আমরা জানি, কাঠমিস্ত্রি কাঠ দিয়ে চেয়ার, টেবিল, খাটসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করে। রাজমিস্ত্রি ইটের ওপর ইট সাজিয়ে দালানকোঠা তৈরি করে। বড় বড় ইমারত তৈরি করে। এসব কোনো কিছুই নিজে নিজে তৈরি হয় না। কেউ সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি হয় না।
আমাদের মাথার ওপর সুন্দর সুনীল আকাশ, মিটিমিটি তারা, গ্রহ-উপগ্রহ, পৃথিবী থেকে তেরো লক্ষ গুণ বড় প্রখর সূর্য নিজে নিজেই কি সৃষ্টি হয়ে গেছে? না, সবকিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। তিনি কে? তিনি মহান আল্লাহ্।
সবার আগে আমাদের প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা ও ইমান আনা। কেননা মহান আল্লাহ আছেন এ সম্পর্কে যদি আমাদের পূর্ণ ইমান না থাকে, তা হলে কী করে আল্লাহর আদেশ মতো চলব? এর সাথে সাথে প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি সম্পর্কে জানা। আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই।
আল্লাহ সবকিছু দেখেন, শোনেন এবং সবকিছুর খবর রাখেন- এর ওপর আমাদের দৃঢ় ইমান থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালার পুণাবলি সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান না থাকলে ইসলামের সরল সহজ পথে চলা কিছুতেই সম্ভব নয়।
এরপর আমাদের জানতে হবে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করার সঠিক পথ কোনটি। কী কী কাজ আল্লাহ পছন্দ করেন, যা আমরা করব? আর কোন কোন কাজ অপছন্দ করেন, যা থেকে আমরা দূরে থাকব। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহর আইন ও বিধানের জ্ঞান অর্জন করা আমাদের জন্য ফরজ। আল্লাহর বিধান আছে কুরআন মজিদে। কুরআন মজিদ আমাদের পড়তে হবে ও বুঝতে হবে। আল্লাহর আদেশগুলো পালন করতে হবে। নিষেধ থেকে দূরে থাকতে হবে।
আমাদের আরও জানতে হবে, আল্লাহর ইচ্ছার বিরোধী পথে চলার পরিণাম কি? আর তাঁর আদেশ মেনে চলার পুরস্কারই বা কী? এ উদ্দেশ্যে আমাদের কবর, কিয়ামত, হাশর, মিযান, জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে জানা ও ইমান থাকা অপরিহার্য। এ আলোচনায় যেসব বিষয় জানতে ও বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে, তারই নাম হচ্ছে ইমান। ইমান অর্থ বিশ্বাস স্থাপন। যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ব, তাঁর গুণাবলি, তাঁর বিধান এবং তাঁর পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কে জানে এবং অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে তাকে বলা হয় মুমিন । আর ইমানের ফল হলো মানুষকে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে গড়ে তোলা ।
দলীয় কাজ: আল্লাহর পরিচয় জানার জন্য যেসব বিষয়ের জ্ঞান থাকা জরুরি শিক্ষার্থীরা দলে বসে পরস্পর আলাপ-আলোচনা করে সেসব বিষয়ের একটি তালিকা তৈরি করবে। এরপর মার্কার দিয়ে গোস্টার পেপারে বড় বড় করে লিখবে।
আমরা জানলাম আনুগত্যের জন্য ইমানের প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহর গুণাবলি, তাঁর দেওয়া বিধান ও আখিরাতের জীবন সম্পর্কে আমরা কীভাবে জানব?
আমাদের চারদিকেই ছড়িয়ে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য সৃষ্টি, বা তাঁর অস্তিত্বের নিদর্শন। এসব নিদর্শন সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এ সবকিছুই একই স্রষ্টার সৃষ্টি।
কত সুন্দর আমাদের এই দেশ। কত সুন্দর আমাদের এই পৃথিবী! সবুজ ফসলের মাঠ। মাঠভরা সোনালি ধান। বন, বাগান, গাছ-গাছানি। কুল কুল শব্দে বয়ে যায় নদী। ওপরে নীল আকাশ। রাতে তারা ঝলমল করে। কোনো সময় শীত। কোনো সময় গরম । কোনো সময় ঝরে বৃষ্টি। এ সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। এসব নিদর্শনের ভেতরে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় গুণের প্রকাশ। তাঁর হেকমত, তাঁর জ্ঞান, তাঁর কুদরত, তাঁর দয়া, তাঁর লালন-পালন, এক কথায় তাঁর সব গুণের পরিচয়। এসব নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। এসব সৃষ্টি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এ সবকিছুই একই স্রষ্টার সৃষ্টি ।
এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে মানুষেরই মধ্য থেকে এমন সব মহামানৰ সৃষ্টি করেছেন, যাঁদের তিনি দিয়েছেন নিজের গুণাবলি সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান। মানুষ যাতে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারে, তার নিয়মই তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন। আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিয়েছেন। এরপর তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন অপর মানুষের নিকট এসব পৌঁছে দিতে। এঁরাই হচ্ছেন আল্লাহর নবি-রাসুল। তাঁদের জ্ঞানদানের জন্য আল্লাহ যে মাধ্যম ব্যবহার করেছেন, তার নাম হচ্ছে শুহি। আর যে কিতাবে তাঁদের এ জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাকে বলা হয় আল্লাহর কিতাব। কুরআন মজিদ আল্লাহর কিতাব।
পরিকল্পিত কাজ : আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর দশটি সৃষ্টির একটি তালিকা শিক্ষার্থীরা তৈরি করে পোস্টার পেপারে মার্কার দিয়ে লিখবে।
আরও দেখুন...