ইমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো, আল্লাহর ওপর ইমান বা বিশ্বাস। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ছিলেন, তিনি আছেন ও তিনি থাকবেন। তিনি আমাদের রব, মালিক ও সৃষ্টিকর্তা। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই ঘটে না। তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনন্ত। তিনি পরম সুন্দর ও পরম পবিত্র। তাঁকে ক্লান্তি, তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। তিনি কোনো কিছুর উপর নির্ভরশীল নন। সবকিছুই তাঁর উপর নির্ভরশীল। কোনো কিছুই তাঁর মতো নয়। এ পৃথিবীতে চর্ম চোখে তাঁকে দেখা সম্ভব নয়। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুই তাঁর। প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছুই নাই। তিনি যাকে যতটুকু ইচ্ছে জ্ঞান দান করেন। তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্ব তাঁরই। তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন। তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে আছে। সকল কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনিই জীবন দেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। আর তাঁরই কাছে সকলকে ফিরে যেতে হবে। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। যখন তিনি কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন শুধু বলেন ‘কুন’ (হও) আর অমনি তা হয়ে যায়। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি আকাশমণ্ডলীর রব, পৃথিবীর রব ও সকল সৃষ্টির রব। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব ও মহিমা তাঁরই জন্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, সর্বোচ্চ ও সুমহান।
আল্লাহর ওপর ইমান আনার অর্থ হলো, তাঁর অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। কোনো সন্দেহ সংশয় ছাড়া এ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, তিনি একমাত্র প্রতিপালক (রব), তিনি একমাত্র উপাস্য (মা‘বুদ)। তাঁর অনেক সুন্দর নাম ও সিফাত বা গুণ রয়েছে । আল্লাহর ওপর ইমান আনার গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় বিষয় নিম্নরূপ:
আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ইমান আনা
ইসলামি শরিয়তের অসংখ্য দলিল আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করে। মানুষের বিবেক-বুদ্ধিও দ্বিধাহীনভাবে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ সাব্যস্ত করে। প্রতিটি সৃষ্টিই স্বপ্রণোদিতভাবে তার স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসী।
কোনো সৃষ্টিই নিজে নিজেকে অস্তিত্ব দান করতে পারে না। আপনাআপনি কোনো কিছু হয়ে যাওয়া অবাস্তব । অবশ্যই একজন অস্তিত্বদানকারী আছেন। আর তিনি হলেন আল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
অর্থ: ‘তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা?” (সূরা আত-তূর, আয়াত : ৩৫)
আল্লাহর কর্তৃত্বে বিশ্বাস স্থাপন
এ বিশ্বাসে অটল থাকতে হবে যে, আল্লাহ তা'আলাই একমাত্র রব, একমাত্র প্রতিপালক। এ মহাবিশ্ব পরিচালনায় তাঁর আর কোনো অংশীদার বা সহযোগী নেই। রব বলা হয় তাঁকেই যিনি সৃষ্টি করেন, পরিচালনা করেন এবং মালিকানা যার জন্য। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো স্রষ্টা নেই। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মালিক নেই। তিনি ছাড়া আর কোনো বিশ্ব পরিচালকও নেই। তিনিই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিন হতে বান্দার জন্য রিজিক প্রদান করেন। অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না কেবল যাকে যতটুকু জ্ঞান দেওয়া হয়, সে ততটুকুই জানে।
আল্লাহই একমাত্র উপাস্য হওয়ায় বিশ্বাস স্থাপন
মনে-প্রাণে এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে,আল্লাহই একমাত্র সত্য উপাস্য। তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয়। উপাসনা প্রাপ্তিতে আর কেউ তাঁর অংশীদার নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই, ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীগণও; (একই সাক্ষ্য দেন) তিনি (আল্লাহ) ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নবি-রাসুলের দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল একটিই—‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই অথবা কেউ উপাসনার যোগ্য নেই।’
আল্লাহর সুন্দর নাম ও সিফাতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন
আল্লাহ তা'আলার ওপর ইমানের আরও দাবি হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নিজের জন্য তাঁর কিতাবে বা তাঁর রাসুলের সুন্নতে সুন্নাহ্'য় যে সমস্ত উপযুক্ত সুন্দর নাম ও সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, সেগুলোকে নিঃসংকোচে মেনে নেওয়া। তাই আমরা আল্লাহর জন্য কেবলমাত্র সেই সব নাম ও সিফাত বা গুণ সাব্যস্ত করব, যা তিনি এবং তাঁর রাসুল (সা.) সাব্যস্ত করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর যে সমস্ত সিফাত বা গুণ বর্ণিত হয়েছে, আমরা তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
আল-আসমাউল হুসনা
আল্লাহ তা'আলার পরিচয় বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। তিনি সকল গুণের আধার। এমন কোনো উত্তম গুণ নেই যা তাঁর মাঝে নেই। তিনি যেমন অসীম তেমনি তাঁর গুণাবলিও অসীম। তাঁর প্রতিটি গুণের মহিমাজ্ঞাপক পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। এগুলো তাঁর গুণবাচক নাম। আল কুরআনে এগুলোকে ‘আল-আসমাউল হুসনা' বা সুন্দরতম নামসমূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন –
অর্থ: ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। কাজেই তোমরা তাঁকে সে নাম ধরেই ডাকো।' (সূরা আল- আ'রাফ, আয়াত: ১৮০)
আমরা আল্লাহর নামের মহিমা, পবিত্রতা ও প্রশংসাজ্ঞাপক নিরানব্বইটি আসমাউল হুসনা বা গুণবাচক নামের কথা জানি। আসলে আল্লাহর গুণবাচক নামের কোনো শেষ নেই। তবে তাঁর এ নিরানব্বইটি নাম বেশি প্রসিদ্ধ। আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাঁর এসব পবিত্র নামের উল্লেখ রয়েছে। এসব নাম থেকে আমরা তাঁর পরিচয় ও গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পারি।
আগের শ্রেণিতে আমরা আল্লাহর কয়েকটি গুণবাচক নামের পরিচয় জেনেছি। তারই ধারাবাহিকতায় এ শ্রেণিতে আমরা তাঁর আরও কয়েকটি গুণবাচক নাম সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিত জানব। তাহলে শুরু করা যাক।
আল্লাহু খালিকুন
খালিকুন অর্থ সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা। এ জন্য তিনি আল খালিক নাম ধারণ করেন। এ নামটি খালকুন ধাতু হতে উদ্ভুত, যার অর্থ উৎপাদন করা, তৈরি করা, সৃষ্টি করা। খালিক তিনি, যিনি কোনো পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকে যখন ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন। এ অর্থেই আল্লাহ খালিক। আল্লাহর গুণাবলির মধ্যে সৃষ্টিগুণ থাকা এক বিশেষ রহস্য। তিনিই অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দেন বা সৃষ্টি করেন। এ ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। আমাদের জীবনসহ আমরা আমাদের চারিদিকে তাকালে যেসব সৃষ্টি দেখতে পাই এগুলো তাঁর খালিক নামের মহিমার ফসল। আল্লাহর সকল সৃষ্টি অতি সুন্দর ও সুনিপুণ। তাঁর সৃষ্টিতে কোনো খুঁত বা ত্রুটি নেই। তাঁর সৃষ্টিজীবের মধ্যে মানুষকে তিনি সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন-
অর্থ: ‘যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দরভাবে সৃজন করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।' (সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ৭)
জীবের সৃষ্টি উপাদান ও মহান আল্লাহর সৃষ্টির সক্ষমতা প্রসঙ্গে আল-কুরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।’ (সূরা আন-নূর, আয়াত : ৪৫)
আমরা মহান আল্লাহর খালিক নামের এসব তাৎপর্য উপলব্ধি করে তাঁকে এ নামে ডাকব এবং বিশ্বাস রাখব যে, কেবল আল্লাহই খালিক। তিনি যখন যা ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন। জীবনের ন্যায় মৃত্যুরও স্রষ্টা তিনিই।
আল্লাহু মালিকুন
মহান আল্লাহর আরেকটি সুন্দর নাম আল-মালিক। মালিক অর্থ অধিপতি, স্বত্বাধিকারী, সর্বাধিকারী, রাজাধিরাজ, বাদশাহ ইত্যাদি। এটি আল্লাহর এমন একটি গুণবাচক নাম যার মাঝে আসমাউল হুসনার অন্যান্য অনেক নামের মাহাত্ম্য বিদ্যমান। এই যে বিশাল পৃথিবী, যেখানে আছে নদীনালা, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত। আরও আছে জানা- অজানা ছোট-বড় অসংখ্য জীবজন্তু,পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, গাছ-গাছালি, ফুল, ফল, ফসল এবং আরও কত কী। আমাদের মাথার ওপর অনন্ত আকাশে আছে চন্দ্র, সূর্য, অগণিত গ্রহ-উপগ্রহ ও নক্ষত্র। আকারে এ নক্ষত্রগুলো আবার পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড়। আরও আছে আমাদের অজানা কত রহস্য জগত। বিশাল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা, পরিচালক ও একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ। সব কিছু তাঁর নির্দেশে পরিচালিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থ: ‘নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডল এবং এতোদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর উপর আল্লাহ তা'আলার আধিপত্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর মহাশক্তিমান।' (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১৭)
তিনিই আদেশদাতা ও নিষেধকারী। তিনিই আমাদের এবং সকল জীবের জীবনের মালিক। তিনিই মৃত্যু, কিয়ামত, আখিরাত, বিচার দিবস, জান্নাত ও জাহান্নামের মালিক। সব কিছু তাঁর কাছেই আত্মসমর্পন করে। এককথায়, তিনিই সব কিছুর মালিক।
আল্লাহু মালিকুন-এ কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করে আমরা আল্লাহকে এ নামে ডাকব। তাহলে আল্লাহর ওপর আমাদের ইমান আরো দৃঢ় হবে। সকল সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক যেহেতু মহান আল্লাহ, তাই দুনিয়াতে আমরা এসব নিয়ে কখনোই বড়াই করব না। বরং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব।
আল্লাহু গাফুরুন
গাফুরুন শব্দের অর্থ হলো ক্ষমাশীল, অত্যন্ত ক্ষমাকারী, পরম ক্ষমাশীল ইত্যাদি। তাই ‘আল্লাহু গাফুরুন' কথাটির অর্থ হলো, আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল। আল-গাফুর আল্লাহ তা'আলার একটি পবিত্র নাম। এ নামের বরকতে তিনি পাপীর পাপ মোচন করে দেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
অর্থ: ‘যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী এবং কঠোর শাস্তিদাতা ও শক্তিশালী।' (সূরা মু'মিন, আয়াত : ৩)
নিঃসন্দেহে আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল। সব কিছুর মালিক হিসেবে তিনি আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করারও মালিক। তিনি ছাড়া আমাদের গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই। পাপীর ক্ষমা চাওয়ার কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদের পাপসমূহ এমনভাবে ক্ষমা করে দেন যে তা আমলনামা থেকে মুছে যায়। গাফুর অর্থ মোচনকারী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না । আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।' (সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩)
মহান আল্লাহ এমন মহা ক্ষমাশীল যে, বান্দার পাপরাশি যত বেশিই হোক না কেন, বা তা যত বড়ই হোক না কেন, তাঁর ক্ষমার সামনে তা অতি সামান্যই।
মানুষ যদি ভুলবশত কোনো অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করে ফেলে, কিংবা পাপ করে নিজেদের প্রতি যুলুম করে বসে, তবে যদি সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমাদের প্রতিপালক দয়া করাকে তার নিজের কর্তব্য বলে লিখে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞতাবশত যদি কোনো মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সূরা আল- আন‘আম, আয়াত : ৫৪)
আমরা আল্লাহর আল-গাফুর নামের ওয়াছিলা দিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইব। আমাদের প্রিয়নবি (সা.)-যাঁর কোনো গুনাহ ছিল না, তদুপরি তিনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারী ও তাওবাকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন এবং পাপ না থাকলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
আল্লাহু খাবিরুন
খাবিরুন অর্থ সর্বজ্ঞাত, সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত ইত্যাদি। আল্লাহু খাবিরুন অর্থ আল্লাহ সম্যক অবহিত বা সৰ্বজ্ঞাত। আল-খাবির মহান আল্লাহ তা'আলার একটি নাম। এ নামটি আল-আলীম, আস-সামী‘উ, আল বাসীর, আল কাদীর ইত্যাদি নামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আল্লাহ সব কিছুর খবর রাখেন। মহান আল্লাহ বলেন-
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।' (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৩)
মহান আল্লাহ সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। তিনি সবকিছু জানেন। তাঁর জ্ঞানে সব কিছু বেষ্টন করে রাখা। তাঁর জ্ঞান থেকে কোনো স্থান, কাল-কোনো কিছুই বাদ পড়ে না। আসমান জমিন এবং এতোদুভয়ের মাঝে যেখানে যা কিছুই ঘটে না কেন, কিছুই তাঁর অজ্ঞাতে ঘটে না। তাঁর জ্ঞান সর্বব্যাপী। এমনকি সরিষার কণা পরিমাণও যদি কোনো বস্তু পাথরের ভেতর বা আকাশে কিংবা ভূগর্ভে থাকে, তবে তিনি তারও খবর রাখেন। তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন। দৃশ্য ও অদৃশ্য, প্রকাশ্য ও গোপনীয়, স্পষ্ট ও অস্পষ্ট সব কিছুই জানেন। ছোট-বড় কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টির বাইরে থাকে না এবং তিনি কোনো কিছুই ভুলে যান না। সব কিছু সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন।
আমরা সব সময় মনে রাখব যে, আল্লাহ তা'আলা আমাদের ভালো-মন্দ সকল কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত। তাই আল্লাহকে ভয় করে আমরা সকল প্রকার অন্যায় ও পাপকাজ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখব এবং ভালো কাজসমূহ করব।
সর্বোপরি, আল্লাহ তা‘আলা যেমন মহান, তাঁর নামগুলোও তেমনি মহান, অতি পবিত্র ও গৌরবান্বিত। আমরা তাঁকে আল্লাহ, রহমান কিংবা তাঁর অন্যান্য গুণবাচক নামেও ডাকব।
Read more