সুষ্ঠুভাবে পোশাক পরিচ্ছন্নতার কাজটি সম্পন্ন করতে হলে কতগুলো ধাপ বা পর্যায় অনুসরণ করতে হয়। যেমন- বস্ত্র বাছাই করা, মেরামত করা, দাগ দূর করা, ধোয়ার উপকরণ ঠিক করা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখা, ধোয়ার পরিকল্পনা করা ইত্যাদি। উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করলে কাজটি যেমন-সহজ হয়ে উঠবে তেমনি সুন্দরভাবে সম্পাদন করা যাবে।
পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে দাগ অপসারণ বত্র ধোয়ার পূর্ব প্রস্তুতির অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। কখনো কখনো পোশাক-পরিচ্ছদে এমন কিছু চিহ্ন বা রং দেখা যায় যেগুলো সাধারণভাবে ধুলে পরিষ্কার হয় না। এ ধরনের চিহ্ন অপসারণ করতে বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। পোশাক-পরিচ্ছদের এ ধরনের অবাঞ্চিত চিহ্নকেই দাগ হিসেবে গণ্য করা হয়। বত্র ধোয়ার আগে উক্ত দাগ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী অপসারণ করা প্রয়োজন। নতুবা উক্ত দাগ স্থায়ী হবার এবং অন্য বসেত্র লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে দাগ অপসারণের জন্য যেসব অপসারক ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
১) মৃদু অপসারক- অক্সালিক এসিডের লঘু দ্রবণ, সিরকা বা এসেটিক এসিড, বেকিং সোডা, এমোনিয়া, বোরাক্স, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ইত্যাদি মৃদু অপসারক। মৃদু অপসারক ব্যবহারে সাধারণত কাপড়ের কোনো ক্ষতি হয় না। এজন্য দামি মিহি কাপড়ের দাগ অপসারণের জন্য এসব উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
২) উগ্র অপসারক- কাপড় কাঁচার সোডা, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, গাঢ় অক্সালিক এসিড, জাভেলী ওয়াটার, ক্লোরিন ইত্যাদি উগ্র অপসারক। এসব অপসারক বেশি সময় ধরে কাপড়ের সংস্পর্শে থাকলে কোনো কোনো কাপড়ের ক্ষতি হয়। এজন্য সর্তকতার সাথে এসব ব্যবহার করা উচিত।
কাপড় থেকে দাগ দূর করার সাধারণ নিয়ম
বস্ত্রাদি থেকে দাগ দূর করার সময় যে বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সেগুলো হলো-
১। কাপড়ে কোনো দাগ লাগলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাগ অপসারণের ব্যবস্থা করা দরকার। কারণ পুরোনো দাগ পরিষ্কার করা তুলনামূলকভাবে কঠিন।
২। কাপড়টি কোন শ্রেণির তন্তু দিয়ে তৈরি তা জানতে হবে, কারণ বিভিন্ন ধরনের তন্তুর জন্য বিভিন্ন অপসারক ব্যবহার করা হয়।
৩। দাগের উৎস জানতে হবে। উৎস না জেনে ভুল অপসারক ব্যবহার করলে অনেক সময় দাগ না ওঠে স্থায়ীভাবে বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪। অজানা দাগে কখনো গরম পানি সরাসরি ব্যবহার করতে হয় না। এতে অনেক দাগ স্থায়ীভাবে বসে যায়।
৫। রঙিন কাপড়ে অপসারক ব্যবহারের আগে কাপড়ের রং নষ্ট করবে কি না তা জানা প্রয়োজন। এজন্য কাপড়ের এক কোনায় অল্প একটু অপসারক দ্রব্য ব্যবহার করে এ পরীক্ষা করা যেতে পারে।
৬। প্রথমে মৃদু অপসারক ব্যবহার করতে হবে। দাগ না উঠলে উগ্র অপসারক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭। দাগ উঠে গেলে কাপড় থেকে অপসারক দ্রব্যটি ধুয়ে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে হবে।
৮। অপসারক দ্রব্যটি এসিড হলে দাগ উঠানোর পর কোনো লঘু ক্ষার দিয়ে প্রশমিত করতে হবে। অনুরূপভাবে কোনো ক্ষারযুক্ত অপসারক দ্রব্য লঘু এসিড দিয়ে প্রশমিত করতে হবে।
৯। একবারে কোনো শক্তিশালী অপসারক ব্যবহার না করে দুই থেকে তিনবার মৃদু অপসারক ব্যবহার করা নিরাপদ।
১০। কাপড় অপসারক দ্রবণে বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখা ঠিক না। দাগ দূর হওয়া মাত্র ধুয়ে শুকাতে দিতে হবে।
পোশাকটি যদি ধোয়ার যোগ্য হয় তাহলে দাগ অপসারণের ব্যাপারটি বেশ সহজ ও আনন্দদায়ক। এখানে কাপড় থেকে বিভিন্ন ধরনের দাগ অপসারণের উপায়গুলো বর্ণনা করা হলো-
১। রক্তের দাগ সুতি ও লিনেন বত্রে রক্তের দাগ লাগলে দাগযুক্ত স্থানটি কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর মৃদু সাবান গোলা পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। দাগ পুরোনো হলে লঘু এমোনিয়ার দ্রবণে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর পানি দিয়ে ধুলে পরিষ্কার হয়। রেশমি ও পশমি বসেত্র যদি দাগ না উঠে তবে লবণ গোলা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়।
২। কাদার দাগ- সাবান পানিতেই দাগ উঠে যাবার কথা। যদি না উঠে সেক্ষেত্রে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ অথবা অক্সালিক এসিডের দ্রবণে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
কাজ ১- রক্ত ও কাদার দাগ অপসারণের উপায় লেখ। |
Read more