অনুপাত, সমানুপাত

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গণিত - NCTB BOOK

অনুপাত, সমানুপাত

পূর্বের শ্রেণিতে আমরা কিন্তু অনুপাত সম্পর্কে ধারণা লাভ করে এসেছি, এবং দেখেছি, অনুপাত কীভাবে কাজ করে। এ অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন ধরণের অনুপাত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। তার আগে চলো আমরা কয়েকটি কাজ করি।

তোমরা চিত্রের প্রাণিটিকে দেখোতো। তোমরা কি চিনতে পারছো প্রাণিটির নাম কি? এটি একটি জিরাফ। উচ্চতার দিক দিয়ে প্রাণিজগতের সবচেয়ে বড় প্রাণি জিরাফ। এবার জিরাফটি দেখো। এখানে, জিরাফটির গলার দৈর্ঘ্য ও জিরাফটির দৈর্ঘ্য মাপতে হবে। নির্দিষ্ট রেখা বরাবর তোমরা জিরাফটির গলা ও জিরাফটির দৈর্ঘ্য মাপো এবং গলা ও সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যের অনুপাতটি নির্ণয় করো। আবার একইভাবে জিরাফটির দৈর্ঘ্য ও জিরাফটির গলার দৈর্ঘ্যের অনুপাত নির্ণয় করো। তুমি যে অনুপাত দুটি পেলে, সেটি নিচের ছকে লিখে ফেলো।

জিরাফের গলার দৈর্ঘ্য

জিরাফের পুরো দেহের দৈর্ঘ্য

গলার দৈর্ঘ্যে ও পুরো দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত

পুরো দেহের দৈর্ঘ্য ও গলার দৈর্ঘ্যের অনুপাত

 

 

 

 

এবার তোমরা তোমাদের বাংলা বই ও গণিত বইটি নাও। দুটি বইয়েরই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্ব মাপো। এবার গণিত বই ও বাংলা বইয়ের প্রাপ্ত দৈর্ঘ্যের অনুপাত নির্ণয় করো। একইভাবে প্রস্থ ও পুরুত্বের অনুপাতও নির্ণয় করো। এবার তোমার প্রাপ্ত তথ্যের সাপেক্ষে নিচের ছকটি পূরণ করো

 

দৈর্ঘ্য

প্রস্থ

পুরুত্ব

গণিত বই

 

 

 

বাংলা বই

 

 

 

অনুপাত

 

 

 

সরল অনুপাত:

এতক্ষণ আমরা তো বেশ কয়েকটি অনুপাত নির্ণয় করে এসেছি। তোমরা বলো তো এই অনুপাতগুলোতে কতটি রাশি ছিল? দেখো, প্রতিটি অনুপাতে কিন্তু ২ টি রাশি আছে। কোন অনুপাতে দুইটি রাশি থাকলে তাকে সরল অনুপাত বলে

সরল অনুপাতের প্রথম রাশিকে পূর্ব রাশি এবং দ্বিতীয় রাশিকে উত্তর রাশি বলে। যেমন, ৩: ৫ একটি সরল অনুপাত, এখানে ৩ হলো পূর্ব রাশি ও ৫ হলো উত্তর রাশি

লঘু অনুপাত:

উপরে তোমরা জিরাফের দৈর্ঘ্য মেপে এসেছো। এখন, জিরাফের গলার দৈর্ঘ্য ও পুরো দেহের অনুপাতটি কি ছিল দেখো তো? অনুপাতের পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশি মধ্যে কে বড় বলো তো? দেখতে যাবে পূর্ব রাশিটি ছোট, উত্তর রাশিটি বড়। এধরণের অনুপাত গুলোকে লঘু অনুপাত বলা হয়। অর্থাৎ, সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি, উত্তর রাশি থেকে ছোট হলে, তাকে লঘু অনুপাত বলে। যেমন, ৩: ৫, ৪: ৭ ইত্যাদি।

একটি বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়স ৮ বছর এবং ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়স ১০ বছর। এখানে ৩য় ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়সের অনুপাত ৮:১০ বা ৪ : ৫। এই অনুপাতটির পূর্ব রাশি, উত্তর রাশি অপেক্ষা ছোট হওয়ায় ইহা একটি লঘু অনুপাত।

গুরু অনুপাত:

আবার আমরা সেই জিরাফের দৈর্ঘ্যটির দিকে তাকাই। তবে এবার পুরো দেহের দৈর্ঘ্য ও গলার দৈর্ঘ্যের অনুপাত থেকে আমরা কি দেখতে পারি? এবার কিন্তু পূর্ব রাশিটি বড় এবং উত্তর রাশিটি ছোট। এধরণের অনুপাত হল গুরু অনুপাত। অর্থাৎ, কোনো সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি, উত্তর রাশি থেকে বড় হলে, তাকে গুরু অনুপাত বলে। যেমন, ৫: ৩, ৭:৪, ৬: ৫ ইত্যাদি।

সাদিয়া ৩২ টাকা দিয়ে একটি বিস্কুটের প্যাকেট ও ২৫ টাকা দিয়ে একটি কোণ আইসক্রিম কিনলো। এখানে বিস্কুট ও আইসক্রিমের দামের অনুপাত হলো ৩২: ২৫, এই অনুপাতটির পূর্ব রাশি ৩২ যা উত্তর রাশি ২৫ অপেক্ষা বড় হওয়ায় ইহা একটি গুরু অনুপাত।

একক অনুপাত:

তোমরা তোমাদের দুটো বইয়ের অনুপাত মেপে দেখেছো। সেখান থেকে কি পেলে বলো তো? দেখো তো দৈর্ঘ্যের অনুপাত কেমন হয়? দুটো বইয়ের দৈর্ঘ্যের অনুপাত একই বা কাছাকাছি না? অনুপাতের ধারণা থেকে আমরা কি বলতে পারি? দুটো বইয়ের দৈর্ঘ্য একই হওয়ায় আমরা এটিকে বলতে পারি ১:১। অর্থাৎ অনুপাতের দুটো রাশিই এক বা একক। এবং এধরণের অনুপাতই হল একক অনুপাত।

অর্থাৎ, যে সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশি সমান সে অনুপাতকে একক অনুপাত বলে।

যেমন, আরিফ ১৫ টাকা দিয়ে একটি বলপেন ও ১৫ টাকা দিয়ে একটি খাতা কিনলো। এখানে বলপেন ও খাতা উভয়টির মূল্য সমান এবং মূল্যের অনুপাত ১৫: ১৫ বা ১:১। অতএব, একক অনুপাত।

কাজ:

১. এবার ভেবে দেখো, তোমাদের বইয়ের প্রস্থ ও পুরুত্বের জন্য যে দুটি অনুপাত পেয়েছিলে, সেই অনুপাত দুটি কোন ধরণের অনুপাত হবে?

তোমার আশেপাশে উপরে শেখা ৩ ধরণের অনুপাতের আলাদা আলাদা ১ টি উদাহরণ খুঁজে বের করো তো।

ব্যস্ত অনুপাত:

চলো, আমরা আবার সেই জিরাফটির কথা দেখি। তোমরা নিচের ছকে অনুপাত দুটির মধ্যে সম্পর্ক করার চেষ্টা করো তো

ক্রমিক

অনুপাত

পূর্ব রাশি

উত্তর রাশি

গলা দৈর্ঘ্যে ও পুরো দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত

 

 

পুরো দেহের দৈর্ঘ্য ও গলার দৈর্ঘ্যের অনুপাত

 

 

ছক থেকে আসলে কি দেখতে পাচ্ছো? ১ নং অনুপাতের পূর্ব রাশিটি আর ২ নং অনুপাতের উত্তর রাশির মাঝে কোন মিল পাও? আবার ১ নং অনুপাতের উত্তর রাশি আর ২ নং অনুপাতের পূর্ব রাশির মাঝে কোন মিল পাও?

দেখো, এই দুটি অনুপাতের একটি আরেকটির সাপেক্ষে উলটো।

কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিকে উত্তর রাশি এবং উত্তর রাশিকে পূর্ব রাশি করে প্রাপ্ত অনুপাতকে পূর্বের অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত বলে।

যেমন, ১৩: ৫ এর ব্যস্ত অনুপাত ৫: ১৩।

 

কাজ: ভেবে দেখতো 'ব্যস্ত অনুপাত' এবং 'বিপরীত ভগ্নাংশ' এর মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাও কিনা?

 এবার চলো, আমরা বই মাপার কাজটি আরেকবার করার চেষ্টা করি। তবে এবার বাংলা বই ও গণিত বইয়ের সাথে তুমি তোমার ইংরেজি বইটিকে সাথে নাও। পূর্বের ন্যায় একইভাবে তিনটি বইয়ের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্ব নির্ণয় করো এবং তা নিচের ছকে লিখো।

 

দৈর্ঘ্য

প্রস্থ

পুরুত্ব

গণিত বই

 

 

 

বাংলা বই

 

 

 

ইংরেজি বই

 

 

 

বহুরাশিক অনুপাত:

ভেবে দেখো, তুমি উপরে যে বই মাপলে, এবার তোমাকে বইগুলোর দৈর্ঘ্যের অনুপাত নির্ণয় করতে বললে তুমি কি করবে? এবার কি আগের মত কোন একক অনুপাত পাবে? তা কিন্তু পাবে না, কারণ এবার তোমার কিন্তু রাশি আর দুটি নিই। তাহলে এবার তোমাকে তিনটি রাশিকে পাশাপাশি অনুপাত আকারে লিখতে হবে।

অর্থাৎ, তিন বা ততোধিক রাশির অনুপাতকে বহুরাশিক অনুপাত বলে। এক্ষেত্রে পুর্বে ব্যবহার করে আসা একটি উদাহরণের সাহায্যে চিন্তা করো, আরিফ ১৫ টাকা দিয়ে একটি খাতা ও ১৫ টাকা দিয়ে একটি বলপেনের সাথে সাথে ১৫ টাকা দিয়ে একটি রাবারও কিনলো। এবার তাহলে মূল্যের অনুপাত কি হবে? নিশ্চয় ১৫: ১৫ বা ১:১ হবে না। এক্ষেত্রে মূল্যের অনুপাত হবে ১৫: ১৫: ১৫ বা ১:১: ১। এবার ভাবো উপরের উদাহরণ অনুযায়ী যদি সাদিয়া ৩২ টাকা দিয়ে বিস্কুটের প্যাকেট ও ২৫ টাকা দিয়ে কোণ আইসক্রিমের সাথে ২ টাকা দিয়ে একটি ক্যান্ডি কিনত, তাহলে এই তিনটি পণ্যের মূল্যের অনুপাত কত হত?

কাজ: তোমার তিনটি বইয়ের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্বের অনুপাত কী হবে?

নিচের তথ্যগুলো দেখো এবং সেটির সাপেক্ষে অনুপাতগুলো নির্ণয় করো।

শ্রেণি

গড় বয়স

৩য়

৫ম

১০

৭ম

১২

ক্রমিক

অনুপাত

অনুপাত

অনুপাতের সরল রূপ

পূর্ব রাশি

উত্তর রাশি

৩য় ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়স

৮:১০

৪:৫

8

৫ম ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়স

 

 

 

 

ধারাবাহিক অনুপাত :

উপরের ছকে ১ম অনুপাতের উত্তর রাশি ও দ্বিতীয় অনুপাতের পূর্ব রাশিটি কত দেখো তো? দুটি কি সমান হচ্ছে না?

এভাবে, দুটি অনুপাতের মধ্যে প্রথম অনুপাতের উত্তর রাশি ও দ্বিতীয় অনুপাতের পূর্ব রাশি পরস্পর সমান হলে, তাকে ধারাবাহিক অনুপাত বলে

আবার চিন্তা করে দেখো, ধরো তুমি বাজারে গেলে। গিয়ে তুমি ১০ টাকা দিয়ে একটি চকলেট, ২০ টাকা দিয়ে একটি কেক এবং ৩০ টাকা দিয়ে একটি আইসক্রিম কিনলে। এখানে কি হচ্ছে ভাবো তো?

তোমার কেনা চকলেট ও কেকের দামের অনুপাতটি হবে ১০:২০ অথবা ১:২। আবার তোমার কেক এবং আইসক্রিমের দামের অনুপাতটি হবে ২০:৩০ বা ২:৩। এখানে কি আমরা আমাদের বলা উদাহরণের মত ঘটনা পাচ্ছি? দেখো, এই তিনটি অনুপাত কিন্তু ধারাবাহিক অনুপাতে আছে। অর্থাৎ, তোমরা কেনা চকলেট, কেক এবং আইসক্রিমের দামের অনুপাতটি হবে ১:২:৩।

কাজ:

১. উপরে ৩য়, ৫ম ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়সের অনুপাতটি একত্রে কত হবে?

৩য় ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়স যথাক্রমে ৭ ও ১০ বছর। অপরদিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়স ১১ বছর। এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় বয়স কি ধারাবাহিক অনুপাতে রয়েছে? থাকলে ধারাবাহিক অনুপাত আকারে অনুপাতটি কত হবে?

একক কাজ:

১. অনুপাত সংক্রান্ত নিচের ছকটি পূরণ করো

অনুপাতের নাম

সম্পর্ক

উদাহরণ

সরল অনুপাত

দুইটি রাশি থাকবে

৩:৫

লঘু অনুপাত

সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি, উত্তর রাশি থেকে ছোট হলে

৫:৮

গুরু অনুপাত

 

 

একক অনুপাত

 

 

ব্যস্ত অনুপাত

 

 

বহুরাশিক অনুপাত

 

 

ধারাবাহিক অনুপাত

 

 

প্রথমেই তোমার বন্ধুর সাহায্যে বাম কাঁধ হতে বাম হাতের এবং ডান কাঁধ হতে ডান হাতের দৈর্ঘ্য মাপো। এবার তোমার নিজের উচ্চতা মাপো। তোমার প্রাপ্ত তথ্যগুলোর সাহায্যে নিচের ছক পূরণ করো।

বাম কাঁধ হতে বাম হাতের দৈর্ঘ্য (সেন্টিমিটারে)

ডান কাঁধ হতে ডান হাতের দৈর্ঘ্য (সেন্টিমিটারে)

পূর্ববর্তী দুটি কলামের যোগফল

তোমার উচ্চতা (সেন্টিমিটারে)

তোমার কাঁধ হতে দুই হাতের যোগফল এবং তোমার উচ্চতার অনুপাত

 

 

 

 

 

এখানে তুমি যে অনুপাতটি পেলে সেটি কোন ধরণের অনুপাত হল বলো তো?

বাস্তব সমস্যা সমাধানে অনুপাতের প্রয়োগ

১. ৫০০ টাকা দুইজন বন্ধুর মাঝে ২:৩ অনুপাতে ভাগ করে দিলে কে কত টাকা পাবে?

১ম বন্ধু

১ম বন্ধু

২য় বন্ধু  

২য় বন্ধু

২য় বন্ধু

অনুপাতের পূর্বরাশি ২ এবং উত্তর রাশি ৩। রাশি দুইটির সমষ্টি- ২+৩=৫।

১ম বন্ধু পাবে, ৫০০ টাকার  অংশ=৫০০ টাকা × =২০০ টাকা

২য় বন্ধু পাবে, ৫০০ টাকার  অংশ=৫০০ টাকা × =৩০০ টাকা

অনুপাতের পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশির সমষ্টি দ্বারা তাদেরকে ভাগ করে প্রত্যেকের অংশ নির্ণয় করা যায়।

২. দুইটি সংখ্যার যোগফল ৩৬০। সংখ্যা দুইটির অনুপাত ৪: ৫ হলে, সংখ্যা দুইটি নির্ণয় করো।

নিচের ফাঁকা জায়গায় অনুপাতের বাক্স অঙ্কন করো।

সংখ্যা দুইটির অনুপাত ৪: ৫

অনুপাতটির পূর্ব ও উত্তর রাশির যা যোগফল = ৪ + ৫ = ৯।

প্রথম সংখ্যাটি = ৩৬০ এর  8 অংশ 

= ৩৬০ × 8

=২০০।

নির্ণেয় সংখ্যা দুইটি হলো ১৬০ ও ২০০।

৩. কোন এক সোমবারে, তোমাদের নিকটস্থ বাজারে কেজিপ্রতি আলু ও বেগুনের দামের অনুপাত ৪:৯। আলুর দাম ২০ টাকা হলে বেগুনের দাম কত?

মঙ্গলবারে, বাজারে প্রাপ্যতার ঘাটতির জন্য বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ৫ টা বৃদ্ধি পেলে নতুন অনুপাত কত হবে?

আলুআলুআলুআলুবেগুনবেগুনবেগুনবেগুনবেগুনবেগুনবেগুনবেগুনবেগুন

অনুপাতের পূর্বরাশি ৪ এবং উত্তর রাশি ৯। রাশি দুইটির সমষ্টি- ৪+৯=১৩।

আলুর দাম ২০ টাকা। এখানে, আলুর দাম মোট দামের  অংশ। ও বেগুনের দাম মোট দামের   অংশ। 

আবার, মোট দাম ও আলুর দামের অনুপাত হবে তাহলে ১৩:৪।

তাহলে মোট দাম হবে আলুর দামের  অংশ। অতএব মোট দাম হবে ২০  টাকা  × = ৬৫ টাকা 

অতএব বেগুনের দাম হবে, ৬৫ টাকার  অংশ = ৬৫ টাকা  ×  = ৪৫ টাকা। 

বাক্স এঁকে পরবর্তী অংশটি সম্পূর্ণ করো

২. ৩০টি কমলা তিন ভাই স্বপন, তপন ও মননের মধ্যে ৫: ৩: ২ অনুপাতে ভাগ করলে প্রত্যেকের কতটি করে কমলা পাবে কত?

স্বপনস্বপনস্বপনস্বপনস্বপনতপনতপনতপনমননমনন

কমলার পরিমাণ = ৩০ টি

প্রদত্ত অনুপাত = ৫: ৩: ২। অনুপাতের সংখ্যাগুলোর যোগফল = ৫ + ৩ + ২ = ১০

স্বপন পায় = ৩০ টি কমলার   অংশ = ৩০ × = ১৫ টি 

তপন পায় = ৩০ টি কমলার অংশ = ৩০ ×  = ৯ টি 

মনন পায় = ৩০ টি কমলার  অংশ = ৩০  ×  = ৬ টি 

স্বপন, তপন ও মননের প্রাপ্ত কমলার পরিমাণ যথাক্রমে ১৫টি, ৯টি ও ৬টি।

অনুপাত সম্পর্কিত নিচের বাস্তব সমস্যাগুলি সমাধান করো:

ক্রমিক

সমস্যা

অনুপাতের বক্স

সমাধান

পিতা ও পুত্রের বয়সের অনুপাত ১৪:৩। পিতার বয়স ৫৬ বছর হলে, পুত্রের বয়স কত?

 

 

পায়েসে দুধ ও চিনির অনুপাত ৭: ২। ঐ পায়েসে চিনির পরিমাণ ৪ কেজি হলে, দুধের পরিমাণ কত?

 

 

দুইটি বইয়ের মূল্যের অনুপাত ৫:৭। দ্বিতীয়টির মূল্য ৮৪ টাকা হলে, প্রথমটির মূল্য কত?

 

 

দুইটি কম্পিউটারের দামের অনুপাত ৫: ৬। প্রথমটির দাম ২৫০০০ টাকা হলে, দ্বিতীয়টির দাম কত? মূল্য বৃদ্ধির ফলে যদি প্রথমটির দাম ৫০০০ টাকা বেড়ে যায়, তখন তাদের দামের অনুপাতটি কী ধরনের অনুপাত?

 

 

তিন বন্ধুর বাড়ি হতে স্কুলে আসা যাওয়ার সময়ের অনুপাত ২: ৩: ৪। ১ম বন্ধুর বাড়ি হতে স্কুলের স্কুলে যেতে ১৮ মিনিট লাগলে হলে, বাকি দুই বন্ধুর বাড়ি হতে স্কুলে যেতে কত সময় লাগে?

 

 

মিশ্র অনুপাত

তোমরা দেখেছো দুটি বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতার ক্ষেত্রে তুলনা করতে অনুপাত ব্যবহার করা হয়। এখন নিচের জমি দুইটির মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করো।

দেখা যাচ্ছে যে, জমি দুইটির দৈর্ঘ্য একই। কিন্তু তাদের প্রস্থের অনুপাত =  .= ১.৫ : ১। 

আবার, জমির ক্ষেত্রফলের অনুপাতও কিন্তু = .××=.=. : 

এ থেকে মনে হতে পারে প্রস্থের অনুপাত দিয়েই ক্ষেত্রফলের অনুপাত বের করা যায়। কিন্তু আসলে কি তাই?

এবার তুমি নিচের বর্গ আকৃতির জমি দুইটির মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করে দেখ।

তোমার জানা দরকার একটি অপরটির তুলনায় কতগুণ বড় বা ছোট।

জমি দুইটির দৈর্ঘ্যের অনুপাত = = ২ : ১। যদি আমরা এই অনুপাতের কথা চিন্তা করি তাহলে মনে হতে  

পারে যে, ২য় বর্গক্ষেত্রটি প্রথম বর্গক্ষেত্রের ২ গুণ। নিচের ছবি দেখে বলতো আসলেই এমন ভাবা ঠিক কিনা?

এখানে, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়েই ভিন্ন। তাই এক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়ের অনুপাত নিয়ে গুণ করলে তুলনাটা ঠিকঠাক হবে।

এখানে, জমির দৈর্ঘ্যের অনুপাত  = = ২ : ১।  এবং জমির প্রস্থের অনুপাত = = ২ : ১।

অনুপার যেহেতু একটি ভগ্নাংশ তাই দুটি অনুপাত গুণ করলে পাওয়া যাবে = ×=××== :  

তাহলে দেখা যাচ্ছে, শুধু দৈর্ঘ্য বা শুধু প্রস্থ দিয়ে তুলনা করলে কিন্তু চলবে না।

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়ের অনুপাত নিয়ে গুণ করলে জমির আকারের সঠিক অনুপাত পাওয়া যাবে।

কাজ: উপরের পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ব্যবহার করে নিচের জমি দুইটির আকার বা ক্ষেত্রফলের তুলনা করো

আচ্ছা, সরাসরি ক্ষেত্রফল নির্ণয় করে তারপর অনুপাত নির্ণয় করলেই তো হয়। তাহলে আলাদা করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত তো আর প্রয়োজন হয় না। ব্যাপারটা হলো উপরের উদাহরণগুলোতে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মান সরাসরি দেওয়া আছে। কাজেই আলাদা করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা সম্ভব। যদি শুধুমাত্র দুটি আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত দেওয়া হত তাহলে কিন্তু ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা সম্ভব হতো না। তখন অনুপাতের ধারণা কাজে লাগিয়ে সহজেই তুমি তুলনা করতে পারবে? নিচের সমস্যাটি তেমনই একটি সমস্যা। তোমরা যা শিখলে সেটা কাজে লাগিয়ে সমাধান করো:

দুইটি আয়তাকার মাঠের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ৪৪৩ এবং প্রস্থের অনুপাত ৬:১। মাঠের ক্ষেত্রফলের অনুপাত কত হবে?

এভাবে, একাধিক সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিগুলোর গুণফলকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশিগুলোর গুণফলকে উত্তর রাশি ধরে প্রাপ্ত অনুপাতকে মিশ্র অনুপাত বলে

যেমন, ২:৩ এবং ৫:৭ সরল অনুপাতগুলোর মিশ্র অনুপাত হলো=(২×৫):(৩×৭)=১০ : ২১

উদাহরণঃ

প্রদত্ত সরল অনুপাতগুলোর মিশ্র অনুপাত নির্ণয় কর: ৫ : ৭ , ৪ : ৯ , ৩ :  ২

সমাধান: অনুপাত তিনটির পূর্ব রাশিগুলোর গুণফল ৫ × ৪ × ৩ = ৬০

এবং উত্তর রাশিগুলোর গুণফল = ৭০ ৯ × ২ = ১২৬

নির্ণেয় মিশ্র অনুপাত = ৬০ : ১২৬ বা  ১০ : ২১

১) ২ : ৩ ও ৩ : ৪ অনুপাতদ্বয়ের মিশ্র অনুপাত নির্ণয় করো।

২) নিচের সরল অনুপাতগুলোকে মিশ্র অনুপাতে প্রকাশ কর:

(ক) ৩ : ৫, ৫ : ৭ ও ৭ : ৯ (খ) ৫ : ৩, ৭ : ৫ ও ৯ : ৭

৩) ত্রিমাত্রিক বস্তুর ক্ষেত্রে তুলনা করার সময় দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিনটিই বিবেচনা করতে হয়।

অর্থাৎ, আয়তনের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক বস্তুর তুলনা সুবিধাজনক হয়।

এবার ভেবে দেখতো আয়তন নির্ণয় না করেও অন্য কোন উপায়ে নিচের ছবির আয়তাকার ঘনবস্তু দুটির আয়তনের অনুপাত নির্ণয় করতে পারো কিনা?

(ক) চিত্রে রঙ করা অংশ ও সম্পূর্ণ অংশের অনুপাত   :  =  = ××==% 

(খ) চিত্রে রঙ করা অংশ ও সম্পূর্ণ অংশের অনুপাত : ==××== %

(ক) চিত্রে রঙ করা অংশ ও সম্পূর্ণ অংশের অনুপাত : = =××== %

সমস্যাঃ জেসমিন ও আবিদার বর্তমান বয়সের অনুপাত ৩:২ এবং আবিদা ও আনিকার বর্তমান বয়সের অনুপাত ৫:১। আনিকার বর্তমান বয়স ৩ বছর ৬মাস।

(ক) প্রথম অনুপাতকে শতকরায় প্রকাশ করো।

(খ) ৫ বছর পর আবিদার বয়স কত হবে?

(গ) আনিকার বর্তমান বয়স জেসমিনের বর্তমান বয়সের শতকরা কত ভাগ?

সমাধানঃ

প্রথম অনুপাত =: ==××=%=%

(খ) আবিদার বর্তমান বয়স: আনিকার বর্তমান বয়স  = ৫ : ১

অর্থাৎ, আবিদার বর্তমান বয়স, আনিকার বর্তমান বয়সের ৫ গুণ

আনিকার বর্তমান বয়স = ৩ বছর ৬ মাস

= (৩×১২ + ৬) মাস ( ১ বছর = ১২ মাস)

= (৩৬+৬) মাস

= ৪২ মাস

সুতরাং আবিদার বর্তমান বয়স = (৪২×৫) মাস

= ২১০ মাস

=বছর (১২ মাস=১বছর)

=বছর

= বছর

=  বছর 

তাহলে, ৫ বছর পর আবিদার বয়স হবে = =  +  বছর =    বছর

(গ) জেসমিন ও আবিদার বর্তমান বয়সের অনুপাত=৩:৫ 

উদাহরণ:

দুইটি রাশির যোগফল ২৪০। তাদের অনুপাত ১: ৩ হলে, রাশি দুইটি নির্ণয় করো। ১ম রাশি ২য় রাশির শতকরা কত অংশ?

সমাধান: 

রাশি দুইটির যোগফল = ২৪০

তাদের অনুপাত = ১: ৩

অনুপাতের রাশি দুইটির যোগফল = ১ + ৩ = ৪

একক কাজ:

একটি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০০ জন। বছরের শুরুতে ৫% শিক্ষার্থী নতুন ভর্তি করা হলে, বর্তমানে ঐ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত?

(ক) একটি সংখ্যার  % = ১০ হলে, সংখ্যাটি নির্ণয় করো।

(খ) প্রতি ডজন কলার বর্তমান দাম কত?

(গ) প্রতি ডজন কলা কত দামে বিক্রয় করলে ৩৩% লাভ হতো

সমানুপাত

বিদ্যালয়ের ছবি মাপি

তোমাদের বিদ্যালয়ের যে দালান/কাঠামো রয়েছে, সেটির প্রস্থ ও উচ্চতা নির্ণয় করতে হবে। প্রথমেই সেটির প্রস্থ মেপে সেটি লেখো।

এবার ভেবে দেখো তো উচ্চতা কীভাবে নির্ণয় করা যেতে পারে?

এবার তোমরা তোমাদের স্কুলের দালান/কাঠামোর একটি ছবি নিয়ে সেটির প্রস্থ ও উচ্চতা মাপো এবং নিচের ছকে লিখো।

প্রস্থ (সেন্টিমিটার) 
উচ্চতা (সেন্টিমিটার) 

এখন চিন্তা করো তো, এখান থেকে তুমি তোমাদের বিদ্যালয়ের দালান বা কাঠামোর আনুমানিক উচ্চতা কি নির্ণয় করতে পারবে?

নিজেদের মাঝে মাপামাপি

এবার তোমরা সবাই কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে নিজদের উচ্চতা ও ওজন মাপবে। প্রত্যেকের জন্য মেপে যে উচ্চতা ও ওজন পাও সেটি একটি ছকে লিপিবদ্ধ করো। এখানে তোমরা উচ্চতাটি সেন্টিমিটারে এবং ওজন কিলোগ্রাম এককে নির্ণয় করবে। এবার তোমাদের নিজেদের দলগতভাবে কাজটি হলে বাকি দলের সাথে সমন্বয় করে সকলের উচ্চতা ও ওজনের যে তথ্য পাওয়া যায় সেটি নিজেদের খাতায় লিপিবদ্ধ করো। তোমাদের শ্রেণির সকলের তথ্য লিপিবদ্ধ করা হলে, তোমরা প্রত্যেকের উচ্চতা ও ওজনের অনুপাত নির্ণয় করো

এবার, যাদের উচ্চতা ও ওজনের অনুপাত সমান অথবা কাছাকাছি, তাদের চিহ্নিত করে খাতায় গুচ্ছাকারে লিখো এবং তাদের একত্রে দলে ভাগ করে ফেলো।

তোমরা কি আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখেছো? দেখো, নিচের চিত্রগুলো আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধের।

এবার নিচের চিত্রগুলোর উচ্চতা ও প্রস্থ মেপে নিচের ছকে লিখো এবং সেগুলোর অনুপাত নির্ণয় করো।

ছবি

উচ্চতা (সেন্টিমিটার)

প্রস্থ (সেন্টিমিটার)

উচ্চতা ও প্রস্থের অনুপাত

ছবি-১

 

 

 

ছবি-২

 

 

 

ছবি-৩

 

 

 

ছবি-৪

 

 

 

চিত্রগুলো থেকে কী বুঝতে পারলে? চিত্রগুলোর অনুপাত কি সমান?

নিচের জিরাফগুলোকে কি দেখতে পারছো তোমরা? প্রথম জিরাফটির গলা ও পুরো দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত কিন্তু তোমরা মেপে দেখেছো। এবার দেখো তো বাকি জিরাফগুলোর গলা ও পুরো দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত কি সমান হয় কিনা। মেপে নিচের ছকটি পূরণ করে ফেলো।

ছবি

গলার দৈর্ঘ্য (সেন্টিমিটার)

পুরো দেহের দৈর্ঘ্য (সেন্টিমিটার)

গলা ও পুরো দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত

ছবি-১

 

 

 

ছবি-২

 

 

 

ছবি-৩

 

 

 

ছবি-৪

 

 

 

এই ছকটি থেকে তোমাদের কি মনে হয়? জিরাফগুলোর অনুপাত কি সমান?

কাজ: এবার তোমরা নিচের চিত্রগুলো দেখো, এবং তোমার খাতায় পূর্বের ন্যায় ছক একে উচ্চতা ও প্রস্থের অনুপাত

অনুপাত নির্ণয় করো।

(১) (এখানে চিত্রের ন্যায় ছবিগুলো হবে) [স্মৃতিসৌধের মত ৪ টা আমগাছের সমানুপাতিক ছবি হবে।] 

(২) (এখানে চিত্রের ন্যায় ছবিগুলো হবে) ফুটবলের ৪ টি গোলপোস্টের ছবি থাকবে। কোনটাই সমানুপাতিক না। একেকটি একেকরকম। তবে প্রতিটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অবশ্যই পূর্ণ সংখ্যা হবে। স্মৃতিসৌধের চিত্রের ন্যায় প্রস্থ ও দৈর্ঘ্য বুঝানোর জন্য তীরচিহ্ন থাকবে।

শিক্ষার্থীরা চলো আমরা একটি গল্প পড়ি।

জ্যোতি ও বিথি দুই বোন। তারা মার্বেল খেলতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু একদিন খেলার পর দেখা গেল তাদের সব মার্বেল হারিয়ে গেছে। পরেরদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দুজনেই আলাদাভাবে মার্বেল কিনলো। বাসায় এসে তারা দুজন জানতে পারলো জ্যোতি ৩০ টি মার্বেল ৫০ টাকা দিয়ে কিনেছে। অপরদিকে বিথি ২০ টি মার্বেল কিনেছে ৩০ টাকা দিয়ে। এখন চিন্তা করো তো তারা দুজনেই কি একই অনুপাতে দাম দিয়েছে কীনা?

ভেবে দেখো জ্যোতির মার্বেল ও দামের অনুপাত হয় ৩০ : ৫০ বা ৩:৫। আবার বিথির মার্বেল ও দামের অনুপাত হয় ২০: ৩০ বা ২: ৩। তাহলে দেখা যাচ্ছে দুজনের অনুপাত কিন্তু সময় নয়। তাই তারা কিন্তু একই অনুপাতে দাম দেয় নি।

কাজ: তাদের মাঝে কার মার্বেল কিনতে বেশি টাকা লেগেছে? কত টাকা দিয়ে কিনলে তার বেশি টাকা লাগত না?

এবার চলো আরেকটি গল্প নিয়ে চিন্তা করি।

মৌ এর কাছে ৩৬ টি টেনিস বল আছে, অপরদিকে সুব্রতর কাছে ১১২ টি টেবিল টেনিস বল আছে। তারা ঠিক করলো নিজেদের মাঝে টেনিস বল ও টেবিল টেনিস বল ভাগ করবে। এজন্য মৌ সুব্রতকে ১৮ টি টেনিস বল দিল অপরদিকে সুব্রত মৌকে ৫৬ টি টেবিল টেনিস বল দিল। ভেবে বলো তো দুজনের মাঝে টেনিস বল আর টেবিল টেনিস বলের সমবন্টন হয়েছে কীনা?

এখানে দেখো, মৌ এর কাছে আগে টেনিস বল ছিল ৩৬ টি এবং সে সুব্রতকে দেয় ১৮ টি। তাহলে তার সুব্রতকে দেয়া টেনিস বল সংখ্যা এবং তার প্রথমে থাকা টেনিস বল সংখ্যার অনুপাত হলো ১৮: ৩৬ বা ১ : ২।

আবার সুব্রতর কাছে আগে টেবিল টেনিস বল ছিল ১১২ টি এবং সে মৌকে দিয়ে দেয় ৫৬ টি। তাহলে তার মৌকে দেয়া টেবিল টেনিস বল সংখ্যা এবং তার প্রথমে থাকা টেবিল টেনিস বল সংখ্যার অনুপাত হলো ৫৬ : ১১২ বা ১: ২।

এখানে দেখো, আরেকটি বিষয় কিন্তু চিন্তা করা যায়। ভাগাভাগি করার পর মৌ এর কাছে থাকা টেনিস বল ও টেবিল টেনিস বল অনুপাত দেখার চেষ্টা করি। সেটি হল ১৮: ৫৬ বা ৯: ২৮। আবার সুব্রতর ক্ষেত্রে এ অনুপাতটি হয় ১৮: ৫৬ বা ৯: ২৮।

যেহেতু উভয়েই একই অনুপাতে নিজেদের মধ্যে জিনিস ভাগাভাগি করেছে এবং ভাগাভাগির পর দেখা যাচ্ছে তাদের কাছে থাকা বলগুলোর অনুপাত সমান। তাই বলা যায় দুজনের মাঝে টেনিস বল আর টেবিল টেনিস বলের সমবন্টন হয়েছে।

কাজ: উপরে দেখা যাচ্ছে মৌ ১৮ টি টেনিস বল আর সুব্রত ৫৬ টি টেবিল টেনিস বল দেয়া সমবন্টন হয়েছে। মৌ আর সুব্রত ভিন্ন কোন পরিমাণে নিজেদের মধ্যে টেনিস বল আর টেবিল টেনিস বল আদান-প্রদান করে সমবন্টন করতে পারত কীনা ভেবে দেখো।

তিনটি বিদ্যালয়ের আমগাছ থেকে আম পাড়ার পর প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের আম দেয়া হয়েছে। নিম্নোক্ত উপায়ে সেই আমগুলো দেয়া হয়েছে।

৩য় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভিত্তিতে আম এমনভাবে পরিবর্তন করে নিচের ছক পূরণ করো যেন ১ম ও ৩য় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিভেদে সমান আম পায়ঃ

২য় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত আমের তথ্য অপরিবর্তিত রেখে ১ম ও ৩য় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভিত্তিক প্রাপ্ত আমসংখ্যা এমনভাবে পরিবর্তন করে নিচের ছক পূরণ করো যেন ১ম ও ৩য় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিভেদে সমান আম পায়

আমাদের জাতীয় পতাকা তৈরি করি

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, চলো এবার আমরা আমাদের দেশের পতাকা সম্পর্কে জানি এবং একটি মজার কাজ করি। তোমরা সকলেই বাংলাদেশের পতাকা চেনো। নিচের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের পতাকার যে আকৃতি হয়, তা আংশিকভাবে দেয়া রয়েছে। তোমরা এবার সেটি পূরণ করার চেষ্টা করো।

এটি মূলত আমাদের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত। এখন চিন্তা করো এই লাল বৃত্তটির কেন্দ্র কোথায় হবে?

এক্ষেত্রে নিয়মটি হল, বাম দিক থেকে পতাকার মোট দৈর্ঘ্যের ২০ ভাগের ৯ ভাগ বা   অংশ থেকে লম্বালম্বি বা প্রস্থ বরাবর একটি দাগ টানতে হবে। এবার পতাকার প্রস্থের অর্ধেক বা   অংশ থেকে পাশাপাশি বা দৈর্ঘ্য বরাবর একটি দাগ টানতে হবে। এই দুটি দাগ যে বিন্দুতে গিয়ে মিলেছে, সেটিই হল বৃত্তটির কেন্দ্রবিন্দু। সেই বিন্দুটিকে কেন্দ্র ধরে বৃত্তটি অঙ্কন করতে হবে।

এবার তাহলে তোমার উপরে সম্পূর্ণ করে আসা ছকের সাহায্য নিয়ে নিচের ছকটি সম্পূর্ণ করো। তোমাদের সুবিধার্থে ছকটির একটি সারি পূরণ করে দেয়া রয়েছে।

দলগত কাজ: তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে ৩, ৪, ৫ নং আকারে কাগজ কেটে জাতীয় পতাকার ন্যায় আয়তাকৃতিক কাগজ কাটো। তারপর পতাকার লাল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু নির্ণয় করো। এরপর নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধে বৃত্তটি অঙ্কন করো। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় রঙ ব্যবহার করে পতাকা বানানোর কাজটি সম্পন্ন করো।

এবার তোমাদের বানানো পতাকা তিনটি পাশাপাশি একটি টেবিল/বেঞ্চের উপর রাখো। পতাকাগুলো দেখে কি মনে হচ্ছে? সবগুলোর গড়ন কি একইরকম লাগছে?

এবার নিজেদের খাতায় উপরের ছকে পাওয়া পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাতগুলোকে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে লেখো। লিখে দেখো যে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত একই হয় কিনা।

উপরের কর্মকান্ড হতে আমরা কী শিখলাম?

যদি দুই বা ততোধিক অনুপাত সমান হয় তবে সেই সকল সমান অনুপাতকে পরস্পরের সাপেক্ষে সমানুপাত বলা হয়।

দুইটি অনুপাত সমান হলে অর্থাৎ, সমানুপাত আকারে থাকলে সেই অনুপাত দুটির ১ম ও ৪র্থ পদকে প্রান্তীয় পদ বলা হয় এবং ২য় ও ৩য় পদকে মধ্যপদ বলা হয়। অর্থাৎ, প্রথম অনুপাতের পূর্ব পদ এবং ২য় অনুপাতের উত্তর পদ হল প্রান্তীয় পদ এবং ১ম অনুপাতের উত্তর পদ ও ২য় অনুপাতের পূর্ব পদ হল মধ্য পদ।

চিত্র ও বক্সের মাধ্যমে দুটি অনুপাত দেখিয়ে প্রান্তীয় ও মধ্যপদ দেখাতে হবে।

সমানুপাতকে সাধারণত = চিহ্ন এর বদলে :: চিহ্ন, অথবা ০০ চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

যেমন ধরো, দুটি অনুপাত রয়েছে ১২: ১৬ ও ৪৫: ৬০।

এক্ষেত্রে অনুপাত দুটিকে লঘু করা হলে আমরা পাই = এবং= 

অর্থাৎ, বলা যায় এ দুটি রাশি সমানুপাতে আছে। তাহলে লেখা যায়, ১২: ১৬ :: ৪৫: ৬০

অথবা,  ×  

ত্রৈরাশিকের গল্প

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সড়কপথের আনুমানিক দুরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। একটি বাস সকাল সকাল ৯ টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ২ টায় চট্টগ্রাম পৌছে। প্রতি ঘণ্টায় বাসটি ঢাকা থেকে কতদূর অতিক্রম করে সেটির একটি ছক নিম্নে দেয়া আছে। উল্লেখ্য যে প্রতি ঘণ্টায় বাসটির অতিক্রান্ত দুরত্ব, সময়ের সাপেক্ষে সমানুপাতিক। তোমরা ছকটি দেখো।

সময় (ঘণ্টায়)

দুরত্ব (কিলোমিটারে

৫০

 

১৫০

 

২৫০

এখন দেখো, বাসটি ২ ঘণ্টা শেষে কতদূর অতিক্রম করতে পারে, সেটি আমাদের অজানা। সেটি ৫০ থেকে ১৫০ এর মাঝে যেকোনো কিছু হতে পারে। কিন্তু উপরে দেখো, বলা আছে প্রতি ঘণ্টায় বাসটির অতিক্রান্ত দুরত্ব সময়ের সাপেক্ষে সমানুপাতিক। অর্থাৎ, যদি সময় ও দুরত্বের অনুপাত নেয়া হয়ে, তাহলে প্রতি ঘণ্টায় এটি সমান হবে। তাহলে এখন দেখা যাক বাসটি প্রথম ঘণ্টায় অতিক্রম করে ৫০ কিলোমিটার। অর্থাৎ, সময় ও দুরত্বের অনুপাত হল ১:৫০। এখন আমরা ২ ঘণ্টা শেষে অতিক্রান্ত দুরত্ব কত, সেটি নির্ণয় করতে চাই। ধরে নিই, ২য় ঘণ্টা শেষে অতিক্রান্ত দুরত্ব হল ক। তাহলে অনুপাতটি হবে ২:ক। এখন দেখো বলা আছে অনুপাত দুটি সমানুপাতে আছে। অর্থাৎ সমান।

তাহলে আমরা বলতে পারব, ১ : ৫০ = ২ : ক

এখান থেকে ভগ্নাংশ আকারে আমরা পাই =

এখান থেকে আমরা পাই, ১০ × ক = ২ × ৫০

অর্থাৎ, ক = ১০০।

এখন, দেখো তো আমরা যখন ১০ × ক = ২ × ৫০ আকারের গুণটি করেছি, আমরা আসলে কি করেছি? একটি নিচে দেখো। যদি আমরা ধরি কঃখ এবং গঃঘ সমানুপাতে রয়েছে, তাহলে আমরা বলতে পারি ক : খ = গ : ঘ

ভগ্নাংশ আকারে আমরা পাই  = এবং পূর্বের উদাহরণের মত গুণ করলে পাই ক × ঘ = গ × খ।  

এখন সমানুপাত থেকে আমরা কি শিখেছি, এই সমানুপাতে ক হল ১ম রাশি, খ হল ২য় রাশি, গ হল ৩য় রাশি এবং ঘ হল ৪র্থ রাশি।

অর্থাৎ, যেকোনো সমানুপাতে ১ম রাশি × ৪র্থ রাশি ২য় রাশি × ৩য় রাশি 

এখন আমরা ২য় ঘন্টা শেষে বাসটির অতিক্রান্ত দুরত্বে নির্ণয় করার সময় দেখো, ৪র্থ রাশি ব্যতীত, বাকি ৩ টি রাশির মানই জানতাম। পরে সেই ৩ টি মানের সাহায্যে আমরা ৪র্থ রাশির মান নির্ণয় করেছি

এবার নিচের বিষয়টি লক্ষ্য করো। তোমাকে বলা হয়েছে, কোন সমানুপাতের ১ম, ৩য় ও ৪র্থ রাশি যথাক্রমে ১৪, ৭ ও ২২ হয়। তাহলে ২য় পদটি নির্ণয় করতে হবে।

এখন আমরা ধরি ২য় পদটি হল ক। তাহলে, পূর্বে শিখে আসা ধারণা থেকে আমরা বলতে পারব, সমানুপাতটি হল ১৪ : ক = ৭ : ২২।

অর্থাৎ, ১৪ × ২২ = ৭×ক 

অথবা,  = ×=

অর্থাৎ, এই সমানুপাতে ২য় রাশি হল ৪৪।

এখান থেকে কি বোঝা যায় বলো তো? কোন সমানুপাতে যদি ১ম রাশি, ২য় রাশি, ৩য় রাশি এবং ৪র্থ রাশির মাঝে যেকোনো তিনটি রাশি জানা থাকে তাহলে আমরা অজানা রাশিটি নির্ণয় করতে পারব।

এভাবে সমানুপাতের তিনটি রাশি জানা থাকলে অজানা রাশিটি নির্ণয় করার পদ্ধতিকে ত্রৈরাশিক বলে

কাজ: 

১) ছকে ৪র্থ ঘণ্টা শেষে বাসটির অতিক্রান্ত দুরত্ব নির্ণয় করো 

২) কোন সমানুপাতের ১ম, ২য় ও ৪র্থ রাশি যথাক্রমে ৯, ১৮ ও ২০ হলে ৩য় রাশিটি কত হবে? 

৩) রানার কাছে ৪ টি পেন্সিল এবং ৫ টি কলম রয়েছে। অপরদিকে সজীবের কাছে ১০ টি কলম রয়েছে। এখন যদি রানা ও সজীবের পেন্সিল কলমের অনুপাত সমানুপাত হয়, তাহলে সজিবের কাছে কতটি পেন্সিল রয়েছে? 

৪) ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গাড়ির রেসে কয়েকটি গাড়ি অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে যে গাড়িটি রেসে বিজয়ী হয় সেই গাড়ির ১০ মিনিট পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে অতিক্রান্ত দুরত্বের তথ্য দেয়া রয়েছে। এখানে মজার ব্যাপার হল, সেই গাড়িটি সবসময় একই গতি ধরে দুরত্ব অতিক্রম করেছে। এখন তুমি নিচের আংশিক

পূর্ণ ছকটি দেখো এবং সমানুপাতের ধারণা ব্যবহার করে সম্পূর্ণ করো।

সময় (মিনিট)  ১০
অতিক্রান্ত দুরত্ব (কিলোমিটার)   ১২১৪১৬১৮ 

ক্রমিক অনুপাত:

এবার চলো আমরা উপরে রেসিং কারের ছকটি দেখি। এখানে দেখো ১ম মিনিট শেষে গাড়িটি ২ কিলোমিটার অতিক্রম করে এবং দ্বিতীয় কিলোমিটার শেষে গাড়িটি ৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে। এখন চিন্তা করো, মিনিট ও অতিক্রান্ত দুরত্বের সাপেক্ষে অনুপাত দুটি কি হচ্ছে?

১ম মিনিটের জন্য অনুপাতটি ১: ২ এবং ২য় মিনিটে অনুপাতটি ২:৪। এখানে দেখো, এই অনুপাতে মধ্যপদ দুটি কিন্তু একই। তা হল ২। আমরা চিন্তা করলে একটি ক্রমের মত পাই। এরকম সমানুপাতকে ক্রমিক সমানুপাত বলা হয়।

যে সমানুপাতে, অনুপাতের মধ্যপদ দুটি সমান হয়, সেই সমানুপাতটিকে ক্রমিক সমানুপাত বলা হয়।

 

এবার নিচের উদাহরণটি দেখি। মিশু, আদিত্য ও সবর্না মার্বেল ছোঁড়ার একটি প্রতিযোগিতা করছে। সেখানে তাদের ছোড়া মার্বে যথাক্রমে ৩৫, ২৮ ও ৪৩ মিটার দূরে পৌছালো। এখন মিশু ও সবর্নার মার্বেলের অতিক্রান্ত দুরত্বের অনুপাত ৩৫: ৪৩। আবার সবর্না ও আদিত্যর মার্বেলের অতিক্রান্ত দুরত্বের অনুপাত ৪৩: ২৮। অর্থাৎ এই তিনটি রাশি থেকে ৩৫ ৪৩ ও ৪৩: ২৮ এই দুইটি অনুপাত নেওযা যায়। এখানে, ৩৫: ৪৩ :: ৪৩: ২৮ এ ধরনের সমানুপাতকে ক্রমিক সমানুপাত বলে। অতিক্রান্ত ৩৫, ৪৩ ও ২৮ মিটার, এই রাশি তিনটিকে ক্রমিক সমানুপাতী বলে

আরও একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ক, খ, গ ক্রমিক সমানুপাতী হলে = বা ক×গ=(খ) হবে।

ক্রমিক অনুপাতের ক্ষেত্রে ১ম ও ৩য় রাশির গুণফল ২য় রাশির বর্গের সমান এবং ২য় রাশিকে ১ম ও ৩য রাশির মধ্য সমানুপাতী বা মধ্য রাশি বলে

একক কাজ:

একটি ক্রমিক সমানুপাতের ১ম ও ৩য় রাশি যথাক্রমে ৪ ও ১৬ হলে, মধ্য সমানুপাতী ও ক্রমিক সমানুপাত নির্ণয় করো

Content added By
Content updated By

আরও দেখুন...

Promotion