পূর্বের শ্রেণিতে আমরা জেনেছি যে, পোশাকের বিভিন্ন অংশ ছাঁটার আগে ও সেলাই করার পর তাদের আকৃতি সঠিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য ইস্ত্রি করার প্রয়োজন হয়। এছাড়া পোশাক ধোয়ার পর শুকালে তা কুঁচকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়। তাই পোশাকের সৌন্দর্য ও পারিপাট্য বাড়ানোর জন্যও ইস্ত্রি করতে হয়। ইস্ত্রির মাধ্যমে তাপ ও চাপ প্রয়োগ করে কাপড়ের ভাঁজ ও কুঞ্চন দূর করা হলে পোশাক চকচকে এবং পরিষ্কার দেখায়। ইস্ত্রি করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হলো-
১) কয়লার ইস্ত্রি-এটি অত্যন্ত পুরোনো মডেলের ইস্ত্রি। এই ধরনের ইস্ত্রির উপরের ঢাকনা খুলে জ্বলন্ত কয়লা ভরতে হয়। জ্বলন্ত কয়লার উত্তাপে ইস্ত্রি গরম হয়। উত্তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকাতে কাপড় পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও জ্বলন্ত কয়লা বের হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
২) লোহার পাতের ইস্ত্রি এধরনের ইস্ত্রি সাধারণত চ্যাপ্টা, মোটা, পেটা লোহার পাতের হয়ে থাকে। এই ইস্ত্রিগুলো চুলার উপর বসিয়ে গরম করে পোশাকের উপর চালানো হয়। তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকাতে অসতর্ক হলে কাপড় পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
৩) ইলেকট্রিক ইস্ত্রি- এটি বিদ্যুৎচালিত এবং ব্যবহারে অত্যন্ত সুবিধাজনক আধুনিক ইস্ত্রি। তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকাতে অল্প সময়ে সব তন্তুর পোশাকই ইস্ত্রি করা যায়।
কম্বল বা চাদর- ইস্ত্রি বোর্ডের উপর ব্যবহারের জন্য পুরু কম্বল কিংবা চাদর দরকার।
স্লিভ বোর্ড- পোশাকের হাতা, কাফ, কলার ইত্যাদি সুন্দরভাবে ইস্ত্রির জন্য স্লিভ বোর্ড লাগে।
এছাড়া ইস্ত্রির সময় কাপড় ভিজানোর জন্য স্প্রেয়ার, ছোট তোয়ালে, পানির বাটি, নরম পাতলা কাপড় ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
ইস্ত্রি করার নিয়ম-
১. ইস্ত্রি করার পূর্বেই ইস্ত্রিটিতে কোনো কিছু লেগে থাকলে পরিষ্কার করে নিতে হয়। তা না হলে পোশাকে দাগ লেগে যেতে পারে।
২. পোশাকের তত্ত্বর ধরন অনুযায়ী উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৩. নকশা করা বা রঙিন পোশাক উল্টোদিকে ইস্ত্রি করলে নকশা, রং নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।
৪. কাপড়ের লেবেল অনুযায়ী ইস্ত্রি করা উচিত। সুতিবত্র কিছুটা আর্দ্র থাকা অবস্থায় ইস্ত্রি করতে হয়। কাপড়টি যদি শুকিয়ে যায় তবে পানির ছিটা দিয়ে একটি ভেজা তোয়ালে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পেঁচিয়ে রেখে তত্ত্ব নরম করে নিতে হয়।
৫. রেশমি বস্ত্র কিছুটা ভেজা অবস্থাতেই ইস্ত্রি করতে হয়। কারণ একবার শুকিয়ে গেলে তা আবার পানি ছিটিয়ে আর্দ্র করলে কাপড়ে দাগ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে বস্ত্রটি পুনরায় ভেজাতে হয়। বেশি গরম ইস্ত্রি ব্যবহার করলে রেশমি তন্তু পুড়ে যায়। সাধারণত এরূপ বস্ত্র উল্টো দিকে ইস্ত্রি করা উচিত।
৬. পশমি বস্ত্রের ক্ষেত্রে বস্ত্রগুলো সামান্য ভেজা থাকতেই অল্প গরম ইস্ত্রি দিয়ে উল্টোদিকে চাপ দিতে হবে। এক্ষেত্রে একটি স্যাঁতসেঁতে পাতলা সুতির কাপড় পশমি কাপড়ের ওপর বিছিয়ে ইস্ত্রি করতে হয়। কখনো খুব গরম ইস্ত্রি ব্যবহার করতে নেই।
৭. সব সময় সরল রেখায় ইস্ত্রি চালনা করা ভালো।
৮. পোশাক ইস্ত্রি করার সময় সঠিকভাবে ভাঁজ করে নিতে হয়। ভাঁজে ভাঁজে গরম ইস্ত্রির চাপ পড়লে কাপড় তাড়াতাড়ি মসৃণ হয়।
৯. ইস্ত্রি করার পর কাপড় কিছুক্ষণ খোলা বাতাসে রেখে জলীয়বাষ্প বের করে যথাযথ স্থানে রাখতে হয়।
কাজ-তোমার একটি পোশাক মাড় দিয়ে, ইস্ত্রি করে, সঠিকভাবে ভাঁজ দিয়ে শ্রেণিকক্ষে আনবে। |
Read more