বিভিন্ন দেশের ব্লকচেইন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা হলো:

১. যুক্তরাষ্ট্র (United States)

  • ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্ভাবন: যুক্তরাষ্ট্র ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং উন্নয়নকে উৎসাহিত করছে। দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্টের মতো খাতে উদ্ভাবন করছে।
  • নিয়ন্ত্রণ এবং আইন: যদিও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার উৎসাহিত করা হচ্ছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেমন SEC (Securities and Exchange Commission) এবং CFTC (Commodity Futures Trading Commission) ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
  • গবেষণা এবং উন্নয়ন: যুক্তরাষ্ট্র ব্লকচেইনের গবেষণা এবং উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে এবং IBM, Microsoft, এবং Amazon এর মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্লকচেইন সলিউশন এবং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে।

২. ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union)

  • ব্লকচেইনের আইনগত কাঠামো: EU ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রিত কাঠামো এবং প্রোটোকল দিয়ে পরিচালনা করছে। MiCA (Markets in Crypto-Assets) রেগুলেশন প্রণয়নের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন পরিষেবাগুলো নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে।
  • স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট এবং স্বচ্ছতা: EU ব্লকচেইনের স্বচ্ছতা এবং স্মার্ট কন্ট্র্যাক্টের বৈধতাকে উৎসাহিত করছে, যা স্বয়ংক্রিয় লেনদেন এবং স্বচ্ছ চুক্তি কার্যকর করতে সহায়ক।
  • ইকোসিস্টেমের বিকাশ: ইউরোপীয় দেশগুলো ব্লকচেইনের ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে উদ্যোগী এবং Blockchain Partnership Initiative এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করছে।

৩. চীন (China)

  • সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং সীমাবদ্ধতা: চীন ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করলেও, ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার এবং মাইনিং নিষিদ্ধ করেছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক People's Bank of China (PBOC) ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
  • CBDC (Central Bank Digital Currency): চীন ব্লকচেইন ভিত্তিক ডিজিটাল ইউয়ান চালু করছে, যা একটি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল মুদ্রা। এটি চীনের ব্লকচেইন দৃষ্টিভঙ্গিকে একটি সরকারি নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত করার প্রমাণ।
  • ব্যাপক গবেষণা ও উন্নয়ন: চীন ব্লকচেইন প্রযুক্তির গবেষণা এবং উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো স্মার্ট সিটি এবং সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনায় ব্লকচেইনের প্রয়োগ করছে।

৪. জাপান (Japan)

  • উদ্ভাবন ও নিয়ন্ত্রণ: জাপান ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিকে উদ্ভাবনের একটি মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটি বৈধ এবং নিয়ন্ত্রিত। জাপানের Financial Services Agency (FSA) ব্লকচেইন পরিষেবাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং প্রয়োজনীয় লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করেছে।
  • স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার প্রযুক্তি (DLT): জাপান স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার প্রযুক্তির উন্নয়নে মনোযোগী এবং অনেক প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন ব্যবহার করে ব্যবসা প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করছে।

৫. সিঙ্গাপুর (Singapore)

  • ব্লকচেইন-ফ্রেন্ডলি ইকোসিস্টেম: সিঙ্গাপুর একটি ব্লকচেইন-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে এবং এটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইনের উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। Monetary Authority of Singapore (MAS) ব্লকচেইন এবং ফিনটেক ইকোসিস্টেমের জন্য নিয়ন্ত্রিত কাঠামো তৈরি করেছে।
  • ক্যাপিটাল মার্কেটস এবং ফিনান্স: সিঙ্গাপুরে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক পরিষেবা এবং ক্যাপিটাল মার্কেট ব্যবস্থার উন্নতি করা হচ্ছে। ফিনটেক স্টার্টআপ এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সিঙ্গাপুরে ব্লকচেইনের ব্যবহার বৃদ্ধি করছে।

৬. দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)

  • ব্লকচেইন প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা: দক্ষিণ কোরিয়া ব্লকচেইন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে এবং এর উন্নয়নকে উৎসাহিত করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লকচেইনের মাধ্যমে স্মার্ট সিটি এবং স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেম তৈরি করছে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ: ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া নির্দিষ্ট নিয়মাবলী আরোপ করেছে এবং এক্সচেঞ্জগুলোকে KYC এবং AML নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে।
  • গবেষণা ও উন্নয়ন: দক্ষিণ কোরিয়া ব্লকচেইন প্রযুক্তির গবেষণা এবং স্টার্টআপে বিনিয়োগ করছে এবং নতুন নতুন সলিউশন এবং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে।

৭. ভারত (India)

  • মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি: ভারতে ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রতি সরকার মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। যদিও ব্লকচেইন ভিত্তিক ডিজিটাল লেনদেন এবং স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট নিয়ে আগ্রহ রয়েছে, তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।
  • স্মার্ট সিটি এবং ডেটা ম্যানেজমেন্ট: ভারত ব্লকচেইন ব্যবহার করে স্মার্ট সিটি এবং সরকারি ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সরকার ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেটার স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।
  • CBDC চালু করার পরিকল্পনা: ভারত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা (CBDC) চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভিত্তিতে ডিজিটাল অর্থনীতিকে উন্নত করবে।

৮. রাশিয়া (Russia)

  • সীমিত গ্রহণযোগ্যতা: রাশিয়া ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার অনুমোদন করেছে তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনকে পেমেন্ট মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
  • ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল এ্যাসেট: রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন পরিষেবাগুলোকে একটি ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল এ্যাসেট হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
  • সরকারি পরিষেবায় ব্লকচেইন: রাশিয়া ব্লকচেইন ব্যবহার করে সরকারি পরিষেবার স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করার চেষ্টা করছে।
Content added By

আরও দেখুন...

Promotion