ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে যে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় তাকে ই-মার্কেটিং বলে। অনেকেই আবার ই-মার্কেটিং-কে বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকেন। যেমন- ডিজিটাল মার্কেটিং, ইন্টারনেট মার্কেটিং, অনলাইন মার্কেটিং এবং ওয়েব মার্কেটিং। নিচে ই-মার্কেটিং-এর বিভিন্ন ধরন তুলে ধরে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (Search engine optimization) :
অনলাইনে যেকোনো কিছু খুঁজে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তুমি যে পণ্যটি খুঁজে পেতে চাচ্ছো তা যদি সার্চ রেজাল্টে এগিয়ে না থাকে তাহলে সে পণ্যটি মানুষের কাছে এখনো পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। তাই সার্চ রেজাল্টে নিজের ওয়েবসাইট, পণ্য, সেবা বা ধারণা সবার সামনে বা ওপরে তুলে ধরার জন্য যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় তাকে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বলে। উল্লেখ্য যে, একটি ওয়েবসাইটে এর ভিউয়ার বা ভিজিটরের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এরূপ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন- SEO ব্যবহার করা হয়। বহুল পরিচিত ও ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে গুগল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদি অন্যতম।
২. গুগল সার্চ নেটওয়ার্ক (Google search network): এটি হলো কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বা অ্যাপসের সমষ্টি যেখানে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন বা অ্যাডস প্রচার করা হয়। এক্ষেত্রে যখন কোনো ইউজার বা ব্যবহারকারীর ব্যবহৃত সার্চ কী ওয়ার্ড তোমার কী ওয়ার্ডের সাথে মিলে যাবে, কেবল তখনই তার সার্চ রেজাল্টে তোমার অ্যাডস দেখানো হবে।
৩. কনটেন্ট মার্কেটিং (Content marketing) : ই- মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কন্টেন্ট মার্কেটিং। একটি বিজ্ঞাপনের সফলতা নির্ভর করে তার কন্টেন্ট তৈরির ওপর। উল্লেখ্য, যেকোনো ছবি, ভিডিও, লেখা, ইনফোগ্রাফি ইত্যাদি কন্টেন্টের অন্তর্ভুক্ত। কন্টেন্ট এমন হওয়া উচিত যেন ভিজিটর বার বার ভিজিটের জন্য প্রলুব্ধ হয়।
৪. ই-মেইল মার্কেটিং (E-mail marketing): ই-মেইল মার্কেটিং হলো এমন একটি অনলাইন মার্কেটিং প্রক্রিয়া যেখানে অনলাইন মেইলের মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবার প্রচার করা হয়। অর্থাৎ, যখন কোনো বার্তা বা মেসেজ গ্রাহকদের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে পৌঁছানো হয়, তখন তাকে ই-মেইল মার্কেটিং বলে। এ ধরনের মার্কেটিং ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত ।
৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate marketing): অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো ই-মার্কেটিং-এর কৌশলগত পদ্ধতি। কেননা এক্ষেত্রে তিনটি পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যথা- (ক) পণ্যের মালিক, (খ) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার ও (গ) চূড়ান্ত ভোক্তা। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগণ প্রথমে পণ্য পছন্দ করেন। তারপর ব্লগ, ভিডিও বা বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে মালিকের পক্ষে প্রচার করেন। তুমি যখন তোমার ই-মার্কেটিং-এর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কমিশনভিত্তিক অন্য কারো পণ্য বা সেবার প্রচার করবে, তখন তা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হিসেবে বিবেচিত হবে।
৬. ভিডিও মার্কেটিং (Video marketing):
ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, যেকোনো বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভালো কাজে বা উৎকৃষ্ট পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য ভিডিও মার্কেটিং-এর ভূমিকা অপরিসীম। এমনভাবে ভিডিও তৈরি করতে হবে যাতে ভিডিও দেখে দর্শকরা ক্রেতায় পরিণত হয়। গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের মাধ্যমে সহজেই জানা যায় যে, কারা ভিডিও দেখছে, কখন দেখছে এবং কোথা থেকে দেখছে। অনেকেই বলে থাকে যে, একটি ছবির মূল্য হাজার শব্দের, আর একটি ভিডিওর মূল্য হাজার হাজার ছবির সমান।
আকর্ষণীয় ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে সহজেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায়। যদি সঠিক বার্তাটি ভিডিওর মাধ্যমে সঠিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায় তখনই ভিডিও মার্কেটিং ফলপ্রসূ হয়। প্রচারের জন্য যেসব ভিডিও অ্যাডস ফরমেটগুলো রয়েছে তার মধ্যে Instream ads, video discovery ads, out- stream ads অন্যতম।
৭. মোবাইল মার্কেটিং (Mobile marketing): ই-মার্কেটিং - Mobile মারকেতিং
এর সবচেয়ে বহুল প্রচলিত একটি ধরন হলো মোবাইল মার্কেটিং। সাধারণ মানুষদের কাছে সহজে পৌঁছানোর এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পন্থা হলো মোবাইল মার্কেটিং। এসএমএস (SMS) মার্কেটিং এমএমএস ( MMS ) মার্কেটিং, ব্লুটুথ মার্কেটিং, ইত্যাদি মোবাইল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত। এসএমএস (SMS) মার্কেটিং অধিকতর কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ইতোমধ্যে বিবেচিত হয়েছে। ডিজিটাল যুগের একজন সদস্য হিসেবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারে তোমার অনেক ফলোয়ার থাকতে পারে। তাদেরকে মেসেজ করে পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করা যায়।
৮. ভাইরাল মার্কেটিং (Viral marketing): অনলাইন বিজনেসের সফলতার জন্য ভাইরাল মার্কেটিং-এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেকোনো ছবি, ভিডিও বা লেখাকে ভাইরাল করতে আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। মনের মতো কন্টেন্ট হলো মানুষ নিজেই কন্টেন্টটি ছড়িয়ে দেয়। যারা ইউটিউব ব্যবহার করছেন তারা অনেকেই তাদের পণ্য বা সেবার ভিডিওর ভাইরাল করার পদ্ধতি আয়ত্ত করেছেন। ইউটিউবাররা বিশ্লেষণ করলেই জানতে পারেন যে, তাদের ভিডিওটা কেমন পারফর্ম করেছে, কত ঘণ্টার মধ্যে কতজন দেখেছে, কত মিনিট করে তাদের ভিডিওটা দেখেছে সবই জানতে পারেন।
৯. গুগল অ্যাডস (Google ads): ই-মার্কেটিং-এর আরেকটি ধরন হলো গুগল অ্যাডস। এটি হলো এক ধরনের বিশেষ অনলাইন বিজ্ঞাপন সেবা মাধ্যম। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত বিজ্ঞাপন অনলাইনে প্রচার করা হয়।
১০. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social media marketing) : ইন্টারনেট ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় তাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। ব্যবসায়িক যেকোনো পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মতো উত্তম জায়গা আর কোথাও নেই। পুরো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত। এরা নিয়মিতভাবে ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করছে। নিচে সংক্ষেপে এরূপ কয়েকটি ধরন উল্লেখ করা হলো-
ক. ফেসবুক মার্কেটিং (Facebook marketing): ফেসবুক পেইজ বা গ্রুপের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে, তাদেরকে ক্রেতায় পরিণত করাকে ফেসবুক মার্কেটিং বলে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এরূপ পেইজ বা গ্রুপ খোলার এবং তা সংরক্ষণের অনুমতি দেয়।
খ. টুইটার (Twitter Marketing): এটি হলো এক ধরনের মাইক্রো-ব্লগিং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইট মার্কেটিং। যে কেউ তাদের মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে টুইটার ব্যবহার করতে পারেন। গ. ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং (Instagram Marketing): এটি এক ধরনের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যেখানে বিভিন্ন ধরনের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন পণ্য বা সেবার ছবি শেয়ারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
ঘ. অন্যান্য (Others) : এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-এর যেসব পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে পিন্টারেস্ট মার্কেটিং, লিংকডইন মার্কেটিং অন্যতম।
Read more