বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে সহজ করে তুলেছে। এ ধরনের সরঞ্জাম ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের আওতাভূক্ত। ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং কার্যকর ও নিরাপদ ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্থাপনায় ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের উপযোগিতা, স্থায়িত্ব, ব্যয় ও নিরাপত্তা নির্ভর করে সার্কিটে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের সঠিক স্থাপন ও সংযোগের উপর। ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট স্থাপনের কাজ শেষ হলে সার্কিটে স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের পূর্বে টেস্ট করা জরুরি। এ অধ্যায়ে সার্কিটের বিভিন্ন টেস্ট; যেমন পোলারিটি টেস্ট, কন্টিনিউয়িটি টেস্ট, পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট, আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
• কাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারব;
• AVO মিটার ব্যবহার করে সার্কিটের কন্টিনিউরিটি টেস্ট করতে পারব
• আর্থ টেস্টার ব্যবহার করে সার্কিটের আর্দ্র রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে পারব,
• মেগার ব্যবহার করে সার্কিটের ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট করতে পারব;
• টুলস ও ইকুইপমেন্ট সংরক্ষণ করতে পারব।
উপর্যুক্ত শিখনফলগুলো অর্জনের লক্ষ্যে এ অধ্যায়ে আমরা ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের বিভিন্ন টেস্ট; যেমন পোলারিটি টেস্ট, কন্টিনিউরিটি টেস্ট, পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট, আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্ট ইত্যাদি সফলভাবে সম্পন্ন করার দক্ষতা অর্জন করব। জবগুলো সম্পন্ন করার পূর্বে প্রথমে প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ জানা প্রয়োজন ।
অফিস, বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, দোকান ইত্যাদি যে কোন স্থাপনা বৈদ্যুতিকরণের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বা সংযোগের পূর্বে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট টেস্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন কাজের সঠিকতা যাচাই ও নিরাপত্তার জন্য এ টেস্ট করা হয়। এ অধ্যায়ে সার্কিটের পোলারিটি টেস্ট, কন্টিনিউয়িটি টেস্ট, পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট, আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
যে কোন স্থাপনা বৈদ্যুতিকরণের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বা সংযোগের পূর্বে ওয়্যারিং এর যে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়, তাকে ওয়্যারিং টেস্টিং বলে। ওয়্যারিং ত্রুটিবিহীন এবং নিরাপদ হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ পরীক্ষা বা পরীক্ষাসমূহ করা হয়। কোন ওয়্যারিং কাজ সঠিকভাবে নিয়ম মোতাবেক নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ত্রুটিবিহীনভাবে সম্পন্ন হয়েছে এই মর্মে নিশ্চিত হতে হলে তা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সাধারণত কোন ওয়্যারিং কাজ সম্পন্ন করার পর একে দুটি ধাপে পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়।
সকল কিছু সরেজমিনে দেখে বা পরিদর্শন করে প্রথম ধাপ সম্পন্ন করা হয়, যা সাধারণ পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে করা হয়। টেস্ট বাতি, যেগার, নিয়ন টেস্টার দিয়ে ওয়্যারিং টেস্ট করা হয়। টেস্ট বাতি দিয়ে করতে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
ওয়্যারিং কাজ চলার সময় যে টেস্টগুলো করা হয় সেগুলো হলো-
১। পরিবাহীর কন্টিনিউয়িটি টেস্ট;
২। সুইচের পোলারিটি টেস্ট;
৩। পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট।
ওয়্যারিং কাজ শেষ হলে সার্কিটে স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের পূর্বে যে টেস্টগুলো করা হয় সেগুলো-
১। আর্থ টেস্ট:
২। আর্থের সাথে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট (কন্ডাক্টর টু আর্থ);
৩। সুইচের পোলারিটি টেস্ট।
বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এর কাজ চলার সময় বা শেষ হলে, ওয়্যারিং ত্রুটিবিহীন এবং নিরাপদ হয়েছে এ বিষয়ে
নিশ্চিত হওয়ার জন্য সার্কিট টেস্ট করা হয়। ওয়্যারিং টেস্ট না করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিলে কোন কোন ক্ষেত্রে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং সরঞ্জামাদি ও যন্ত্রপাতি পুড়ে যেতে পারে। ওয়্যারিং এর কোথাও শর্ট থাকলে এরূপ ঘটতে পারে। সুতরাং নিশ্চিত করে বলা
যায়, বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং শেষে এটি টেস্ট করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের উপযোগিতা, স্থায়িত্ব, ব্যয় ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করতে হয়। যেমন- সার্কিটের পোলারিটি টেস্ট, কন্টিনিউয়িটি টেস্ট, পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট, আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্ট। নিচে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বৈদ্যুতিক বিধি মোতাবেক ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত সুইচ ও ফিউজসমূহ শুধু সরবরাহ লাইনের ফেজ তারের সাথে সংযোগ দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই সুইচ ও ফিউজসমূহ নিউট্রাল তারের সাথে সংযুক্ত করা যাবে না। সাধারণত দুইভাবে পোলারিটি টেস্ট করা যায়, যেমন- ক) নিয়ন টেস্টারের মাধ্যমে খ) টেস্ট ল্যাম্পের মাধ্যমে। এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বিহীন বা সরবরাহ লাইনে সংযোগ দেওয়া হয় নাই এমন ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত সুইচসমূহের পোলারিটি মেগারের সাহায্যে টেস্ট করা যায়।
ক) নিয়ন টেস্টারের মাধ্যমে পরীক্ষা: এ পদ্ধতির মাধ্যমে সবচেয়ে সহজে এবং দ্রুত সুইচের পোলারিটি টেস্ট করা যায়। এ পদ্ধতিতে সুইচের আওতায় ত্রুটিমুক্ত লোড সংযুক্ত থাকলে সুইচটিকে অফ করে সুইচের যে প্রান্তে বা পয়েন্টে সরবরাহ লাইনের সংযোগ আছে সেখানে নিয়ন টেস্টারের অগ্রভাগ স্পর্শ করিয়ে টেস্টারের অপর প্রান্তের নির্দিষ্ট স্থানে বৃদ্ধাঙ্গুলি স্পর্শ (আর্থ) করলে যদি টেস্টারের নিয়ন ল্যাম্পটি জ্বলে তবে বুঝতে হবে সুইচের পোলারিটি সঠিক আছে। তবে এ ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকার সম্ভবনা থাকে, তাই পরীক্ষা শেষে লোডসমূহ খুলে রেখে পুনরায় পরীক্ষা করলে যদি দেখা যায় এবারও টেস্টার জ্বলছে তবেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে সুইচের পোলারিটি ঠিক আছে। কখনও ফিউজ বা সুইচ নিউট্রালে সংযোগ করা চলবে না। ফিউজ বা সুইচ নিউট্রালে সংযোগ করলে প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ হবে কিন্তু লাইনের মেরামতের সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
খ) টেস্ট ল্যাম্পের মাধ্যমে পরীক্ষা: টেস্ট ল্যাম্পের একপ্রান্ত আর্থের সাথে এবং অন্য প্রান্তে সুইচ অন করে সুইচের অন্য প্রান্তে স্পর্শ করতে হবে। যদি টেস্ট ল্যাম্প জ্বলে উঠে, তবে বুঝতে হবে পোলারিটি ঠিক আছে। অর্থাৎ সুইচ লাইভ লাইন বা ফেজ তারে সংযোগ আছে। আর বাতি না জ্বললে বুঝতে হবে পোলারিটি ঠিক নাই অর্থাৎ সুইচ নিউট্রালে লাগানো আছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে Continuity tester বা Avometer অথবা ইনসুলেশন টেস্টিং মেগার ব্যবহার করা হয়। সরবরাহ থাকলে নিয়ন টেস্টারের মাধ্যমেও ফেজ তার শনাক্ত করা যায়।
যে কোন ওয়্যারিং কাজ শেষ করার পর সরবরাহ প্রদানের পূর্বে উক্ত ওয়্যারিং এর কন্টিনিউয়িটি বা নিরবচ্ছিন্নতা সঠিক আছে কিনা তা যে টেস্টের মাধ্যমে জানা যায়, তাকে ওয়্যারিং এর কন্টিনিউরিটি টেস্ট বলে। ওয়্যারিং এর নিরবচ্ছিন্নতা ঠিক না থাকলে ওয়্যারিং এর পয়েন্টসমূহে সংযুক্ত লোডগুলি কাজ করবে না। তাই ওয়্যারিং কাজ শেষ করার পর এর কন্টিনিউরিটি বা নিরবচিত্রতা পরীক্ষা করা আবশ্যক। কন্টিনিউরিটি পরীক্ষার মাধ্যমে ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত পরিবাহী কোথাও কোন ছেঁড়া, কাটা, ভাজা কিংবা কোন জাংশন বক্সে সংযোগ নেই এমন অবস্থাসমূহ জানা যায় ।
আর্থ কন্টিনিউরিটি পরীক্ষা করার পদ্ধতি: ওয়্যারিং এর আওতায় যে সকল ধাতব বডির সরঞ্জাম থাকে সেগুলোর ধাতব অংশকে আর্থের সাথে সংযোগ করে দিতে হয়। দুর্ঘটনার হাত হতে বৈদ্যুতিক ব্যাপাতি এবং মানুষকে রক্ষা করার জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ধাতু নির্মিত বাহিরের অংশের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে। যাতে কারেন্ট পরিবাহী তারের ভিতর দিয়ে নিরাপদভাবে মাটিতে চলে যেতে পারে ঐ ব্যবস্থাকে আর্থিং বলে। আর্থ তারের নিরবচ্ছিন্নতা বা কন্টিনিউরিটি ঠিক না থাকলে ব্যবহারকারী যে কোন সময় দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। তাই আর্থ তারের নিরবচ্ছিন্নতা বা কন্টিনিউয়িটি ঠিক আছে কিনা তা জানতে অর্থ কন্টিনিউরিটি পরীক্ষা করা হয়।
এ পরীক্ষায় প্রথমে মেইনসুইচ অফ করে ফিউজ খুলে নিতে হবে। সার্কিটের অন্যান্য ফিউজগুলো যথারীতি লাগানো থাকবে। বাতি, পাখাসহ সকল লোড / ডিভাইস লাগিয়ে রাখতে হবে। সকল সুইচ অফ রেখে মেইন সুইচ থেকে বেরিয়ে যাওয়া দু'টি কন্ডাকটরের সাথে মেগারের L ও B টার্মিনাল সংযোগ দিতে হবে এবং এক একটি করে সুইচ অন করে মেগারের কাঁটা ঘুরালে যদি ফেগারের কাঁটা শূন্য ডিফ্লেকশন দেয়, তবে বুঝতে হবে কন্টিনিউরিটি ঠিক আছে। যদি ফাটা শূন্য (০) থেকে দূরে থকে, তাহলে বুঝতে হবে কন্টিনিউরিটি ঠিক নেই। এভাবে একটি একটি করে সুইচ অন করে কভিনিউটি টেস্ট করতে হবে।
সেপারের পরিবর্তে মাল্টিমিটার বা কন্টিনিউরিটি টেস্টার/আর্থ টেস্টার দ্বারা এ টেস্ট করা যায় ।
ওয়্যারিং টেস্টের জন্য বহুল ব্যবহৃত টেস্ট ল্যাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে। যে কোনো ইলেকট্রিশিয়ানের জন্য টেস্ট বাতি একটি অতি প্রয়োজনীয় ও সহজলভ্য সরঞ্জাম। কোন হোল্ডারে দুইগাছা ইনসুলেট করা তার চিত্র অনুযায়ী সংযোগ করে নিলেই টেস্ট বাতি প্রস্তুত হয়ে যায়। যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। টেস্ট ৰাতি দুই ধরনের হয়ে থাকে।
(ক) সিলেন ফেজ টেস্ট বাভি ও (খ) থ্রি-ফেজ টেস্ট ৰাতি ।
এ অধ্যায়ে শুধু সিঙ্গেল ফেজ টেস্ট বাতির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কারণ থ্রি ফেজ ও সিঙ্গেল ফেজ এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো থ্রি ফেজের লাইন ভোল্টেজ (ফেজ টু ফেজ) ৪০০ ভোল্ট। আর প্রতিটি বাতির ভোল্টেজ ২৫০ ভোল্ট। সেজন্য দু'টি বাতি সিরিজে সংযুক্ত করে থ্রি ফেজের টেস্ট বাতি তৈরি করা হয়, যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। টেস্ট বাতি যে সমস্ত কাজে ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো-
১। কোন লোডে বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে কিনা তা জানা যায় ।
২। সাপ্লাই ভোল্টেজ পরিমিত আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা যায়।
৩। কোন যন্ত্রপতিতে বডি বা আর্থ ফন্ট হলে তা পরীক্ষা করে জানা যায়।
৪। আলাদা আর্থিং এর ব্যবস্থা থাকলে টেস্ট বাতি দিয়ে সাপ্লাইয়ের ফেজ ও নিউট্রাল লাইন শনাক্ত করা যায়।
৫। সাপ্লাইয়ের তারের নিরবচ্ছিন্নতা, কয়েলের কার্যকরী অবস্থা, সুইচের পোলারিটি টেস্ট করা যায়।
৬। যে কোন মেশিনের কয়েলের শর্ট সার্কিট, আর্থ ফন্ট এবং ওপেন সার্কিট ত্রুটি পরীক্ষা করা যায়। উল্লেখিত বর্ণনা থেকে আমরা সহজেই বলতে পারি টেস্ট বাতির গুরুত্ব খুব বেশি।
কোন সার্কিটে কারেন্ট চলার পথ ঠিক আছে কিনা দেখতে হলে টেন্ট-বাতির সাহায্যে নেয়া হয়। সেজন্য দুই টার্মিনালের মধ্যে ভোল্টেজ আছে কিনা তা দেখতে হলে ঐ দুই টার্মিনালের সঙ্গে টেস্ট-বাতি ধরলেই বোঝা যায়। যদি বাতি জ্বলে তবে ভোল্টেজ আছে এবং বাতির উজ্জ্বলতার উপর নির্ভর করে সাপ্লাই ভোল্টেজ কিরূপ মানের আছে। এসব ক্ষেত্রে ভোল্টেজের উপর নির্ভর করে সিঙ্গেল ফেজ বা থ্রি ফেজ টেস্ট বাতি ব্যবহার করতে হবে। দু'টি টার্মিনালের মধ্যে কোনটি ফেজ তার আর কোনটি নিউট্রাল তার তা টেস্ট বাতির সাহায্যে জানা যায়; সে ক্ষেত্রে আর্থ টার্মিনাল থাকতে হবে। আর্থ করা নিউট্রাল হলে যদি লাইভ টার্মিনাল কিংবা ফেজ তারের সঙ্গে টেস্ট বাতির একটি তার লাগিয়ে অন্য তারটি আর্থের সঙ্গে কানেকশন করা যায়, তবে বাতি জ্বলবে। তাই এভাবে কানেকশন করলে যখন টেস্ট বাতি জ্বলে, তখন বুঝতে হবে লাইনের লাইভ টার্মিনাল বা ফেজ তার। আর যদি না জ্বলে, তবে সেটি নিউট্রাল তার। বৈদ্যুতিক মেশিনের কয়েল টেস্টের জন্য কয়েলের সাথে সিরিজে বাতি সংযোগ করলে যদি দেখা যায় কোন কয়েলে বাতি কম আলোতে জ্বলছে, তবে সে কয়েল ঠিক আছে। কিন্তু যে কয়েলের ক্ষেত্রে টেস্ট বাতি বেশি
উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবে, বুঝতে হবে সেই কয়েলেই 'শর্ট' আছে। যদি কোন মেশিনে আর্থ বা গ্রাউন্ড ফল্ট হয়, অর্থাৎ বডিতে বৈদ্যুতিক কানেকশন হয়ে যায়, তবে তাকে মেশিনের আর্থ হওয়া বলে।
এরূপ ত্রুটি নির্ণয় করতে টেস্ট বাতির একটি তার মেশিনের গায়ে লোহার সঙ্গে এবং অন্যটি আর্থে সংযোগ করলে যদি টেস্ট বাতি জ্বলে, তবে বুঝতে হবে মেশিনে গ্রাউন্ড আছে। টেস্ট ল্যাম্পের সঠিক ব্যবহারে খুব সহজে এবং কোন লিখিত পাঠ নেওয়া ছাড়াই টেস্ট করা যায়।
ইনসুলেশন জাতীয় পদার্থ বা পিভিসি তারে যে ইনসুলেশন দেওয়া থাকে উহার রেজিস্ট্যান্সকে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স বলে। ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা বলতে কোন ওয়্যারিং কাজে ব্যবহৃত পরিবাহী এবং অন্যান্য সামগ্রীর ইনসুলেশনের সঠিকতা বোঝায়। কোন ওয়্যারিং কাজের ইনসুলেশন এমন হওয়া উচিত যাতে দু'টি পরিবাহী কিংবা পরিবাহী ও কোন সরঞ্জামের ধাতব বড়ি বা আর্থের মধ্যে কোন লিকেজ কারেন্ট প্রবাহিত না হয়। কোন ওয়্যারিং কাজ শেষে দুই ধরনের পরীক্ষা করা হয়।
ক) ফেজ ও নিউট্রাল বা দুই পরিবাহী তারের মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স এবং
খ) পরিবাহী তার এবং আর্থ তারের মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স ।
মেগারের সাহায্যে ফেজ ও নিউট্রালের মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্টের প্রক্রিয়া হলো-
১। মেইনসুইচ খোলা থাকবে তবে অন্যান্য ফিউজ সঠিকভাবে লাগান থাকবে।
২। ব্যবহৃত ডিভাইস বা লোডসমূহ খোলা থাকবে অর্থাৎ হোল্ডার হতে সকল বাতিগুলো খুলে ফেলতে হবে এবং যে সমস্ত হোল্ডারে শর্ট সংযোগ আছে তাদের খুলে ফেলতে হবে। পাখা থাকলে তার সংযোগও খুলে ফেলতে হবে।
৩। সকল সুইচসমূহ 'অন' থাকবে।
৪। মেইনসুইচ এর দু'টি টার্মিনাল মেগার এর L এবং E প্রান্তের সাথে লাগাতে হবে।
৫। মেগার এর হাতল ঘুরালে ডায়ালের উপর কাঁটাটি যে মান নির্দেশ করবে সে মানই হবে দু'টি পরিবাহীর মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স। এ ক্ষেত্রে মেগারের পাঠ যদি ইনফিনিটি (a) বা নূন্যতম 1MS2 দেখায় তাহলে বুঝতে হবে ইনসুলেশন রেজিষ্ট্যান্স সঠিক আছে। আর যদি 1M2 এর কম দেখায় তাহলে বুঝতে হবে ওয়্যারিংয়ে লিকেজ আছে। আবার যদি মেগারের পাঠ শূন্য দেখায় তাহলে ওয়্যারিং এ শর্ট সার্কিট রয়েছে। এভাবে ফেজ তার ও নিউট্রাল কিংবা দু'টি পরিবাহী তারের মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট করা হয়।
কন্ডাক্টর ও আর্থের মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট মধ্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট করতে যেভাবে কাজ করতে হবে তা হলো-
১। মেইনসুইচ অফ করে তার ফিউজ খুলে নিতে হবে।
২। বাকী সমৃদ্ধ সুইচ অন থাকবে।
৩। কনজিউমিং ডিভাইসসমূহ লাগান থাকবে।
৪। মেইনসুইচের লোড প্রান্তের টার্মিনাল দু'টি শর্ট করতে হবে।
৫। শর্ট প্রাচ্চে মেগার L পয়েন্ট এবং E আর্থ এর সাথে সংযোগ করতে হবে।
৬। মেগার এর হাতল ঘুরালে পয়েন্টার যা নির্দেশ করবে ভাই আর্থ টু কন্ডাক্টর এর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স। মিটার রিডিং সর্বনিম্ন ২০ M Ohm হলে বুঝতে হবে ইনসুলেশন রেজিট্যাল সঠিক আছে। যদি শূন্য (0) নির্দেশ করে তবে বুঝতে হবে কন্ডাক্টর ও আর্দ্র এর মধ্যে শর্ট সার্কিট হয়েছে।
ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্সের গ্রহণযোগ্যতা হলো-
সকল কন্ডাক্টর একত্রে জড়ানো অবস্থায় পালাক্রমে প্রতিটি কন্ডাক্টরের মধ্যে পরিমাপ করা হলে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স ১ মেগাপ্রজম এর কম হবে না। বৈদ্যুতিক মেশিন বা সরঞ্জামের কাঠামো এবং প্রতিটি বৈদ্যুতিক অংশের মধ্যকার ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স উক্ত সরঞ্জামে উল্লিখিত মান অনুযায়ী হবে। মান উল্লেখ না থাকলে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স ০.৫ মেগাওহমের বেশি হতে হবে। তারের দৈর্ঘ্য যত বেশি হবে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স তত বেশি হবে।
প্রচলিত রেগুলেশন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্সের মান নিম্নে বর্ণিত দু'টি পদ্ধতিতে হিসেব করা যায় ক) পয়েন্ট পদ্ধতি ও খ) লিকেজ কারেন্ট ও সিস্টেম ভোল্টেজ ভিত্তিক পদ্ধতি। পয়েন্ট পদ্ধতি: এ পদ্ধতি অনুসারে ওয়্যারিং এ মোট কতটি পয়েন্ট বা আউটলেট রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স বের করা হয়। যেমন- কোন ওয়্যারিং এ মোট ১০টি পয়েন্ট বা আউটলেট থাকলে এ ওয়্যারিং এর জন্য গ্রহণযোগ্য সর্বনিম্ন ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স হবে ২.৫ M ।
লিকেজ কারেন্ট ও সিস্টেম ভোল্টেজ ভিত্তিক পদ্ধতি : লিকেজ কারেন্ট এবং সিস্টেম ভোল্টেজ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার বা ওয়্যারিং এর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স নির্ণয়ে সর্বোচ্চ লিকেজ কারেন্ট হবে ৫০০০ ভাগের ১ ভাগ। যেমন- কোন ওয়্যারিং এর সরবরাহ ভোল্টেজ ২৩০ ভোল্ট এবং সর্বোচ্চ কারেন্ট ১০ অ্যাম্পিয়ার হয়, তবে উক্ত ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ লিকেজ কারেন্ট = অ্যাম্পিয়ার।
সুতরাং, সর্বনিম্ন ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স হবে, Ri= সরবরাহ ভোল্টেজ/লিকেজ কারেন্ট = মেগাওহম।
আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলতে সম্পূর্ণ আর্থিং পদ্ধতির রেজিস্ট্যান্সকেই বোঝায়। বাড়ি, ওয়ার্কশপ, কলকারখানার মেইনআর্থ টার্মিনাল থেকে আর্থ ইলেকট্রোডের মাধ্যমে যে রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়, তাকে আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। মোট কথা আর্থ লিড এবং আর্থের নিরবিচ্ছিন্ন তারের রেজিস্ট্যান্সকেই আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। আর্থিং এর রেজিস্ট্যান্স খুব কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। সামান্য কারেন্টও যদি কোন সরঞ্জামাদির বড়িতে আসে তা যেন সাথে সাথে আর্থিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই মাটির নিচে যেতে পারে সে জন্যই আর্থ রেজিস্ট্যান্স কম হওয়া দরকার। বাসা বাড়ির ক্ষেত্রে আর্থ রেজিস্ট্যান্স সর্বনিম্ন ১১৫ এবং পাহাড়ি এলাকায় সর্বোচ্চ ৫১২ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। আর বড় বড় মিল ফ্যাক্টরিতে আর্থ রেজিস্ট্যান্স ১২ এর কম হওয়া উচিৎ।
আর্থিং সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা তা নিম্নলিখিত যে কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়-
১। মেগার বা আর্থ টেস্টার পদ্ধতি ও
২। টেস্ট ল্যাম্প পদ্ধতি।
এখানে মেগার বা আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো: মেগার বা আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ ইলেকট্রোডের রেজিস্ট্যান্স মাপা হয়। এতে তিনটি টার্মিনাল থাকে।
(ক) আর্থ টার্মিনাল, (খ) পটেনশিয়াল টার্মিনাল এবং (গ) কারেন্ট টার্মিনাল।
যে আর্থ ইলেকট্রোড এর রেজিস্ট্যান্স মাপতে হবে তার সঙ্গে E টার্মিনাল কানেকশন করতে হবে। এবার স্পাইক নিয়ে একই লাইনে ঐ আর্থ ইলেকট্রোড হতে ৫ থেকে ১০ মিটার পর পর দূরে মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। প্রথমটির অর্থাৎ আর্থ ইলেকট্রোড এর নিকটবর্তী স্পাইককে P টার্মিনালের সাথে এবং পরবর্তী দ্বিতীয়টির সাথে C টার্মিনাল সংযোগ করতে হবে। এবার মেগারের হাতলের সাহায্যে জেনারেটরকে ঘুরালে E হতে মাটির মধ্য দিয়ে C তে পরবর্তী কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এ কারেন্টকে I ধরলে এবং E হতে P পর্যন্ত ভোল্টেজকে V ধরলে E হতে P পর্যন্ত আর্থের রেজিস্ট্যান্স হবে, , R এর মান অবশ্য আর্থ টেস্টারে সরাসরি রিডিং পাওয়া যাবে। যাহা চিত্রে দেখানো হলো।
এভাবে মাঝের স্পাইককে একই লাইনে ১.৫ মিটার হতে ৩ মিটার যথাক্রমে আর্থ ইলেকট্রোডের নিকট ও দূরে সরিয়ে পোঁতে আরও একবার রিডিং নিতে হবে। তারপর মোট তিনটি রিডিং এর গড় মানকে আর্থের রেজিস্ট্যান্স ধরা হবে। কিন্তু জনবহুল শহরে যেখানে P এবং C স্পাইক পৌতার জায়গা নেই। সেখানে আর্থ টেস্টারের P ও C টার্মিনাল দুইটিকে শর্ট করে তার সংগে একটি লিডিং তার সংযোগ করে পানির পাইপের সংঙ্গে সংযোগ করতে হবে। এবার হাতল ঘুরিয়ে টেস্টারের রিডিং নিতে হবে। প্রথম রিডিং হতে দ্বিতীয় রিডিং বাদ দিলে আর্থ রেজিস্ট্যান্স এর মান পাওয়া যায়। টেস্ট করার সময় সতর্ক হতে হয় যেন আর্থ ইলেকট্রোড ও স্পাইক কাছাকাছি না থাকে।
আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের সাবধানতাগুলো হলো-
১। আর্থ টেস্টারের পাঠ সাবধানতার সাথে প্রবণ করতে হবে।
২। সাহায্যকারী স্পাইক মাটির মধ্যে ১ মিটার পর্যন্ত পৌঁততে হবে।
৩। টার্মিনাল সংযোগ শক্তভাবে আটকাতে হবে যাতে খুলে না যায়।
৪। রেজিস্ট্যান্স আছে কিনা তা জানার জন্য আর্জিং রেজিস্ট্যান ১ বৎসর পর পর পরীক্ষা করা উচিত।
তাছাড়া আর্থ টেস্টিং বন্ড দিয়ে খুব সহজেই আর্থ রেজিস্ট্যান্স এর অবস্থা জানা যায় সেক্ষেত্রে টেস্ট বাতির এক প্রাপ্ত সাপ্লাইয়ের সাথে এবং অন্য প্রাপ্ত ঐ আর্থিং এর সাথে সংযোগ করলে বাতি যদি ভালোভাবে জ্বলে তবে বুঝতে হবে আর্থিং ভালো, না হলে আর্থিং ভালো হয় নাই। যদি বাড়ির আর্থ কানেকশন থেকে কিছু দূরে (অর্থাৎ যত দূরে পরস্পরের রেজিস্ট্যান্স ক্ষেত্র জড়াজড়ি হয় না) নলকুপের পানির লাইন আর্থ টেস্টার ছাড়াই আর্থ টেস্টিং বাজি দিয়ে খুব সহজেই আর্থিং এর কার্যকারিতা জানা যায়। পাইপ প্রভৃতি এমন আর্থ করা জিনিস পাওয়া যায় যার রেজিস্ট্যাল এত কম যে বিবেচনার মধ্যে আসে না। তবে একটি ভোল্টমিটার আর একটি অ্যামিটার দিয়ে আর্থ কানেকশনের রেজিস্ট্যান্স বের করা যেতে পারে। চিত্রে এটি দেখানো হয়েছে, নলকূপের পানির লাইন আর আর্থ কানেকশনের সঙ্গে একটি অ্যামিটার লাগিয়ে তা দিয়ে অল্টারনেটিং কারেন্ট দিতে হবে, আর ঐ দুইয়ের মধ্যের ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হবে।
এখন যদি জলের পাইপের রেজিস্ট্যান্স ধর্তব্যের মধ্যে না হয়, তবে মাটির রেজিস্ট্যান্স = ভোল্টেজ/কারেন্ট
• সরবরাহ না থাকলে নিয়ন টেস্টার বা টেস্ট ল্যাম্পের মাধ্যমে পোলারিটি টেস্ট করা যাবে না।
• সরবরাহ থাকলে আর্থ টেস্টার বা মেগারের মাধ্যমে পোলারিটি টেস্ট করা যাবে না।
• কনটিনিউয়িটি টেস্টের সময় সকল লোড লাগাতে হবে বা টার্মিনালসমূহ শর্ট করতে হবে।
•আর্থ ইলেকট্রোড ও স্পাইক কাছাকাছি পুঁতা যাবে না।
• বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্টের সময় রিডিং ১০ সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ১ মিনিট সময়ের মধ্যে গ্রহন করতে হবে।
• আর্থ ইলেকট্রোডের সাথে আর্থ টেস্টারের E টার্মিনাল, আর্থ ইলেকট্রোড এর নিকটবর্তী স্পাইককে P টার্মিনাল এবং অন্যটি C টার্মিনালে সংযোগ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আরও দেখুন...