আইপিএস এর মৌলিক ধারণা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস-২ - জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস-২ | | NCTB BOOK

আইপিএস (IPS) এর পূর্ণ রূপ হলো 'Instant Power Supply'. কোন কারণে মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইপিএস এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া যায়। এতে স্বয়ংক্রিয় সুইচ থাকে, যার কন্টাক্ট-এর পরিবর্তনে লোড বিদ্যুৎ সাপ্লাই পায় ।

IPS এর প্রধান দুইটি অংশ সঞ্চয়ী ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিট। ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিটটি ইনভার্টার ও কনভাটার উত্তর কাজই করে এবং একই ইউনিটের মধ্যে থাকে। এসি সাপ্লাইকে ভিসিতে রূপান্তর এবং ব্যাটারি চার্জ করে বিদ্যুৎ সঞ্চিত রাখে। গ্রীড এর বিদ্যুৎ বন্ধ হলে ব্যাটারিতে সঞ্চিত ডিসি বিদ্যুৎকে এসিতে রূপান্তর করে স্বয়ংক্রিয় সুইচ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে লোডে সরবরাহ করে।

চিত্র : ১.১ আইপিএস 

গ্রীডে বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় আইপিএস হয়ে সরাসরি লোডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে এবং আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জ হয়। আইপিএস এর ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে ইহার রেটিং ওয়াট, কিলোওয়াট বা কেভিএ- তে লেখা হয় । বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা নির্ভর করে, ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতার উপর। আইপিএস এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি, সাধারনত ১২ ভোট, ২৪ ভোট, ৪৮ ভোল্ট এর লিড এসিড ব্যাটারি বা জেল/ড্রাই পিড এসিড ব্যাটারির সিস্টেম থাকে। বর্তমানে আইপিএস ব্যাপকভাবে বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা, প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক লোডে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আইপিএল মেইন সরবরাহ থেকে ব্যাটারি বা ব্যাটারি থেকে মেইন সরবরাহে যেতে সুইচিং টাইম প্রায় ৫০০ মিলি সেঃ। বর্তমানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জ করে পরিচালনা করা যায়। যাকে সোলার আইপিএস বলে। এই ধরনের আইপিএস তিন প্রকার:১) অফ-গ্রীড সোলার আইপিএস 2 ) অ-ব্রীড সোলার আইপিএস ৩) অন-অফ গ্রীড আইপিএস বা হাইব্রিড আইপিএস।

আইপিএস এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর আউটপুট। বাজারে দুই ধরনের আটপুট প্রদানকারী আইপিএস পাওয়া যায়:- মডিফাই সাইন ওয়েভ এবং পিউর সাইন ওয়েভ। মডিফাই সাইন ওয়েভ ইন্ডাকটিভ লোডের জন্য ক্ষতিকর।

চিত্র: ১.২ আইপিএস এর কানেকশন ডায়াগ্রাম 
চিত্র- ১.৩ ব্রিজ রেক্টিফায়ার

১.১.২ আইপিএস এর বিভিন্ন অংশ

আইপিএস এ ব্যবহৃত বিভিন্ন অংশসমূহ নিম্নরূপ- ১। রেকটিফায়ার (কনভার্টার) ২। ব্যাটারি ৩। ইনভার্টার ৪। বিশেষ সুইচ ও ৫। বৈদ্যুতিক লোড এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে দেয়া হলো:

১। রেকটিফায়ার: আমাদের দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মূলত এসি। বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কিছু ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস ইত্যাদি পরিচালনার জন্য এবং আইপিএস, ইউপিএস এর সঞ্চয়ী সেলে বিদ্যুৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তি রূপে জমা রাখতে ডিসি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমাদের দেশে ডিসি সরবরাহ নাই (বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতিত) সেহেতু এসি সরবরাহ থেকে ডিসি তে রূপান্তর করা প্রয়োজন, এ কাজ করতে যে ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তা হলো রেকটিফায়ার। অর্থাৎ যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস অল্টারনেটিং কারেন্টকে ডাইরেক্ট কারেন্টে রূপান্তরিত করে তাকে রেকটিফায়ার বলা হয়। সাধারণত রেকটিফায়ার তৈরিতে সেমিকন্ডাক্টর ডায়োড ব্যবহার করা হয়। রেকটিফায়ার দুই প্রকার। যথা- হাফ ওয়েভ ও ফুল ওয়েভ রেকটিফায়ার। ফুল ওয়েভ রেকটিফায়ার দুই প্রকার (১) সেন্টার টেপ রেকটিফায়ার (২) ব্রিজ রেকটিফায়ার। (চিত্র ১.৩ এ ব্রিজ রেকটিফায়ার দেখানো হয়েছে) আইপিএস ও ইউপিএস এ বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখতে রেকটিফায়ার ব্যবহার করা হয়। রেকটিফায়ার এর আউট পুট থেকে যে ডিসি পাওয়া যায় তা বিশুদ্ধ ডিসি নয়। একে পালসেটিং ডিসি বলা হয়। এ পালসেটিং ডিসিকে ফিল্টারের সাহায্যে পিউর ডিসিতে রূপান্তরিত করা হয়।

ফিল্টার (Filter) রেকটিফায়ারের আউটপুটে যে ডিসি পাওয়া যায় তা এসি মিশ্রিত ভেজাল যুক্ত। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাঁটি ডিসি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। ফিল্টার সার্কিটের সাহায্যে অপ্রয়োজনীয় সিগনালকে বাদ দেয়া হয়। এই অপ্রয়োজনীয় বা ভেজাল অংশ বাদ দেয়াকে ফিল্টারিং বলে। ফিল্টার সার্কিট পাঁচ প্রকার। যথা- (১) প্যারালাল বা শান্ট ক্যাপাসিটর ফিল্টার (২) সিরিজ ইন্ডাক্টর ফিল্টার(৩) এলসি ফিল্টার(৪) আরসি ফিল্টার ও (৫) পাই ফিল্টার।

চিত্র- ১.৪ ক্যাপাসিটর ইনপুট ফিল্টার বা পাই ফিল্ট ফিল্টার

 

২। ব্যাটারি (Battery)

স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সিস্টেম (আইপিএস ও ইউপিএস) বিদ্যুৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখে। নর্মাল বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলে জরুরি প্রয়োজনের সময় ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এ কাজে সচরাচর লিড এসিড ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক মোডে যখন লাইন ভোল্টেজ উপস্থিত থাকে, ব্যাটারিগুলো তখন চার্জ হতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে সামান্য ডিসচার্জ হয়। ব্যাটারি অবিরতভাবে সামান্য পরিমাণ কারেন্ট গ্রহণ করে, ফলে ব্যাটারি পূর্ণ চার্জিত অবস্থানে থাকে। পাওয়ার সরবরাহ বন্ধ হলে ব্যাটারি হতে পাওয়ার ইনভার্টারের মাধ্যমে ডিসি থেকে এসি তে রূপান্তরিত হয়ে লোডে সরবরাহ হয়। ব্যাটারিতে কতকগুলো ইলেকট্রোকেমিক্যাল সেল বা কোষ থাকে যার একটির সাথে অন্যটি সিরিজে বা প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির সেল হল ব্যাটারির মূল উপাদান এবং এই সেল রাসয়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ব্যাটারি ব্যাংক হলো অনেকগুলো ব্যাটারির সমষ্টি। এই ব্যাটারিগুলো সিরিজ বা প্যারালালে সংযোগ করা যায়। ভোল্টেজ বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় এবং কারেন্ট বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে প্যারালালে সংযোগ দিতে হয়। চিত্র ১.৫ এ ব্যাটারি ব্যাংক দেখানো হলো ।

চিত্র-১.৫ ব্যাটারী ব্যাংক

৩। ইনভার্টার: ইনভার্টার ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত করতে ব্যবহার করা হয়। ইনভার্টারের আউটপুটে খুব অল্প পরিমাণ হারমোনিক ডিসটরশন থাকে। আধুনিক ইউপিএস/আইপিএস এ সচরাচর PWM (Pulse Width Modulated) ইনভার্টার ব্যবহার করা হয়। এ ইনভার্টার সিঙ্গেল ফেজ বা থ্রি-ফেজ হতে পারে। ইউপিএস ও আইপিএস ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। আমরা বাসাবাড়িতে সাধারণত এসি লোড ব্যবহার করি ফলে ব্যাটারিতে সঞ্চিত এই ডিসি কারেন্টকে এসিতে কনভার্ট করতে হয়। ইনভার্টারের সাহায্যে এই ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত (Convert) করা হয়।

৪। স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ

এই ধরনের সুইচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোডকে ইউপিএস এর সাথে যুক্ত বা বিচ্ছিন্ন করে। সাধারণ মোডে লাইন থেকে লোডে পাওয়ার সরবরাহ দেয়। যখন পাওয়ার বন্ধ হয় তখন স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ লোডকে ইউপিএস এ ট্রান্সফার করে। এ ব্যবস্থাপনাকে Standby Power Supply বলে।

৫। লোড (Load)

ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইসকে ব্যাটারির বা পাওয়ার সাপ্লাইযের সাথে যুক্ত করলে যন্ত্রটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এগুলোকে লোড বলে। অর্থাৎ যা ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎশক্তি কনজিউম করে তাকে লোডবলে। লোড সাধারণত দুইধরণের: এসি লোড ও ডিসি লোড। আবার লোডের ধরনের উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক লোডকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-

১। রেজিস্টিভ লোড (Resistive Load)

বাতির ফিলামেন্ট, স্থির রেজিস্ট্যান্স, পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স, সোল্ডারিং আয়রন, থার্মাল ওভার লোড রিলে ইত্যাদি ।

২। ইন্ডাকটিভ লোড (Inductive Load )

চোক কয়েল, ফ্যান, মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।

৩। ক্যাপাসিটিভ লোড (Capacity Load )

ক্যাপাসিটর বা কনডেন্সার, ক্যাপাসিটর ব্যাংক, সিনক্রোনাস মোটর ও ফেজ অ্যাডভানসার ইত্যাদি।

১.১.৩. আইপিএস এর বৈশিষ্ট্য

কোন সিস্টেমে আইপিএস সংযোগ থাকা অবস্থায় মূল বিদ্যুৎ সাপ্লাই সরাসরি লোডে কাজ করে এবং একই সাথে আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জও হয়। এর ক্ষমতা মূলত ব্যাটারির ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এর রেটিং ওয়াট, কিলোওয়াট বা কেভিএ তে লেখা হয়।

১.১.৪ আইপিএস এর কাজ

আইপিএস এর ইউনিটের মধ্যে ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিট, ইনভার্টার ও কনভার্টার থাকে। এটি এসি কে পূর্ণ ডিসিতে রূপান্তরিত করে ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ জমা রাখে এবং বিদ্যুৎ উৎস বন্ধ হলে স্বয়ংক্রিয় সুইচের পরিবর্তনে ব্যাটারিতে জমাকৃত বা সঞ্চিত বিদ্যুৎ পুনরায় এসিতে রূপান্তর করে লোডে সাপ্লাই দেয় ।

১.১.৫ আইপিএস এর ব্যবহার

আজকাল ব্যাপকভাবে আইপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। বাসা বাড়িতে ফ্যান, লাইট, টিভি ইত্যাদি চালাতে এবং অফিস কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য আইপিএস ব্যবহার হয়। আইপিএস এর সুইচিং টাইম ১ সেকেন্ড ফলে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস রিসেট বা পুনরায় আরম্ভ হয়। আইপিএস কে হোম ইউপিএস বা ইপিএসও বলা হয়।

Content added || updated By
Promotion