ই-বিজনেস মডেল হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদে নিজেকে টিকেয়ে রাখে। যার মধ্যে অংশীদার এবং গ্রাহকদের জন্য মূল্য প্রস্তাবের পাশাপাশি এর রাজস্ব স্ত্রীমও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কিছু উপাদানের সমন্বয়ে একটি ই-বিজনেস মডেল ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে ওঠে। নিচে উপাদানগুলো উল্লেখ করা হলো-
১. পণ্য বা সেবা ( Products and Service): ই-কমার্স বিজনেস মডেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। এক্ষেত্রে প্রথমেই একটি ই-কমার্স সাইট তৈরি করা হয়। সেখানে কি পণ্য বা সেবা বিক্রয় করবেন, সেটা এই অংশে লিপিবদ্ধ করতে হয়।
২. বাজার বিশ্লেষণ (Market Analysis): বাজার বিশ্লেষণ যেকোনো ব্যবসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বিজনেসের ক্ষেত্রে তো বটেই। যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা হবে তার চাহিদা, ভোক্তা ও তাদের অবস্থান, বাজারের আয়তন ইত্যাদি বিষয়গুলো বাজার বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে।
৩. অর্থায়ন (Funding): ই-বিজনেসের জন্য কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন, কতটুকু বিনিয়োগ করা হবে, সম্পূর্ণ অর্থ নিজের কাছে না থাকলে বাকিটুকু কীভাবে ম্যানেজ করা হবে, এই বিষয়গুলো আগেই হিসাব করতে হয়।
৪. ভারসাম্য বিন্দু বিশ্লেষণ (Break-even Analysis): অর্থনীতি আর ব্যবসা উভয় ক্ষেত্রেই ব্রেক-ইভেন বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের ব্যয় থাকে— একটি স্থায়ী খরচ, অপরটি পরিবর্তনশীল খরচ। পণ্য বা সেবার মূল্যের দ্বারা কতদিনে ও কী পরিমাণ মুনাফায় এই ব্যয় পূরণ করা সম্ভব এবং ব্যবসা লাভজনক করতে সাথে অন্যকোনো ব্যবস্থা থাকবে কিনা এই বিষয়গুলোই মূলত ব্রেক ইভেন বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে।
৫. বিপণন কৌশল (Marketing Strategy): ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একটি কথা আছে, সেটা হলো 'প্রচারেই প্রসার। আর এই জন্য বিপণনের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হতে হয়। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে Online Marketing বেশি ফলপ্রসূ।
৬. মূল্য নির্ধারণ (Pricing): সাধারণত একটি B2C ই-কমার্স ব্যবসার আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে পণ্য বিক্রয়। তাই যে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করা হবে তার উৎপাদন ব্যয় + অন্যান্য ব্যয় + লাভ হিসাব করে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
৭. ব্যবস্থাপনা পর্ষদ (Management Team): একটি ব্যবসার স্থায়িত্ব ও মুনাফা অনেকটাই নির্ভর করে তার ব্যবস্থাপনার ওপর। সার্ভার ব্যবস্থাপনা, পোর্টাল ব্যবস্থাপনা, কাষ্টমার ব্যবস্থাপনা, পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যোগ্য লোক বাছাই করতে হবে ।
৮. সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (Supply Chain Management): অনলাইন শপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা। ভোক্তাকে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও দ্রুত মাধ্যমটি বেছে নিতে হবে । এক্ষেত্রে কী পরিমাণ খরচ ও সময় লাগবে তা আগে থেকেই বের করতে হবে এবং পরবর্তীতে সেই সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে।
৯. পরিশোধ পদ্ধতি (Payment System) : লেনদেন পদ্ধতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থা, বাজারের আয়তন ও অবস্থান, লেনদেন পদ্ধতির উপযোগিতা ও প্রাপ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়। সবকিছু বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়ের জন্য এক বা একাধিক লেনদেন পদ্ধতি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
বর্তমান ব্যবসায় মানেই হলো ই-কমার্স। বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশেও ই-কমার্স-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তারপরও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা নিচে আলোচনা করা হলো :
১. নিরাপত্তা (Security) : ই-কমার্সে বিভিন্ন ধরনের অনিরাপত্তা বা ঝুঁকি বিদ্যমান আছে। যেমন— ক্লাইন্ট বা সার্ভার রিস্ক, ডাটা ট্রান্সফার ও লেনদেনের রিস্ক এবং ভাইরাস রিস্ক। ২. গোপনীয়তার অভাব (Lack of privacy) : ই-কমার্সে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ঠিকানা, ফোন
নাম্বার প্রভৃতি ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রেতাকে দিতে হয়। এক্ষেত্রে তথ্যের অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৩. অনলাইন প্রতারণা ( Online fraud ) : এমন অনেকেই আছে যারা এ ব্যবসায় ঢুকে অনলাইনে প্রতারণার চেষ্টা করে।
৪. ব্যক্তিগত স্পর্শের অভাব (Lack of Personal touch) : ই-কমার্সে সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার সাক্ষাত হয় না। যার ফলে কেনার আগে ক্রেতা পণ্যটি স্পর্শ করারও সুযোগ পায় না। ফলে পণ্য পাওয়া নিয়ে ক্রেতার মনে ভয় কাজ করে।
৫. সরবরাহের সময় ( Supply time ) : ই-কমার্স এর আরেকটি সমস্যা হলো পণ্য সরবরাহে বিলম্ব। ক্রেতারা পণ্য অর্ডার করলেই সাথে সাথে তারা পণ্যটি পায় না। এজন্য কিছু সময় বা দিন বিলম্ব হয়।
৬. খরচ (Cost) : ই-কমার্স ব্যবসায়ে বিভিন্ন খরচ হয়ে থাকে। যেমন-ইন্টারনেট খরচ, কম্পিউটার খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্যাকেজিং খরচ ইত্যাদি। এ কারণে অনেকেই এ ব্যবসায়ে আগ্রহী হয় না।
৭. গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ হারানো (Loss of contact with customers ) : প্রায় সময় গ্রাহকরা মনে করে যে তাদের প্রতি বিক্রেতারা যথেষ্ট মনোযোগী নয়।
৮. সাংস্কৃতিক বাধা (Cultural obstacles) : একেক দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ক্রেতার মন-মানসিকতা একেক রকম হয়। এসব বিষয় ই-কমার্সে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সাংস্কৃতিক বাধা তৈরি করে।
৯. দক্ষ জনশক্তির অভাব (Lack of skilled personnel) : বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেকেই জানে না। আবার যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে তাদের অনেকেই ওয়েবসাইটে না ঢুকে কেবল ফেইজবুক, ম্যাসেঞ্জার এগুলোতে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে ই-কমার্স সম্পর্কে অনেকেরই আগ্রহ তৈরি হয় না। ই-কমার্স ব্যবসায় করতে চায় অথচ পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে অনেকেই তা করতে পারছে না।
১০. প্রশিক্ষণের অভাব ( Lack of training) : ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত এমন অনেকেই প্রশিক্ষণের অভাবে ই-কমার্স ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারছে না।
Read more