অংশগ্রহণমূলক কাজ ৫৩

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - জাতক, চরিতমালা ও উপাখ্যান | NCTB BOOK

তুমি আনন্দ থেরর মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি তোমার পরিবারে সদস্য/সহপাঠীদের পালন বা চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে তা লেখো।

 

 

যে গুণগুলো পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই

কীভাবে পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করব

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

মহাপ্রজাপতি গৌতমী

 

মহাপ্রজাপতি গৌতমী দেবদহে সুপ্রবুদ্ধের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতমের মাতা মহামায়ার ছোট বোন। মহামায়ার মৃত্যুর পর রাজা শুদ্ধোদন মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে বিয়ে করেছিলেন। জ্যোতিষীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাঁদের সন্তানেরা রাজচক্রবর্তী রাজা হবেন। সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্মের সপ্তাহকাল পর তাঁর মাতা মহামায়ার মৃত্যু হয়। মহাপ্রজাপতি গৌতমীই সিদ্ধার্থের লালন-পালনের ভার নেন।

রাজা শুদ্ধোদন যথাকালে মৃত্যুবরণ করলে মহাপ্রজাপতি গৌতমী সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ভিক্ষুণীব্রত গ্রহণ করার সংকল্প করেন। এ সময় কপিলাবস্তুতে পাঁচশত শাক্যকুমার বুদ্ধের কাছে ভিক্ষুধর্মে দীক্ষা নেন। তাঁদের স্ত্রীরা মহাপ্রজাপতি গৌতমীর নেতৃত্বে বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়ে ভিক্ষুণীব্রত গ্রহণ করার অনুমতি চান। কিন্তু বুদ্ধ তাঁদের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে বৈশালীতে চলে যান। মহাপ্রজাপতি গৌতমী ও তাঁর সহচারিণী শাক্য নারীরা হতাশ না হয়ে মস্তক মুণ্ডন করে কাষায়বস্তু পরে হেঁটে বৈশালীতে পৌঁছেন। বুদ্ধ তখন বৈশালীর মহাবনের কুটাগার শালায় অবস্থান করতেন। মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাঁর অনুগামী শাক্যনারীসহ ক্লান্ত ও শ্রান্ত দেহে মহাবনের কূটাগারে উপস্থিত হন। আনন্দ স্থবির বুদ্ধকে বললেন, প্রভু ভগবান, মহাপ্রজাপতি গৌতমী তোরণের বাইরে স্ফীত পদে, ধূলিধূসরিত অবস্থায় বিষণ্ণ মনে এবং সজল চোখে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ নারীদের প্রব্রজ্যা গ্রহণের অনুমতি দিন। আনন্দের প্রার্থনা পর পর তিনবার প্রত্যাখ্যাত হলে আনন্দ পুনর্বার বিনীতভাবে বললেন, বুদ্ধ, যদি নারীরা সংসার ত্যাগ করে বুদ্ধের অনুশাসন মান্য করে ধ্যান সাধনায় রত হয়, তাহলে তারা কী আসবক্ষয় সাধন করতে সক্ষম হবে না? বুদ্ধ বললেন, সে শক্তি তাঁদেরও আছে। আনন্দ বললেন, তা যদি হয়, তাহলে প্রভু মহাপ্রজাপতি গৌতমী আপনার বিমাতা। আপনার মাতার মৃত্যুর পর তিনি মাতৃস্নেহে আপনাকে পরম আদরে লালন-পালন করেছেন। অতএব নারীদের সংসারধর্ম ত্যাগ করে তথাগতের নিয়ম ও অনুশাসন পালন পূর্বক ভিক্ষুণীধর্ম গ্রহণের অনুমতি দান করুন। বুদ্ধ নীতিগতভাবে আনন্দের আবেদন অনুমোদন করলেন। বললেন, নারীরা শাসনে প্রব্রজিত হতে হলে আটটি শর্ত আজীবন প্রতিপালন করতে হবে। এই শর্তগুলোকে অষ্ট গুরুধর্ম বলা হয়। মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ উপস্থিত শাক্য নারীরা সানন্দে অষ্টগুরু ধর্ম মেনে নিলেন। এরপর মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ পাঁচশত শাক্যনারীকে সঙ্ঘভুক্ত করা হলো। প্রতিষ্ঠিত হলো ভিক্ষুণীসঙ্ঘ।

উপসম্পদা লাভের পর মহাপ্রজাপতি গৌতমী বুদ্ধের কাছে গমন করে পূজা ও বন্দনা করলেন। বুদ্ধ তাঁকে ধর্মোপদেশ দিয়ে কর্মস্থান প্রদান করেন। তিনি অনতিবিলম্বে অর্হত্ত্বফল লাভ করেন। তাঁর অপর সহচারিণীগণ জেতবনে বুদ্ধের কাছে নন্দকোবাদ সূত্র শ্রবণ করে অর্হত্ত্ব ফল লাভ করেন। বুদ্ধ মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে থেরীদের মধ্যে প্রধান এবং জ্ঞানে-গুণে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেন।

মহাপ্রজাপতি গৌতমী বৈশালীতে অবস্থানকালে বুদ্ধের অনুমতি নিয়ে ১২০ বছর বয়সে পরিনির্বাণ লাভ করেন। কথিত আছে, বুদ্ধের পরিনির্বাণের সময় যেরকম অদ্ভুত ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, মহাপ্রজাপতি গৌতমীর পরিনির্বাণের সময়ও সেরকম সংঘটিত হয়েছিল। যেমন: সকলের প্রার্থনার পর শ্মশানে স্বয়ং অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। মহাপ্রজাপতি গৌতমী ছিলেন ভিক্ষুণীসঙ্ঘের অভিভাবিকার মতো। সকল ভিক্ষুণীর প্রতি তাঁর সমান নজর ছিল। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি তাঁর সযত্ন দৃষ্টি থাকত। কোনো অসুবিধা হলে তা নিরসনে বুদ্ধের নির্দেশক্রমে ব্যবস্থা নিতেন। অর্হত্ত্ব লাভের পর মহাপ্রজাপতি গৌতমী মনের আনন্দে অনেক প্রীতিগাথা ভাষণ করেছিলেন।

নিচে তাঁর ভাষিত কয়েকটি গাথার বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো: 

১. জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ সত্তা লোকশ্রেষ্ঠ বুদ্ধবীরকে নমস্কার। তিনি আমার এবং বহুজনের দুঃখ মোচন করেছেন। 

২. সকল দুঃখের কারণ আমার জ্ঞাত হয়েছে। অশুভের হেতু তৃষ্ণা আমার এখন দু রীভূত হয়েছে। আমি দুঃখনিবৃত্তির কারণ আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গে বিচরণ করছি। 

৩. পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবে আমি ইতিপূর্বে লক্ষ্যহীনভাবে মাতা, পিতা, পুত্র, ভাই, মাতামহীরূপে কতবার জন্ম গ্রহণ করেছি। 

৪. তথাগতের দর্শনে আমি তৃষ্ণামুক্ত হয়েছি, এ দেহই আমার অন্তিম দেহ। জন্মান্তর রোধ হয়েছে। আমার আর পুনর্বার জন্ম হবে না। 

৫. সব সময় শ্রাবক সঙ্ঘের দিকে লক্ষ্য রাখবে। তাঁরা দৃঢ় পরাক্রমশালী, ধ্যানপরায়ণ ও বীর্যবান। তাঁরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে বিচরণশীল। তাঁদের পথ অনুসরণ করবে। 

৬. কী আশ্চর্য! বহুজনের হিত ও কল্যাণার্থে মহামায়া সিদ্ধার্থকে প্রসব করেছিলেন। সত্যিই তিনি বহুগুণের অধিকারী। সেই গৌতম জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর হাত থেকে সকল প্রাণীকে রক্ষা করেছেন এবং সকল দুঃখের বিনাশ সাধন করেছেন।

Content added || updated By
Promotion